হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৭

এতবড় একটা মাছ দেখে একজন মানুষ কী করে বলে মদুটাতাে খারাপ না। দাদাজান কি আশা করেছিলেন সে ছিপ দি৷ তিমি মাছের সাইজের একটা কাতল মাছ ধরবে?

মীরার গ্রামের বাড়ি 

মাছের গায়ে হাত রেখে শেফা বসে আছে। আজহার সাহেব এই অবস্থায় মেয়ের ছবি তুললেন। এটা নিয়ে শোর মনে অশান্তি। বাবা একেবারেই ছবি উছ চিঠিন। ভালা হচ্ছে না। এতাে গুছিয়ে আরো সুন্দর করে লিখতে হলে  মধুটা ধড়ফড় করছে। ম| দুটার দিকে তাকিয়ে শেয়ার এহন কেন জানি খুব খারাপ লাগছুে ।

আহারে বেচারা! পানির নিচে সে হয়তো হেলমেয়ে নিয়ে কত সুখে ছিল। সে কি কোনোদিন ভেবেছিল শেফা নামের একটা মেয়ে তাকে মেরে ফেলবে? মাছটার ঠোটে বঁড়শি বিধে আছে। ঠোট দিয়ে রক্ত পড়ছে। মাছটা তাকিয়ে আছে তার দিকে। নিশ্চয়ই তীব্র ঘৃণা নিয়েই তাকাচ্ছে । 

তুলাত শারেন না। শাটার টেলার সময় বাবার হাত কাঁপলেই। শুল যে হাত কপে তাই না, তিনি ফ্রেম এ কেটে ফেলেন । ছবি প্রিন্ট হবার পর দেখা যায় মাথা অর্ধেকটা কাট্টা। কিংবা একটা হাত বাদ পড়েছে। আপা এখন থাকলে কত ভালাে হত। সে তখন মালবে কে জানে। পি আভাহার সাহেব বললেন, কাদায় পানিতে মাখামাখি হয়ে আছিস। যা গোসল করে কাপড় বদলা । 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৭

শেফা বলল, উহু আপা আসুক তারপর। বাবা তুমি এই মাছটা খাবে তো? ‘বাব না কেন মায় | ‘আমি রান্না করব।’তুই কি রান্না করতে পারিল!”LITIণীর!] আ জ ও ‘দাদীজানের কাছে শিখে নের। কারণ ‘ভালাে তো। ঠিক আছে তুই রান্না কর । আমি তােকে সাহায্য করব।’ 

তােমাকে সাহায্য করতে হবে না। আমি ঠিক করেছি এখন থেকে আমি যা করব নিজে নিজে করব। মাছ মারলেও একা এক মারব। রান্না করলেও একা একা রান্না করব।”, 

আজহার সাহেব হাসছেন। মেয়েটার অভিমানী মুখের দিকে তাকিয়ে তার মনে হচ্ছে তিনি এই গ্রহের সবচে সুখী মানুষ। 

শেফা বলল, বাবা তুমি আমার দিকে তাকিয়ে এমন বিশ্রীভাবে হাসছ কেন? তুমি এখন যাওতাে বাবা, আমি কাজ করছি। 

কাজ করছিস কোথায়, তুইতাে মাছের গাছে হাত রেখে বসে আছিস। | শেফা আসলেই কাজ করছে। মনে মনে ক্লাসের বন্ধুদের কাছে চিঠি লিখছে। তার চারজন অতি প্রিয় বান্ধবী আছে। সবার কাছে আলাদা আলাদা চিঠি যাবে। চিঠির সাথে মাছের একটা করে ছবি দিতে পারলে ভালো হত । সেটা সম্ভব হবে না। ছবি প্রিন্ট করাতে হবে ঢাকায় গিয়ে। তাছাড়া বাবা ছবি যা তুলেছে—হয়তো দেখা যাবে ছবিতে সে আছে, মাছটা নেই। 

“তুই শুনে খুবই মজা পাবি যে আমি আমাদের গ্রামের বাড়ির পুকুরে একটা মাছ ধরে ফেলেছি। মাছটা কত বড় বললে, তুই ভবশি ল রহি। বাবাকে নিয়ে ছবি তুলিয়ে রেখেছি। তোকে ছবি দেখব। ছবি দেখলেই বুঝবি । প্রথম যখন ছিপে ট্রান পড়ল, আমি ভাবলাম , 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৭

মনােয়ারা দরজা জানালা বন্ধ করে শুয়ে আছেন । বাড়ি ফিরে তিনি একবার বমি করেছেন। মুখ ধােয়ার জন্যে কলপাড়ে যেতে গিয়ে মাথাঘুরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেছেন। 

আজহার সাহেব অবাক হয়ে বললেন, তােমার কী হয়েছে? মনােয়ারা বললেন, বুঝতে পারছি না। মাথা ঘুরছে । ‘সেকি!” “নিশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে।’ 

নেত্রকোনায় যাওয়াই তোমার ঠিক হয়নি। অসুস্থ শরীর নিয়ে গিয়েছ গাড়ির ঝাঁকুনি, পেট্রলের ধোয়া। এসাে বিছানায় শুয়ে থাক।’ | ‘বিছানায় শুয়ে থাকলে হবে কীভাবে? রাতে মেহমান থাকে। 

সেটা আমি দেখব। দেলােয়ারকে নিয়ে যা পারি করব। তুমি শুয়ে থাকি। ঘন্টাখানিক ঘুমাও—দেখবে ভালাে লাগবে।’ 

“আমার ঘুম আসবে না।” “আমি ঘুম আনার ব্যবস্থা করছি।’ ‘ঘুম কি তােমার কোর্টের পেশকার যে তুমি ডাকলেই চলে আসবে? 

