বাংলা সাহিত্যে একজন শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক ও সার্থক নাট্যকার সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ অসাধারণ শিল্পকুশলতার পরিচয় বহন করেন । ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পিতা সৈয়দ আহমাদুল্লাহ ও উচ্চশিক্ষিত মাতা নাসিমা আরা খাতুনের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন তিনি ।
সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার, ধর্মের নামে প্রতারণা, মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয়, বাংলার লোকায়ত ধ্রুপদী জীবনধারা প্রভৃতি বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন তাঁর সাহিত্যকর্মে ।
- সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন – চট্টগ্রাম জেলার ষোলশহরে, সৈয়দ পরিবারে ১৫ আগস্ট, ১৯২২ সালে ।
- তাঁর সাহিত্যচর্চার সূত্রপাত হয় – ফেনী হাইস্কুলে থাকাকালীন ‘ভোরের আলো’ পত্রিকায় ।
- সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর প্রথম প্রকাশিত গল্পের নাম – ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’ (ঢাকা কলেজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়) ।
- ১৯৪৫-’৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি যে পত্রিকার সাবএডিটর হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন – কলকাতার ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় ।
- দেশ ভাগ-পরবর্তী সময়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন – ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সহকারি বার্তা সম্পাদক হিসেবে ।
- নোয়াখালী অঞ্চলের মজিদ গারো পাহাড়ি অঞ্চলে গিয়ে ভন্ড পীরের বেশ ধারণ করে সাধারণ মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেয় প্রভৃতি বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘লালসালু’ উপন্যাসে ।
- ‘লালসালু’ উপন্যাসের বিশেষ চরিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে – মজিদ, খালেক ব্যাপারী, রহিমা, আক্কাস, আমেনা, তাহেরার বাপ প্রভৃতি ।
- বাংলাদেশে চেতনা প্রবাহরীতির উপন্যাস কে লিখেছেন – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ।
- ‘Tree Without Roots’ যে গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ করেন – লেখকের ফরাসী স্ত্রী অ্যান-ম্যারি লুই (১৯৬১ সালে অনুদিত হয়) ।
- “ঠগ পীরের পানি পড়ায় কি কোন কাম হয়?” বিখ্যাত এই উক্তিটি যে উপন্যাসের – ‘লালসালু’ উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘লালসালু’ উপন্যাসের (জমিলা, মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী) ।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এর জীবনী
- গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য কাদের । সে এক যুবতীকে বাঁশঝাড়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে হত্যা করে, যা ঐ গ্রামেরই আশ্রিত স্কুলমাস্টার আরেফ আলী দেখে ফেলে প্রভৃতি ঘটনার সমন্বয়ে রচিত হয়েছে – ‘চাঁদের অমাবস্যা’ উপন্যাসটি ।
- সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘চাঁদের অসাবস্যা’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় – ১৯৬৪ সালে ।
- ‘চাদের অমাবস্যা’ যে শ্রেণির উপন্যাস – মনঃসমীক্ষমূলক উপন্যাস (ফ্রান্সে অবস্থানকালে উপন্যাসটি রচিত হয়) ।
- ‘আরেফ আলী’ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর যে উপন্যাসের নায়ক – ‘চাদের অমাবস্যা’ উপন্যাসের ।
- কুমুরডাঙা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা বাঁকাল নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জনপদের জীবনকাহিনি নিয়ে রচিত – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসটি ।
- খেদমতুল্লাহ, মুস্তফা, খোদেজা, সখিনা, কফিলউদ্দিন প্রভৃতি চরিত্রগুলো যে উপন্যাসের – কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসের ।
- সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় – ১৯৬৮ সালে ।
- ‘দি আগলি এশিয়ান’ কোন শ্রেণির রচনা – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ইংরেজি ভাষায় রচিত উপন্যাস ।
- সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচিত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে – তরঙ্গভঙ্গ (১৯৬৬), বহিপীর (১৯৬৫), সুড়ঙ্গ (১৯৬৪) ও উজানে মৃত্যু (১৯৬৬) ।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এর জীবনী
- ‘নয়নচারা’ ও দুই তীর ও অন্যান্য গল্প’ তাঁর কোন ধরনের সৃষ্টি – গল্পগ্রন্থ ।
- সেই পৃথিবী, খুনী, মৃত্যুযাত্রা, পরাজয়, রক্ত প্রভৃতি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর যে শ্রেণির রচনা – ছোটগল্প ।
- ’৪৭-এর দেশ ভাগের ফলে কিছু হিন্দু পরিবার ভাতের চলে যায় এবং কিছু মুসলিম পরিবার এদেশে আগমন করে । এরই প্রকাশ ঘটেছে – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘একটি তুলসী গাছের আত্মকাহিনী’ নামক গল্পে ।
- ‘একটি তুলসী গাছের আত্মকাহিনী’ তাঁর যে গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত – ‘দুই তীর ও অন্যান্য গল্প’ গ্রন্থের ।
- মতিন, আমজাদ, কাদের, ইউনুস, মোদাব্বের, মকসুদ প্রভৃতি কোন গল্পের চরিত্র – ‘একটি তুলসী গাছের আত্মকাহিনী’ গল্পের ।
- হাশেম, তাহের, খোদেজা চরিত্রগুলো সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর যে গল্পের – ‘বহিপীর’ নামক গল্পের ।
- ‘বহিপীর’ তাঁর যে শ্রেণির রচনা – নিরীক্ষাধর্মী নাটক (১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়) ।
- সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ যেসব সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন – বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬১), আদমজী পুরস্কার (১৯৬৫), একুশে পদক (১৯৮৪), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২০০১) প্রভৃতি ।
- বাংলা সাহিত্যে লেখকদের লেখক হিসেবে পরিচিত সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন – ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর (প্যারিসের উপকন্ঠে মদোঁ-স্যুর বেলভুতে তাঁকে সমাহিত করা হয়) ।