রোমান সভ্যতার ইতিহাস জেনে নিন

রোমান সভ্যতার ইতিবৃত্ত

আধুনিক ইতালির রাজধানী রোমকে কেন্দ্র করে প্রাচীনকালে গড়ে উঠেছিল এক শক্তিশালী এবং জাঁকজমকপূর্ণ সভ্যতা । এটাই ইতিহাসে ‘রোমান সভ্যতা’ নামে পরিচিত ।রোমান সভ্যতারোম নগরীর কথা

রোম নগরী ঠিক কখন তৈরি হয়েছিল, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না । তবে জানা যায় যে, আজ থেকে প্রায় ৩,০০০ বছর আগে ‘ল্যাটিন’ নামের এক গোত্রের লোকেরা মধ্য ইতালির টাইবার নদীর তীরবর্তী পাহাড়ে বসতি গড়ে তুলেছিল ।খ্রিস্টপূর্ব আট শতকের কোনো এক সময়ে ল্যাটিনদের এসব বসতি একত্র হয়ে একটি রাজ্য স্থাপিত হয় । তখন ঐ রাজ্যের রাজা ছিলেন রোমিউলাস । তার নামানুসারে রাজ্যের মূল নগরীর নামকরণ করা হয় ‘রোম’ । সময়ের সাথে সাথে রোমের বিস্তার ঘটতে থাকে এবং পরবর্তী ৭০০ বছরের মধ্যে এটি এক বিশাল সামাজ্যে পরিণত হয় ।

জুলিয়াস সিজার

খ্রিস্টপূর্ব ১৩ জুলাই ১০০ অব্দ-খ্রিস্টপূর্ব ১৫ র্মাচ ৪৪ অব্দ

জুলিয়াস সিজার ছিলেন প্রাচীন রোমের এক বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় সামরিক নেতা । ইউরোপে রোমান সাম্রাজের সিস্তারে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল । বিশেষ করে গল (বর্তমান ফ্রান্স) বিজয়ের নায়ক হিসেবে রোমে তার জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায় । খ্রিস্টপূর্ব ১৫ র্মাচ ৪৪ অব্দে সিনেটের অধিবেশন চলাকালে ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াসের নেতৃত্বে একদল সিনেটর জুলিয়াস সিজারকে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে । জুলিয়াস সিজারের উদ্যোগে রোমান ক্যালেন্ডার সংশোধন করা হয়, যা ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ নামে পরিচিত । এটি ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চালু হয়েছিল । এ ক্যালেন্ডার অনুসারে বছরে ৩৬৫ দিনের সাথে প্রতি চার বছরে একবার ফ্রেব্রুয়ারি মাসে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয় । জুলিয়াস সিজার নিজেকে সম্রাট ঘোষণা না করলেও পরবর্তীকালে ইউরোপের দুটো দেশের সম্রাটদের উপাধি নেয়া হয়েছিল তার নাম থেকে – জার্মানির ‘কাইজার’ এবং রাশিয়ার ‘জার’ ।

ঐতিহাসিক দাস বিদ্রোহ

রোমে যখন দ্বিতীয়বার গৃহযুদ্ধের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছিল, ঠিক তখন অর্থাৎ ৭৩-৭১ খ্রিস্টপূর্বেব্দে স্পার্টাকাসের (Srartacus) নেতৃত্বে রোমে সংঘটিত হয় ভয়াবহ দাস বিদ্রোহ, যা ইতিহাসে সর্ববৃহৎ দাস বিদ্রোহ হিসেবে পরিচিত । স্পার্টাকাস ছিলেন একজন অবিসংবাদিত নেতা, দক্ষ সংগঠক ও সামরিক অধিনায়ক । বাল্যকালে ক্রীতদাস হিসেবে তিনি রোমে আনীত হয়েছিলেন । তার জন্মস্থান হচ্ছে থ্রেস (Thrace) । স্পার্টাকাসের উদ্দেশ্য ছিল দাসদেরকে মুক্ত করে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো এবং তাদের অধিকার আদায় করা । কিন্তু ৭১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমানদের সাথে যুদ্ধে স্পার্টাকাস বাহিনী পরাজিত হয় । তবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাহসিকতার সাথে ‍যুদ্ধে করে স্পার্টাকাস যুদ্ধ ক্ষেত্রেই মৃত্যুবরণ করেন । ঐতিহাসিক এ দাস বিদ্রোহ রোমের সমাজ ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় রকমের প্রভাব ফেলেছিল । কারণ রোমান শাসকদের বিরুদ্ধে ক্রীতদাসদের এ বিদ্রোহ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল ।

ত্রীয় শাসন

৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জুলিয়াস সিজারের মৃত্যুর পর রোমে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে । ৪৪-৪২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এ যুদ্ধের ব্যাপ্তি ছিল । যুদ্ধে জয়ী হয়ে একযোগে ক্ষমতায় আসেন তিন নেতা – জুলিয়াস সিজারের ভাইপো (মতান্তরে বোনের ছেলে) এবং দত্তক পুত্র অক্টেভিয়ানাস ‍সিজার (Octavian Caesar), জুলিয়াস সিজারের বন্ধু মার্ক অ্যান্টনি (Mark Antony) এবং লেপিডাস (Lepidus) প্রাচিন রোমে তিনজনের মিলেত এ শাসন ‘ত্রীয় শাসন’ (Triumvirate) নামে খ্যাত ।

‘ত্রীয় শাসন’ বেশি দিন টেকেনি । ৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে অক্টোভিয়ানাস সিজার ‘অগাস্টস (প্রথম সম্রাট) সিজার’ উপাধি গ্রহণ করেন । ইতিহাসে এ নামেই তিনি বেশি পরিচিত । অগাস্টাস সিজারের রাজত্বকালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্টের জন্ম । অগাস্টস সিজার ১৯ আগস্ট ১৪ খ্রিস্টব্দে মারা যান ।

THE GREAT FIRE OF ROME

১৬ জুন ৬৪ খ্রিস্টাব্দে রোমে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে । ইতিহাসে এটি The Great Fire of Rome নামে পরিচিত । তখন রোম ছিল ঘনবসতিপূর্ণ কাঠের তৈরি ঘিঞ্জি নগরী, যা ছিল অগ্নিকান্ডের জন্য যতেষ্ট সহায়ক । এ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছিল সার্কাস মেক্সিমাসের্ এক দোকান থেকে । অগ্নিকান্ডে শত শত মানুষ মারা যায়, গৃহহীন হয় হাজার হাজার । তখন রোমের সম্রাট ছিলেন নিরো ক্লডিয়াস । কথিত আছে, Nero played fiddle while Rome was burning । একে আমরা বাংলায় বলি, ‘রোম যখন পুড়ছিল নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল’ ।

৬৮ সালের জুনের প্রথম সপ্তাহে সিনেটে নিরোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে তাকে ‘গণবিরোধী সম্রাট’ হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করা হয় । নিজের বন্দি হওয়া ও শাস্তি কার্যকর অত্যাসন্ন জেনে ৯ জুন ৬৮ খ্রিস্টাব্দে গলায় ছুরি বসিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন নিরো । মৃত্যুকালে তার শেষ কথা ছিল What an artist dies in me!

নিরোর মৃত্যুর পর রোমে চরম বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতার সৃষ্টি হয়, শুরু হয় গৃহযুদ্ধ । তার মৃত্যুর পরের বছরই চারজন সম্রাট সিংহাসনে আরোহণ করেন । সেজন্য ৬৯ সাল Year of Four Emperors হিসেবে খ্যাত ।

কনস্ট্যান্টাইন দ্য গ্রেট

রোমান সেনা কর্মকর্তা ফ্লাভিয়াস ভেলেরিয়াস কনস্ট্যান্টাইন- এর পুত্র ছিলেন ফ্লাভিয়াস ভেলেরিয়াস আয়লোরিয়াস কনস্ট্যান্টানিয়াস অগাস্টাস । তিনি ছিলেন ৫৭তম রোমান সম্রাট । ইতিহাসে তিনি প্রথম কনস্ট্যান্টাইন বা সেইন্ট কনস্ট্যান্টাইন নামে পরিচিত । ২৫ জুলাই ৩০৬ খ্রি.-২২ মে ৩৩৭ খ্রি. পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা এ রোমান সম্রাট তার সময়ে অনেক সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক সংস্কার করেন । যা শুধু সমকালীন ইতিহাসে নয়, এখন পর্যন্ত সুদূরপ্রসারী প্রভাব রেখে চলেছে । ক্রিশ্চিয়ানিজম বা ক্যাথলিজম, পৃথিবীর বৃহত্তম এ সংগঠনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা কনস্ট্যান্টাইন! কনস্ট্যান্টাইনকে বলা হয় ইতিহাসের ‘প্রথম ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্রাট’ । প্রথম কনস্ট্যান্টাইন খ্রিস্ট ধর্মুকে রাষ্ট্রীয়করণ করেন । তিনি বাইবেল আপ-টু-ডেট, মানে সোজা কথায় সংস্কারের ঘোষণা দেন । ভ্যাটিকান সিটির প্রায় তাবৎ ক্ষমতা কনস্ট্যান্টাইনের প্রদত্ত ।

রোমান সভ্যতার পতন

অগাস্টস সিজারের মৃত্যুর পর রোমজুড়ে দেখা দেয় অরাজকতা । বিদেশি আক্রমণের দাপট বাড়তে থাকে । ক্ষয় পেতে থাকে রোমানদের শক্তি । জার্মানির বর্বর গোত্রগুলো আক্রমণ তীব্র হতে থাকে । রোমের শেষ সম্রাট রোমিউলাস অগাস্টুলাস এ আক্রমণের মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হন । অবশেষে ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে চূড়ান্তভাবে রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে । আর এর মাধ্যমে রোমান সভ্যতার অবসান ঘটে ।

প্রাচীন রোমের সমাজ

প্রাচীন রোমের সমাজ ছিল সম্পূর্ণ পুরুষশাসিত এবং দাস শ্রমের ওপর নির্ভরশীল । একই সাথে এটা ছিল যোদ্ধাদের সমাজ । নাগরিকদের প্রতি, বিশেষত অভিজাত প্যাট্রিশিয়ানদের প্রতি এ সমাজ ছিল অত্যন্ত উদার । নাগরিক বলতে পুরুষদেরকেই বোঝাত, কেননা রাষ্টীয় বা সামাজিক জীবনে নারীদের কোনো ভূমিকা ছিল না । রোমান সমাজে দাসদের দুর্দশা ও প্লেবিয়ানদের দারিদ্র্যের পাশাপাশি চলত ধনী প্যাট্রিশিয়ানদের বিলাসবহুল অপব্যয়ী জীবন ।

রোমান আইন :

বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে রোমানদের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদান হচ্ছে আইন প্রণয়ন । খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রোমানরা ফৌজদারী ও দেওয়ানি আইনগুলো সুষ্ঠুভাবে একসাথে সাজাতে সক্ষম হন । খ্রিস্টপূর্ব ৫৪০ অব্দে ১২ ব্রোঞ্জ পাতে সর্বপ্রথম আইনগুলো খোদাই করে লেখা হয় এবং জনগণেকে দেখাবার জন্য প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয় । ‘দ্বাদশ তালিকা’ (Twelve Tables) নামে পরিচিত এ লিখিত আইন সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত হতে থাকে । রোমান আইনকে তিনটি শাখায় ভাগ করা হয় – বেসামরিক আইন, জনগণের আইন ও প্রাকৃতিক আইন ।

পরবর্তী কয়েকশ’ বছরে রোমান আইন ক্রমশ একটি সভ্য সমাজের উপযোগী আইনে পরিণত হয় । এ আইনে মানুষের সম-অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয় এবং কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে নির্দোষ বলে ধরে নেয়ার নীতি গৃহীত হয় । এ আইনে কিছু মৌলিক মানবাধিকারেরও স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল । এসব কারণেই রোমান আইনকে আধুনিক পাশ্চাত্য আইনের ভিত্তি বলা হয় ।

