যদিও সন্ধ্যা -(শেষ)-পর্ব)-হুমায়ূন আহমেদ

যদিও সন্ধ্যা

হঁ্যা

তখন কী করলে এরা কামড় ছেড়ে দেয়

কিছুতেই ছাড়ে নামাঝেমাঝে এমনও হয়েছেগলা কেটে ফেলতে হয়েছেতারপর ছেড়েছে। 

খুব আশ্চর্য তাে

আশ্চর্যের কিছু নেইমানুষের মধ্যেও এরকম কচ্ছপ স্বভাব আছেকিছু মানুষ আছে যারা কচ্ছপের মতােকাউকে কামড়ে ধরলে ছাড়ে নাযেমন 

আমিআমি যদি কাউকে ধরি, তাহলে ছাড়ি নামৃত্যু পর্যন্ত ধরে রাখি। 

ইমন বলল, তুমি কাকে ধরেছ ? আনিকা বলল, আপাতত তােমাকে ধরেছি। 

ইমন একটা কচ্ছপ হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেলতার মাথায় কোনাে পরিকল্পনা আছে। 

শওকত চায়ের কাপ নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলল, আনিকা, তুমি আমার ছেলের সঙ্গে কথা বলার সময় সাবধানে বলবেসে খুব স্মার্ট ছেলেতুমি যা বলবে তা তাে সে বুঝবেই, যা বলবে না তাও বুঝবে

 আনিকা চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল, আমি যদি কিছুক্ষণ তােমাদের সঙ্গে থাকি, তােমাদের অসুবিধা হবে

শওকত বলল, অসুবিধা হবে কেন ? প্রশ্নের জবাব প্রশ্ন দিয়ে দিও না অসুবিধা হবে কি হবে না সেটা বলাে। 

অসুবিধা হবে নাবরং আমার খুবই লাভ হবেআমি দুইতিন ঘণ্টার জন্যে বাইরে যাব ছেলেকে তােমার কাছে রেখে যেতে পারিতিন ঘণ্টা থাকতে পারবে

তোমাকে অফিসে যেতে হবে না

তােমাদের সঙ্গে আজ বেশকিছু সময় থাকবদুপুরে তােমাদের রান্না করে খাওয়াবএই ভেবে আমি আজ ছুটি নিয়েছিতুমি থাকতে দেবে কি দেবে 

এই ভেবে শুরুতে অফিস থেকে ছুটি নেবার কথা বলি নি। 

যদিও সন্ধ্যা -(শেষ)-পর্ব)-হুমায়ূন আহমেদ

দুপুরে কী খাওয়াবে ? তােমার ছেলে যা খেতে চায়, তাই খাওয়াবতুমি রান্না করতে জানাে তা জানতাম না। আমি অনেক কিছুই জানি, যা তুমি জানাে নারান্না যে করবেজিনিসপত্র লাগবে না ? 

সেই ব্যবস্থা আমি করব নিউমার্কেট থেকে বাজার করে আনবতােমার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে যাবসে কি যাবে আমার সঙ্গে

যাবেকচ্ছপ দিয়ে তুমি তারে কজা করে ফেলেছ। 

আনিকা বলল, আমার সমস্যা হচ্ছে, আমি যাদেরকে কজা করতে চাই তাদের কজা করতে পারি নাআর যাদের কজা করার আমার কোনাে প্রয়ােজন নাই, তারা কীভাবে কীভাবে যেন কজায় চলে আসে। 

খারাপ কী ? কেউ না কেউ তাে কজায় আসছে। 

খারাপ বলছি না তাে! ইয়েলাে ক্যাবের ড্রাইভারের কথা তােমার মনে আছেকোন ড্রাইভার

আকবর নামযার গাড়িতে করে তােমাকে তুলে মগবাজার কাজি অফিসে গিয়েছিলামসে এখন কজায় চলে এসেছেআমি যাতে গান শুনতে পারি, সেজন্যে সে তার গাড়ির ক্যাসেটপ্লেয়ার ঠিক করেছেমাঝেমধ্যেই সে বাসায় চলে আসে, আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবার জন্যে। 

