দেলােয়ার লােকটাকে মীরার পছন্দ হয়েছে। খুব হাসিখুশি । শুধু একটা সমস্যা যখন-তখন হুট করে ঘরে ঢুকে পড়ে। মেয়েদের ঘরে যে যখন-তখন। ঢোকা যায় না এই ব্যাপারটা বােধহয় জানে না। তাকে জানিয়ে দিতে হবে। কিছুক্ষণ আগে দেলােয়ার ঘরে ঢুকেছিল। মীরা খুব সাবধানে চোখ ফাক করে তাকিয়ে রইল। যাতে দেলােয়ার ধরে নেয় সে হচ্ছে। ঘুমন্ত মেয়ের ঘরে ঢুকে পুরুষরা বিচিত্র সব আচরণ করে । এই লােকটাও সে-রকম কিছু করে কি না তাই মীরার দেখার ইচ্ছ। হয়তো কাছে আসবে। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকবে। কিংবা খুব সাবধানে গায়ের কাপড়টা ছুঁয়ে দেখবে। অতিরিক্ত রকমের সাহসী হলে গালে হাত দেবে। দেলােয়ার অবশ্যি তেমন সাহসী না। ভয়েই মানুষটা ছােট হয়ে গেছে।
দেলােয়ার ঘরে ঢুকে অভদ্র ধরনের কিছুই করল না। মীরার দিকে তাকাল পর্যন্ত না । মীরার পায়ের কাছের জানালা বন্ধ করে দিল। কয়েকটা ঝাকি দিয়ে টেবিলে রাখা হারিকেনের তেল পরীক্ষা করল। তারপর যেমন হুট করে এসেছিল তেমনি হুট করে চলে গেল। যত ভালাে আচরণই করুক দেলােয়ার যেন ভবিষ্যতে ঘরে না ঢোকে এই ব্যবস্থা করতে হবে। এবং তার আপামণি ডাক বন্ধ করতে হবে। ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর বয়েসী একটা মানুষ তাকে আপামণি ডাকবে কেন ? মীরার বয়স মাত্র একুশ। লােকটা অশিক্ষিত মূর্থ হলে একটা
মীরা তার ঘরে শুয়ে আছে। তার চোখ বন্ধ, কিন্তু সে জেগে আছে । যেই তাকে দেখবে সেই ভাবৰে সে গভীর ঘুমে । ঘুমিয়ে থাকার অভিনয় মীরা খুব ভালো
কথা ছিল। তাতাে না । বি. এ. পাশ । একটা গ্রাজুয়েট ছেলে চাকর স্বভাবের হয়ে গেছে কী করে? অবলীলায় ঘর ঝাঁট দিচ্ছে। খালিগায়ে বালতি করে পানি নিয়ে আসছে। চোখে চোখ রেখে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না। কথা ও বলছে চাকরদের মতাে মিনমিন করে।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-৪
মনােয়ারা মেয়ের ঘরে ঢুকলেন। তার হাতে ট্রে। ট্রেতে দু কাপ চা। এক গ্লাস পানি । পিরিচে কয়েকটা হিলের জড় । বড় মেয়ের সঙ্গে বসে চা খাওয়া মনােয়ারার খুব পছন্দের একটা ব্যাপার। মনােয়ারা মেয়ের পাশে বসতে বসতে বললেন, মীরা ঘুমুচ্ছিস ?
মীরা উঠে বসতে বসতে বলল, দিলে তাে ঘুম ভাঙিয়ে ।
‘সন্ধ্যাবেলা ঘুমুতে নেই, শরীর খারাপ করে। নে তাের জন্যে চা এনেছি। কুলি করে চা খা।
কুলি ফুলি করতে পারব না। দাও চা দাও।”! শরীরটা কি এখন ভালাে লাগছে রে মা ? ই লাগছে।’ “তাের বাবার উপর খুব রাগ করেছিস না?” ‘খুব না, সামান্য করেছি।’
“তােকে বকা দিয়ে তাের বাবাও খুব মনে কষ্ট পাচ্ছে। একটু পরপর জিজ্ঞেস করছে তোর শরীর কেমন।
বাবাকে বলেই যে আমার শরীর এখলা ভালাে
না বলিনি। একটু কষ্ট পাক। যখন-তখন সবার সামলে বকাঝকার অভ্যাস যদি কমে।।
‘বাবার শখের নৌকাভ্রমণ নষ্ট করলাম। ‘নষ্ট করবি কেন ? নৌকাত্রে ঘাটেই বাধা আছে। কাল যাওয়া যাবে। বাবার পরিকল্পনা জানাে মা ? আমরা কালিন গ্রাম হাকল । “কোর্ট তাে টুইটারের শব্দ। কদিন যে থাকে ।
ছ’দিন থেকেই আমার অসহ্য লাগছে। বাবাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া যায় না ? একটু বলে দেখ না ।
এখন বল ঘবে না। আরাে কয়েকটা দিন থাক। তাের গ্রাম ভালাে লাগে
‘মানুষজনের কথা বাদ দে। গ্রাম দেখতে কত সুন্দর। গাছপালা, নদী। তােদের এই বাড়িটারও কত সুন্দর । কত বড় দোতলা বাড়ি। বাড়ির সঙ্গে বাধানাে পুকুর। কত সুন্দর ফলের বাগান।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-৪
“মা চুপ করাে তো। ভাঙা বাড়ি সাপের আডডা । মজা এক পুকুর।
মনােয়ার হেই দিন শ্বাস ফেলে বল ল ল , আমার কাছে খুব ভালো লাগে। আমি ঠিক করেছি তাের বাবা রিটায়ার করার পর এখানে এসে থাকব।
ঢাকার বাড়ি কী করবে? “তােদের দু-বােনকে দিয়ে দিব। আমরা বুড়ােবুড়ি থাকৰ গ্রামে।
বলতে ভালাে লাগে । বুড়ােবুড়ি হও তখন দেখবে আর গ্রামে থাকতে ইচ্ছা করবে না। আর তখন গ্রামে থাকা ঠিকও হবে না। তোমাদের তখন দরকার সার্বক্ষণিক মেডিকেল কেয়ার। গ্রামে ঢাকায় কোথায় ? প্রাকটিকাল হতে হবে মা। পথের পাঁচালীর গ্রাম বই পড়তে ভালাে । থাকার জন্যে ভালাে না।
মনােয়ারা উঠে দাড়ালেন। মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে তার সবসময়ই ভালাে লাগে। আজ বেশিক্ষণ কথা বলতে পারছেন না। তাকে রান্নাঘরে যেতে হবে। তার শাশুড়ি আজিলা বেগম ঝাল পিঠা বানাচ্ছেন। তিনি চান বৌ পিঠা বানানাে। লেক । শিখতে চাইলে শিম্বুক
মীরা বলল, দ্রছ কেন মা। বােস না । বসতে পারব না। শাশুড়ি আম্মা পিঠা বানাচ্ছেন তার কাছে বসতে হবে।
শাশুড়ি আম্মা বলতে বলতে বিয়ে ভেঙে পড়ে যাচ্ছ কেন মা। তাও যদি তােমার আপন শাশুড়ি হত। বাবার সৎ মা । তােমার সৎ শাশুড়ি।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-৪
হােক সৎ শাশুড়ি। কেমন আদর সবাইকে করে সেটা দেখবি না! গ্রামের বাড়ির জন্যে তাের বাবা এত যে ব্যস্ত তার প্রধান কারণ উনি। তাের বাবা গ্রামে। আসে মায়ের আদর নেবার জন্যে। 4. ‘আদর নেবার এই ব্যাপারটাও আমার কাছে খুব হাস্যকর লাগে । বুড়ো একজন মানুষ নলা বানিয়ে মুখে ভাত তুলে দেয়া। ছিঃ দেখলেই আমার গা ঘিন ঘিন করে । সৎ দাদীকে বলাে তাে মা এই কাণ্ডগুলি যেন উনি আমাদের চোখের
আড়ালে করেন। মনােয়ারা লজ্জিত গলায় বললেন, গ্রামের আদর তো এইরকমই। পুরাে প্রটের ভাত তো আর খাওয়ান না, এক-দুটা নলা মুখে তুলে নেয়। নিজের ছেলেপুলে হয়নি। তার বাবা ছিল তার চোখের মণি। মারা, তুই কি পিঠা খাবি আনব তাের জন্যে?
না মা, লাগে না। গ্রামে আসা মানেই গাদাগাদা গরিব মানুষ দেখা। সারাক্ষণ এরা আমাদের দেখছে আর মনে মনে ভাবছে আহা এরা কত সুখী। আমার খুবই অস্বস্তি লাগে।
ঝাল পিঠা আমি খাই না। তাছাড়া আমার শরীর ভালাে লাগছে না। রাতে আমি কিছুই খাব না। মা শােনাে, তুমি কি একটা কাজ করবে ?