হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-৯

যেদিন আমরা এখানে আসব, তার আগের দিন সালের ভাইয়ের সঙ্গে আপার খুব ঝগড়া হয়েছে। 

‘সাবের ভাই মানে কি লম্বা ছেলেটা “হ্যা। আমি ডাকি লম্বু ভাইয়া। আপা তাতে রাগ করে।’ ‘সাবের ছেলেটার সঙ্গে মীরার ঝগড়া হয়েছে? তোকে বলেছে ?

মীরার গ্রামের বাড়ি 

তুমি পাগল হয়েছ বাবা? আপা আমাকে কিছু বলবে? টেলিফোনে ঝগড়া হল তো, আমি আড়াল থেকে শুনলাম । টেলিফোন শেষ করে দরজা বন্ধ করে আপার যে কী কান্না। হাউ মাউ করে কেঁদেছে। 

“তাের মা জানে ? ‘মা ভাবু করে সে কিছুই জানে না। আসলে সবই জানে। ‘আমাকে তাে কিছু বলে নি।’ 

তোমাকে কে বলবে ? ‘আমাকে বলবে না কেন? আমি কি বাইরের কেউ যে আমাকে কিছু বলা যাবে না। 

তুমি ঘরের হলেও তুমি হচ্ছ পুরুষমানুষ। পুরুষমানুষকে সবকিছু বলা যায় 

ঝগড়া হয়েছে ভালো কথা। এই বয়সে ক্রাল-ফ্রেন্ডদের মধ্যে অগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই বলে দরজা বন্ধ করে কাদতে হবে? 

কাদতে হলে তো দরজা বন্ধ কালেই কাদতে হবে। দরজা খোলা রেখে কে কাদবে? বাবা আমি যাচ্ছি।’ 

বােস আরেকটু। স্টেট ভার্সেস শেফালি রানীর গল্পটা শুনবি ? না। মামলা মােকদদির গল্প শুনতে আমার ভালো লাগে না বাবা। না-শুনেই কীভাবে বুঝলি ভালাে লাগে না ? 

না-শুনেই আমি বুঝতে পারছি—খুবই বােরিং গল্প। তােমার বেশিরভাগ গল্পই বােরিং, মামলার গল্প আরো বেশি বােরিং। বাবা আমি যাচ্ছি।’ | আজহার সাহেব চুপচাল এল রইলেন। কি হ ম ম আগে রোল Gছ, এরমধ্যেই ব্লোদ কেমন কাড়া হয়ে গেছে। সুচের মতো গায়ে রােদ বিধে যাচ্ছে। 

মারা বারান্দায়। রােদে পা মেলে সে মােড়ায় বসে আছে। তাকে দেখেই বােঝা যাচ্ছে, রাতে তার ভালাে ঘুম হয়নি। চোখের নিচে কালি পড়েছে। মুখ শুকনাে লাগছে। তারপরও মনােয়ারা বারান্দায় এসে মীরাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। কী সাল্পই না মেয়েটাকে লাগছে! ইন্দ্রাণীর মতাে লাগছে। এই মেয়েটা তার বাবার মতাে সুন্দর হয়েছে। শেফা বেচারি তার বাবার কিছুই পায়নি। কেমন ভোতা নাক মুখ। গায়ের রঙটা পেলেও তাে কাজ হত । মীরা মার দিকে তাকিয়ে বলল, মা তুমি এই ভয়ংকর কাণ্ডটা কী করে করলে ? 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-৯

মনােয়ারা বিস্মিত হয়ে বলল, আমি কী করেছি? | দেলােয়ার নামের লােকটাকে সঙ সাজানাের বুদ্ধি তােমাকে কে দিল ? লরি ট্রর ইলল একট| কোট পরে সে ঘরে লোচ্ছে। তবে যে সাবাসের চাউলের মতাে লাগছে সে বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে মহাখুশি। 

গ্রামের মানুষ অল্পতেই খুশি হয়। ‘মা প্লিজ লােকটাকে বলে সে হয় কোট খুলে ফেলুক, কিংবা লুঙ্গির বদলে প্যান্ট পরুক। প্যান্ট না থাকলে বাবার একটা প্যান্ট দাও। উন যখন সাজবে পুরােপুরি সাজুক।’ 

হাতমুখ ধুয়েছিল ? নাশতা দেব?” 

কী নাশতা ?’ ভাপা পিঠা। ভাপা পিঠা খাব না। পরােটা ভেজে দিতে বল। “পরােটা ভেজে দিচ্ছি। একটা পিঠা খেয়ে দেখ, খেতে ভালাে হয়েছে।’ যত ভালােই হােক খাব না। মিষ্টি কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না।’ 

মনােয়ারা চলে যাচ্ছিলেন। মা বলল, মা আরেকটা জরুরি কথা শুনে যাও ।। 

কী কথা? ‘আমি নেত্রকোনা যাব। গাড়িটা নিয়ে যাব। দেলােয়ারকে বল সে যেন আমার সঙ্গে যায়। 

নেত্রকোনা কীজন্যে ? আমরি কাজ আছে । ‘ঢাকায় টেলিফোন করবি ? 

ই । আমাকে টেলিফোন করতেই হবে।’ “তোর বাবা রাগ করবে ।। রাগ করলে তুমি রাগ সামলাবে। আমাকে যেতেই হবে যা। তোর সমস্যাটা কী?” । Ainueilla “আমার সমস্যা ভয়াবহ।TS LATES 

T ‘ভয়াবহ মানে কী? আমাকে বলা যায়? 

আজ যদি টেলিফোনে স্রাবেরকে পাই তাহলে তােমাকে সমস্যাটা বলব।’ 

মনােয়ারা বললেন, মীরা তুই এক কাজ কর। তাের বাবা বাগানে আছে । তার কাছে গিয়ে বােস। আমি তোর নাশতা সেখানে দিচ্ছি।

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-৯

 বেচারি একা বসে আছে। তুই পাশে গিয়ে বসলে খুশি হবে। তখন তাের নেত্রকোনা যাওয়া সহজ হবে। তাের বাবা রাগ করবে না।’ 

যাক। নেত্রকোনা থেকে আমারাে দু-একটা জিনিস আনানাে দরকার । মীরা গেলে আমাজন্যে ভালো। মীরা দেখেশুনে ব্লানতে পারবে। | মীরার রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে । মা অকারণে এত কাদুনি গাইছে কেন ? 

মীরা গম্ভীর হয়ে বলল, না তুমি সবকিছু নিয়ে কৌশল কর, প্যাচ খেলে, এইটাই আমার খারাপ লাগে। তোমার মাথার মধ্যে সবসময় কেীশল খেলা করে । তুমি সহজ সাধারণভাবে কিছু করা, পারি না কেন ? 

সংসার ঠিকঠাক রাখতে হলে কৌশল লাশের মা। এখন বুঝবি না— আৱাে বয়স হােক তখন বুঝবি।’ 

বয়স আমার কম হয় নি —একুশ।’ “একশ একটা বল হল ? 

মীরা বাগানের দিকে রওনা হল। তার মেজাজ খারাপ। মা’র ওপর রাগ লাগছে। তার নেত্রকোনা যাবার মতাে সাধারণ একটা ব্যাপারেও মা একটু প্যাচ খেলবে। 

. আজহার সাহেব তার বড় মেয়েকে দেখে এত খুশি হলেন যে তার প্রায় চোখে পানি এসে যাবার মতাে ব্যাপার হল । তিনি উজ্জ্বল গলায় বললেন, কেমন চনমনে রােদ উঠেছে দেখেহিল মা? 

মীরা বলল, হ্যা। এখন তা রীতিমতো গরম লাগছে। সকালে দেখলাম কুয়াশায় কিছু দেখা যাচ্ছে না। আর এখন রােদ ঝা-বা করছে। বাবা শােনাে, আমি একটু নেত্রকোনা যাব। আমাকে ঢাকায় টেলিফোন করতে হবে। গাড়িটা নিয়ে চলে যাই? দেলােয়ার সঙ্গে থাকবে, বাবা আমি কি যাব? 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-৯

আজহার সাহেব বললেন, যা। রাস্তা খানিকটা ভাঙা আছে, সাবধানে টালাবি। আরেকটি কথা, দেলােয়ার বয়স তাের চে বড়। দেলােয়ার দা বলি। দেলােয়ার ভাই বলু। খুশি হবে। নাশতা করেছিস ? 

মা এখানে নাশতা নিয়ে আসবে।’ “ভেরি গুড । খোলামেলা জায়গায় বসে নাশতা খাবার মজাই অন্যরকম। 

নাশতার পেটে পাখি ইয়ে না করে দিলেই হল।’ 

আজহার সাহেব হাে হাে করে হেসে ফেললেন। তার হাসি আর হামহেই না। মীরা ভেবে পাচ্ছে না সে এমন কী কথা বলেছে যে বাবার হাসি থামছে 

শেফা খুব আয়োজন করেই মাছ মারাতে বলেছে। পুকলাভ তার জন্যে বড় একটা শীতল পাটি বিছানাে হয়েছে। শেফা যে জায়গায় বসেছে সেখানে রােদ আসে বলে বাশের মাথায় ছাতা বাধা হয়েছে। তার হাতে দুটা বড়শি আছে। এর মধ্যে

 

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১০

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *