রূপার পালঙ্ক-হুমায়ূন আহমেদ-(পর্ব-১১)

আপনি আমার সঙ্গে যত খারাপ ব্যবহারই করেন না কেন আপনাকে কিছুতেই খারাপ লােক বলা যাবে নাআপনি আসলে অতি মহৎ ব্যক্তিমেসের ম্যানেজারী করে ধর্ম কর্ম করলে এতদিনে বড় সাধু হয়ে যেতেনরূপার পালঙ্ক 

মােবারক বসলতার খুবই ভাল লাগছেমনে হচ্ছে সে ভাবের জগতে চলে এসেছেএকা একা এসেছে বলে সামান্য মন খারাপ হচ্ছেশাল এবং স্যুয়েটার কেনা হয়ে গেলেই জহির এবং বজলুকে খুঁজে বের করতে হবেদুপুরে পুরনাে ঢাকায় গিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানী খাওয়া যায়কাচ্চি বিরিয়ানী সঙ্গে চিকেন কোরমারাতে ছাতিম গাছের নিচে ভাল জিনিস নিয়ে বসতে হবেবিদেশী জিনিসসমস্যা হচ্ছে সন্ধ্যার পর বড় সাহেব কথা বলবেনউনার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে আসতে হবে। দাদিজানের কথা বলে ছুটি নিতে হবেবিদেশ যাবার আগে মুরুব্বীদের দোয়াতাে নিতেই হবেবড় সাহেব আপত্তি করবেন বলেতাে মনে হয় না। 

শালের দোকানের সেলসম্যান বলল, স্যার বলুন কোন প্রাইস রেঞ্জের ভেতর মাল দেখাব। 

মােবারক বলল, ভাল কিছু দেখান। আমি আমার দাদিজানের জন্যে কিনছিবুড়াে মানুষ কয়দিন আর বাঁচবে। একটা ভাল শাল গায়ে দিয়ে 

মরুক। 

কালার কী দেখাব স্যার? কালার কোনাে ব্যাপার নাদাদিজান চোখে দেখেন নাচোখে দেখেন বলেই জিনিসটা হতে হবে সুপার ফাইনযেন হাত দিলেই কোয়ালিটি বােঝা যায়। 

মাখনের মত মােলায়েম শাল দেখাবহাতে নিলে মনে হবে শাল হাতের মধ্যে গলে যাচ্ছেপাহাড়ি কচি ভেড়ার গায়ের পশমের শালতাও সব পশম নাপেটের পশম পিঠের পশমের না । 

পিঠের পশমের সমস্যা কী

পিঠে সূর্যের আলাে বেশি পড়ে, পশম শক্ত হয়ে যায়দাম স্যার সামান্য বেশি পড়বে। তবে জিনিসের মত জিনিস। 

দেখি কেমন জিনিস। বুড়িকে কোনােদিন কিছু দেয়া হয় নাদেব যখন ভাল জিনিসই দেই আর আপনার এখানে ভাল স্যুয়েটার আছে ? 

পিওর আফগান উলের স্যুয়েটার আছেশুধু স্যুয়েটার গায়ে দিয়ে বরফের চাঙে শুয়ে থাকতে পারবেনকিচ্ছু হবে না। বরং গরমে ঘামাচি হয়ে যাবে। 

আমার দুই বন্ধুর জন্যে দুটা ভাল স্যুয়েটার বের করেনআপনার এখানে সিগারেট খাওয়া যায়

জ্বি না স্যারকাপড়ের দোকানতােতবে আপনি খান অসুবিধা নেইদাঁড়িয়ে আছেন কেন বসুন। 

বজলু বা জহির কাউকেই পাওয়া গেল নাবজলু যে বাসায় থাকে সে বাসায় এক ভদ্রলােক বের হয়ে কঠিন গলায় বললেন, বজলু নামে কেউ 

এখানে থাকে না। 

মােবারক বলল, কতদিন ধরে থাকে না! অনেক দিন কোথায় থাকে জানেন? জানি না । 

আমি বজলুর ফ্রেন্ডতার জন্যে একটা চাকরির খোজ এনেছিবান্দরবানে ফরেস্টে মাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতন। বেতনের বাইরে এক্সট্রা ইনকামও আছে। আজকের মধ্যেই ছবিসহ বায়ােডাটা জমা দিতে হবেযদি একটু কাইন্ডলি বলেন, কোথায় গেলে তাকে পাব। 

কোথায় গেলে পাবেন আমি জানি না। 

দ্রলােক ঘরে ঢুকে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলেনমােবারকের মন সামান্য খারাপ হলদ্রলােক যদি তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতেন তাহলে ভদ্রলােকেরই লাভ হতএক প্যাকেট বেনসন সিগারেট পেয়ে যেতেন। 

প্যাকেট আশি টাকাপ্রতিটা সিগারেট চার টাকাখারাপ কী

জহিরও বাসায় নেইজহিরের বাবা বারান্দায় বসে ছিলেনমােবারকের সঙ্গে তার কয়েকবার দেখা হয়েছে, তারপরেও তিনি মােবারককে চিনতে  পারলেন নামনে হয় চোখে ছানী পড়েছেছানী পড়া লােকজন রােদের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালবাসেএই লােকও রােদের দিকে তাকিয়ে আছে। 

তুমি জহিরের বন্ধু? জ্বি। 

অদ্ভুত কথা বললাজহিরের কোনাে বন্ধু আছে বলেতাে জানতাম না। জহিরের আছে শত্রুবাসায় নাই

নাইসকালে রক্ত বমি করেছেখবর শুনে দৌড় দিয়ে গেলামআমাকে বলেরক্ত না বাবাপানের পিক। 

জর্দা দিয়ে পান খেয়েছি সেই পানের পিক। আরে ব্যাটা তুই আমারে পানের পিক শিখাসকোনটা রক্ত কোনটা পানের পিক আমি জানি না ? 

ডাক্তারের কাছে গিয়েছে

কি আর যেতে চায়আমার বড় ছেলে বলতে গেলে কানে ধরে নিয়ে গেছে। 

কোন ডাক্তারের কাছে গিয়েছে জানেন

জানি নাতােমারে একটা কথা বলি— ডাক্তারে এখন তার কিছু হবে নাতুমি যদি চার পাঁচটা ডাক্তার পানিতে গুলে তাকে খাইয়ে দাও তারপরও কিছু হবে নাআজকে মুখ দিয়ে রক্ত পড়বে, কাল পড়বে নাক দিয়ে, তারপর পড়বে কান দিয়েতুমি যখন বলছ তুমি তার বন্ধু তাহলেতাে সবই জান। 

মােবারক অত্যন্ত বিনয়ের সলে বলল, চাচাজী আমি আসলে কিছু জানি স্কুলে তার সঙ্গে পড়েছিবিদেশে চলে গিয়েছিলামঅল্প কিছুদিন হল ফিরেছি। 

তাহলেতাে তুমি ঘটনা কিছুই জান নাজ্বি নাকিছু জানি নাআমার ছেলে উচ্ছন্নে গেছেবলেন কী

পরশু রাতে তিনটার সময় বাসায় ফিরেছেআমি দরজা খুলে দিলামআমাকে চিনে নাআমাকে বলেহ্যালাে আপনি কে ? কাকে চান

সর্বনাশনিজের বাবাকে বলে হ্যালাে হ্যালাে আপনি কে

বাইরের লােককে এইসব কথা বলতে ভাল লাগে না। তুমি ওর বন্ধুতােমাকে বললামরােজগার নাই, রােজগারের চেষ্টা নাই নেশা ভাং করে । 

| মােবারক এক প্যাকেট সিগারেট বাড়িয়ে দিল বিনীত গলায় বলল, বিদেশ থেকে তেমন কিছু আনতে পারি নাই চাচাজীআপনার জন্যে এক প্যাকেট সিগারেট। 

বৃদ্ধ স্তম্ভিত হয়ে গেলেনকাপা কাঁপা গলায় বললেন, মানুষের ছেলে পুলে দেশে বিদেশে যায়কত কিছু আনে– আর আমারটাকে দেখরক্তবমি করে। পাতলা পায়খানা করেসব কপাল। ভাঙ্গা কপাল । 

মােবারক বলল, চাচাজী নেনবৃদ্ধ ধরা গলায় বললেন, আবার কী? একটা লাইটার। 

তােমার নামটা যেন কী বাবাচেহারা মনে আছেছােট বেলায় দেখেছি নাম মনে পড়ছে নাস্মৃতিশক্তি গেছেযার ঘরে এমন আজদহা তার স্মৃতিশক্তি থাকবে কেন? তুমিই বল থাকার কোনাে কারণ আছে

জ্বি নাবাবা তােমার নামটা বল ? আমার নাম মােবারকএইতাে মনে পড়েছে মােবারকমালয়েশিয়া গিয়েছিলে তাই না? জ্বি নাএখন মনে পড়েছেকুয়েতজি না সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলাম। 

হ্যা হ্যা সুইজারল্যান্ডএখন মনে পড়েছেযাওয়ার আগে দেখা করে দোয়া নিলে। 

জ্বি হ্যাবিবাহ করেছ ? জ্বি না। 

দেশে যখন এসেছ বিবাহ করদেশের একটা মেয়ের গতি থােকআমার আজদহা যে বিয়ে করে ঘর সংসার করবে এই আশা করি নাএখন পরের ছেলের বিবাহ দেখে শান্তি পাওয়া । 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *