তারপরও বলা যায়। উদাহরণ দিয়ে বুঝানাে যায় । আচ্ছা তােমার জন্যে। ব্যাপারটা সহজ করে দিচ্ছি। তুমি একদিন লােকমুখে জানতে পারলে যে আমি ভয়ংকর একটা অন্যায় করেছি তখন কী করবে?
‘বিশ্বাল করব না। আমি তো আমার মেয়েকে চিনি। মানুষের কথায় আমি বিশ্বান করব কেন?
‘পাখিদের মধ্যে কোন পাখির ডাক তাের সবচে ভালাে লাগে?
কোনাে পাখির ডাকই ভালাে লাগে না। পাখিরা ডাকাডাকি করে পাখিদের জন্যে। মানুষের তা ভালাে লাগার কোনাে কারণ নেই ।
“ঘুর ডাক, তোর কাছে ভাল লাগে না না। তুমি এমন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছ কেন? তােমার তাকানো দেখে মনে হচ্ছে ঘুঘুর ডাক ভালাে না-লাগাটা বাংলাদেশ দণ্ডবিধিতে শাস্তিযােগ্য অপরাধ?
আজহার সাহেব হেসে ফেললেন | মেয়ে দুটাই দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেল। কী সুন্দর গুছিয়ে কথা বলে। নিজের মেয়ে বলে এখন আর তাদের মনে হয় না। মনে হয় অন্য বাড়ির মেয়ে। বেড়াতে এসেছে। মাকে দেখে কে চোখে পানি । হাত দিয়ে যে চট করে চোখের পানি মুছে ফেলবেন সে উপায় নেই। নার্স তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২০
বলবে ঐতাে সেদিন তার জন্ম হল । তার তখন কোর্টে কঠিন এক মামলা। মনােয়ারার ব্যখা শুরু হয়েছে—তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে এই খবর পেয়েছেন কিন্তু কোট ফেলে হাসপাতালে যেতে পারছেন না। মামলায় কী হচ্ছে -হচ্ছে সেদিকেও মন দিতে পারছেন না। বিশ্রী অবস্থা। কোট থেকে ছাড়া পেয়ে সােজা চলে গেলেন মেডিকেল কলেজ । মনােয়ারা আছে নয় নম্বর কেবিনে।
হাসপাতালে গিয়ে জানা গেল তাদের কোনাে নয় নাম্বার কেবিনই নেই। এই নাম্বারে কেবিন নেই শুধু তাই না, মনােয়ারা নামে কোনাে পেশেন্টই ভর্তি হয়নি। হাসপাতাল থেকেই বাসায় টেলিফোন করলেন। কেউ টেলিফোন ধরছে না। রিং হচ্ছে, কেউ ধরছে না।
আজহার সাহেব পুরানাে কথা ভেবে আবারাে রােমাঞ্চিত হলেন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, মীরা তাের জন্মের সময়ের ঘটনা মনে আছে? সিরিয়াস কাণ্ড। মীরা বলল, প্লিজ বাবা সিরিয়াস কাণ্ডের গল্প এখন শুরু না করলে ভালাে হয় । কতবার যে শুনেছি। মাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হলি ফ্যামিলিতে, তুমি উপস্থিত হয়েছ ঢাকা মেডিকেলে ।মীরা উঠে দাড়াল। আজহার সাহেব বললেন, উঠছিস কেন বােস না গল্প। করি। ‘উই। তােমার ভাবভঙ্গি ভালাে লাগছে না। মনে হচ্ছে তুমি বাসি গল্প শুরু মনােয়ারা শােবার ঘরের খাটে বসে আছেন।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২০
সারারাত তার একফোঁটা ঘুম হয়নি। ঘুমের চেষ্টাও করেননি। মীরা ঘুমিয়েছে, তিনি তার পাশে জেগে বসেছিলেন। শেষরাতে বিছানা থেকে নামলেন । বারান্দায় এসে চেয়ারে বসে রইলেন। যখন আকাশে আলাের আভা দেখা গেল তখন তার মানে হল, তিনি শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করছেন। মীরা তার সঙ্গে রসিকতা করেছে। তাকে প্রচণ্ড ভয় পাইয়ে মজা দেখেছে। এর বেশি কিছু না। মীরার এই স্বভাব আছে। ক্লাস এইট থেকে নাইনে ওঠার সময় সে স্কুল থেকে টেলিফোন করে কাঁদো-কাদো গলায় বলল, মা খুব খারাপ খবর আছে। আমাকে প্রমোশন দেয়নি।
তিনি হতভম্ব হয়ে বললেন, সেকি!
তােমাকে তাে আগেই বলেছিলাম, আমার অঙ্ক আর ইংরেজি পরীক্ষা ভালাে হয়নি। এখন দেখলাম দুটাতেই ফেল মার্ক।’
‘তুই কী বলছিস!’
“হেডমিসট্রেস আপা তােমাকে আসতে বলেছেন। তােমার সঙ্গে কথা বলতে চান। মা তুমি আপাকে রিকোয়েস্ট করে আমাকে নাইনে তােলার ব্যবস্থা কর। একই ক্লাসে দুবছর থাকলে আমি মরে যাব।’
তুই কি সত্যি ফেল করেছিস? “হ্যা সত্যি ।’
মনােয়ারা শুনলেন মীরা কুঁপিয়ে কাঁদছে। তিনি বললেন, তুই কাদিস না । আমি এক্ষুনি আসছি। | তিনি স্কুলে গিয়ে শুনলেন মীরা পরীক্ষায় ফাস্ট হয়েছে। ক্লাসের মেয়েরা সবাই ধরেছে চাইনিজ খাবার জন্যে। মীরা এইজন্যেই মাকে খবর দিয়ে এনেছে।
, কাল রাতে যে ঘটনার কথা বলল, তার কাছে মনে হচ্ছে এটাও মীরার বানানাে। অবশ্যই বানানো। তিনি শুধু শুধুই এমন দুশ্চিন্তা করছেন।
|মনােয়ারা ফজরের নামাজ পড়লেন। তাঁর মন অনেকখানি শান্ত হল। তিনি আবারো এসে বারান্দায় বসলেন, তখন মনে হল মীরা যা বলছে সবই সত্যি। তার কথার একবর্ণও বানানাে না। এই মহাবিপদে তিনি কী করবেন?
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২০
‘তাের মাকে পাঠিয়ে দে।মীরা চলে যাচ্ছে। আজহার সাহেব মমতা নিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। পুরানাে দিনের কথা মনে হয়ে তার ভালাে লাগছে। old is gold, অতীতের গল্প হিরন্ময়। মনে করলেই ভালাে লাগে। তিনি শেষ পর্যন্ত ঠিক হাসপাতালে পৌছলেন রাত আটটা বেজে দশ মিনিটে। লজ্জিত ভঙ্গিতে ন’ নম্বর কেবিনে ঢুকলেন। কেন দেরি হল মনােয়ারা বলতে যাবেন তার আগেই।
তােয়ালে দিয়ে জড়ানাে মীরাকে নার্স তাঁর কোলে তুলে দিতে দিতে বলল, আপনার প্রথম সন্তান মেয়ে, আপনি অত্যন্ত ভাগ্যবান। আর দেখুন কী টুকটুকে মেয়ের দিকে তাকিয়ে গভীর আনন্দে আজহার সাহেবের চোখে পানি এসে গেল । খুবই অস্বস্তির ব্যাপার, তাঁর কোলে মেয়ে। দুটা হাতই বন্ধ।
এদিকে মীরার বাবাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে তার পরামর্শ চাইবেন? এটা সম্ভব। । ঘটনা শুনে মানুষটা সঙ্গে সঙ্গে হার্টফেল করে মারা যাবে। তার হার্টের অসুখ আছে। এসকিমা না কী যেন বলে। ডাক্তার সিগারেট খেতে মানা করে দিয়েছে। ফ্যাটি খাবার মানা করেছে। এমন একজন অসুস্থ মানুষকে এতবড় কথা বলা যায় না।
Read More