বিনা পয়সায় ট্যাক্সি চড়ায়, নাকি টাকা নেয় ? টাকা নেয়ট্যাক্সিড্রাইভার ছাড়া আরাে একজনকে কজা করেছি। 

নাম জামালখামারের মালিকগরুছাগল পুষেপুকুরে মাছ চাষ করেকাল সন্ধ্যায় আমাদের বাসায় চা খেতে এসেছিলতার চোখের দৃষ্টি দেখে বুঝেছি, আমাকে তার অসম্ভব মনে ধরেছেআমি খুবই অবাক হয়েছি। 

অবাক হবার কী আছে? তুমি কি মনে ধরার মতাে মেয়ে না

যদিও সন্ধ্যা -(শেষ)-পর্ব)-হুমায়ূন আহমেদ

এক সময় হয়তাে ছিলাম, এখন নাইআমার চেহারা কথাবার্তা সব কেমন জানি শুকনা হয়ে গেছেদশটাপাঁচটা চাকরি করি বলে হয়তাে এরকম হয়েছে। 

শওকত জবাব দিল নাআনিকা কেমন যেন দুঃখী দুঃখী মুখ করে বসে আছেতার মুখ দেখে মায়া লাগছে । 

আনিকা ছােট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তােমার ছেলে কবে যাবে ? পরশুমন খারাপ

শওকত জবাব না দিয়ে উঠে দাঁড়াল আনিকাকে দেখে সে খানিকটা স্বস্তি বােধ করছেঘণ্টা দুইতিন সময় তার আসলেই দরকারপত্রিকা অফিসে যেতে হবেইলাসট্রেশনের কাজ করে দিয়ে আসতে হবেদেরি হয়ে গেছেমাসুম সাহেব এই দেরি সহজভাবে নেবেন বলে মনে হয় নামেজাজ গরম মানুষহুট করে বলে বসতে পারেন আপনাকে আমাদের দরকার নেইআপনি আপনার পথ দেখুনআমরা আমাদের পথ দেখবইলাসট্রেশন হিসেবেকাকের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং চালাচ্ছেন

কাকবক দিয়ে আর চলবে নামাসুমসাহেবের সঙ্গে দেখা করারও আগে ইমনের মাসঙ্গে দেখা করা দরকারছেলের জন্মদিনে উপস্থিত থাকার নিমন্ত্রণইমন বলছে তার মা আসবে নাকিন্তু শওকতের ধারণা সে আসবেঅনেকদিন ছেলেকে দেখে নিবিশেষ একটি দিনে ছেলের সঙ্গে থাকার সুযােগ সে নষ্ট করবে নারেবেকা কঠিন মেয়ে, কিন্তু এত কঠিন না। 

যদিও সন্ধ্যা -(শেষ)-পর্ব)-হুমায়ূন আহমেদ

ইমন খুবই ব্যস্ত দুই কচ্ছপের দৌড় প্রতিযােগিতার আয়ােজনেআনিকা এই বিষয়ে তাকে সাহায্য করছেমেঝেতে চক দিয়ে দুটা লাইন টানা হয়েছেকচ্ছপ দুটিকে একসঙ্গে ছাড়া হচ্ছেদুজনের একজন সােজাসুজি যাচ্ছে, অন্যজন শুরুতেই নব্বই ডিগ্রি টার্ন করছে

ইমন এবং আনিকা দুজন হাল ছাড়ার পাত্র নাতারা চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছেআনিকা শুকনা মরিচের গুঁড়া এনে কচ্ছপের দৌড়ের জায়গা ছাড়া অন্য সব দিকে ছড়িয়ে দিয়েছেএতে তেমন কোনাে লাভ হয় নিশুকনা মরিচ ছড়ানাে জায়গায় কচ্ছপ যাচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু তারা দুজনই দৌড়ানাে বন্ধ করে দিয়েছে। 

আনিকা বলল, দাঁড়াও, আমার মাথায় আরেকটা বুদ্ধি এসেছেএই বুদ্ধিতে মনে হয় কাজ হবে। 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *