শুভ্র বলল, কটা বাজে মা? ‘খুব বেশি বাজে নি। মাত্র ছটা। তুই কাপড় পরে তৈরি হয়ে থাক। ড্রাইভারকে বলি মাইক্রোবাস বের করে রাখতে। তুই আমার সঙ্গে বসে চা খা। বােকা ছেলে ! এত অল্পতে এমন নার্ভাস হলে চলে?
‘আমার দেরি হলে জাহিদ খুব অস্থির হয়ে পড়বে। আজ ওর বিয়ে। আজ কি ওকে অস্থির করা উচিত?
‘তাের দেরি দেখলে ও অস্থির হবে কেন?
‘ও তাে কোন গাড়ি–টারি জোগাড় করতে পারে নি। আমাদের মাইক্রোবাসটা ওর ভরসা। এটাকেই ফুলটুল দিয়ে সাজিয়ে বরের গাড়ি করা হবে।
‘তাহলে বরং এক কাজ করা যাক। মাইক্রোবাসটা পাঠিয়ে দেয়া যাক। তুই চশমা পাওয়ার পর আমার ছােট গাড়িটা নিয়ে যাবি।
‘এটা মন্দ না, মা।
শুভ্র সাদা পাঞ্জাবী পরল। পাঞ্জাবীর হাতা কুঁচকে ছিল। রেহানা নিজে ইস্ত্রি করিয়ে দিলেন। হালকা খয়েরী রঙের প্যান্ট। সাদা পাঞ্জাবী, ধবধবে সাদা স্যান্ডেল। শুভ্রকে রাজপুত্রের মত লাগছে। রেহানা ছেলের সঙ্গে বসে চা খাচ্ছেন। শাহেদা এবং মতি মিয়া দোতলা উলট–পালট করে ফেলছে। শুভ্রে’র অস্থির ভাব অনেকটা কেটে গেছে। সে শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে। একবার শুধু জিজ্ঞেস করল, কটা বাজে মা?
সাড়ে সাতটা বাজে, রেহানা ছেলেকে সেই খবর দিলেন না। বললেন, মাত্র সন্ধ্যা মিলিয়েছে। রাত বেশি হয়নি। তাের বন্ধুর বিয়ে হচ্ছে কোথায় ? কমুনিটি সেন্টারে ?
‘না। নাখালপাড়ায়। ওরা খুব গরীব। কম্যুনিটি সেন্টার ভাড়া করার মত পয়সা নেই। ‘মেয়ের বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে?
মেঘের ছায়া খন্ড-১৩
‘না, মেয়ের বােনের বাসায়। মেয়ের বাবা–মা নেই। বড় বােন মানুষ করেছেন। উনার বাড়িতেই বিয়ে হচ্ছে।”
‘তুই কি ঐ বাড়ি চিনিস?” ‘না–মা। ‘চেনা থাকলে ভাল হত। সরাসরি ঐ বাড়িতে চলে যেতে পারতিস। বরযাত্রী নিশ্চয়ই এর মধ্যে রওনা হয়ে গেছে ..।
‘চশমা মনে হচ্ছে পাওয়া যাবে না, মা ! ‘অবশ্যই পাওয়া যাবে। কোথায় কোন ফাঁকে পড়েছে। তােকে আরো সাবধান হতে হবে, শুভ্র।
শুভ্র হাসল। কি সুন্দর করে ছেলেটা হাসে। যতবার দেখেন ততবার রেহানার বুক ধক করে উঠে। পুরুষ মানুষকে এত রূপবান হতে নেই। শুভ্র বলল, মা, আমি। ছাদে গিয়ে বসব। তুমি আমাকে ছাদে দিয়ে এসাে।
‘আমি বরং চশমার দোকানে টেলিফোন করে দেখি।
‘লাগবে না মা। আমার এখন আর যেতে ইচ্ছা করছে না। তুমি আমাকে ছাদে দিয়ে এসাে। রেহানা শুভ্রকে হাত ধরে ধরে ছাদে তুলে দিলেন। শুভ্র বলল, তুমি চলে যাও। আমি একা একা ছাদে হাঁটব।
মেঘের ছায়া খন্ড-১৩
‘ভয় পাবি তাে!” ‘ভয় পাব কেন?
রেহানা নিচে নেমে গেলেন। তাঁর নিজেরও মন খারাপ লাগছে। শুভ্রর সামান্যতম কষ্টও তাঁর বুকে এসে লাগে। তিনি নিজের শােবার ঘরে ঢুকে তাঁর দূর সম্পর্কের বােন রিয়াকে টেলিফোন করলেন। রিয়া খুব আমুদে মেয়ে। ও এসে হৈচৈ করে শুভ্র’র মন ভাল করে দেবে। ও বাসায় আছে কিনা সেটাই কথা। রিয়ার বরও হয়েছে রিয়ার মত। দিন রাত চরকিপাক খাচ্ছে। রিয়ার বরের সঙ্গে বাইরে থাকার কথা।
রিয়াকে পাওয়া গেল। রেহানা বললেন, কি করছিস রিয়া? রিয়া হাসতে হাসতে বলল, ছটফট করছি। ‘ছটফট করছিস কেন?
‘আজ রাত বারােটায় আমাদের বাড়িতে ভূত নামানাে হবে। এই টেনশানে ছটফট করছি।”
Read More