সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এর নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-৬

নীলু বলল—আমাদের পাড়ায় থাকেবিজু, তাের নাম বল। 

ম্যাজিসিয়ান হাত তুলে বলল—থাক্ থাক্। বিজু তাে? ব্যস, ওতেই হবে। 

নীলু বলল—বিজু, তােকে কিন্তু দুটো টাকা দিতে হবে। আমিও দিয়েছি।

নিঝুম রাতের আতঙ্ক 

বললুম—দেব। কিন্তু এখন যে নেই রে

ম্যাজিসিয়ান বলল–আচ্ছা, আচ্ছা এবার শােন বাবা, আমি যা করার সব করে দিয়েছিএখন তােমাদের কি করতে হবে, বলছি। আমি চলে যাবার কিছুক্ষণ পরে এই গাছ থেকে একটা লাল টুকটুকে ফল পড়বেসেই ফলটি দুজনে ভাগ করে খাবে

খেলেই তােমাদের চোখ খুলে যাবেতখন দেখবে, আমার মতাে একজন বুড়াে মানুষ এই গাছের গােড়ার মাটি ঠেলে বেরােচ্ছে। তাকে তােমরা দুজনে টেনে তুলবেএতে সে খুশি হবে তােমাদের ওপর। তখন বলবে—কী চাই? তােমরা বলবেতুমি যদি যখ হও, তাহলে তােমার টাকাগুলাে দাওঅনেক টাকা, বাবা। শুধু টাকা নয়কত সােনাদানা পেয়ে যাবে। 

নীলু ঘাড় নাড়লম্যাজিসিয়ান বলল—তাহলে আমি চলি। 

নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-৬

নীলুর দেখাদেখি আমিও ঘাড় নাড়লুমসে পুটলিটা কঁাধে নিয়ে ছড়ি হাতে উঠল। তারপর আচমকা হনহন করে প্রায় দৌড়তে শুরু করল। 

এইতে ভুলো কেন যে খেপে গেল কে জানে, দেখলুম—ভুলে চেঁচাতে চেঁচাতে তার পেছন-পেছন দৌড়চ্ছেআমার ভয় হল, ম্যাজিসিয়ান রেগে যায় যদি ! ভুলোকে সে নির্ঘাৎ মন্ত্রের জোরে মেরে ফেলবে। আমি চেঁচিয়ে ডাকতে থাকলুম-ভুলাে ! ভুলাে। ফিরে আয়। 

আমার ডাক শুনে ভুলে থমকে দাড়ালআর এগােল নাকিন্তু ফিরেও এল না। ওখানে দাড়িয়ে ম্যাজিসিয়ানের উদ্দেশে রাগদেখাতে থাকল । 

নীলু চোখ নাচিয়ে বলল তুই কী করে জানলি রে

বললুমততাকে আসতে দেখলুম যে। কিন্তু ম্যাজিসিয়ানকে কোথায় পেলি

নীলু বলল—আজ সক্কাল বেলা রাস্তায় দেখা হয়েছিল। ও বলল, —দুটো টাকা দিলে যখের ধন পাইয়ে দেবেঠাকমার ঝাপি থেকে, মেরে দিলুম দুটো টাকা ! ওকে দিলুমবলল—ঠিক দুপুরবেলা . ডাকিনীতলায় চলে এসাে। এবার বুঝলি তাে? 

বুঝলাম—কিন্তু আমি যে ওকে টাকা দিইনি। যখের ধনের ভাগ আমি পাবাে তাে নীলু

নীলু গম্ভীর হয়ে একটু ভেবে বলল.••খবুড়ােকে জিগ্যেস করযদি বলে, তুইও পাবি-তাহলে পাবি। জানিস তাে, যখের ধন সবাইকে সয় নাযাক্ গে—আর কথাটথা নয়। চুপচাপ বসে পড়ি আয়। ফলটা কখন পড়বে কে জানে। 

নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-৬

আমরা আর কথা না বলে গাছের গুড়ির কাছে চুপচাপ বসে। পড়লুম।’ 

দুজনে বসে আছি তাে আছি—ফল পড়ার নাম নেই। ভুলাে আপন মনে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে। কখনও গাছের দিকে তাকিয়ে লেজ নেড়ে যেন ডাকিনীটাকেই ধমক দিচ্ছে। 

কিন্তু ফল পড়ছে কোথায় ? দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল। তখনও ফল পড়ল না। বটগাছে রাজ্যের পাখি এসে ততক্ষণে জড়াে হয়েছে। তারা জোর চেঁচামেচি শুরু করেছে। ভুলো এইতে আরাে ক্ষেপে গেছে। গাছের চারদিক ঘুরে সে ঘেউ ঘেউ করে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ আমার চোখ গেল গাছের গুড়ির ওপরে একটা মােটা ডালের দিকে। 

|যা দেখলুম, আমার মাথার চুল ভয়ে খাড়া হয়ে গেল। ওরে বাবা ! ও কে? নিশ্চয় ডাকিনীতলার সেই বুড়াে যখটা চুপচাপ বসে, আছে। পিটপিট করে আমাদের দেখছে। চেঁচিয়ে উঠলুম– নীলুরে !! 

নীলুও দেখতে পেয়েছিল। তার মুখে কথা নেই। 

ভুলো কিন্তু ভয় পায়নি। সে এবার বিরাট গর্জন করে গাছের গুড়ি বেয়ে ওঠার ভঙ্গিতে লম্ফঝম্ফ শুরু করল। নখের আঁচড়ে গুড়িতে দাগ পড়তে থাকল। শাদা আঠা দুধের মতো বেরিয়ে এল। তারপরই ওপর থেকে আওয়াজ হল – ‘উ-উ-প’! 

অমনি আমি দৌড়তে থাকলুম। সােজা নাক বরাবর দৌড়লুম। কতবার আছাড় খেলুম, কত জায়গায় ছিড়ে গেল। তারপর দেখলুম, ভুলেও আমার সঙ্গে চলে এসেছে। পেছন থেকে নীলুর চেঁচানি বুঝলুম—বিজু। বিজু ! পালাসনে।। 

| ঘুর দেখি, সে দৌড়ে আসছে। তখন সাহস করে দাঁড়ালুম, কাছে এসে নীলু বলল-তুই বড় ভীতু! ওটা হনুমান। 

-আঁ ? ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলুম ওর দিকে। 

নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-৬

নীলু বলল “ধুর বােকা। হনুমান দেখিসনি কখনও? হনুমান দেখেই ভয় পেয়ে গেলি ? 

তখন মনে পড়ল, হা-হনুমানই উ-উপ করে ডাকে বটে। কিন্তু অমন জায়গায় হনুমানকে কি হনুমান বলে মনে হয় কখনও ? মনে তখন কিনা সেই বুড়ো যখটার ভাবনা। কাজেই হনুমান দেখেই কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি। 

তবে বলা যায় না, বুড়ো যখটা হনুমানের চেহারা নিয়ে আমাদের দেখা দিতেও তাে পারে ? কথাটা নীলুকে বললে সে তখুনি মেনে নিল। তাও পারে বই কি। ফেরার পথে কানে এল, ডাকিনীতলায় সেই যখ কিংবা হনুমান ব্যাটা যেন আমাদের অমন করে চলে আসায় বেজায় রেগে গেছে। উ-উ প, এ্যাকোর খ্যা। উপ এ্যাকোর খা। খুব হাঁকডাক চালিয়ে যাচ্ছে। 

নীলু বলল চল সন্ধে অব্দি বসে থেকে দেখি ফল পড়ে নাকি। বললুম—পাগল ! তুই যাবি তাে যা। 

যখের ধনের ভাগ নিবিনে? -নাঃ! বলে ভুলােকে শিস দিয়ে ডাকলুম। 

আসল ভূতের গল্প ভূতের গল্পও তাে অনেকেই শুনেছকিন্তু দেখেছে কজন ? যারা দেখেছে বলে, তারা কিন্তু নকল ভূই দেখেছেআসল ভূত কি দেখা দেয় ? 

নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-৬

বলবে, ভূতের আবার আসল নকল আছে নাকি ? আলবৎ আছে। যেমন ধরাে, দুপুর রাতে পাচিলের ধারে হঠাৎ দেখলে ঘােমটা, পরে কে যেন দাড়িয়ে রয়েছেভীষণ ভয় পেয়ে চেঁচামেচি করে ঘরে.. ঢুকলেতখন বাবা গিয়ে দেখলেন, ভেন্তিপিসি দিনে কাপড় শুকোতে দিয়েছিলেন তারে। তােলা হয়নি। বাতাস বইছিল জোরেকাপড়টা উড়ে গিয়ে জবাগাছের মাথায় জড়িয়ে গেছেআর তাই দেখে হঠাৎ ভূত ভেবে বসে আছে। 

এই হল নকল ভূতনকল ভূত আমিও কি কম দেখেছি ? কিন্তু, সে-গল্প শুনেও লাভ নেই। আমার বােকামি ধরা পড়বে। তোমরাও হেসে খুন হবেনিজের বােকামির কথা কি কেউ বলতে চায়

আমি একবার একটা আসল ভূত দেখেছিলাম। একেবারে নির্ভেজাল আদি অকৃত্রিম ভূতসেই ভূতের গায়ে অনায়াসে “বিশুদ্ধ 

এবং টাটকাবলে লেবেল এটে দেওয়া যায়।

 

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এর নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-৭

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *