যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(১৪)-হুমায়ূন আহমেদ

কান্না বন্ধ করার সহজ বুদ্ধি হলাে, কঠিন কোনাে বিষয় নিয়ে কথা বলাতেমন কোনাে কঠিন বিষয় ইমনের মাথায় আসছে না। 

শওকত বলল, চুপ করে আছ কেন? কথা বলাে। 

ইমন কোনাে কথা বলল নাচুপ করেই রইলশওকত তাকিয়ে দেখল, ছেলের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছেসে কিছু বলল না। 

রেবেকা সারাদিন ছেলের টেলিফোনের জন্যে অপেক্ষা করেছেইমন টেলিফোন করে নিরেবেকা খোজ নিয়েছে ইমনকে তার বাবা বাসা থেকে নিয়ে গেছে সকাল সাড়ে দশটায়এখন বাজে সন্ধ্যা সাতটাএর মধ্যে টেলিফোন আসে নিমােবাইল টেলিফোনে টেলিফোন করার কায়দাকানুন তাকে খুব ভালাে করে শিখিয়ে দেয়া হয়েছেইমন কোনাে বােকা ছেলে না যে ভুলে যাবেতাকে বারবার বলা হয়েছেবাবা যে বাসায় থাকে, সেখানে পৌঁছার পরই যেন টেলিফোন করা হয়ইমন তা করে নি। রেবেকা যা করতে পারে তা হলাে ছেলের টেলিফোনের অপেক্ষা না করে নিজেই কাজটা করা। সেই ইচ্ছাও হচ্ছে

যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(১৪)-হুমায়ূন আহমেদ

তার খুবই চিন্তা লাগছেছেলেকে নিয়ে চিন্তা না ছেলে কেন টেলিফোন করছে না তা নিয়ে চিন্তা। 

ইমনের টেলিফোন এলাে রাত আটটায়সারাদিনে সে কোনাে টেলিফোন করে নিএই নিয়ে রেবেকা কোনাে কথা বলল নাযেন কিছুই হয় নি সে রকম গলার স্বর করে বলল, কেমন আছ ইমন ? 

ইমন বলল, ভালাে ফান হচ্ছে

কী ফান হচ্ছে বলাে তাে

ইমন জবাব দিল নারেবেকা বললেন, সারাদিনে কী কী করলে সেটা বলাে। 

ইমন এই প্রশ্নেরও জবাব দিল নারেবেকা শঙ্কিত বােধ করলেনছেলে যদি হঠাৎ কথা বন্ধ করে দেয়, তাহলে বুঝতে হবে সে আর মুখ খুলবে নাসামনে থাকলে তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আবার কথা শুরু করা যেত, এখন সে সামনেও নেই। 

রেবেকা ছেলের কথা শুরু করানাের জন্যে বললেন, ইমন, তুমি কি তােমার বাবাকে চাইনিজ লণ্ঠনটা দিয়েছ

ইমন বলল, কিছুক্ষণ আগে দিয়েছিদিতে এত দেরি হলাে কেন

যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(১৪)-হুমায়ূন আহমেদ

রিকশা থেকে নেমে হাত থেকে পড়ে ভেঙে গিয়েছিলআমি আরেকটা নতুন বানিয়ে কিছুক্ষণ আগে দিয়েছি। 

সারাদিন বসে বসে চাইনিজ লণ্ঠন বানালে ? হুঁ। বাবা রঙিন কাগজ কিনে আনল গাম কিনে আনলমােমবাতি আনল। 

সারাদিন লণ্ঠন বানানাে নিয়ে ব্যস্ত ছিলে বলে আমাকে টেলিফোন করতে পার নিতাই না ? 

তােমার বাবা কি লণ্ঠন দেখে খুশি হয়েছে

সে এখন কোথায় ? কী করছে ? বাবা এখন আরেকটা লণ্ঠন বানাচ্ছেতাই নাকি

হুঁআমি তাে তিনটা রঙ ব্যবহার করেছিলাল, সবুজ আর হলুদবাবা বলছে তিনটা রঙ ব্যবহার না করে একটা রঙের অনেকগুলি শেড ব্যবহার করে বানালে খুব সুন্দর হবেযেমন ধরাে সবুজ রঙবাবা এখন সবুজ রঙের পাঁচটা শেড দিয়ে বানাচ্ছে। 

সবুজ রঙের পাঁচটা শেড তুমি পাবে কোথায় ? বাজারে তাে একটাই সবুজ রঙের কাগজ পাওয়া যায়। 

সবুজ রঙের পাচটা শেড বাবা রঙ গুলে বানিয়েছেআচ্ছা, তােমার বাবা তাে একজন পেইন্টার । আমি ভুলেই গিয়েছিলামইমন বলল, মা, আমি এখন রাখি। বাবাকে সাহায্য করতে হবেবাই। 

রেবেকা কিছু বলার আগেই ইমন টেলিফোন রেখে দিল। খুব জরুরি প্রশ্ন রেবেকার করা হলাে নাআজ দুপুরে সে কী খেয়েছে ? খাবারটা কি ঘরে তৈরি হয়েছে, না বাইরে থেকে এসেছে ?

যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(১৪)-হুমায়ূন আহমেদ 

শওকত খুব মন দিয়েই চাইনিজ লণ্ঠন বানাচ্ছেফ্রেম তৈরি হয়ে গেছে, এখন শুধু ফ্রেমে সবুজ রঙের কাগজ বসানােইমন আগ্রহ নিয়ে বাবার কাজ দেখছেসে হাঁটু গেড়ে বাবার সামনে বসে আছেতার হাতে আইকা গার্মের কৌটাতার কাজ হচ্ছে কাগজে আইকা গাম লাগিয়ে দেয়া। 

ইমন

আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছেকী আইডিয়া

সবুজ রঙের উপর লাল রঙের একটা ফিগার আঁকবসবুজের মধ্যে লাল খুব ভালাে ফোটেআমি কী করব শােন, যেখানে গাঢ় সবুজ রঙের কাগজ, সেখানে ফিগারটা আঁকৰ হালকা লাল রঙেআবার যেখানে হালকা সবুজ রঙ ব্যবহার করেছি, সেখানে ফিগার আঁকা হবে গাঢ় লাল রঙেএতে কী হবে জানাে

কী হবে

লাল রঙের ইনটেনসিটি সমান মনে হবেফিগারটা থ্রি ডাইমেনশনাল হয়ে যাবেলণ্ঠন জ্বালালে মনে হবে ফিগারটা লণ্ঠন থেকে বাইরে চলে এসেছে। 

সত্যি ? আমার এরকম মনে হচ্ছেশেষ না হলে বুঝতে পারব নাকখন শেষ হবে ? বুঝতে পারছি নাসময় লাগবে। 

আমি কিন্তু জেগে থাকবআচ্ছা ইমন, তুমি কি চা বানাতে পার

না। 

এসাে তােমাকে চা বানানাে শিখিয়ে দেইএখন তােমার কাজ হবে মাঝে মাঝে চা বানিয়ে আমাকে খাওয়ানােপারবে না

যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(১৪)-হুমায়ূন আহমেদ

পারবআমি মিল্ক শেক বানাতে পারি। 

মিল্ক শেকের মতাে জটিল বস্তু যে বানাতে পারে, চা বানানাে তার কাছে কিছুই নাচা বানানাে তার কাছে লেনটিলরাইস। 

লেনটিলরাইস মানে কী

লেনটিলরাইস মানে হলাে ডালভাতএটা একটা বাংলা বাগধারা যার অর্থ খুবই সহজ কাজখুবই সহজ কাজের ইংরেজি বাগধারা কী

ইমন বলল, A piece of cake

জীবনের প্রথম চা ইমন বানাল রাত নটায়তার কাছে মনে হলাে, প্রথম কাপ চা বানিয়ে সে হঠাৎ অনেকখানি বড় হয়ে গেছে শওকত চায়ে চুমুক দিয়ে 

বলল, প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে চলেতবে তেমন ভালাে হয় নি দুধ বেশি হয়েছেচিনিও বেশি হয়েছেআমার ধারণা পরের বার থেকে ঠিক হয়ে যাবে । 

ইমন লক্ষ করল, তার বাবার সঙ্গে তার মায়ের একটা বড় ধরনের অমিল আছেইমনের বানানাে প্রথম চা যত খারাপই হােক, মা চুমুক দিয়েই বলতঅসাধারণ হয়েছেআমি আমার জীবনে এত ভালাে চা খাই নিবাবা সেরকম বলে নিতার অর্থ হলােবাবা যখন বলবে চা ভালাে হয়েছে, তখন ধরে নিতে হবে চা ভালাে হয়েছে। 

ইমন আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে কখন বাবা আবার চা খেতে চাইবেসে বানাবেএবারের চায়ে দুধ এবং চিনি কম দিতে হবেচাইনিজ লণ্ঠনের নির্মাণ থেকে ইমনের আগ্রহ এখন অনেক কমে গেছেএখন তার আগ্রহ চা বানানােতে

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *