তাহলে আবার নির্ঘাৎ গজপতি রসিকতা করতে বেলগাছে চেপেছিলেন। এই ভেবে ভবভূতি হাে হো করে হেসে উঠলেন। বললেন—গজু, তুই মাইরি আস্ত ভূত!
-ভুত! বেলগাছের লােকটা ঘুষি তুলে বসল । তুমি ভুত । তােমার চোদ্দপুরুষ ভুত! আর গজু বলছ, সেই গজু-টজুকে আমি চিনি না
ভবভূতি বললেন–দেখ গজু, বাড়াবাড়ি কোনাে না। গায়ে জল ঢেলে দেব বলছি!
-কেন ? জল ঢালবে কেন ? —তােমার গায়ের কালো পেন্ট ধুয়ে যাবে সেদিনকার মতাে।
—সেদিনকার মতাে? কী বলছ ! আমি আজ এক বছর কাশীগয়া করে ঘুরে বেড়াচ্ছিলুম। সদ্য কাল সন্ধেবেলা ফিরেছি। ফিরেই তােমার কীর্তিকলাপ দেখছি।
ভৰভুতি অবাক হয়ে গেছেন। বললেন–তুমি গজু নও?
বেঁটে মূর্তিটি জোরে বনবন করে লাটিমের মতাে টিকিসমেত ঘুরপাক খেয়ে বলল: না না না কভি নেহি!
—আলবাৎ গজপতি তুমি! চলো, আলােয় চলাে। পরীক্ষা করে দেখব।
~আমার আলােয় যাওয়া বারণ আছে। যাব না। পরীক্ষা করে দেখতে হয়, এখানেই দেখ।
-ঠিক আছে। আগে এক বালতি জল আনি।। —সে কী! কেন, কেন?
নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-১৬
—তােমার গায়ের কালাে পেন্ট ধুতে হবে না? তখন তােমার ফর্সা রঙ বেরিয়ে পড়বে।
ভবভূতি পা বাড়াচ্ছিলেন, মূর্তিটি পিছু ডাকল। শােন, শোন। বলছিলুম কী, জল না ঢাললে হয় না? বড় ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করেছে। মাইরি, শীতে জমে যাব। তুমি বরং কাছে এসে আমাকে টিপে দেখ ! আমি তোমার গজু না টজু, সহজে বুঝতে পারবে।
ভবভূতি সটান গিয়ে ওর গোঁফ খামচে ধরলেন। মূর্তিটি চাচামেচি করে বলল-ওরে বাবা রে! গেছি রে! গেছি রে ছাড়াে ছাড়াে? উঃ হু হু হু ।
তাই তো? গজপতির তত গোফ নেই। সে রাতে নকল গোঁফ পরেছিলেন। কিন্তু এর গোফটা দেখা যাচ্ছে আসল। তার চেয়ে বড় কথা, আজ সকালে গজপতি এসেছিলেন। গোফ পরিস্কার কামানাে ছিল। সন্ধ্যার মধ্যেই এমন পেল্লায় গোফ গজাতে পারে
তঁার। তাহলে এ গজপতি নয়, অন্য কেউ।
ভবভূতি গোঁফ ছেড়ে চুল ধরতে গেলেন। ধরা গেল না। ছােট ছােট চুল যেন পেরেকের ডগার মতাে। হাতে বিধতেই ভবভূতি হাত সরিয়ে নিলেন। গম্ভীর গলায় বললেন—তাহলে তুমি কে শুনি ?
মূর্তিটিও তার মতাে গম্ভীর গলায় জবাব দিল আমার নাম বলা বারণ। তাছাড়া বললেই তুমি ভিরমি খাবে। কাজেই চেপে যাও।
–ইয়ারকি ? পুলিশে দেব তােমাকে। কেন তুমি আমার বাড়িতে ঢুকেছ ?
—তােমার বাড়ি ? তােমার বাড়িতে ঢুকলুম কোথায়? আমি তাে গাছে ছিলুম।
—গাছটাও যে আমার।
—তােমার গাছ মানে? আজ তিনশাে বছর এই গাছ আমার দখলে! আমি এই গাছে থেকে বুড়াে হয়ে গেলুম! আর তুমি বলছ আমার গাছ ?
—গাছে থাকে। এই বেলগাছে ? রাগের মধ্যে ভবভূতি হেসে ফেললেন।
মূর্তিটি বলল—এতে হাসির কী আছে? যার যেখানে বাসা। তুমি মানুষ, তাই বাড়িতে থাকে। আমি ইয়ে, তাই বেলগাছে থাকি।
নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-১৬
—ইয়ে মানে? তুমি কি ব্ৰহ্মদত্যি ?
-খবরদার নাম ধরে বলবে না। জানো না কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বললে রেগে যায় ? ব্ৰহ্মদত্যিকে ব্ৰহ্মদত্যি বললে রাগ হবে—ভীষণ রাগ.•বলে সে উঁত কিড়মিড় করে রাগটা দেখিয়ে দিল। টিকিটা কাঠির মত সােজা দাড়িয়ে রইল।
ভবভূতি এবার একটু সংশয়ান্বিত হয়ে বললেন—তাহলে বলছ, তুমিই এই বেলগাছের ব্ৰহ্মদত্যি ?
—আলবাৎ। আদি, আসল এবং অকৃত্রিম ব্ৰহ্মদত্যি। এতটুকু ভেজাল নেই ।
–বিশ্বাস করি না। আজকাল সবকিছুতেই ভেজাল।
-তাহলে প্রমাণ চাও? —হুউ। চাই। -বলো, কী প্রমাণ চাও ? –তুমি যদি আসল ব্ৰহ্মদত্যি, তাহলে•••তাহলে••••••
কথায় বাধা পড়ল । গাড়িবারান্দা থেকে ডাঃ হাউরের গলা শােনা গেল-কার সঙ্গে কথা বলছেন ভবভূতিবাবু ?
| অমনি মূর্তিটি একলাফে গাছের ডালে উঠে পড়ল। ফিসফিস করে বলল-এই ? ওকে বােলােনা মাইরি ! ডাক্তার-টাক্তার দেখলেই আমার বড় বুক কাপে। ওরা যে ইনজেকশান দেয় ।
ভবভূতি হাসি চেপে ডঃ হাউরকে বললেন—ও কিছু না। আপনি বরং কালীপদকে কড়া করে কফি বানাতে বলুন। ঠাণ্ডা পড়েছে বেশ।
—তাহলে আর শিশিরে ঘুরবেন না।•••বলে ডাঃ হাউর ভেতরে ঢুকে গেলেন।
ভবভূতি বললেন—কই হে ব্ৰহ্মদত্যি মশাই, নেমে এস।
—ডাক্তার আর আসবে না তাে ?
-না, না। তুমি নেমে এস। উনি ডাক্তারও বটেন, ডক্টর-ও বটেন । কাজেই ভয় নেই।
নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-১৬
ব্ৰহ্মদত্যি নেমে এল আবার। তারপর বলল-যাকগে। যেজন্যে তােমায় দেখা দিয়েছি, বলি। এতক্ষণ খালি বাজে বকবক কথা হল । ভবভূতিভায়া, তােমায় বন্ধু বলেই মেনে নিয়েছি। তাে কথাটা হচ্ছে আমায় শ্বানভাষাটা শেখাবে ?
নিশ্চয় শেখাব। ইতিমধ্যে শুনে–শুনে তাে তুমি কিছু শিখেই ফেলেছ।
-হুউ। ভেউ–উ–উ গ র র র র ।।
—উহু। ভেউ-উ-উ-উ গ র র র র । জিভ তালুতে ঠেকিয়ে, উচ্চারণ করে।
—ভেউ-উ-উ–উ গরু র, র, র, র র !•••
পরদিন গজপতি এসেছেন বন্ধুসকাশে। দুপুরবেলা খাওয়া দাওয়াটা ভালই হয়েছে। ভবভূতি ভাতঘুম দিচ্ছেন অভ্যাসমতাে। ডাঃ হাউরের ও পাশের ঘর নাক ডাকছে। কালীপদর তাে সব-সময় ঢুলুনি। সুযােগ পেলেই ঘুমিয়ে নেয়। সে শ্বান ভাষায় নাক ডাকছে—গ র র র র গে”।!।
Read More