খুব সুন্দর লাগছিল। এখনাে চোখে ভাসে।
‘ছেলেটাকে সুন্দর লাগছিল বলেই আমাকে সুন্দর লাগবে এমন তাে কোন কথা নেই।
‘তর্ক করবে না। যা করতে বলছি করবে। ‘আচ্ছা, আমি উঠি এখন?”
‘না, বােস আরাে খনিকক্ষণ। কোন কথা বলার দরকার নেই। চুপচাপ বসে থাক।
তারা দু‘জনই চুপচাপ বসে রইল। কেয়ার বােনের ছােট মেয়েটি ছাদে এসে গম্ভীর গলায় বলল, ছােট খালা, মা তােমাকে ডাকে।
কেয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নিচে চলে গেল। যাবার সময় জাহেদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েও গেল না।
কেয়াদের বাড়ি থেকে বের হয়ে জাহেদ শুভ্রের বাসায় টেলিফোন করল। রেহানা টেলিফোন ধরলেন এবং বললেন, শুভ্র তাে শুয়ে পড়েছে। কি বলতে হবে তুমি
আমাকে বল, আমি বলে দেব।
জাহেদ হড়বড় করে বলল, কিছু বলতে হবে না। আমি আপনাদের বাড়ির দারােয়ানের কাছে একটা চিঠি দিয়ে এসেছি।
রেহানা বললেন, শুভ্র চিঠি পেয়েছে।
জাহেদ বাসায় ফিরল রাত এগারােটার দিকে। খেতে গেল রান্নাঘরে। মনােয়ারা ভাত বেড়ে দিলেন। এত রাতে ভাত গরম থাকে না। আজ গরম আছে। গরম গরম ভাত। ডিমভাজা, ডাল। গরম ভাতের রহস্য হল – ভাত রান্না হয়েছে। মনােয়ারার মা ঢাকায় এসেছেন চিকিৎসার জন্যে। ভাতে টান পড়েছে। নতুন করে বঁধতে হয়েছে।
মেঘের ছায়া খন্ড-১১
মনােয়ারা বললেন, খাওয়ার পর চট করে শুয়ে পড়বে না। তােমার মামা তােমার সঙ্গে কথা বলবেন। জাহেদ বলল, কি কথা মামী?
‘কি কথা আমি কি করে বলব? আমাকে তাে কিছু বলে নাই। ‘আপনি কিছুই জানেন না?” “না, আমি কিছুই জানি না।
মিজান সাহেব কথা খুব কম বলেন। বেশির ভাগ কথাবার্তাই তিনি হুঁ হুঁ–র মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন। সেই তুলনায় আজ অনেক কথা বললেন। তাঁর কথার সারমর্ম হচ্ছে – জাহেদ যেন বৌ নিয়ে এ বাসায় না উঠে। তাঁর সামথ্য ছিল না। তারপরেও তিনি দীর্ঘদিন জাহেদকে পুষেছেন। দু‘জনকে পােষার তার সামর্থ্য নেই। বিয়ে করার মত সাহস যখন জাহেদের আছে তখন নিশ্চয়ই স্ত্রীকে প্রতিপালনের ক্ষমতাও তার আছে। জাহেদ যদি তার কথা না শুনে বউ নিয়ে এখানে উঠে তাহলে ভয়াবহ কাণ্ড ঘটে যাবে।
জাহেদ চুপ করে শুনে গেল। কিছবলল না। মিজান সাহেব কিছু শােনার জন্যেও অপেক্ষা করলেন না। এটা তার স্বভাব না। তিনি নিজের কথা শেষ করে
একটা সিগারেট ধরালেন। নিঃশব্দে সিগারেট শেষ করে ঘুমুতে গেলেন।
আজ সারাদিন জাহেদের খুব পরিশ্রম হয়েছে। বিছানায় শুয়ে পড়ামাত্র ঘুম এসে যাওয়ার কথা কিন্তু ঘুম এল না। সে সারা রাত জেগে কাটাল। শেষ রাতে তার মধ্যে কেয়াকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখল। জলিল সাহেব সেই দুঃস্বপ্নে কেয়াকে বৌ বৌ। করে ডাকছেন।
মেঘের ছায়া খন্ড-১১
শুভ্র তার চশমা খুঁজে পাচ্ছে না। বিছানার পাশে রেখে সে বাথরুমে ঢুকেছিল চোখে পানি দিতে। বাথরুম থেকে বের হয়ে সে গেল বারান্দায়। বারান্দায় এ–মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত দু’বার হাঁটল। ঠিক সন্ধ্যায় চশমা ছাড়া পৃথিবীকে দেখতে তার ভাল লাগে। সম্পূর্ণ অন্যরকম লাগে। চারদিক অন্ধকার। এই অন্ধকারে বাতি জ্বলে উঠছে। চশমা ছাড়া এই বাতিগুলিকে অনেক উজ্জ্বল এবং ছড়ানাে মনে হয়। শুভ্র’র ইচ্ছা করছিল আরাে খানিকক্ষণ হাঁটতে, কিন্তু সময় নেই। আজ জাহেদের বিয়ে।
সন্ধ্যা মেলাবার পরপর বরযাত্রী রওনা হবে। শুভ্র বরযাত্রীদের। একজন। সে মাইক্রোবাস নিয়ে যাবে। তার দেরি করার সময় নেই। শুভ্র ঘরে ঢুকল। চশমা খুঁজে পেল না। বিছানার পাশে এই সপ্তাহের টাইম পত্রিকা পাতা খােলা অবস্থায় আছে। পত্রিকার পাশে এক প্যাকেট ক্যাসাে নাট। প্যাকেট খােলা। হয়নি। বালিশের নিচে তার নােটবুক এবং পেনসিল। সবই আছে, চশমা নেই। শুভ্র তার শরীরে এক ধরনের কাঁপুনি অনুভব করল।
Read More