আসে কি না দেখ। “আজহার সাহেব নিজেই বুজা জানালা বন্ধ করলেন । পর্দা টেনে দিলেন। মশারি ফেলতে গেলেন। মনােয়ারা বিরক্ত গলায় বললেন, দিনের বেলা মশারি খাটাচ্ছ কেন?  

“মশা আছে। তোমার যখন ঘুম আসতে ধরবে তখন কানের কাছে যদি একটা মশা গুনগুন করে ওঠে তাহলেই ঘুম শেষ। আমি এমন ব্যবস্থা করে দিচ্ছি যেন সন্ধ্যা পর্যন্ত তুমি ঘুমাতে পার। তুমি লেপ গায়ে দিয়ে শুয়ে থাক। আমি আসছি।’ 

“আর কিছু বাকি আছে?” 

লবুর শরবত বানিয়ে আনছি। বিশেষ উপায়ে বানানো লেবুর শরবত একগ্লাস খেয়ে শুয়ে পড়বে, দশ মিনিটের মধ্যে ঘুম আসবে । পরামি৩ অষুধ। 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৭

নেয়ার  মা , মার খুৎ রি ক ছু কমই আছে। | তুমি ঘুম থেকে ওঠা তারপর শুরুরি কথা শুনব। এখন আমি লেবুর শরবত বানিয়ে নিয়ে আলি। আমি তোমাকে লেলিপি শিখিয়ে দিচ্ছিকড় ধরনের ইনসমনিয়াতে রেসিপিটা ট্রাই করবে। খুব মিষ্টি দিয়ে একগ্লাস শরবত বানাবে। দুটা মাঝারি সাইজের লেবু কচলে রস দেবে। কাগজি লেবু না। সামান্য একটু লবণ লেবে। দুই-তিন দানার বেশি না । দুটা শুকনা মরিচ পুড়িয়ে পােড়া মরিচ শরবতের সঙ্গে মেশাবে। টক টক করে পুরোটা খেয়ে বিছানায়, যাবে। 

আনাে তােমারি লেবুর শরবত। মাজহার সাহেব ব্যস্ত ভঙ্গিতে লেবুর শরবত বানাতে গেলেন । মনের খাটে হেলান দিয়ে বলে আছেন । বুকের বা এ আছে তবে মাথা ঘােরালোটা নেই । মনোয়ারা ঠিক করলেন লেবুর শরবত খেয়ে তিনি চোখ বন্ধ করে কিছু মণ শুয়ে থাকবে।

এক ট্রা ব্যাপার নিয়ে ভালোম, তা চিন্তা করা দরকার। মীরার বাবাকে কি সবকিছু জানাবেন? এখন তার মনে হচ্ছে জানানাে উচিত । এতবড় দায়িত্ব একা-একা তাঁর পক্ষে নেয়া সম্ভব না। তার শাশুড়িকেও জানানো দরকার। পুরানাে দিনের মানুষদের মাথা খুব ঠাণ্ডা থাকে। জটিল ধরনের সমস্যা তারা খুব সহজ সমাধান দিতে পারেন। 

দরজা ঠেলে শেফা ঢুকল। সে চিন্তিত মুখে বলল, মা তােমার কী হয়েছে? শরীরটা খারাপ করেছে।’ 

না জ্বর না । এম্নি শরীর খারাপ। “মাছটার ওজন কত জানো মা? সাত কেজি । দেলােয়ার ভাই দাঁড়িপাল্লা এলে মেপেছেন । পুরােপুরি সাত কেজি না। সাত কেজির সামান্য কম । দুইশ গ্রাম বা ধরো দুইশ পঞ্চাশ গ্রাম। 

“আচ্ছা ঠিক আছে।  “মাছটা আমি আর বাবা, আমরা দুজন মিলে রান্না করছি । 

“ভাল কথা, রান্না কর । 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৭

আপার সঙ্গে মাছ মারা নিয়ে বাজি ছিল । আগী আজির উকি দিয়ে। দিয়েছে। এক হাজার এক টাকা।” 

“আচ্ছা ঠিক আছে। এক মাছ নিয়ে আর কত কথা বলবে। আমি তো মরে পা দেবার পর থেকে প্রলছি মাছ, মাছ, মাছ। মাছ ছাড়াও তো জগতে অনেক ব্যাপার আছে। আছে না? একটা কিছু মায়ায় ঢুকে গেলে ভাঙা রেকর্ডের মতো সেটাই বাজাতে হবে? 

অাজহার সাহেব বিশিত হয়ে স্ত্রীর দিকে তাকালেন। মনােয়ারা ক্লান্ত গলায়। ললেন, এই জীবনে আমি বেশির ভাগ কাজই তােমাকে বুশি করার জন্যে 

‘সরি বলে দাড়িয়ে থাকার দরকার নেই, দয়া করে যাও । যেমন ভুতের মতাে চেহাৱা তেমন ভাতের মতাে আচরণ । মাছ, মাছ, মাছু। কান ঝালাপালা করে দিলে তাে। 

“মা আমি তাে বলেছি আই এ্যাম সরি। আর কখনাে মাছ নিয়ে কথা বলব।  

বলবে না কেন? অবশ্যই বলবে । শুধু কথা বলা না, মাছ কোলে নিয়ে রাতে ঘুমিয়ে থাক রান্না করার কোনাে দরকার লেখি না।

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৮

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *