সারা পৃথিবীতে প্রতিনিয়তই মানুষ নানা ধরণের সংক্রামক ব্যাধির মুখোমুখি হচ্ছে । কিছু সময় এসব রোগের কারণ এবং প্রতিকারেও মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে এবং বিশেষজ্ঞদেরও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় । ২০১৯ সালের ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সর্বপ্রান্তে। এতে প্রতিনিয়ত মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও ।
সংক্রামক ব্যাধি কাকে বলে
মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের অণুজীর বাস করে । এগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি শরীরের জন্য বেশ উপকারী, কোনটি উপকারী না হলেও ক্ষতিকারক নয়, কোনোটি আবার বিশেষ কোনো অবস্থায় বা কোনো বিশেষ কারণে শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে এবং মানুষকে অসুস্থ করে তোলে । অণুজীব দ্বারা সংক্রমিত রোগগুলোকেই সংক্রমক রোগ বলা হয় । সংক্রমণের ইংরেজি পরিভাষা হলো infection । সংক্রামক রোগ আবার ছোঁয়াচে রোগ নামেও পরিচিত । সংক্রমণ বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ সংঘটক (infections agent) যেমন – ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস, পরজীবী (প্যারাসাইট), ভিরয়েড (viroid), প্রিয়ন (prion), নেমাটোডা (বিভিন্ন প্রকার কৃমি), পিঁপড়া, আথোঁপোডা (যেমন- উকুন, মাছি) এবং বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক দ্বারা সংগঠিত হয় ।
লক্ষণ ও উপসর্গ
সংক্রমণের উপসর্গ রোগের ধরনের উপর নির্ভর করে । সংক্রমণের কিছু লক্ষণ সাধারণত পুরো শরীরকে প্রভাবিত করে যেমন- ক্লান্তি,ক্ষুধা হ্রাস, ওজন হ্রাস, জ্বর, রাতে ঘাম, ঠাণ্ডা ও ব্যাথা । অনেক ক্ষেত্রে চামড়ার দাগ, কাশি ইত্যাদিও হতে পারে ।
সংক্রামক রোগ বিস্তার
সংক্রামক রোগ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উভয় মাধ্যমেই বিস্তার লাভ করতে পারে ।
প্রত্যক্ষ মাধ্যমে
১. মানুষ থেকে মানুষ: এক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যত্তির সান্নিধ্যে ব্যাকটেরিয়ার, ভাইরাস বা অন্য কোনো জীবাণু সরাসরি সুস্থ মানুষের শরীরে অনুপ্রবেশ করে থাকে । সংক্রমিত ব্যক্তির, হাঁচি, কাশি, স্পর্শ বা চুমুর মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারে ।
২.জীবজন্ত্ত থেকে মানুষে : সংক্রমিত কোনো জন্ত্ত এমনকি পোষা প্রাণীর কামড় অথবা আঁচড় থেকে এ রোগ বিস্তার লাভ করে থাকে । পোষা জন্ত্তর মল-মূত্র পরিষ্কার করতে গিয়েও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে ।
৩.মা থেকে নবজাতক : গর্ভবতী মা-এর থেকে নবজাতক আক্রান্ত হতে পারে । কখনো গর্ভফুলের মাধ্যমে কখনো বা প্রসবের সময় জরায়ুর মুখ থেকে নবজাতকের শরীরে জীবণু প্রবেশ করার ঝুঁকি থাকে ।
পরোক্ষ মাধ্যম
কোনো কোনো রোগের জীবাণু দূষিত খাদ্য বা পানির মাধ্যমে অথবা দূষিত বাতাস বা পরিবেশস্থ দূষিত কোনো মাধ্যমের সাহায্য মানুষের শরীরে প্রবেশ করে । কোনো কোনো জীবাণু জীবন্ত কোনো মাধ্যম ছাড়া জড় পর্দাথকে নির্ভর করে বেশ কিছু সময় টিকে থাকতে পারে । সেক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে জীবাণুগুলো মানুষের শরীরে প্রবেশ করার আশঙ্কা দেখা দেয়। যেমন- ফ্লু’তে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস সুস্থ কেউ ব্যবহার করলে সে সংক্রমিত হতে পারে ।
বাংলাদেশে যত সংক্রামক রোগ
‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নিমূল) আইন, ২০১৮’ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২৩ টি সংক্রামক রোগের নাম উল্লেখ করা হয় । সেগুলো হলো- ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, ফাইলেরিয়াসিস, ডেঙ্গু, ইনফ্লুয়েঞ্জা, এভিয়ান ফ্লু, নিপাহ, অ্যানথ্রাক্স, মার্স-কভ (MERS-COV), জলাতঙ্ক, জাপানিস এনসেফালাইটিস, ডায়রিয়া, যক্ষা, শ্বাসনালির সংক্রমণ, এইচআইভি, ভাইরাল হেপাটাইটিস, টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য রোগসমূহ, টাইফয়েড, খাদ্যে বিষক্রিয়া, মেনিনজাইটিস, ইবোলা, জিকা এবং চিকুনগুনিয়া ।
সংক্রামক ব্যাধির তালিকায়
Covid – 19
১১ মার্চ ২০২০ বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা (who) করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট covid-19কে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে । who কর্তৃক মহামারি ঘোষণার পর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ১৮ মার্চ ২০২০ বাংলাদেশে একে সংক্রামক ব্যাধি হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট জারি করতে নির্দেশ দেয় । ১৯ মার্চ ২০২০ সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ,নিয়ন্ত্রণ ও নিমূল) আইন, ২০১৮ এর ধারা ৪(ভ)-এ বর্ণিত ক্ষমতাবলে সরকার নভেল করোনাভঅইরাসকে (কোভিড-১৯) সংক্রামক ব্যাধির তালিকাভুক্ত করে । ২৩ মার্চ ২০২০ গেজেট জারি করা হয় । গেজেটে ৮ মার্চ ২০২০ থেকে বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের তারিখ কার্যকর করা হয়। সংক্রামক ব্যাধির তালিকায় যুক্ত হওয়া এ ভাইরাস সংক্রামক ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনা কেউ উপেক্ষা করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনের অধীনে তাকে শাস্তি দেয়া যাবে ।
read more