 

পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতা  রোমান সভ্যতা  পর্ব-২ :

ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে অধিকতর ক্ষমতাশী হিসেবে পরিচিত ছিল রোমান সভ্যতা। দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় রোমান সভ্যতা রাজতন্ত্র থেকে একটি সম্ভ্রান্ত প্রজাতন্ত্রে রূপ লাভ করে । প্রায়শই প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার সাথে রোমান সভ্যতাকে উচ্চমানের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ভিত্তিত্বে একত্রে গ্রেকো-রোমান বিশ্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে । দক্ষিণ ইউরোপ, পশ্চিম ইউরোপ, এশিয়ার মাইনর, উত্তর আফ্রিকা, উত্তর ইউরোপ, পূর্ব ইউরোপের একাংশকে কেন্দ্র করে রোমান সভ্যতা গড়ে উঠেছিল ।রোমান সভ্যতা  পর্ব-২

  • প্রাচীন রোমান সভ্যতার সূচনা হয়েছিল – বর্তমান ইতালির উত্তর ভূখন্ডে ইন্দো-ইউরোপীয় এক জাতি (২০০০ খ্রিঃপূর্বাব্দে) কর্তৃক ।
  • রোমান সভ্যতার গোড়াপত্তনকারী জাতিরা নামে পরিচিত ছিল – ’ল্যাটিন’ নামে এবং এই জাতির ভাষার নামও ছিল ‘ল্যাটিন ভাষা’ ।
  • যে ব্যাক্তির নামানুসারে রোম নগরীর নামকরণ করা হয়েছিল – প্রাচীন এই জাতির এক রাজা ‘রোমিউলাসের’ নামানুসারে (তিনি প্রাচীন রোমের প্রথম সম্রাট) ।
  • প্রাচীন এই নগর সভ্যতাটি যে নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল – টাইবার নদীর তীরে ।
  • রোমে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠের আগে এই অঞ্চলে যারা আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল – ‘ইট্টুস্কান’ নামক জাতির লোকেরা ।
  • প্রাচীন রোমে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল – ৫১০ খ্রিঃপূর্বাব্দে (এসময় রোমে একটি আইনসভা ও সিনেট ছিল) ।
  • প্রাচীন রোমান সভ্যতার যে অঞ্চলে ‘এড্রিয়া’ নামক সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠেছিল – ইতালির উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ।
  • বর্তমানে যে সাগরটি প্রাচীন রোমে ‘এটুস্কান’ সাগর নামে পরিচিত ছিল ’ভূমধ্যসাগর’ যা বর্তমান ইতালির পশ্চিমাংশে অবস্থিত ।
  • রোমান সভ্যতার প্রধান অর্থনৈতিক কার্যক্রম যে নির্ভর ছিল – কৃষি নির্ভর অর্থনীতি ।
  • নানা উত্থান-পতনের মাধ্যমে প্রাচীন রোম নগরী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল – ৭৫৩খ্রিঃপূর্বাব্দে ।
  • রোমকে যে কারণে সাত পাহাড়ের নগরী বলা হয় – সাতটি পর্বতশ্রেণির উপর এই নগরী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে (টাইবার নদী থেকে ১২-১৩ মাইল দক্ষিণে এই নগরীটি অবস্থিত) ।
  • প্রাচীন রোমান সভ্যতায় যত খ্রিঃপূর্বাব্দ পর্যন্ত রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল – ৭৫৩-৫১০ খ্রিঃপূর্বাব্দ পর্যন্ত (এই সময়কে রোমের রাজতন্ত্রের যুগ বলা হয়) ।
  • রোমান সভ্যতার রাজতন্ত্রের সময়ে মোট যতজন সম্রাট দেশ শাসন করেছিলেন – ৭ জন সম্রাট ।

পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতা

  • যে রাজাকে পরাজিত করে রোমে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল – সম্রাট টারকিউনিয়াস সুপারকাসকে ক্ষমতাচ্যুত করার মধ্যদিয়ে ।
  • প্রাচীন রোমান সভ্যতায় যত সময় পর্যন্ত প্রজাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল – ৫০০ থেকে ৬০ খ্রিঃ পূর্বাব্দ পর্যন্ত ।
  • রাজতন্ত্রের পতনের পর রোমের জনগণ যতটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে – দুই শ্রেণিতে (একদিকে প্যাট্রিসিয়ান অভিজাত শ্রেণি অপরদিকে প্লিবিয়ান বা সাধারণ নাগরিক) ।
  • রোমান সভ্যতায় দীর্ঘ যত বছর প্যাট্টিসিয়ান ও প্লিবিয়ানদের মধ্যে সংঘাত চলেছিল – দীর্ঘ ২০০ বছর ।
  • যে সভ্যতার শাসকের সর্বপ্রথম লিখিত আইন ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছিল – রোমান সভ্যতার শাসকেরা ।
  • প্রাচীন রোমে প্লিবিয়ানরা ব্রোঞ্জপাতে সর্বপ্রথম যতটি আইন প্রণয়ন করেছিল – ১২ টি আইন (প্লিবিয়ানদের অধিকার রক্ষার জন্য আইনগুলো লিখিত হয়েছিল) ।
  • যে সময়কে রোমান সভ্যতার অন্ধকার যুগ বলা হয়ে থাকে – ১৪৬ থেকে ৪৬ খ্রিঃ পূর্বাব্দ সময়কালকে ।
  • প্রাচীন রোমান সভ্যতার দাস শ্রেণির লোকেরা যারা নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল – স্পার্টাকাসের নেতৃত্বে ।
  • রোমান দাস বিদ্রোহের নেতা স্পার্টাকাস মৃত্যুবরণ করেছিল – ৭১ খ্রিঃ পূর্বাব্দে (দুই বছর দাস বিদ্রোহ স্থায়ী ছিল) ।
  • রোমান ত্রয়ী শাসকের মধ্যে ছিলেন – অক্টোভিয়াস সিজার, মার্ক এন্টনি ও লেপিডাস ।

পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতা  রোমান সভ্যতা  :

  • এই তিন শাসক প্রাচীন রোম সভ্যতার যে যে অঞ্চল শাসন করেছিলেন – লেপিডাস ছিলেন আফ্রিকার প্রদেশসমূহের, অক্টেভিয়াস সিজার ছিলেন ইতালিসহ সাম্রাজ্যের পশ্চিম অংশের এবং এন্টনি ছিলেন পূর্ব অঞ্চলের দায়িত্বে ।
  • রোমান সম্রাট মার্ক এন্টনি যাকে বিবাহ করে ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিলেন – মিশরের রানি ক্লিওপেট্রাকে ।
  • মার্ক এন্টনিকে পরাজিত করে অক্টেভিয়াস সিজার যে নাম গ্রহণ করেছিলেন – অগাস্টাস সিজার ।
  • রোমান সম্রাট জুলিয়াস জন্মগ্রহণ করেন – ১৩ জুলাই, ১০১ অথবা ১০০ খ্রিঃ পূর্বাব্দে ।
  • ’এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ কোন রোমান সম্রাট উক্তিটি করেছিলেন – জুলিয়াস সিজার (সহজে ব্রিটেন দখল করে এ কথাটি বলেছিলেন) ।
  • জুলিয়াস সিজার মৃত্যুবরণ করেন – ১৫ মার্চ, ৪৪ খ্রিঃ পূর্বাব্দে (ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তাকে হত্যা করা হয়েছিল) ।
  • শেষ রোমান সম্রাট ছিলেন – রোসিউলাস অগাস্টুলাস (জার্মান বর্বর জাতির কাছে তাঁর পরাজয় ঘটে) ।
  • আধুনিক সামরিক সংগঠন, শাসন পরিচালনা আইন ও প্রকৌশলবিদ্যায় যে সভ্যতা সবচেয়ে বেশি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল – রোমান সভ্যতা ।
  • রোমান সভ্যতার বিখ্যাত সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন – প্লুটাস ও টেরেন্স (দু’জনই মিলনাত্মক নাটক রচনার ক্ষেত্রে কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন) ।
  • যে শাসকের সময় রোমান সাহিত্য সবচেয়ে বেশি উন্নতি লাভ করেছিল – অগাস্টাস সিজারের রাজত্বকালে ।
  • অগাস্টাস সিজারের শাসনামলে বিখ্যাত সাহিত্যিক ছিলেন – হোরাস ও ভার্জিল এছাড়া ওভিদ ও লিভি অন্যতম (লিভি ইতিহাসবিদ হিসেবেও বিখ্যাত ছিলেন) ।
  • রোমান সভ্যতার সময়ে রচিত বিখ্যাত মহাকাব্য ‘ইনিড’ কে রচনা করেছিলেন – ভার্জিল (যা বহু ভাষাতে অনুবাদ করা হয়েছে) ।
  • বিখ্যাত সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন বিখ্যাত ধর্মমন্দির ‘প্যানথিয়ন’ যে নির্মাণ করেছিলেন – সম্রাট হার্ডিয়ান ।
  • রোমান স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শন ‘কলোসিয়াম’ নাট্যশালা নির্মিত হয়েছিল – ৮০ খ্রিষ্ট্রব্দে, রোমান সম্রাট টিটাস কর্তৃক ।
  • নাট্যশালা ‘কলোসিয়ামে’ একত্রে যত সংখ্যক দর্শক বসতে পারতেন – ৫৬০০ জনেরও বেশি ।

পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতা  রোমান সভ্যতা  :

  • যে সভ্যতার বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম বিজ্ঞান বিষয়ক বিশ্বকোষ প্রণয়ন করেন – রোমান সভ্যতার বিজ্ঞানীরা ।
  • রোমান সভ্যতায় বিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ছিলেন – বিজ্ঞানী সেলসাস, এছাড়া গ্যালেন রুফাসে অন্যতম ছিলেন ।
  • রোমান সভ্যতার মানুষেরা যে সভ্যতার মানুষের ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন – গ্রিক সভ্যতার ধর্ম দ্বারা ।
  • রোমানদের অন্যতম প্রধান দেবতার নাম ছিল – জুপিটার (সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এই দেবতাকে বিশেষভাবে স্বরণ করা হতো) ।
  • রোমান সভ্যতার অন্যতম দেব- দেবীর মধ্যে ছিল – জুনো, নেপচুন, মারস্, ভলকান, ভেনাস,মিনার্ভা প্রভৃতি ।
  • রোমান সভ্যতার মানুষের ধর্ম বিশ্বাস যেমন ছিল – তাদের পরকালের প্রতি কোন বিশ্বাস ছিল না ।
  • যে রোমান সম্রাটের সময় থেকে সম্রাটকে ঈশ্বর হিসেবে পূজা করার রীতি চালু করেন – সম্রাট অগাস্টাস সিজারের সময় থেকে ।
  • খ্রিষ্টধর্মকে যে রোমান সম্রাট রোমের সরকারি ধর্মে পরিণত করেন – সম্রাট কন্সটানটাইন (তিনি নিজেও খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিল) ।
  • রোমান সভ্যতার বিখ্যাত দার্শনিক ছিলেন – সিসেরো ও লুক্রেটিয়াস (সময়কাল -৯৮-৫৫ খ্রিঃ পূর্বাব্দ) ।
  • প্রাচীন রোমে ‘স্টোইকবাদী’ দর্শন সর্বপ্রথম প্রচার করেছিলেন – দার্শনিক প্যানেটিয়াস, ১৪০ খ্রিঃ পূর্বাব্দে ।
  • বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে রোমানদের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল – লিখিত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ।
  • রোমানসাম্রাজ্যে ফৌজদারি ও দেওয়ানি আইনগুলো খোদাই করে জনগণকে দেখাবার জন্য ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল – খ্রিঃ পূর্ব ৫৪০ অব্দে ।
  • রোমান সভ্যতায় যাকে এই আইনের অন্যতম প্রণেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে – সম্রাট সিসেবোকে ।
  • রোমান আইন যতটি শাখায় বিভক্ত ছিল – তিনটি শাখায় (বেসামরিক আইন, জনগণের আইন এবং প্রাকৃতিক আইন) ।
  • যে সম্রাট আইন সমস্ত রোমান আইনের সংগ্রহ ও সংকলন প্রকাশ করেন – সম্রাট জাস্টিনিয়ান, খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতকে ।
  • রোমান সভ্যতার যে সঙ্গীত প্রিয় সম্রাট সঙ্গীত শুনতে শুনতে প্রাণত্যাগ করেছিলেন – সম্রাট লিওপোন্ড ।
  • জুলিয়াস সিজারের মৃত্যুর পর রানি ক্লিওপেট্রা যার সাথে প্রণয় ঘটান – মার্ক এন্টনির সাথি ।
  • রোমান সম্রাট অগাস্টাস সিজারের হাতে এন্টনির পতন হলে রানি ক্লিওপেট্রার যে পরিণতি হয়েছিল – রানি সর্পদংশনে আত্মহত্যা করেছিলেন ।

পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতা  রোমান সভ্যতা  :

  • প্রাচীন রোমে অভিজাত শ্রেণি ও সাধারণ জনতা নিয়ে যে আইন পরিষদ গঠন করা হয়েছিল – অভিজাতদের নিয়ে ‘সিনেট’ এবং সাধারণদের নিয়ে ‘জনগণের পরিষদ’ গঠিত হয়েছিল ।
  • যে সময় পর্যন্ত প্রাচীন রোম পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম নগরী ছিল – খ্রিঃ পূর্ব ১০০-৪০০ খ্রিঃ পূর্বাব্দ পর্যন্ত ।
  • রোমান সভ্যতার তৎকালীন জনসংখ্যা ছিল – ৫০-৯০ মিলিয়ন (যা তৎকালীন সমগ্র পৃথিবীর জনসংখ্যার ২০% ছিল) ।
  • রোমান সভ্যতার রাজধানী ছিল – ‘কন্সটান্টিনোপল’ (৩৩০ খ্রিঃ পূর্বাব্দ থেকে এটি রাজধানী হিসেবে স্বীকৃত ছিল) ।
  • প্রাচীন রোমান সভ্যতায় সুদীর্ঘ প্রজাতন্ত্র বিদ্যমান ছিল – দীর্ঘ ১৪০০ বছর ।
  • যে রোমান সম্রাট রাজধানী কনস্টেন্টাইন থেকে বাইজেন্টাইনে স্থানান্তর করেছিলেন – সম্রাট ডিয়ক্লেটিয়ান ।
  • অগাস্টাস সিজারের সাথে জুলিয়াস সিজারের যে সম্পর্ক ছিল – তিনি জুলিয়াস সিজারের পালক পুত্র ছিলেন ।
  • যে শাসকের নামানুসারে ইংরেজি আগস্ট মাসের নামকরণ হয়েছিল – সম্রাট অগাস্টাস সিজারের নামানুসারে ।
  • স্বায়ীভাবে যে রোমান সম্রাট খ্রিস্টধর্মকে রোমের রাষ্টীয় ধর্ম হিসেবে চালু করেন – সম্রাট থিওডোসিয়াস ।
  • প্রাচীন রোমান বাইজান্টাইনরা যাদের সাথে তুমুল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল – পারস্য সভ্যতার সাথে । 
  • ইতিহাসখ্যাত মুতার ‍যুদ্ধে যাদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল – প্রাচীন রোমান ও মুসলিমদের মধ্যে ।
  • রোমানদের সাথে যুদ্ধে বীরত্বের জন্য হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) কে যে উপাধি প্রদান করা হয়েছিল – ‘সাইফুল্লাহ’ উপাধি ।
  • প্রাচীন রোমানদের সাথে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ – ইয়ারমুকের যুদ্ধ (এই যুদ্ধে রোমানরা চিরদিনের মতো মিশর ও সিরিয়ার কর্তৃত্ব হারায়) ।
  • পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে যে সভ্যতাটি নদীমাতৃক সভ্যতা নয় – রোমান সভ্যতা
  • যে সভ্যতার মানুষেরা সর্বপ্রথম কংক্রিটের আবিষ্কার করেছিল – রোমান সভ্যতার মানুষেরা ।
  • বছরের ১২ মাসের নাম যে সভ্যতার সময় সৃষ্টি হয়েছিল – রোমান সভ্যতার সময়কালে ।
  • যে রোমান সম্রাট প্রতি ৪ বছর পর পর ফেব্রুয়ারি মাসের সাথে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করেন – সম্রাট জুলিয়াস সিজার ।
  • জুলিয়াস সিজার ১২ মাসের এই ক্যালেন্ডার চালু করেছিল – খ্রিঃপূর্ব ৪৬ অব্দে ।
  • যে রোমান সম্রাটের উপাধি থেকে জার্মানির ‘কাইজার’ এবং রাশিয়ার ‘জার’ ‍উপাধি নেওয়া হয়েছিল – জুলিয়াস সিজারের উপাধি থেকে ।

পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতা  রোমান সভ্যতা  :

  • সভ্যতার সবচেয়ে বড় দাস বিদ্রোহ যে সভ্যতায় সূচিত হয়েছিল – রোমান সভ্যতায়, খ্রিঃপূর্ব ৭৩-৭১ অব্দে ।
  • যে রোমান সম্রাটের শাসনকালে ‍যিশু খ্রিষ্টের জন্ম হয়েছিল – অগাস্টাস সিজারের রাজত্বকালে ।
  • সম্রাট অগাস্টাস সিজার মারা গিয়েছিল ১৯ আগস্ট, ১৪ খ্রিষ্টাব্দে ।
  • প্রাচীন যে সভ্যতায় সর্বপ্রথম মানুষের সমান অধিকারের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল – রোমান সভ্যতায় ।
  • রোমান নাট্যশালা কলোসিয়ামের আয়তন ছিল – দৈর্ঘ্য ৬২০ ফুট প্রস্থ ৫১৩ ফুট ও উচ্চতা ১৫৭ ফুট এবং থিয়েটারের ৮০ টি প্রবেশদ্ধার রয়েছে ।
  • প্রাচীন রোমে ভয়াবহ একটি অগ্নিকান্ড হয়েছিল – ৬৪ খ্রিষ্টাব্দে, এসময় রোমান রাজা ছিলেন নিরো ক্লাডিয়াস ।
  • ‘The Great Fire of Rome’ এর নামানুসারে যে ইংরেজি প্রবাদটি প্রচলিত হয়েছিল – ‘Nero played fiddle while Rome was burning’.
  • প্রাচীন রোমান সভ্যতার লোকেরা যে যে পণ্য রপ্তানি করত – সিরিয়েল, ওয়াইন, অলিভ অয়েল প্রভৃতি ।
  • এই সভ্যতার মানুষের আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে ছিল – মূল্যবান ধাতু, মার্বেল, এছাড়া নানা ধরনের মসলা ।
  • রোমান সভ্যতায় যাকে অন্যতম ডিকটেটর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে – সম্রাট জুলিয়াস সিজারকে ।
  • প্রাথমিক যুগে রোমানরা দীর্ঘ যত বছর প্যাগান বা পৌত্তলিক ধর্ম অনুসরণ করেছিল – ৮০০ বছর ।
  • যে রোমান সম্রাট রোমকে ইস্টার্ন ও ওয়েস্টার্ন রাষ্ট্রে বিভক্ত করেছিল – সম্রাট ডায়োক্লেটিয়ান ।
  • তিনি পূর্ব রোমান সভ্যতার রাজধানী নির্বাচিত করেন – বর্তমান তুরস্কের বাইজান্টিয়াম শহরকে ।
  • যে রোমান সম্রাট ‘কন্সটান্টিনোপল’ নামক শহরের গোড়া পতন করেছিলেন – ৩৩০ খ্রিষ্টব্দে, সম্রাট কন্সটান্টিনোপল

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *