হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১১

 খুব সুন্দর লাগছিলএখনাে চোখে ভাসে। 

ছেলেটাকে সুন্দর লাগছিল বলেই আমাকে সুন্দর লাগবে এমন তাে কোন কথা নেই। 

মেঘের ছায়া

তর্ক করবে নাযা করতে বলছি করবেআচ্ছা, আমি উঠি এখন?” 

না, বােস আরাে খনিকক্ষণকোন কথা বলার দরকার নেইচুপচাপ বসে থাক। 

তারা দুজনই চুপচাপ বসে রইলকেয়ার বােনের ছােট মেয়েটি ছাদে এসে গম্ভীর গলায় বলল, ছােট খালা, মা তােমাকে ডাকে। 

কেয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নিচে চলে গেলযাবার সময় জাহেদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েও গেল না। 

কেয়াদের বাড়ি থেকে বের হয়ে জাহেদ শুভ্রের বাসায় টেলিফোন করলরেহানা টেলিফোন ধরলেন এবং বললেন, শুভ্র তাে শুয়ে পড়েছেকি বলতে হবে তুমি 

আমাকে বল, আমি বলে দেব। 

জাহেদ হড়বড় করে বলল, কিছু বলতে হবে নাআমি আপনাদের বাড়ির দারােয়ানের কাছে একটা চিঠি দিয়ে এসেছি

রেহানা বললেন, শুভ্র চিঠি পেয়েছে। 

জাহেদ বাসায় ফিরল রাত এগারােটার দিকেখেতে গেল রান্নাঘরেমনােয়ারা ভাত বেড়ে দিলেনএত রাতে ভাত গরম থাকে নাআজ গরম আছেগরম গরম ভাতডিমভাজা, ডালগরম ভাতের রহস্য হল ভাত রান্না হয়েছেমনােয়ারার মা ঢাকায় এসেছেন চিকিৎসার জন্যেভাতে টান পড়েছেনতুন করে বঁধতে হয়েছে। 

মেঘের ছায়া খন্ড-১১

মনােয়ারা বললেন, খাওয়ার পর চট করে শুয়ে পড়বে নাতােমার মামা তােমার সঙ্গে কথা বলবেনজাহেদ বলল, কি কথা মামী

কি কথা আমি কি করে বলব? আমাকে তাে কিছু বলে নাইআপনি কিছুই জানেন না?না, আমি কিছুই জানি না। 

মিজান সাহেব কথা খুব কম বলেনবেশির ভাগ কথাবার্তাই তিনি হুঁ হুঁমধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনসেই তুলনায় আজ অনেক কথা বললেনতাঁর কথার সারমর্ম হচ্ছে জাহেদ যেন বৌ নিয়ে বাসায় না উঠেতাঁর সামথ্য ছিল নাতারপরেও তিনি দীর্ঘদিন জাহেদকে পুষেছেনদুজনকে পােষার তার সামর্থ্য নেইবিয়ে করার মত সাহস যখন জাহেদের আছে তখন নিশ্চয়ই স্ত্রীকে প্রতিপালনের ক্ষমতাও তার আছেজাহেদ যদি তার কথা না শুনে বউ নিয়ে এখানে উঠে তাহলে ভয়াবহ কাণ্ড ঘটে যাবে। 

জাহেদ চুপ করে শুনে গেলকিছবলল নামিজান সাহেব কিছু শােনার জন্যেও অপেক্ষা করলেন নাএটা তার স্বভাব নাতিনি নিজের কথা শেষ করে 

একটা সিগারেট ধরালেননিঃশব্দে সিগারেট শেষ করে ঘুমুতে গেলেন। 

আজ সারাদিন জাহেদের খুব পরিশ্রম হয়েছেবিছানায় শুয়ে পড়ামাত্র ঘুম এসে যাওয়ার কথা কিন্তু ঘুম এল নাসে সারা রাত জেগে কাটালশেষ রাতে তার মধ্যে কেয়াকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখলজলিল সাহেব সেই দুঃস্বপ্নে কেয়াকে বৌ বৌকরে ডাকছেন

মেঘের ছায়া খন্ড-১১

 শুভ্র তার চশমা খুঁজে পাচ্ছে নাবিছানার পাশে রেখে সে বাথরুমে ঢুকেছিল চোখে পানি দিতেবাথরুম থেকে বের হয়ে সে গেল বারান্দায়বারান্দায় মাথা থেকে মাথা পর্যন্ত দুবার হাঁটলঠিক সন্ধ্যায় চশমা ছাড়া পৃথিবীকে দেখতে তার ভাল লাগেসম্পূর্ণ অন্যরকম লাগেচারদিক অন্ধকারএই অন্ধকারে বাতি জ্বলে উঠছেচশমা ছাড়া এই বাতিগুলিকে অনেক উজ্জ্বল এবং ছড়ানাে মনে হয়। শুভ্রইচ্ছা করছিল আরাে খানিকক্ষণ হাঁটতে, কিন্তু সময় নেইআজ জাহেদের বিয়ে

সন্ধ্যা মেলাবার পরপর বরযাত্রী রওনা হবেশুভ্র বরযাত্রীদেরএকজনসে মাইক্রোবাস নিয়ে যাবেতার দেরি করার সময় নেইশুভ্র ঘরে ঢুকলচশমা খুঁজে পেল নাবিছানার পাশে এই সপ্তাহের টাইম পত্রিকা পাতা খােলা অবস্থায় আছেপত্রিকার পাশে এক প্যাকেট ক্যাসাে নাটপ্যাকেট খােলাহয়নিবালিশের নিচে তার নােটবুক এবং পেনসিলসবই আছে, চশমা নেইশুভ্র তার শরীরে এক ধরনের কাঁপুনি অনুভব করল

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১২

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *