সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না কেয়ার মন এত খারাপ কেন?
উঁচু দালানের ছাদ ভাল লাগে না। সব সময় এক ধরনের অস্বস্তি লেগে থাকে। মনে হয় পৃথিবী থেকে অনেক দূরে ছাদে উঠবার মুখে সিঁড়িটা ভাঙা। কেয়া বলল, আমার হাত ধর। সিঁড়ি ভাঙা।
জাহেদ হাত ধরল। কত সহজ, কত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সে এই মেয়েটির হাত ধরতে পারছে ! এই আনন্দের কি কোন তুলনা হয় !
কেয়া রেলিং ঘেঁসে দাঁড়িয়েছে। জাহেদ বলল – এমন ঘেঁসে দাড়িও না। রেলিং ভেঙে পড়ে যেতে পারে। আজকাল দালান–কোঠা বানাতে সিমেন্ট দেয় না। বালি দিয়ে কাজ সারে। তুমি এত চুপচাপ কেন কেয়া? কিছু হয়েছে ?
‘না, কি হবে! বিয়ের জোগাড়যন্ত্র কি সব হয়েছে?” ‘কিছুটা। বরযাত্রীর জন্যে মাইক্রোবাস ব্যবস্থা করেছি। ‘কি এক বিয়ে, তার আবার বরযাত্রী।
জাহেদ বলল, যত তুচ্ছ বিয়েই হােক, বিয়ে তাে। কেয়া বলল, টাকা–পয়সা আছে তােমার কাছে? ‘আছে কিছু।
সেই কিছুটা কত ?
জাহেদ চুপ করে রইল। কেয়া ক্লান্ত গলায় বলল, বিয়ের শাড়ি তাে তােমাকে একটা কিনতে হবে। মােটামুটি ভাল একটা শাড়ি কেনা দরকার। আমার মেয়েরা বড় হয়ে মায়ের বিয়ের শাড়ি নিশ্চয়ই দেখতে চাইবে।
মেঘের ছায়া খন্ড-১০
‘ভাল শাড়িই কিনব।‘
কেয়া বলল, আমার নানি আমাকে কিছু টাকা দিয়েছেন। সামান্যই। চার হাজার টাকা। টাকাটা তুমি নিয়ে যাও।
‘টাকা লাগবে না।
‘লাগবে। তােমার কি অবস্থা সেটা আমার চেয়ে ভাল কেউ জানে না। ভাল কথা – বিয়ের পর আমি উঠব কোথায় ?
‘এখনাে ঠিক করিনি।”
একটা কিছু ঠিক কর। তুমি আমাকে যেখানে নিয়ে যাবে – আমি সেখানেই যাব — শুধু বিয়ের পরেও এখানে ফেলে রেখ না।
‘তা করব না। ‘তুমি তাে তােমার ছােট মামার সঙ্গেই থাক। বারান্দায় ক্যাম্পখাট পেতে ঘুমাও?” ‘বৃষ্টি হলে ভিজে যাও?
‘আমাকেও কি সেই ক্যাম্পখাটে থাকতে হবে?”
জাহেদ চুপ করে রইল। কেয়া বলল, ক্যাম্পখাটে থাকতে আমার কোন আপত্তি নেই। এই সব নিয়ে তুমি মন খারাপ করবে না। কষ্ট করে তােমার যেমন অভ্যাস আছে, আমারাে আছে। শুধু যদি ...
‘শুধু যদি কি?”
মেঘের ছায়া খন্ড-১০
কেয়া ক্ষীণ স্বরে বলল, শুধু যদি কয়েকটা দিন নিরিবিলি তােমার সঙ্গে থাকতে পারতাম। কেয়া ছােট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তুমি দাঁড়াও এখানে। আমি টাকাটা নিয়ে আসি। তােমাকে এত ক্লান্ত লাগছে কেন? খুব হাঁটাহাটি করছ?
‘টাকার জন্যে নানা ধরনের লোকজনের কাছে হাত পেতে বেড়াচ্ছ না তাে?
কারাে কাছে টাকার জন্যে হাত পাতবে না। মনে থাকে যেন। তুমি দাঁড়াও।
পাঁচ মিনিটের ভেতর কেয়া চলে এল। তার হাতে ছােট্ট একটা ট্রে। পিরিচে ঢাকা এক কাপ চা। সঙ্গে দুটা টোস্ট বিসকিট।
‘ঘরে কিছু নেই। বিসকিট দিয়ে চা খাও।
জাহেদ চা খাচ্ছে। কেয়া তাকিয়ে আছে। কেন জানি তার বড় মায়া লাগছে। তার ইচ্ছে করছে জাহেদকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকতে। বেশির ভাগ মেয়েরই কি এরকম হয়, না তার বেলাতেই হচ্ছে?
‘এই খামে টাকা আছে। সাবধানে রাখ। আর শােন, তুমি একটা কাজ করবে – নিজের জন্যে একটা শার্ট এবং প্যান্ট কিনবে। নীল রঙের হাফ হাওয়াই শার্ট আর ধবধবে শাদা রঙের প্যান্ট। মনে থাকবে? ‘নীল শার্ট, শাদা প্যান্ট কেন?”
একবার একটা ছেলেকে নীল শার্ট আর শাদা প্যান্ট পরে যেতে দেখেছিলাম।
Read More