যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(১৯)-হুমায়ূন আহমেদ

প্রশ্ন : কী কথা

উত্তর : কী কথা বলত আমার মনে নেইসারারাত জেগে জেগে ছবি আঁকত আর কথা বলতএইটা মনে আছেতারপর একদিন বাবাকে লম্বাএকটা চিঠি লিখে সে ঘুমের ওষুধ খেয়ে মরে গেল। 

প্রশ্ন : সেই চিঠিতে কী লেখা

উত্তর : কী লেখা আমি বলতে পারব নাবাবা সেই চিঠি কাউকে পড়তে দেন নিমিসির আলী সাহেব শুনুন, আমি কিন্তু ভালাে মেয়ে নাআমি খুব খারাপ মেয়েআমি কতটা খারাপ আপনি চিন্তাও করতে পারবেন নাভাইয়ার মৃত্যুর পর আমি ঠিক করেছিলামদোকান থেকে ইঁদুর মারা বিষ কিনে এনে চিনি দিয়ে শরবত বানিয়ে বাবামা দুজনকেই খাওয়াবশুধু যে চিন্তা করেছিলাম তা না, বিষ কেনার জন্যে ঘর থেকে বেরও হয়েছিলামশুনুন, আমি এখন ঘুমিয়ে পড়বখুব ঘুম পাচ্ছেযতটুকু শুনেছেন সেখান থেকে অ্যানালাইসিস করে কিছু বলতে পারবেন

মিসির আলী : পারবশওকত নামের মানুষটির প্রতি তােমার কোনাে প্রেম নেইতুমি তার হাত ধরেছ অপ্রেমেতােমার ভাইয়ার প্রতি তােমার যে প্রচণ্ড আবেগ এবং ভালােবাসা ছিল, সেই আবেগ আর ভালােবাসাই তুমি ভাইয়ার বন্ধুর দিকে ছড়িয়ে দিয়েছবাবার মৃত্যুর পর মানুষজন ব্যস্ত হয়ে পড়ে ফাদার ফিগার খোঁজার জন্য তুমি ব্যস্ত হয়েছ ব্রাদার ফিগারের জন্যে। 

যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(১৯)-হুমায়ূন আহমেদ

উত্তর : আপনি কিছুই জানেন নাশওকত যেদিন বিয়ে করলেন, সেদিন সকাল থেকে রাত এগারােটা পর্যন্ত আমি কোনাে কিছু মুখে দেই নিরাত এগারােটার সময় আমি এক গ্লাস পানি খাই আর তার সঙ্গে নয়টা ঘুমের ওষুধ খাইভাইয়া যে ওষুধগুলি খেয়েছিল সেই ওষুধআমি খুব আনলাকি মেয়ে তাে, ওষুধ খাবার পরও আমার মৃত্যু হয় নিআমি খুব আনলাকি মেয়ে সেই জন্যেই আমি বেঁচে যাইআমাকে কেউ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় নিস্টোমাক ওয়াশ করে নি

তিনচারদিন বিছানায় আধমরার মতাে পড়ে থেকে সুস্থ হয়ে উঠিতারপর যে কাজটা করি তা হলােশওকতের বাসায় গিয়ে উপস্থিত হইতাঁকে বলি, আমি তােমাকে ছাড়া বাঁচব নাআমি তােমার কোনাে কথা শুনব নাতুমি অবশ্যই আমাকে বিয়ে করবে উনি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, এরকম ছটফট করছ কেন? বসাে তাে। ঠাণ্ডা হয়ে বসে কথা বলাে চা খাবে? আমি চা বানিয়ে আনি, চা খাও। 

মিসির আলী : তুমি যখন কথা বললে, তখন শওকত সাহেবের স্ত্রী বাসায় ছিলেন না

উত্তর : না, ছিলেন নাআর থাকলেও আমি তার সামনেও এই কথাগুলি বলতামএখন বুঝেছেন আমি যে শওকতের হাত ধরেছি তা অপ্রেমে ধরি নিপ্রেমেই ধরেছিএখন আপনি বিদেয় হনফুটেনআপনার সঙ্গে বকবক করে আমার মাথা ধরে গেছে। 

আনিকার চোখ বন্ধমাথার যন্ত্রণার জন্য মদিনাবাসীর গান শুনতে ভালাে লাগছে নাআনিকা চোখ মেলে বিরক্ত গলায় বলল, ড্রাইভার সাহেব, ক্যাসেটটা বন্ধ করেন তাে। 

ড্রাইভার অবাক হয়ে বলল, আপা, ক্যাসেট তাে বাজতেছে নাক্যাসেটপ্লেয়ার নষ্ট। 

যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(১৯)-হুমায়ূন আহমেদ

ইমন তার বাবাকে বই পড়ে শােনাচ্ছেবইটার নাম Fear at Midnight. ভয়ঙ্কর ভূতের গল্পফিফথ গ্রেডের কিছু ছেলেমেয়ে মন্টানার জঙ্গলে সামার ক্যাম্প করতে যায়সেখানে পৌছার পর শুরুটা তারা খুবই আনন্দে কাটায়সমস্যা শুরু হয় মধ্যরাত থেকেলেক থেকে উঠে আসে এক বুড়ােবুড়াের চেহারায় মায়া কথাবার্তায় মায়াকিন্তু হঠাৎ হঠাৎ তার চোখ ধ্বক করে ওঠেতখন চোখের মণিতে হালকা নীল আলাে দেখা যায়। 

ভূতের গল্প পাঠের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হয়েছেটেবিলে চারটা বড় বড় মােমবাতি জ্বলছেমােমবাতির আলাে ছাড়া ঘরে কোনাে আলাে নেইফ্যান বন্ধ রাখা হয়েছেফ্যানের বাতাসে মােমবাতি নিভে যায় তবে আজ গরম নেইসন্ধ্যাবেলা তুমুল বৃষ্টি হওয়াতে আবহাওয়া ঠাণ্ডা । 

ইমন খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ছেঅন্যরকম পরিবেশ তৈরি হওয়ায় তার নিজেরই খানিকটা ভয়ভয় লাগছেগলাও শুকিয়ে যাচ্ছেপানির গ্লাসে পানি রাখা আছেইমন মাঝেমাঝে পানির গ্লাসে চুমুক দিচ্ছেপানি খাবার সময়ে কিছুক্ষণ পাঠের বিরতি হয়তখন পিতাপুত্র গল্প করে । 

এখন পানি পানের বিরতিশওকত বলল, বুড়াে যে লােক লেকের পানি থেকে উঠে এলাে, সে আসলে কে? মানুষ নিশ্চয়ই না

ইমন বলল, মানুষ না। 

সে কি ভ্যাম্পায়ার জাতীয় কিছু

ভ্যাম্পায়াররা পানিতে থাকে নাতারা থাকে পুরনাে অন্ধকার বাড়ির কফিনের ভেতর। 

তাহলে বুড়ােটা কী

যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(১৯)-হুমায়ূন আহমেদ

ইমন বলল, বুড়ােটা কী আমি জানিকিন্তু আগেই তােমাকে বলে দিলে মজা নষ্ট হয়ে যাবে। 

শওকত বলল, তাহলে থাকআমার নিজের ধারণাসে পানির কোনাে ভূত। 

ইমন বলল, You are very close. বুড়ােটার একটা ছবি আঁকলে কেমন হয় ? খুব ভালাে হয় বাবাজোছনা রাতে পানি থেকে উঠে আসছে আলখাল্লা পরা এক বুড়ােইমন আগ্রহ নিয়ে বলল, কখন আঁকবে বাবা? গল্পটা শেষ হােক। 

ইমন বলল, বাকি গল্পটা আমি অন্য আরেকদিন পড়বআমার ছবি আঁকা দেখতে ইচ্ছা করছে। 

শওকত বলল, ছবি আঁকা তাে দেখতে পারবে নাকেউ তাকিয়ে থাকলে আমি ছবি আঁকতে পারি না। 

তাহলে আমি তাকিয়ে থাকব নাআমি অন্য কিছু করবঅন্য কিছুটা কী ? নকল পার্ল তৈরি করবকীভাবে

এক বাটি ঠাণ্ডা পানি নিতে হবে

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *