যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(৯)-হুমায়ূন আহমেদ

দাম লেখা আছে পনের হাজার টাকাতবে আপনি যা দেবেন আমি তানেবখুবই টাকাপয়সার টানাটানিতে আছিএকটা ছবি বিক্রি করতে না পারলে কলেজের বেতন দিতে পারব নাখাওয়াদাওয়াও বন্ধ

আমি সেই দিনই পনের হাজার টাকা দিয়ে ছবি কিনলামআমার ইচ্ছা ছিল ছবি নিয়ে বাড়ি ফেরা, সেটা সম্ভব হলাে নাযতদিন এক্সিবিশন চলবে ততদিন ছবি রাখতে হবেতবে আমি ছেলেটির সঙ্গে একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করতে গেলামসেই লাঞ্চ করতে যাওয়াটাই আমার জন্যে কাল হলােছেলেটা হঠাৎ বলল, এত অল্প বয়েসী কোনাে মেয়ে যে তার ব্যাগে এতগুলাে টাকা নিয়ে ঘুরতে পারে তা তার কল্পনাতেই নেই

এটা বলেই সে হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলল, কল্পনার জগতে আপনার সঙ্গে আমার ভালো পরিচয় ছিলসেই জগতে আমরা দুজন হাত ধরাধরি করে হাঁটতামএখন আমরা বাস্তবে বাস করছিআমি কি বাস্তবের এই মেয়েটাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি ? তার কথা শুনে আমার হঠাৎ কী যেন হলাে, আমি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, কোনাে সমস্যা নেই, ছুঁয়ে দেখুন । 

অতি দ্রুত আমরা বিয়ে করে ফেললামআমার বাবা, আমার আত্মীয়স্বজনরা আমার উপর খুবই রাগ করলেনকোর্টে বিয়ে করে মাকে যখন খবর দিলাম, তখন তার স্ট্রোকের মতাে হলােBut I was happy

সাইকিয়াট্রিস্ট রেবেকার দিকে সামান্য ঝুঁকে এসে বললেন, আপনাদের বিবাহিত জীবনে প্রথম বড় ধরনের সমস্যা কখন হলাে? মানে কোন সে ঘটনা

যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(৯)-হুমায়ূন আহমেদ

রেবেকা শান্ত গলায় বলল, যে দিন তার ওয়েল পেইন্টিংআমার চেহারার মেয়েটির রহস্য পরিষ্কার হলাে সেদিন। 

রহস্যটা কী

আমার এক কাজিন আছে এয়ারফোর্সেপাইলটসে আমাকে আমার জন্মদিনে উপহার দেবে বলে আমার ছবি দিয়ে একটা ছবি ইমনের বাবাকে আঁকতে বলেআমার একটা বড় ছবি সেইমনের বাবাকে দিয়ে আসেছবি 

আঁকা হয়কিন্তু আমার কাজিনকে তখন এয়ারফোর্স থেকে পাঠিয়ে দেয়সােভিয়েট ইউনিয়নে কী একটা ট্রেনিংসে আর ছবিটা ইমনের বাবার কাছ থেকে নিতে পারে নি। 

ছবির পেছনের এই রহস্য আপনি আপনার স্বামীর কাছ থেকে জানতে পারেন, নাকি আপনার কাজিন আপনাকে বলেন

আমার কাজিন আমাকে বলেনইমনের বাবা পুরাে ব্যাপারটা গােপন করেছিল। 

পেইন্টিংটা কি আছে আপনার কাছে

যেদিন আমাদের ডিভাের্স হয়ে যায়, সেদিনই আমি ছবিটা নষ্ট করে ফেলি। 

এখন কি মনে হয় না কাজটা ভুল হয়েছে

, মনে হয় নাআপনি কি ভেবেচিন্তে বলছেন, নাকি রাগ করে বলছেন

যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(৯)-হুমায়ূন আহমেদ

আমি ভেবেচিন্তেই বলছিরাগ করে বলছি নাছবিটা অবশ্যই সুন্দর ছিলকিন্তু সেই সুন্দরের মধ্যে ছিল প্রতারণাপ্রতারণা আমার পছন্দ না সুন্দর প্রতারণা সহ্য করে না। 

আপনি নিজে কখনাে কারাে সঙ্গে প্রতারণা করেন নি

আমি কখনােই কারাে সঙ্গে প্রতারণা করি নি নিজেকে নিজে প্রতারণা করেন নি

তা হয়তাে করেছি। 

ইমন কাঁচি দিয়ে এখনাে কাগজ কাটছেতবে কাগজ কাটতে গিয়ে সে তার হাত কেটে ফেলেছেমােটামুটি ভালােই কেটেছেবেশ কয়েক ফোটা রক্ত পড়েছেইমন রঙিন কাগজের একটা টুকরা রক্তের উপর দিয়ে রেখেছে, যাতে ব্যাপারটা মায়ের চোখে না পড়েরেবেকা ব্যাপারটা দেখেছেনতার মন খারাপ হয়েছেছেলেটা এরকম হচ্ছে কেন? ব্যথা পেয়েছে সে বলবেচিৎকার করবেকাঁদবে নিজেকে আড়াল করবে কেন

ইমনতাকাও আমার দিকে। 

ইমন তাকালরেবেকা হাত কাটা প্রসঙ্গ তুলতে গিয়েও তুললেন নাছেলে তাকে কিছু জানাতে চাচ্ছে না যখন, তখন আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করার দরকার কী! রেবেকা বললেন, তােমার চাইনিজ লণ্ঠনের কতদূর ? আর কতক্ষণ লাগবে

যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(৯)-হুমায়ূন আহমেদ

বুঝতে পারছি না। 

কাগজ কাটতে কি অসুবিধা হচ্ছে ? আমি কেটে দেব ? Do you need my help

আগামীকাল তােমার বাবা তােমাকে নিতে আসবেন তুমি কি তা জানাে ? ইমন হঁাসূচক মাথা নাড়লতুমি যা যা সঙ্গে নেবে সব গুছিয়ে নাওআমি গুছিয়ে রেখেছিকখন গােছালে

ইমন জবাব দিল নারেবেকা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেনইমন নিজে নিজেই তার সব জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখেছেতার মাকে কিছু জানায় নিবাবার সঙ্গে দেখা করার জন্যে যে ব্যস্ততা তার মধ্যে আছে, সে তা মাকাছে গােপন করছেকেন করছে ? তার কি ধারণা মা রাগ করবে

ইমন শােন, তােমার কোনাে সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে তােমার বাবাকে জানাবেতুমি যে নিজ থেকে কিছু বলল নাতা তাে তােমার বাবা জানে নাআমি তােমার স্বভাব জানি বলেই তােমার দিকে লক্ষ রাখি তােমার বাবা তা রাখবে নাঠিক আছে

এই যে তুমি হাত কেটে ফেলেছ, আমি ব্যাপারটা দেখেছিতােমার বাবা দেখবেও নাপুরুষমানুষ এত খুঁটিয়ে কিছু দেখে না। 

কেন

প্রকৃতি ছেলেদের একরকম করে বানিয়েছে আর মেয়েদের অন্যরকম করে বানিয়েছে। 

কারা বেশি ভালাে ? তােমার কী ধারণা? কারা বেশি ভালাে ? জানি না। 

যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(৯)-হুমায়ূন আহমেদ

জানলেও তােমার নিজের একটা চিন্তা আছেসেই চিন্তাটা বলছ নাকারণ, তােমার ধারণা তুমি যা ভাবছ তা বললে আমি রাগ করবতােমার চিন্তায় ছেলেরা বেশি ভালােঠিক বলেছি বাবা

এখন লক্ষ্মীছেলের মতাে আমার ঘরে যাওআমার ড্রয়ার খুলে ব্যন্ড এইড নিয়ে এসােতােমার কাটা হাতে লাগিয়ে দিচ্ছি । 

ইমন ব্যন্ড এইড নিয়ে এলােরেবেকা ছেলের হাতে ব্যন্ড এইড লাগাতে লাগাতে বললেন, বাংলাদেশ তােমার কেমন লাগছে

ইমন বলল, ভালাে লাগছেবাংলাদেশের কোন জিনিসটা ভালাে লাগছে ? সব ভালাে লাগছেবাহ্ ভালাে তােকোন জিনিসটা খারাপ লাগছে ? লিজার্ড ঘরের দেয়ালে ঘুরে বেড়ায়। 

এই ধরনের লিজার্ডকে আমরা বলি টিকটিকিতুমি যে টিকটিকি ভয় পাও, তা অবশ্যই বাবাকে আগেই বলে দিও। 

আচ্ছা। 

আমি তােমার সঙ্গে একটা সেল ফোন দিয়ে দেবসেল ফোন কীভাবে ব্যবহার করতে হয় শিখিয়ে দেবকোনাে সমস্যা হলেই আমাকে টেলিফোন করবে। 

ইমন আবার রঙিন কাগজের কাছে বসলরেবেকাও ছেলের কাছে এসে বসলেনহাসিমুখে বললেন, চাইনিজ লণ্ঠন বানানাে কোথায় শিখেছ

ইমন বলল, স্কুলেআর্ট অ্যান্ড ক্রাফট ক্লাসে। মা, আমার কিছু শক্ত কাগজ লাগবে । 

কী রকম শক্ত কাগজ ? ওয়ান মিলিমিটার থিক হার্ড বোের্ড । 

আমি আনিয়ে দিচ্ছিআমাকে বলে দাও কী করতে হবেআমি তােমাকে সাহায্য করি । 

ইমন বলল, নারেবেকা বললেন, না কেন

ইমন বলল, চাইনিজ লণ্ঠনটা আমি বাবার জন্যে নিয়ে যাব গিফট 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *