নৌকায় উঠার মুখে ছােট্ট দুর্ঘটনা ঘটল, শেফার চোখ থেকে চশমা খুলে পানিতে পড়ে গেল। শেয়ার মাইয়োশিয়া, চশমা ছাড়া প্রায় কিছুই লেখে না। সে একবার ভাবল, মা আমার চশমা বলে বিকট চিৎকার দিয়ে সবার নিলে চমকে দেবে। সে তা করল না, যেন কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে নৌকায় উঠে এল। চশমা গানিতে পড়ে যাবার ব্যাপারটা এখন এটিকে – জালানোই ভালাে। বাবা হুট করে লিগে কেন। সবার সামনে বকা হল করবেন। দেলােয়ার ভাইকে এই সাভার মধ্যে পানিতে নামতে হবে। কী দরকার? হায়ণাটা শােকা চিনে রেগেছে। একসময় চুপিচুপি এসে পানি থেকে তুলে নিলেই হবে। চশমাটা যেখানে পড়েছে সেখানে হাঁটু পানিও হবে না। আর যদি হয় অসুবিধা হবে না। শেফা সাতান্ন জালে। এই বছরই মাদার’স ক্লাব থেকে সাঁতার শিখেছে।
কি সুব সাবধানে পা ফেলে এগুচ্ছে। বেশি হাটাহাটি করা যাবে না। শেষে কোনােকিছুতে পা বেধে ইমুড় করে পানিতে পড়ে যাবে । চশমা ছাড়া দৰ কেমন সাজ দেখাচ্ছে। বাবাকে দেখাচ্ছে ধরে দিরি মাতা । হলুদ কোটটা সরায়। এমন লাগছে। এক গাদার নাম লাল বস্ত-করা বডি বসলো। লাল হাতিটা হচ্ছে বাবা মা আর লাল কাপ।
শেফা তার বড় বোন মারার লাশে পাস করে বসে ভুল। একি বসায় নেহা শ্ৰীয় কাত হয়ে গেল। নারী তার দিকে তাকাল সরু দেখে । মারার মাথায় নীল কাফ। শীতের দেন কানকে কাস পরেছে। কাফের জন্যেই বােধ হয় তাকে দেখাচ্ছে বিলেলা মেনে নের মতো। বে ইউরোপে কোনাে মেয়ে বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছে। বাংলাদেশের নােংরা থেকে নিজেকে আলাদা ব্রাখার জনে| শরীর শক্ত করে এক কোনায় বসে আছে। মীরার হাতে একটা বই | শেক বাজি রেখে বলতে পারে যে নৌকা ভ্রাম মীর আপা বই পড়তে শুরু করবে এবং অবশ্যই অবশ্যই বাবার কাছে বকা খাবে। বাবার কাছ থেকে বা না-খয়ে আজ পর্যন্ত তারা কোলে বেড়ানাে শেষ করলি। বেরি ভাগ সময় সে বকা খায়। আজ নিশ্চিতভাবে মারা আপার টার্ম।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১
শেফা খানিকটা ঝুঁকে এসে বলল, আপা তাের হতে কী বই ? মীরা জবাব দিল না। শেফা আবারাে বলল, বইটার নাম কী ?
মীরা বিরক্ত গলায় বলল, সবসময় ঝামেলা করিস কেন? বইয়ের নাম দিয়ে করবি কী? তুই কি কখনাে বই পড়িস? অর শােন্ গায়ের উপর এসে বসছিস। কেন? নৌকায় কি আর জায়গা নেই যে আমার কোলে এসে বসতে হবে ?
শেফা সরে বসল। মীরা বলল, তুই অন্য কোথাও গিয়ে বস তাে। তােকে অসহ্য লাগছে।
কেন অসহ্য লাগছে? – জানি না কেন লাগছে, প্লিজ তুই আমার পাশে বসবি না।’
শেফা উঠে দাঁড়াল। নৌকার অনন্য মাথায় যাওয়া যায়। অনেকটা জায়গা হাটতে হবে। নৌকার ভেতরটা কেমন খােপ খােপ । নিশ্চয়ই ধাক্কা টাক্কা খাবে। শেফার বুক সামান্য ধুকধুক করছে। তার চোখে চশমা নেই বাবা ধরে ফেলবে নাতাে ? ধরতে না-পার সম্ভাবনাই বেশি। বাবা হয়তো তার মুখের দিকে ভালাে করে তাকাবেই । শেফার ধারণা কেউ তার মুখের দিকে ভালাে করে তাকায় না। একবার তার জনকের গায় ফোঁড়ার মতাে হল । নাক ফুলে হাতির শুড়ের মতাে হয়ে গেল, তাও বাসার কেউ ধরতে পারল না। শুধু স্কুলের অক্ষ মিল বলল, শেফা তাের মাকে কী হয়েছে ? মালশের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়, তাের দেখি নাক ফুলে পেপে গাছ হয়ে গেছে।
শেফার বাবা সুপ্রিম কোর্টের জাজ আজহার সাহেব মেয়েকে দাড়িয়ে থাকতে দেশে আনন্দিত গলায় বললেন, দাড়িয়ে আছিস কে আমার কাছে চলে অ|য়। কবির পাশে বসলে মোটেই ইচ্ছা করে। এখা। বাবার পাশে বসা মানেই এিানী জ্ঞানী কথা শৌলা। বেড়াতে এসেও জ্ঞানীকথা শােনার কোনাে মানে হয় না। কোনাে উপায় নেই। শেফার মনে হচ্ছে তার জন্যই হয়েছে অভ্রানীকথা শোনার জন্যে। | শেফা বাবার পাশে বসল । মেয়ের পিঠে হাত রেখে খুশি-খুশি গলায় বললেন, কিরে শেফা একসাইটিং লাগছে না? এ রিয়েল জার্নি বাই কান্ট্রি বােট।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১
আগে রচনা লিখেছিস মুখস্থ করে। এখন লিখতে পারবি অভিজ্ঞতা আজহার সাহেব হাসিমুখে বললেন, তোরা তো গ্রামে আসতেই চান না। বলতে গেলে তােদের জোর করে ধরে নিয়ে এসেছি। এখন মনে হচ্ছেনা, না এলে বােকামি হত ?
‘ই মনে হচ্ছে। না এলে খুব বােকামি হত।
গ্রামের এই সৌন্দর্যের কোনো তুলনা আছে ? কোনাে তুলনা নেই। ফার ম লি মেডিং ক্রাউড | কারকম ফ্রেশ বাতাস লেখেছিস ? ওজন ভর্তি বাতাস। ঢাকায় এ-রকম বাতাস কোথায় পাৰি? ঢাকার বাতাস মানেই কার্বন মক্সাইড় | সচুসের নফারফা। জখম হওয়া ফুসফুস ঠিক করার জন্য
আমাদের মাঝে মাঝে গ্রামে আসা দরকার।’
“ঠিক বলেছ বাবা।’
ঠিক এই মুহূর্তে তার চশমাটার জন্যে শেফার খুব আফসােস হচ্ছে। এখন একটা মজার দৃশ্য হচ্ছে। চশমা না-থাকার কারণে শেফা দৃশ্যটা ভাসা-ভাসা দেখতে পাচ্ছে। ভালােমতো দেখতে পারলে খুব মজা হত। তার মা মনােয়ারা নৌকায় উঠছেন। তাঁকে সাহায্য করছেন দেলােয়ার ভাই । মনে হচ্ছে সার্কাসের কোনাে খেলা হচ্ছে। দড়ির উপর হাঁটার রােমাঞ্চকর খেলা । নদীর পার থেকে নৌকার গলুই পর্যন্ত দুটা বাশ ফেলা আছে, বাশে পা দিয়ে নৌকায় উঠতে হয়।দেলোয়ার ভাই দুহাতে মার ডান হাতটা ধরে টানছেন। মনে হচ্ছে বালির বস্তা টেনে আনছেন। আর মা এমনভাবে দুলছেন যে মনে হচ্ছে তার খুব ইচ্ছা নদীতে পড়ে যাওয়া। দেলােয়ার ভাই থাকতে মা একা-একা নদীতে পড়ে যাবে তা হবে না। দেলােয়ার ভাই ও অতি অবশ্যই মার সঙ্গে নদীতে ঝাপ দেবে। তাতে মজা ভালােই হবে। শুধু শেফার চশমা যেখানে পরেছে, দুজন মিলে সেখানে না-পড়লেই হল।
মনােয়ারা বেগম নৌকায় উঠে তৃপ্তির হাসি হাসছেন। তিনি আজ শাড়ি পরেননি। মীরার একটা কামিজ পরেছেন। টকটকে লাল রঙের কামিজটা আঁটি হয়ে গায়ে বসে গেছে। শুরুতে তার একটু লজ্জা-লজ্জা লাগছিল এখন আর লাগছে না। বরং ভালো লাগছে। শাড়ি পরে নৌকায় উঠানামা খুব ঝামেলা । তিনি বড় মেয়ের কাছে এসে দাড়ালেন, আদুরে গলায় বললেন, ‘বুঝলি মীরা, আরেকটু হলে পড়েই যেতাম ।