হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৮

যাও তােমার আপাকে আসতে বলো, একগ্লাস পানি আর একটা চামচ নিয়ে যেন আসে।’  দূর থেকে বের হয়ে এল। সে দাঁত দিয়ে সেই চেশে কানা মামলার চেষ্টা করছে। তাকে অনেকক্ষণ কান্না চেপে রাখতে হবে। আপাকে খবর দিতে হবে, তারপর নির্জন কোনাে জায়গায় গিয়ে কাপতে হবে।

তার সব বন্ধৱাই খুব কান পেলে বাথরুমে দরজা বন্ধ করে কালে। সে তা পারে না। বাথরুমে সে যতবার কাদতে মগছে ততবার আয়নার লিংক চোখ পড়েছে। আয়নায় চোখ। শউতই মনে হয়েছে অন্য আরেকটা মেয়ে তার কান দেখছে।

মীরার গ্রামের বাড়ি 

“হ্যা তাই। তােমার পছন্দকে আমি নিজের পছন্দ করে নিয়েছি। আমার কষ্ট হয়েছে কিন্তু করেছি।’ 

 আজহার সাহেবের বিস্ময় আরো বাড়ল। মনােয়ারার কথার ধরন তিনি। বুঝতে পারছেন না। তার কী হয়েছে? 

মল্লিা বললেন, দাড়িয়ে আছি কেন বোস। 

আজহার সাহেব বললেন। মীরা গ্লাস-ভর্তি পানি এবং চামচ নিয়ে উর্কি দিল । মনােয়ালা বললেন, তুই একটু পরে আয় । আমি তাের বাবার সঙ্গে কথা বলছি। আজহার সাহেব বললেন, কথা বলার দরকার নেই তুমি রেস্ট নাও। 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৮

রেস্ট তো নেই। কথা বলতে ইচ্ছা করছে, কথা বলে নেই। আমার যখন তোমার কথা শুনতে ইচ্ছা করে না তখনো তাে কথা শুনি। খুব মন দিয়ে শুনি। যেখানে হাসার কথা সেখানে হাসি । যেখানে দুঃখিত হবার দরকার সেখানে। দুঃখিত হই।’হঠাৎ এইসব কী ধরনের কথা শুরু করলে? 

তোমাদের গ্রামের বাড়িতে আমার একেবারেই আসতে ইচ্ছা করছিল না। বড় আপার ছেলেটা চিকিৎসার জন্যে বাইরে যাবে। সে মনে হয় বাঁচবে না।। আমি চেয়েছিলাম কয়েকটা দিন বড় আপার কাছে থাকতে। কিন্তু তা করিনি। তোমাকে খুশি করার জন্যে গ্রামে এসেছি। হৈ চৈ করছি। মজা করছি।’ যা আমাকে বললেই তো হত।’ 

‘বলেছিলাম। তুমি মুখে হা না কিছুই বলনি, কিন্তু খুব বিরক্ত হয়েছিলে । কাজেই আমি হাসিমুখে তােমার সঙ্গে এসেছি। কেন জানাে? 

আজহার সাহেবের বানানাে লেবুর শরবত মনােয়ারা সবটাই খেয়ে ফেললেন। স্বামীকে খুশি করার জন্যে খাওয়া। দীর্ঘদিন এই জাতীয় কাজ করতে করতে ব্যাপারটা অভ্যাসের মতাে হয়ে গেছে। চা খেতে ইচ্ছা করছে না—আজহার সাহেব বললেন, খাও এককাপ চা। স্বামীকে খুশি করার জন্যে খেলেন।

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৮

টিভিতে শুকনা ধরনে কোনাে আলোচনা হচ্ছে। আজহার সাহেব বললেন, এই জলে যাওতে। লোকটা তাে ইন্টারেস্টিং কথা বলছে। দেশের ইকনমিক প্রবলেমটার মূল জায়গায় হাত দিয়েছে এসে দেখে যাও। কুৎসিত সেই প্রােগ্রাম তিনি হাসিমুখে দেখেছে। 

শরবত খেতে ভালো না?” না ভালো না। তােমাকে খুশি করার জন্যে খেলাম।’ 

‘সংসারটাকে ঠিক রাখার জন্যে, সুন্দর রাখার জন্যে। যেন যেই দেখে সেই ভাবে—আহা এরা কী সুখেই না আছে! বড় আপা যতবার আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে ততবারই বলে—মনোয়ারা আমি তাের কাছে আসি সুখ দেখার জানে।। তাের সুখ দেখে মন ভরে যায়। 

সুখ দেখে কেউ যদি খুশি হয় সেটা কি দোষের?” 

‘না দোষের না  অলিন্দের।’ 

সংসারটা সুখের করার চেষ্টাটা কি দোষের? না দোষের হবে কেন? তবে মেকি চেষ্টাটা দোষের। আজহার সাহেব হতভম্ব গলায় বললেন, তােমার চেষ্টা মেকি? “শুধু আমার না। আমাদের সবার চেষ্টাই মেকি।’ 

মনােয়ারা তোমাকে একটা কথা বলি। যে-কোনাে কারণেই হােক | তুমি উত্তেজিত। উত্তেজিত অবস্থায় তুমি কী বলছ না বলছ নিজেই জানে না।’ 

“জানব না কেন? খুবই জানি। তবে আমি উত্তেজিত না। আমি খুব ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলহি।’ 

‘সব কথা আজই বলতে হবে কেন? আজই বলতে হবে কারণ সুখী-সুখী খেলা আর আমার ভালাে লাগছে না।” 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৮

আজহার সাহেব একদৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন। মনােয়ারার চোখের লাল ভাব আরো বেড়েছে এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আসলে। মনােয়ারা কাঁদছেন। কান্নাটাকে কান্না মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে চোখের কোনো মনােয়ারা বললেন, তােমাকে খুবই জরুরি কিছু কথা বলব। মন দিয়ে শোন। 

আজহার সাহেব বললেন, জরুরি কথাটা পরে শুনি।না পরে শুনবে । এখনি শুনবে। তোম বড় মেয়ে একটা ছেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠত হয়েছিল । মেয়ে এখন পেট বাধিয়ে ফেলেছে। 

‘কী বলছ তুমি। 

খুব খারাপভাবে বলছি। খারাপ জিনিস খারাপভাবেই বলতে হয়।’ 

আজহার সাহেবের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল। তিনি বিছানা থেকে উঠে দাড়ালেন। মনোয়ারা তার হাত ধরে টান দিয়ে আগের জায়গায় বসিয়ে কঠিন লায় বললেন—কোনাে চিৎকার করবে না। কোনাে হৈ চৈ না। তারচে বড় কথা আমার মেয়েকে একটা কথা বলবে না।

আমার মেয়ের সম্মান আছে। সে জলে ভেসে আসেনি।  ‘সম্মান? তােমার মেয়ের সন্মনা ?  হ্যা সমান। সে ভুল করেছে। এ যুগে মেলামেশার যে বাড়াবাড়ি তাতে ভুল হতেই পারে। এই ভুলের কারণে তার সম্মান সারাজীবনের জন্য নষ্ট হবে কেকা তমি তাকে সাপোর্ট করছ? তুমি?” “হ্যা আমি। কারণ আমার কাজই হচ্ছে সাপাের্ট করা । তুমি যখন ভুল কর তখন ভুল জেনেও ভুলটাকে সাপাের্ট করি । করি না? 

‘আমি ভুল করি? 

“অবশ্যই নির। তুমি ফেরেশতা না—মানুষ। এবং সাধারণ মানুষ। তুমি তাে ভুল করবেই। এখন সেইসব নিয়ে কথা বলব না। এখন কথা বলব মীরার ভুল নিয়ে। তুমিতাে জাজ সাহেব। মেয়ের বিচার কর।’ 

“মেয়ের বিচার করব? 

হা মীরা ভার্সাস আজহার পরিবার, ফৌজদারি মামলা।’ ” মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’ 

হয়তাে হয়েছে। মাথা খারাপ না হলে সত্যিকথা বলা যায় না। সত্যি যখন বলছি তখন মনে হয় মাথা খারাপই হয়েছে। মেয়েকে নিয়ে এখন কী করবে বল।। 

‘ওকে এক্ষুনি বাড়ি থেকে চলে যেতে বল । এই মুহূর্তে। আমি যেন ওর মুখ না দেখি। আমি আর কোনাে দিনও এই মেয়ের মুখ দেখতে চাই না।’

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি শেষ খন্ড

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *