হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১০

সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না কেয়ার মন এত খারাপ কেন

উঁচু দালানের ছাদ ভাল লাগে নাসব সময় এক ধরনের অস্বস্তি লেগে থাকেমনে হয় পৃথিবী থেকে অনেক দূরে ছাদে উঠবার মুখে সিঁড়িটা ভাঙাকেয়া বলল, আমার হাত ধরসিঁড়ি ভাঙা

মেঘের ছায়া 

জাহেদ হাত ধরলকত সহজ, কত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সে এই মেয়েটির হাত ধরতে পারছে ! এই আনন্দের কি কোন তুলনা হয়

কেয়া রেলিং ঘেঁসে দাঁড়িয়েছেজাহেদ বলল এমন ঘেঁসে দাড়িও নারেলিং ভেঙে পড়ে যেতে পারেআজকাল দালানকোঠা বানাতে সিমেন্ট দেয় নাবালি দিয়ে কাজ সারেতুমি এত চুপচাপ কেন কেয়া? কিছু হয়েছে

না, কি হবে! বিয়ের জোগাড়যন্ত্র কি সব হয়েছে?কিছুটাবরযাত্রীর জন্যে মাইক্রোবাস ব্যবস্থা করেছিকি এক বিয়ে, তার আবার বরযাত্রী। 

জাহেদ বলল, যত তুচ্ছ বিয়েই হােক, বিয়ে তােকেয়া বলল, টাকাপয়সা আছে তােমার কাছে? আছে কিছু। 

সেই কিছুটা কত

জাহেদ চুপ করে রইলকেয়া ক্লান্ত গলায় বলল, বিয়ের শাড়ি তাে তােমাকে একটা কিনতে হবেমােটামুটি ভাল একটা শাড়ি কেনা দরকারআমার মেয়েরা বড় হয়ে মায়ের বিয়ের শাড়ি নিশ্চয়ই দেখতে চাইবে। 

মেঘের ছায়া খন্ড-১০

ভাল শাড়িই কিনব‘ 

কেয়া বলল, আমার নানি আমাকে কিছু টাকা দিয়েছেনসামান্যইচার হাজার টাকাটাকাটা তুমি নিয়ে যাও। 

টাকা লাগবে না। 

লাগবেতােমার কি অবস্থা সেটা আমার চেয়ে ভাল কেউ জানে নাভাল কথা বিয়ের পর আমি উঠব কোথায়

এখনাে ঠিক করিনি” 

একটা কিছু ঠিক করতুমি আমাকে যেখানে নিয়ে যাবে আমি সেখানেই যাব শুধু বিয়ের পরেও এখানে ফেলে রেখ না। 

তা করব নাতুমি তাে তােমার ছােট মামার সঙ্গেই থাক। বারান্দায় ক্যাম্পখাট পেতে ঘুমাও?” বৃষ্টি হলে ভিজে যাও

আমাকেও কি সেই ক্যাম্পখাটে থাকতে হবে?” 

জাহেদ চুপ করে রইলকেয়া বলল, ক্যাম্পখাটে থাকতে আমার কোন আপত্তি নেইএই সব নিয়ে তুমি মন খারাপ করবে নাকষ্ট করে তােমার যেমন অভ্যাস আছে, আমারাে আছেশুধু যদি ..

শুধু যদি কি?” 

মেঘের ছায়া খন্ড-১০

কেয়া ক্ষীণ স্বরে বলল, শুধু যদি কয়েকটা দিন নিরিবিলি তােমার সঙ্গে থাকতে পারতামকেয়া ছােট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তুমি দাঁড়াও এখানেআমি টাকাটা নিয়ে আসিতােমাকে এত ক্লান্ত লাগছে কেন? খুব হাঁটাহাটি করছ

টাকাজন্যে নানা ধরনের লোকজনের কাছে হাত পেতে বেড়াচ্ছ না তাে

কারাে কাছে টাকার জন্যে হাত পাতবে নামনে থাকে যেনতুমি দাঁড়াও। 

পাঁচ মিনিটের ভেতর কেয়া চলে এলতার হাতে ছােট্ট একটা ট্রেপিরিচে ঢাকা এক কাপ চাসঙ্গে দুটা টোস্ট বিসকিট। 

ঘরে কিছু নেইবিসকিট দিয়ে চা খাও। 

জাহেদ চা খাচ্ছেকেয়া তাকিয়ে আছেকেন জানি তার বড় মায়া লাগছেতার ইচ্ছে করছে জাহেদকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকতেবেশির ভাগ মেয়েরই কি এরকম হয়, না তার বেলাতেই হচ্ছে

এই খামে টাকা আছেসাবধানে রাখআর শােন, তুমি একটা কাজ করবে নিজের জন্যে একটা শার্ট এবং প্যান্ট কিনবেনীল রঙের হাফ হাওয়াই শার্ট আর ধবধবে শাদা রঙের প্যান্টমনে থাকবে? নীল শার্ট, শাদা প্যান্ট কেন?” 

একবার একটা ছেলেকে নীল শার্ট আর শাদা প্যান্ট পরে যেতে দেখেছিলাম

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১১

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *