হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১১

আপনি তাহলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—বাবার ঘরবাড়ি বিষয়সম্পত্তি দেখাশােনাই আপনার জীবনের এত?” 

“চাচাজীর জন্যে কিছু করতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার।

মীরার গ্রামের বাড়ি 

কেন? বাবা বড় মানুষ বলে ? সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বলে ? | লােক জনের কাছে বলতে পারলে আমি একজন বিচারপতির বিষয় 

দেখাশোনা করি—এই কারণে ” 

এ “জ্বি না। উনি আমাকে অত্যধিক স্নেহ করেন।’ 

অত্যধিক স্নেহ করলেও তার মধ্যে বাবার স্বার্থ আছে। আপনাকে তার 

দরকার। আপনি না থাকলে তার গ্রামের এই বিরাট বিষয়সম্পত্তি বারাে ভূতে লুটে খেত।’ যা দেলােয়ারের মনটা খারাপ হয়ে গেল। এই মেয়ে তার বাবাকে এমন ছােট করে দেখছে কেন? আজহার সাহেব কেমন মানুষ সেটাতাে এই মেয়েটারই সবচেয়ে বেশি জানার কথা। এই মানুষটা তার গ্রামের জন্যে কী করেনি ? মেয়েদের স্কুল বানিয়ে দিয়েছে, ছেলেদের স্কুল বানিয়ে দিয়েছে। নিজের খরচে রাস্তা ঠিক করে দিয়েছে। ডিপ টিউবওয়েল কিনে দিয়েছে। গ্রামের যে-কোনাে মানুষ বিপদে পড়ে তার কাছে গিয়ে কখনো খালিহাতে ফেরেনি। 

দেলোয়ার সাহেব।” 

“হিদল ভর্তা দিয়ে ভাত খেলেন ? 

ঞ্জি। ভরপেট ভাত খেলাম। পরদিন সকালে শরীর সুস্থ। সুস্থ হবে জানা কথা। পীর বংশের মানুষ। পীরাতি চাচাজার মধ্যেও আছে। চাচাজা নিজে তা জানেন না।’ 

“আমিওতাে পীর বংশের বড় মেয়ে আমার মধ্যে নাই ? *জি আপনি আপনার মধ্যে আছে। 

কী করে বুঝলেন ? বােঝা যায়। 

টেলিফোন-পর্ব শেষ করে ফেরার পথে মীরা খুব হাসিখুশি রইল । মজার মজার গল্প করতে লাগল। কিন্তু দেলােয়ারের মনে হল—মেয়েটার মন খুবই খারাপ হয়েছে।

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১১

অতিরিক্ত হাসিখুশির ভাব যতই দেখাক না কেন মেয়েটা খুবই কষ্ট পামে দেলােয়ার সাহেব। 

আপনি কি আমার কথায় মন খারাপ করেছেন । “জি করেছি। চাচাজীকে আমি অনেক বড় চোখে দেখি।” 

“কিন্তু আমি কি কথাগুলি ভুল বলেছি? আপনাকে বাবা যে স্নেহ করেন সেই স্নেহ কি স্বার্থজড়িত স্নেহ না?’ 

“জ্বি না। আমার একবার খুব অসুখ হয়েছিল । খারাপ ধরনের জন্ডিস। আমাকে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করল। জীবনের আশা ছেড়েই দিলাম। তখন স্যার বাবর পেয়ে গাড়ি নিয়ে নেত্রকোনা |সপাতালে আমাকে দেখতে এলেন । আমার অবস্থা দেখে মনে খুবই কষ্ট পেলেন। 

কী করে বুঝলেন মনে কষ্ট পেয়েছেন। | ‘চাচাজীর চোখে সঙ্গে সঙ্গে পানি এসে গেল। চোখের পানি মুছে বললেন দেলােয়ার তাের এ কী অবস্থা। চাচাজী কখনো আমাকে তুই বলেন না। সব সময় তুমি বলেন। সেদিনই প্রথম তুই বললেন। 

‘আপনি কী করলেন ? 

আমি চাচাজীরে বললাম, চাচাজী আপনি যদি আমার কপালে হাত রেখে আল্লাহপাকের কাছে একটু দোয়া করেন, আমি ভালাে হয়ে যাব।’ | বাবা তাই করলেন ? 

“জুি, তিনি কপালে হাত রেখে দোয়া করলেন। সন্ধ্যাবেলা দোয়া করলেন এশার ওয়াজ থেকে শরীর ভালো হতে শুরু করল। চি চলে গিয়েছিল, যা খেতাম বমি করে দিতাম। রুচি ফিরে এল। রাতে নার্সকে বললাম— 

সির হিল ভর্তা দিয়ে একটু ভাত খেতে ইচ্ছা করছে।’ 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১১

গ্রান্ট এবং, জুতাজোড়া আপনার পছন্দ হয়েছে তাে? জি হয়েছে। ‘মানুষ হিসেবেও আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে। এখন যদি আপনি লুঙ্গির উপর কোট পরে ঘুরে আপনাকে আগের মতাে খারাপ লাগবে না।’ 

দেলােয়ার হঠাৎ বলে ফেলল, আপামণি আপনার মনটা কি খারাপ? 

মীরা বলল, হ্যা আমার মনটা খুব খারাপ। আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা হচ্ছে। আমি কাঁদতে পারছি না। | দেলােয়ার লক্ষ্য করল মীরার চোখ পানিতে ভর্তি হয়ে গেছে । চোখের পানি টপ টপ করে পড়ছে গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলে। দেলােয়ার সঙ্গে সঙ্গে খতমে ইউনুছ পড়া শুরু করল । এই দোয়া এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বার পড়ে আল্লাহপাকের কাছে যা চাওয়া যায় তাই পাওয়া যায়। সে তম শেষ করে আল্লাহপাককে বলবে—মেয়েটার মনটা তুমি ভালাে করে দাও আল্লাহ। তুমি গাফুরুর রাহিম, তােমার রহমতের কোনাে শেষ নাই । তোমার রহমতের দরিয়া থেকে এক ফোটা রহমত মেয়েটাকে তুমি দাও। এতে তােমার রহমতের দরিয়ার কোনাে ক্ষতি হবে না। 

মীরা বলল, দেলোয়ার সাহেব। আমি কাদছি আমার দুঃখে, আপনার চোখে পানি কে ? 

“হিদল ভর্তা। হিদল হল পুঁটিমাছের একরকম শুটকি, অনেকে বলে চেপা 

মীরা হাসছে, মনােয়ারা চলে যাচ্ছেন । মনােয়ারার মুখেও হাসি। 

মীরা ভাবছে, একটা পরিবারে মায়ের ভূমিকা খুবই অদ্ভুত। পরিবারের যে কোনাে সদস্য যখন হাসে, মাকে হাসতে হয়। পরিবারের যে-কোনাে সদস্য যখন দুঃখিত হয়, একে দুখি হতে হয়। এটা হল পরিবারের দাবি। পরিবার এমন অন্যায় দাবি মা ছাড়া অন্য কারো ওপর করে না। 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১১

মীর ভাকল, মা শুনে ওতো । 

মনােয়ারা সঙ্গে সঙ্গে ফিরে এলেন। সাবেরের সঙ্গে মীরার সমস্যাটা কী? কীভাবে তা মিটমাট হল এটা জানা মনােয়ারার খুব শখ। তিনি নিজ থেকে জিজ্ঞেস করতে পারছেন না। এখন মনে হচ্ছে মীরাই বলৰে ।। 

– মা শোনাে তোমাকে খুব জরুরি একটা কথা বলব। ভংয়কর জরুরি। 

‘চল বাগানে যাই।। | ‘বাগানে যেতে পারব না। এখানেই বলি। কথাটা হচ্ছে—আমি জানতে পেলাম দাদীজান নাকি আজ রাতে আমার সঙ্গে ঘুমাবে। এটা যেন না ঘটে। তুমি দেখবে। 

মীরা না-ফেরা পর্যন্ত মনােয়ারা চাপা উদ্বেগ নিয়ে ছিলেন। মেয়েরা বড় হবার পর এই সমস্যা তার হয়েছে। ঘরের বাইরে যাওয়া মানেই উদ্বেগ। মনােয়ারার এই উদ্বেগ নানান ভাবে প্রকাশিত হয় তার মাথায় যন্ত্রণা হয়, মেনে জে মন রাখতে পারেন না। ইদানীং আরেকটি উপসর্গ যুক্ত হয়েছে শ্বাস কষ্ট। বড় বড় করে নিশ্বাস নিলেও বুক ভরে না। মনে হয় ফুসফুসের একটা বড় অংশে। বাতাস পৌছাতে পারছে না। ফাঁকা হয়ে আছে। মনােয়ারার ধারণা মেয়ে দুটির বিয়ে হয়ে যাবার পর তার এই সমস্যা থাকবে না। তিনি আরাম করে বাকি

 

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১২

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *