আপনি পাচটা মিনিট বসুন। আমি সেলুন থেকে দাড়িগোঁফ ফেলে দিয়ে আসছি। আপনাকে চা দিয়ে যাবে। চা খেতে যতমণ লাগে।’ [ আমি বসলাম। চা খেলাম। সে দাড়িগোঁফ কামিয়ে ভদ্র হয়ে ফিরে এল । আমরা মিনিট পাঁচেক কথা বললাম। সে-ই হড়বড় করে কথা বলল, আমি শুনলাম। যখন চলে আসছি তখন সে বলল, চল তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি। তুমি একা-একা এতদূর যাবে।’ ।
| ‘তুমি করে বলল?”
‘হ্যা তুমি করে বলল। অতিরিক্ত স্মার্টনেস দেখাতে হবে তাে। তাও ভাগ্যবান সে আমাকে তুমি বলছে। অন্য মেয়েদের তুই করে বলে ।
“বলিস কী!”
‘আঁৎকে উঠার কিছু নেই মা। বর্তমানে ইউনিভার্সিটির এটাই চল। যাই হােক সে আমাকে বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বলল –আমি এখন একা-একা যাব? তুমি আমাকে এগিয়ে দাও। তার এই কথাটা কেন জানি আমার খুব ভালাে লাগল।
এই জীকে এগিয়ে দিল। হু দিলাম। তারপর?
তারপর হঠাৎ একদিন দেখি আগে তার যেসব ব্যাপার অসহ্য লাগত সেগুলি ভালো লাগতে উরু করেছে। তা না রসিকতায় সবচে আগে আমি। হাসতে শুরু করেছি। আমার ব্যাগে অজান্তে গোলাপকুল ঢুকিয়ে রাখলে আমার অসম্ভব ভালাে লাগে। তার হাতে লেখা ছােট ছােট চিরকুট গুলি আমি জমিয়ে রাখি । যতবার পড়ি ততবারই আমার ভালাে লাগে ।
চোখে পানি এসে যায়। আমি ক্লাস ফাকি দিয়ে তার সঙ্গে দুলতে শুরু করলাম। রমনা পার্কে এবং চন্দ্রিমা উদ্যানে ছেলেমেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে আটর টর করে গল্প করছে এই দৃশ্য আমার সব সময় শসহ লাগত। সেই ব্যাপারলি আমি নিজেই করতে লাগলাম এবং একসময় খুব সহজ স্বাভাবিক ভাবে তার উত্তরার বাসায় যেতে শুরু করলাম । নির্জন বাড়িতে আমরা দুজনৰ সময় কাটাতে লাগলাম।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৭
মনােয়ারা নিচু গলায় বললেন, কাজটা ঠিক হয়নি।
মীরা তীব্র গলায় বলল, কেন ঠিক হবে না? আমি তাকে পছন্দ করি। সে আমাকে করে, আমরা একসঙ্গে সময় কাটালে অসুবিধা কী?
ভুল করে ফেলতে পারিস তো মা সেইজন্য বলছি।’ | মীরা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল । মা’র দিক থেকে দষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে নিছ গলায় বলল, তুমি যে ভুলের কথা বলেছ সেই ভুলই করেছি। যখন করেছি তখন ভুল মনে হয়নি। তখন মনে হয়েছে যা করছি ঠিক করছি। শুদ্ধতম কাজটি করছি। এখন বুঝতে পারছি। এখন বুঝে তো কোনাে লাভ নেই মা। যে ভুল করা হয়েছে সে ভুল এন্ধ করার আর উপায় নেই।
মনােয়ারা কাপা কাপা গলায় বললেন, তার মানে? _ মীরা ক্লান্ত গলায় বলল, সবই তাে বললাম মা । এর পরেও মানে জানতে চাচ্ছ কেন? তুমি কি দেখছ না এখন আমার শরীর খারাপ। আমি কিছু খেতে পারি না। যা খাই বমি হয়ে যায় । আমি পর পর দুটা সাইকেল মিস করেছি।
মনােয়ারা অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মীরা বলল, আমি লাবেরকে সব জানিয়েছি। শুরুতে সে বলেছে “আমি যখন বল তখনি সে আমাকে বিয়ে করবে। এখন বলছে তা সম্ভব না। তার মাথার উপর অনেক দায়িত্ব। পাশ করে চাকরিবাকরি না-করা পর্যন্ত সে বিয়ে করবে না । আমাকে। বলছে কোনো প্রাইভেট ক্লিনিকের সঙ্গে যােগাযোগ করতে। এইসব নাকি এখন।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৭
কোনাে ব্যাপারই না। মা শােনাে তুমি এইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থেকো । আমি ভয়ংকর একটা ঘটনা খুব স্বাভাবিকভাবে বলে ফেললাম। এ ছাড়া আমার উপায় ছিল না। তােমাকে সব বলে ফেলার পর আমার খুব শক্তি লাগছে । আমি গত দুমাসে আরাম করে রাতে ঘুমুতে পারিনি। আমি নিশ্চিত আজ আমার খুব ভালাে ঘুম হবে।
মনােয়ারা বিড়বিড় করে কী যেন বুললেন। মীরা বুঝতে পারল না। তিনি কী বলেছেন, তা জানতে চাইল না । সে বিছানায় জয়ে চলা পর্যন্ত লেপ টানতে টানতে বলল, না আমি এটা জিনিস ঠিক করেছি। এক, আমি কখনােই কোনাে অবস্থাতে সাবেরকে বিয়ে করব না। সে যদি কুকুরের মতাে এসে আমার শী ঢুটিতে এক করে তাহলে ও না। দুই, আমি আমার পেটের সন্তানটি ন করব । আমি তাকে আমার মতাে করে বড় করব।
মীরা চোখ বন্ধ করে ফেলল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই গভীর ঘুমে তলিয়ে পুকুরে ছিপ ফেলা হয়েছে| আভার আয়োজন বলে লোয়ার কালতেই পানিহা লেগেছে। মাছের চার দিয়েছে। কচুরিপানা সরিয়ে ছিপ ফেলার জায়গা করেছে। চাচার্জী মাছধরা দেখতে আসতে পারেন ভেবে তার ভীন্যে বেতের চেয়ার এনে রেখেছে। ১ারের সামনে চা-কফি রাখার উল্যে টেবিল আনা হয়েছে। আয়োজন লিখে শেফার খুব ভালো লাগছে। সে কাল থেকেই ভাবছে দেলোয়ার ভাইকে ভালাে কোনাে উপহার দিতে হবে। সে আজ যেমন খুশি হয়েছে, উপহার পেয়ে দেলােয়ার ভাইও যেন তেমন খুশি হয়। খুশিতে খুশিতে কাটাকাটি।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৭
মাছের মন্ত্র পড়ে ছিপে ফু দেয়া হল। মন্ত্রটা পড়তে হল শেফাকেই। যে বর্শেল মন্ত্র তাকেই পড়তে হবে। অন্য কেউ পড়লে হবে না। মন্ত্রটা বেশ বড়, শেফা কাগজে লিখে নিয়েছে। কারণ মন্ত্র একবার পড়লেই হবে না। বার বার পড়তে হবে । ফাহনা নড়লেই মন্ত্র পড়ে পানিতে তিনবার টোকা দিতে হবে। মন্ত্রটা এ রকম,
(মাহ মন্ত্র) আয় জলি বায় জলি জলির নামে মাত্র বলি। হাট, পানিতে রক্ষা-কালি। রক্ষাকালির কালির নয় দরজা। মাছের রাজা জামা। মীর পীরের দোহাই লাগে w s সুতার আগায় মাছ লাগে ।
মাছের মন্ত্র পড়তে শেফার লাজ-লজ্জা লাগছে। বড় আপা দেখে ফেললে খুব হাসাহাসি করবে। ভাগ্যিস আপা এখন নেই। শুরুতে একবার এসে আয়ােজন দেখে গেছে। আবার হয়তাে আসবে। টোপে মাছ ঠোকরাবার সময় এলেই হয়। আপার সামনে মন্ত্র পড়াই যাবে না । খেপিয়ে মারবে। তাকে দেখলেই সুর করে বলবে, আয় জলি বায় জলি । জলির নামে মন্ত্র বলি …।
Read More