হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১৩

শুভ্র বলল, কটা বাজে মা? খুব বেশি বাজে নিমাত্র ছটাতুই কাপড় পরে তৈরি হয়ে থাকড্রাইভারকে বলি মাইক্রোবাস বের করে রাখতেতুই আমার সঙ্গে বসে চা খাবােকা ছেলে ! এত অল্পতে এমন নার্ভাস হলে চলে?

মেঘের ছায়া  

আমার দেরি হলে জাহিদ খুব অস্থির হয়ে পড়বেআজ ওর বিয়েআজ কি ওকে অস্থির করা উচিত

তাের দেরি দেখলে অস্থির হবে কেন

তাে কোন গাড়িটারি জোগাড় করতে পারে নিআমাদের মাইক্রোবাসটা ওর ভরসাএটাকেই ফুলটুল দিয়ে সাজিয়ে বরের গাড়ি করা হবে। 

তাহলে বরং এক কাজ করা যাকমাইক্রোবাসটা পাঠিয়ে দেয়া যাকতুই চশমা পাওয়ার পর আমার ছােট গাড়িটা নিয়ে যাবি। 

এটা মন্দ না, মা। 

শুভ্র সাদা পাঞ্জাবী পরলপাঞ্জাবীর হাতা কুঁচকে ছিলরেহানা নিজে ইস্ত্রি করিয়ে দিলেনহালকা খয়েরী রঙের প্যান্টসাদা পাঞ্জাবী, ধবধবে সাদা স্যান্ডেলশুভ্রকে রাজপুত্রের মত লাগছেরেহানা ছেলের সঙ্গে বসে চা খাচ্ছেনশাহেদা এবং মতি মিয়া দোতলা উলটপালট করে ফেলছেশুভ্রেঅস্থির ভাব অনেকটা কেটে গেছেসে শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছেএকবার শুধু জিজ্ঞেস করল, কটা বাজে মা

সাড়ে সাতটা বাজে, রেহানা ছেলেকে সেই খবর দিলেন নাবললেন, মাত্র সন্ধ্যা মিলিয়েছেরাত বেশি হয়নিতাের বন্ধুর বিয়ে হচ্ছে কোথায় ? কমুনিটি সেন্টারে

নানাখালপাড়ায়ওরা খুব গরীবকম্যুনিটি সেন্টার ভাড়া করার মত পয়সা নেই। মেয়ের বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে

মেঘের ছায়া খন্ড-১৩

না, মেয়ের বােনের বাসায়মেয়ের বাবামা নেইবড় বােন মানুষ করেছেনউনার বাড়িতেই বিয়ে হচ্ছে” 

তুই কি বাড়ি চিনিস?নামাচেনা থাকলে ভাল হতসরাসরি বাড়িতে চলে যেতে পারতিসবরযাত্রী নিশ্চয়ই এর মধ্যে রওনা হয়ে গেছে ..। 

চশমা মনে হচ্ছে পাওয়া যাবে না, মা ! অবশ্যই পাওয়া যাবেকোথায় কোন ফাঁকে পড়েছেতােকে আরো সাবধান হতে হবে, শুভ্র। 

শুভ্র হাসলকি সুন্দর করে ছেলেটা হাসেযতবার দেখেন ততবার রেহানার বুক ধক করে উঠেপুরুষ মানুষকে এত রূপবান হতে নেইশুভ্র বলল, মা, আমিছাদে গিয়ে বসবতুমি আমাকে ছাদে দিয়ে এসাে। 

আমি বরং চশমার দোকানে টেলিফোন করে দেখি। 

লাগবে না মা। আমার এখন আর যেতে ইচ্ছা করছে নাতুমি আমাকে ছাদে দিয়ে এসাে। রেহানা শুভ্রকে হাত ধরে ধরে ছাদে তুলে দিলেনশুভ্র বলল, তুমি চলে যাওআমি একা একা ছাদে হাঁটব। 

মেঘের ছায়া খন্ড-১৩

ভয় পাবি তাে!ভয় পাব কেন

রেহানা নিচে নেমে গেলেনতাঁর নিজেরও মন খারাপ লাগছেশুভ্রর সামান্যতম কষ্টও তাঁর বুকে এসে লাগেতিনি নিজের শােবার ঘরে ঢুকে তাঁর দূর সম্পর্কের বােন রিয়াকে টেলিফোন করলেন। রিয়া খুব আমুদে মেয়েএসে হৈচৈ করে শুভ্রমন ভাল করে দেবেবাসায় আছে কিনা সেটাই কথারিয়ার বরও হয়েছে রিয়ার মতদিন রাত চরকিপাক খাচ্ছেরিয়ার বরের সঙ্গে বাইরে থাকার কথা। 

রিয়াকে পাওয়া গেলরেহানা বললেন, কি করছিস রিয়া? রিয়া হাসতে হাসতে বলল, ছটফট করছিছটফট করছিস কেন

আজ রাত বারােটায় আমাদের বাড়িতে ভূত নামানাে হবেএই টেনশানে ছটফট করছি

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১৪

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *