হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২

দেলােয়ার গাধাটা দেখছে আমার ব্যালান্সে সমস্যা হচ্ছে তার পরেও হাত ধরে হ্যাচকা টান দিচ্ছে। মানুষ এমন গাধাও মীরার গ্রামের বাড়ি

শেফার মােটেই একসাইটিং লাগছে না। বাবাকে খুশি করার জন্যে বলল, দারুণ লাগছে বাবা। 

মীরা কিছু বলল না। মনােয়ারা মেয়ের পাশে বসতে বসতে বললেন, চা খাবি ? ক্লাঙ্কে চা নিয়ে এসেছি। 

চেষ্টা আজহার সাহেবের চোখের আড়ালে থাকা। সেটা মােটেই সম্ভব হয় না। আজহার সাহেব প্রতি পাঁচ মিনিটে একবার দেলোয়ারকে খুঁজেন | অকারণেই 

মীৱা বলল, না । ‘জিজ্ঞেস কর তাে তাের বাবা খাবে কি না। মীরা বিরক্তমুখে বলল, তুমি জিজ্ঞেস কর। আমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। 

দেলোয়ার।” “জি চাচাজি। ‘ছাতা নিয়েছ ?” দেলােয়ারের মুখ শুকিয়ে গেল । ছাতার কথা তার একবারও মনে হয়নি। 

কী ব্যাপার হ’ত নাওনি ?” “জ্বি না । একদৌড় দিয়া নিয়া আসি? যাব আর আসব।’ 

আজহার সাহেব রাগী-রাণী গলায় বললেন, ছাতার কথা মনে করা উচিত। ছিল। যাই হােক নৌকা ছাড়তে বল । ভবিষ্যতে এই জাতীয় ভুল করবে না । 

মনােয়ারা বড় মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তাই না। ছায়া ছায়া ভাব। তুই চা খাবি ? | তুই জিজ্ঞেস করলে অসুবিধা কী?’ 

“আমি শুধু শুধু জিজ্ঞেস করব কেন ? এমনতো না তােমার ল্যারেনজাইটিস হয়েছে, কথা বলা ডাক্তারের নিষেধ। 

মনােয়ারা বিস্মিত হয়ে বললেন, রেগে যাচ্ছিস কেন? 

মীরা বলল, মা তুমি দয়া করে আমার পাশে বসবে না। তুমি বােধহয় জানাে না যে তােমার গা থেকে কাদামাটি টাইপ একটা গন্ধ আসে, আমার মাথা ধরে যায়। | মনােয়ারা আহত চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মীরা বলল, ঠিক আছে বসে পড়েছ যখন বােস। শুধু সারাক্ষণ চা খাবি ? কলা খাবি ? সন্দেশ খাবি? এইসব করতে পারবে না। আমি কিছুই খাব না। সকাল থেকে আমার বমি আসছে। আমি যে-কোনাে মুহূর্তে বমি করব। এইজন্যেই আমার পাশে বসতে নিষেধ করছি । 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২

শরীর খারাপ ?” 

মীরা শীতল গলায় বলল, শরীর ঠিক আছে। মা শােনো, শরীর খারাপ নাকি, জ্বর নাকি, কাশি হচ্ছে নাকি ?’ এইসবও জিজ্ঞেস করতে পারবে না। 

মনােয়ারা দুঃখিত গলায় বললেন, আচ্ছা যা তুই একা-একা বস । আমি চলে যাচ্ছি। 

মুখে বললেও তিনি চলে গেলেন না। কোথাও বেড়াতে গেলে বড়মেয়ের সঙ্গে থাকতে তার খুব ভালাে লাগে। দুজনে মিলে গুটুর গুটুর কুরে কথা বলেন। মেজাজ ভালো থাকলে মীরা চমৎকার গল্প করে। আজ বােধহয় মেয়েটার মেজাজ ভালাে নেই। মনােয়ারা ধরে নিলেন নৌকা ছাড়ালেই মীরার মেজাজ ভালাে হবে। 

আজহার সাহেব বললেন, সবাই ঠিকঠাক বসেছ তাে। ছাতা নেয়া হয়েছে ? নদীর উপর ব্লোদ বেশি লাগে। পানিতে রােদটা রিফ্লেক্ট করে এইজন্যে বেশি লাগে। দেলোয়ার কোথায় ? দেলােয়া ও 

দেলােয়ার ভীত গলায় প্রায় অস্পষ্ট স্বরে বলল, চাচাজি আমি এইখানে । 

দেলােয়ার আজহার সাহেবের গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকার। সে তার শহরবাসী হাইকোর্টের জাল সাহেব চাচাকে যমের মতো ভয় পায়। তার প্রধান 

কচুরীপানার ফুল কত সুন্দর দেখছিল। ফুলের মধ্যে ময়ুরের পাখার মতো ডিজাইন। 

মীরা কিছু না বলে বই খুলল । মা’র আহাদী তার অসহ্য লাগছে। মীরার ধারণা কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মা খুকি-খুকি ভঙ্গিতে চিৎকার করে উঠবে, ওমা 

কা সুন্দা একটা এক। মান্না লেখ দেখ এক লিখ । তার বাবাকে এ বার একটা ছবি তুলতে। বাবা সঙ্গে সঙ্গে একর ছবি । তালার প্রস্তুত নেবেন। এখন দেখা যাবে সব এলেহ মেরা আলে নি। বাবা শুরু করবেন তার বিখ্যাত চিঙ্কার, ক্যামেরা কেন কেনা হয়েছে ? শাে-কেসে সাজিয়ে রাখার জন্যে ? প্রয়ােজনের সময় যে জিনিসটা পাওয়া যাবে না তার দরকার কী ? ফেলে দিলেই হয়। বাড়িতে পৌছে প্রথম যে কাজটি করবে তা হল ক্যামেরা করে ফেলবে। 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২

নৌকা চলতে শুরু করেছে। দীর নাম সোহাগী । বেশ বড় নদী তবে শীতকাল বলে পানি কম । আজহারউদ্দিনের চোখেমুখে তৃপ্তির ভঙ্গি। যা দেখছেন তাতেই মুগ্ধ হচ্ছেন। তার হাতে ফোকাস ফ্রি ক্যামেরা। কিছুক্ষণ পরপরই তিনি ক্যামেরা চোখের সামনে ধরছেন তবে ছবি তুলছে না । 

শেফা খুবই অস্বস্তি বােধ করছে কারণ তার বাশ্বক পেয়েছে। এই কথাটা কাউকে বলা যাবে না। বাবা শোনামাত্র চেচিয়ে বলবে, ‘লে থেকে বেরুবার | ‘মা-র কাছে যেতে হবে না । চুপ করে বস তো। চলন্ত নৌকায় ইটাহাঁটি করবি না। ব্যালেন্স হারিয়ে পানিতে পড়ে যাবি। 

শেফা বসে পড়ল। আজহারউদ্দিন, ডাকলেন, মীরা। 

মীরা চমকে তাকাল । বাবা ডাকছেন। ডাকার ভঙ্গি ভালাে না। খুবই গম্ভীর র। নিশ্চয়ই বাবা কোনাে কারণে রেগেছেন। এখন রাগের প্রকাশটা হবে। খুব বিশ্রীভাবে হবে বলাই বাহুল্য। 

কী পড়ছিস ? 

সময় বাথরুম করে বের হতে পারনি ? ক্লাস টেনে উঠেছ, তুমিতাে আর বাচ্চা মেয়ে না। এখন এই নদীর মধ্যে বাথরুম করবে কীভাবে। যতসব নইসেন্স । শেফা খুবই চিন্তিত বােধ করছে। একবার বাথরুম পেয়ে গেলে খুব সমস্যা। মাথার মধ্যে শুধু বাথরুম ঘুরতে থাকে আর কিছু ভালাে লাগে না । নদীর পাড়ে সুন্দর একটা মাটির ঘর দেখা গেল । ঘর থেকে একটা মেয়ে বের হয়ে অবাক হয়ে নৌকা দেখছে। শেফার মনে হল মেয়েটা কত সুখী। সে নৌকায় নেই। ঘরে আছে। বাথরুম পেলেই বাথরুম করতে পারবে। শেফা। বলল, বাবা আমরা নৌকায় কতক্ষণ থাকব ? 

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-৩

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *