হেডমাস্টার সাহেব বললেন, স্যার কী বললেন? নগ্ন শরীরে খাদ্যবস্তু সাজিয়ে
হ্যা আমরা ভালােই আছি। আমাদের সভ্যতা তাে অতি প্রাচীন। তার পরেও সতীদাহের মতো কুৎসিত প্রথা ছিল। হিল না? ওরা যা করছে ত মানুষদের নিয়ে করছে আর আমরা জাস্ত্র মানুষ পুড়িয়ে মেরে ফেলছি।’
এ্যাসিসটেন্ট হেডমাস্টার সাহেব মুগ্ধ গলায় বললেন, স্যার আপনি এত বিষয় জানেন, এত সুন্দর করে গান্না করেন। এটা একটা অবিশ্বাস্য বিষয় । আপনার গল্প শােনা ভাগ্যের ব্যাপার। সন্ধ্যার পর আর ঘরে থাকতে ইচ্ছা করে না। স্যার হয়তাে খুবই বিরক্ত হন।
“বির হব কেন?” ‘সর বিরক্ত হল আর নাই হল আমরা ন|| – এসে পারব না।
“অবশ্যই আসলেন। ভালাে অধ্যা, এগামীকাল রাতে আপনারা আমার সাথে চারটে ডালভাত খাবেন।’
“ছিঃ ছিঃ স্যার কী বলেন! আপনি আমাদের মেহমান। কোথায় আমরা খাওয়াব তা না ।
কী আশ্চর্য, আমি এই গ্রামের ছেলে না? আপনারা চারটা ডাল ভাত মিশ্যই খাবেন।
শেফা এখনাে লক্ষ্মীর পাশে দাড়িয়ে। আড়াল থেকে এদের কথাবার্তা শুনতে তার খুব মজা লাগছে। তার বাবীর মহাবিরক্তকর গল্পগুলিও যে লোকজন এত আগ্রহ করে শুনতে চায় এটা শেফার ধারণার ও বাইরে ছিল। গ্রামের এই মানুষগুলাে কি বােকা নাকি আসলে এক ভদ্রলােক আজ দেরি করে এসেছেন। তিনি কবিরাজ না কালাে।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৪
তার নেত্রকোনায় দোকান আছে। দোকান এখন হেলে দেখাশোনা করে। তিনি বাড়িতে থাকেন । খুবই ব্যস্ত ভঙ্গিতে তিনি ঢুকলেন এবং হেডমাস্টার সাহেবের দিকে তাকিয়ে গা-রাগী গলায় বললেন, হেডম|” সাহেব কাজটা আপনি কী করলেন? আমাকে না নিয়ে চলে আসলেন । আমি কলি বলেছিলাম না, আসার সময় আমাকে নিয়ে আসবেন। আমি সন্ধ্যা থেকে কাপড় পরে বসা।
হেডমাস্টার সাহেব বিব্রত গলায় বললেন, একদম ভুলে গেছি। 1 “তাতাে ভুলে যাবেনই । দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে উল্টা আমি আপনার খোঁজে গিয়ে শুনি আপনি সন্ধর সময় চলে গেছেন।’
“আসছি বেশিক্ষণ হয়নি, এইতাে কিছুক্ষণ । আমার কথা বিশ্বাস না হয়। স্যারকে জিজ্ঞেস করেন।’
আজহার সাহেব হাসমুখে দুই বন্ধুর ঝগড়া সামাল দেল। তাকে আবারাে রাখে?
শবদেহ যদি স্ত্রীলােকের হয়? ‘সবার জন্যই একই অবস্থা।
‘হেডমাস্টার সাহেব শিউরে উঠলেন। অতিথিরা কিছুক্ষণ মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। এ্যাসিসটেন্ট হেডমাস্টার বললেন, অতি বর্বর জাতি।
আজহার সাহেব বললেন, প্রাচীন জাতিগুলাের মধ্যে এইজাতীয় অনেক বিচিত্র বিশ্বাস প্রচলিত। আফ্রিকার রেইন ফরেস্টে এই প্রাচীন জাতিগােষ্ঠী আছে তারা তাদের মৃত আত্মীয়স্বজন কবর দেয়া না বা দাহ করে না । খেয়ে ফেলে।” |
কী বললেন স্যার, খেয়ে ফেলে?” “হ্যা খেয়ে ফেলে। তারা বিশ্বাস করে এতে মৃত আত্মার সদগতি হয়।’ ‘আমরা তাে স্যার সেই তুলনায় ভালাে আছি।’
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৪
পাপ ভক্ষকদের গল্প নতুন করে শুরু করতে হয়। যারা গল্পটা আগে শুনেছেন তারা ও সমান আগ্রহ নিয়ে দ্বিতীয়বার গল্পটি শুনেন। হেডমাস্টার সাহেব আগেরবার গল্পের ঠিক যে-জায়গায় বলেছিলেন ‘শবদেহ যদি স্ত্রীলােকের হয়?—এবারে ঠিক সেই জায়গায় আঁৎকে উঠে জিজ্ঞেস করেন, স্যার শবদেহ যদি স্ত্রীলােকের হয়? তখনাে কি এই অবস্থা। যেন তিনিও এই প্রথমবারের মতাে গল্পটা শুনছেন।
শেফা এখনাে দাড়িয়ে আছে। আশ্চর্যের ব্যাপার, আড়ালে দাড়িয়ে বাবার শল্প এতে তার ভালো লাগছে । এখন তার ধারণা হয়েছে যে তারা আগ্রহ নিয়ে বাবার গল্প শােনে না বলেই বাবার গল্পগুলি তত ভালাে হয় না। এরা আগ্রহ নিয়ে শুনছে বলে ভালাে হচ্ছে।
আজহার সাহেব হঠাৎ গল্প থামিয়ে বললেন, দরজার পাশে কে? শেফা বলল, বাবা আমি।
কী এছু মা। “বাবা তোমার গল্প শুনছি।
হেডমাস্টার সাহেব অত্যন্ত সাধু ভাষায় বললেন, মা এইসব গল্প তোমার শােনার উপযুক্ত নয়। গল্প গুলি পরিণত মানসিকতার মানুষদের জন্যে। মা তুমি চলে যাও। যদি সম্ভব হয় চাচাদের জন্যে একটু চা পাঠাও।
আজহার সাহেব বললেন, কফি খাবেন না-কি?
কফির ব্যবস্থা আছে? “জ্বি আছে।
তাহলে স্যার একটু বড়লােকি জিনিস খেয়ে দেখি।’
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৪
শেফা কফির কথা বলতে চলে গেল। এ্যাসিসটেন্ট হেডমাস্টার সাহেব বললেন, স্যারের দুটা মেয়েই অত্যন্ত ভালো। ভালাে হবে জানা কথা। যেমন গাছ তেমন তার ফল।
আজহার সাহেব বললেন, সামান্য ভুল করলেন মাষ্টার সাহেব। খুব ভালাে গাতুর ফল হয় না। যেমন নন সেলছি, শাল গাছ
উপস্থিত শ্রোতারা আজহার সাহেবের জ্ঞানের কথায় আবারাে অত্যন্ত চুমকৃত হন । আজহার সাহেব পাপ-ভক্ষকদের গল্পের শেষাংশ শুরু করলেন। শ্রোতারা তার দিকে ঝুঁকে এল।
মনোয়ার বড় মেয়ের সঙ্গে ঘুমুতে এসেছেন। আজ রাতে মনে হয় জমিয়ে শীত পড়েছে। লেপের নিচেও শরীর গরম হচ্ছে না । নীরার” শীত সহ্য হয় না। সে লাল টুকটকে কার্যে মাথা কান ঢেকে শুয়েছে। ইলেকট্রিসিটি চলে এসেছে। বারান্দায় একশ ওয়াটের বাতি জ্বলছে। যদিও তেমন আলাে হচ্ছে না। ঘরের ভেতরে ইলেকট্রিকের আলো জ্বলছে না। ঘরে হারিকেনের আলাে। মার কাছে
-কি হারিকেনের আলাে অনেক আপন লাগে। | মনােয়ারা লেপের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে বললেন, আজ মাঘ মাসের কত তারিখ বলতে পারবি?
শীরা বলেন, পারিব, ন’ তারিখ। মাঘ মাসের অমাবস্যায় সবচে শীত পড়ে । আজ কি অমাবস্যা?
অমাবস্যা ন| শা, কাল রাতেই না তুমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে খুকিদের মতাে চেচিয়ে বললে, ওমা কী সুন্দর চাদ! বাবাকে খুশি করার জন্যে বললে। বাবাও সঙ্গে সঙ্গে খুশি হয়ে গেল, কারণ তার গ্রামের চাদ সুন্দর।’
Read More