যে মেয়েকে নিয়ে তাঁর এত অহংকার সেই অহংকার নষ্ট তিনি করতে পারেন না। ব্যাপারটা তাকেই সামাল দিতে হবে। কীভাবে সামাল
মনােয়ারা ক্ষীণস্বরে বললেন, হু।
“তােমরা মা মেয়ে সারারাত হেসে কী গল্প কর? একবার গােপনে তোমাদের কথাবার্তা শুনতে হবে। ওয়াটার গেট টাইপ ব্যবস্থা। হা হা হা।
‘চায়ে চিনি টিনি লাগাবে কি-না দেখ।’
আজহার সাহেব আনন্দিত গলায় বলেন, চিনি টিনি কিছুই লাগবে না। অসাধারণ চা হয়েছে। আচ্ছা বেহেশতে চা পাওয়া যাবে কি-না জানাে? বেহেশতে অনেক খাবারদাবারের কথা বলা হয়েছে। চায়ে কথা বলা হয়নি। চা না-পাওয়া গেলে আমার জন্যে সমস্যা।
মনােয়ারা বললেন, তুমি কি নিশ্চিত তুমি বেহেশতে যাবে?
আজহার সাহেব বললেন, তােমার কারণে নিশ্চিত । তুমি বেহেশতে যাবে এবং বেহেশতের গেটে দাড়িয়ে শক্ত গলায় বলবে আমি মীরার বাবাকে ছাড়া ঢুকল না। কাজেই আমাকে নিয়ে আসা হবে। আমি তােমার সাহস নিয়ে বেহেশতে টুকব, তারপর কিন্তু আমাকে ছুটি দিতে হবে! সাতটা হুরকে নিয়ে আমার কিছু বিশেষ পরিকল্পনা আহে। হা হা হয়। i. মনোয়ারা কিছুই বলতে পারলেন না। দুঃখী দুঃখী চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইলেন।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২১
একটাই পথ। ছেলেটার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। বিয়ে হলে সব ঝামেলা শেষ । মীরার বাবা হুট করে মেয়ের বিয়েতে রাজি হবে না। তাছাড়া ক্লাসফ্রেন্ডের সঙ্গে বিয়ে। ছেলে চাকরি-টাকরি কিছু করে না, ছাত্র। গ্রাম থেকে এসেছে, পারিবারিক অবস্থাও নিশ্চয়ই খারাপ। এটা মনােয়ারা সামাল দিতে পারবেন।
তার সেই মমতা আছে। যেভাবেই হােক সামাল দেবেন। কোনো একটা কৌশল করে করতে হবে | অবশ্যি কৌশলের লৱকারও নেই। তিনি যদি কোনাে রাতে ঘুমুতে যাবার সময় কাঁদো-কালো গলায় বলেন তুমি কি আমার একটা কথা রাখবে? মানুষটা সঙ্গে সঙ্গে বলবে, অবশ্যই রাখব। তােমার কোনাে কথাটা আমি রাখিনি?
তখন চোখে পানি এনে বলতে হবে, কথাটা কিন্তু অন্যায়। তােমার উপর জোর খাটানাে হবে।
মানুষটা তখন বলবে, কী যন্ত্রণা! কাঁদতে শুরু করলে কেন? কী চাও বল । যা বলবে তাই হবে।
মীরা বলছে ছেলেটা রাজি না। এটা কোনো ব্যাপার না। ছেলে ঘাবড়ে গেছে। ঘাবড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। তিনি ছেলের সঙ্গে কথা বলবেন। তাকে বুঝাবেন। দূরকার হলে ছেলের মা-বাবার সঙ্গে কথা বলবেন। প্রয়ােজনে তাদের পায়ে ধরবেন। তাকে তার পরিবারের সম্মান রক্ষা করতে হবে। তার মেয়ের সম্মান রক্ষা করতে হবে।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২১
মনােয়ারা চেয়ার থেকে উঠে রান্নাঘরে গেলেন। দুকাপ চা বানালেন । মীরার বাবাকে মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে আজই রাজি করিয়ে ফেলতে হবে, দেরি করা যাবে না।
আজহার সাহেব ঘুমঘুম চোখে দরজা খুলে স্ত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খুবই খুশি হলেন। তিনি হাসিমুখে বললেন, রাতে একফোটা ঘুমাওনি তাই না? চোখমুখ দেখেই বােঝা যাচ্ছে কী করে সারারাত? মেয়ের সঙ্গে গুটুৱ-গুটুর
বেলা প্রায় এগারােটা। বাড়ি ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। মনােয়ারা চুপচাপ বসে আছেন। রাতে লােক খেতে আসলে ছোট আয়োজন করতে হবে। তারা আগে সাবেরের সঙ্গে কথা বলতে হবে । মীরাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি নেত্রকোনা চলে যাবেন। টেলিফোন করে ছেলেকে এখানে চলে আসতে বললেন। তারপর তিনি যা বলার বলবেন।
মনােয়ারা আজহার সাহেবের খোঁজে বাগানে এসেছেন। তিনি যে নেত্রকোনা বেন তা বলা দরকার। সাবের ছেলেটাকে এখানে খবর দিয়ে আনবেন সেই ব্যাপারটা সম্পর্কেও ধারণা দিয়ে রাখা দরকার । T আজহাব সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললেন, এসাে। তােমার অবস্থাতাে দেখি কাহিল। হাঁটতেও পারছ না। একরাত না ঘুমিয়েই এই অবস্থা। চোখের নিচে কালি পড়ে কী হয়েছে। ‘
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২১
মনোয়ারা বললেন, আমি একটু নেত্রকোনা যাব। তােমার গাড়িটা নিচ্ছি।
আজহার সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, বিশ্রী অভ্যাসটা ছাড় তাে । তােমার গাড়ি আবার কী? বল আমাদের গাড়ি । হঠাৎ নেত্রকোনা কে ?
এখনো জানিনা। নেত্রকোনায় গিয়ে টেলিফোন করব । বেশি না আসাই ভালো। এত বিছানা কোথায়? হয়তো দেখা যাবে সাবের একাই আসবে । এর অগ্রহই বেশি।’
‘আসুক দলবল নিয়েই আসুক। বিছানার ব্যবস্থা করা যাবে। তুমি নেত্রকোনা যখন যাচ্ছি দুটা সিঙ্গেল লেপ নিয়ে এসাে।’
আজহার সাহেব হঠাৎ ছেলেমানুষের মতো বােধ করলেন। কয়েক জন ছেলে আসলে হৈ চৈ করবে, ভালো তাে। এদের নিয়ে খেজুরের রস ত্যা ওন্না যাবে। ক্ষেত বসে মটরশুটি সেদ্ধ খাওয়া হবে। পুকুরে জাল ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। শহরের ছেলে জাল ফেলে মাছ মারা নিশ্চয়ই দেখেনি। তারা নিজেরাই নিশ্চয়ই পুকুরে নেমে যাবে। ছবি তুলতে হবে। প্রচুর ছবি তুলতে হবে।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২১
মনােয়ারা! তুমি যখন যাচ্ছি ভুটা ফিল্ম নিয়ে এসো। ছেলেরা এলে অনেক ছবি তােলার ব্যাপার আছে।
মনােয়ারা ছােট্ট নিশ্বাস ফেলে তার ভালােমানুষ স্বামীর কাছ থেকে বিলে নিলেন। এখন কথা বলতে হবে মীরার সঙ্গে। মীরা প্রথমে বেঁকে যাবে। বেঁকে গেলে হবে না।
রাতে তুমি লােকজন দাওয়াত করেছ ওরা খাবে । নিজের হাতে কয়েকটা জিনিস কিনব। ভাবছি খাসির মাংস রান্না করব।’
‘চল আমি তোমার সঙ্গে যাই।’
না তুমি থাকো। তুমি চলে গেলে শেফা একেবারে একা থাকবে। আমি মীরাকে সঙ্গে নিচ্ছি।
শেফা একা এটা ঠিক না, দেলােয়ার আছে।’ TC কী বল তুমি। দেলােয়ারের হাতে মেয়ে রেখে আমি চলে যাব না-কি? তুমি থাকো।’
“আচ্ছা যাও থাকলাম। তােমার অতিরিক্ত প্রটেকটিভ নেচার এই যুগে অচল। প্রটেকটিভ নেচার সামান্য কমাতে হবে। যুগ বদলে যাচ্ছে। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে হবে।’
মনােয়ারা স্বামীর পাশে বসতে বসতে বললেন, মীরার কোনাে বন্ধু যদি এখানে বেড়াতে আসে তুমি রাগ করবে? ক্লাসফ্রেস্ত।
‘সাবেরের কথা বলছ?
Read more