‘ভূত নামানাে হবে মানে কি? | ‘সুইডেন থেকে জামানের এক বন্ধু এসেছে। ও না–কি ভূত আনার ব্যাপারে এক্সপার্ট। খুব ভাল মিডিয়াম। তা তুমি হঠাৎ টেলিফোন করেছ কেন?”
‘এম্নি তুমি কখনাে টেলিফোন কর না। কারণটা দয়া করে বলে ফেল। ‘শুভ্র’র জন্যে খারাপ লাগছে।”
কেন! ওর কি হয়েছে?” ‘ওর মন খারাপ, বন্ধুর বিয়েতে যাবার কথা ছিল। যেতে পারেনি। চশমা হারিয়ে ফেলেছে।
‘চশমা হারানো তাে ওর নতুন ঘটনা না। সব সময় হারাচ্ছে। গতবছর পিকনিকে গিয়ে চশমা হারিয়ে ফেলল। আমরা কত হৈচৈ করছি আর সে উবু হয়ে খুঁজেছে চশমা। বুবু, তুমি এক কাজ কর – দু‘তিন হাজার চশমা কিনে রঙিন সুতা দিয়ে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ঝুলিয়ে রাখা।
রেহানা হাসলেন। রিয়া বলল, হাসি না, আমি সত্যি সত্যি বলছি। শুভ্র এখন কি করছে – চশমার শােকে দরজা বন্ধ করে কাঁদছে?
‘ছাদে হাঁটছে।
‘আমাকে টেলিফোন করার উদ্দেশ্য কি এই যে আমি এসে ওকে নিয়ে মন ভাল করে ফেরত দেব?
না থাক, তাের প্রােগ্রাম আছে।
প্রােগ্রাম কিছু না। ভূতের সঙ্গে এ্যাপয়েন্টমেন্ট। মানুষের এ্যাপয়েন্টমেন্ট যেমন বাতিল করা যায়, ভূতেরটাও যায়। আমি এসে ওকে নিয়ে যাচ্ছি। আর শােন, তুমি কি শুভ্রের বিয়ে–টিয়ে দেবার কথা ভাবছ?’
মেঘের ছায়া খন্ড-১৪
‘মাত্র তাে পাশ করল। ‘ওর বয়স এখন কত যাচ্ছে – চব্বিশ না ?” ‘সাতাশ।
“কি সর্বনাশ! বিয়ের বয়স তাে চলে যাচ্ছে। আর দেরি করা ঠিক হবে না। আমার চেনা একটি মেয়ে আছে। আমার মতই রূপবতী। বিহারী মেয়ে। বিহারী হলেও বােঝার উপায় নেই। বাঙালি কালচার ধরে ফেলেছে। রবীন্দ্র সংগীত গায়। জীবনানন্দের কবিতা পড়ে।
‘বাঙ্গালী মেয়ের কি দেশে অভাব?’
‘রূপবতী মেয়ের অভাব তাে আছেই। তুমি আমার মত আরেকজন খুঁজে বের কর – আমি তােমাকে এক হাজার টাকা দেব। শুভ্রকে তাে আর যার–তার সঙ্গে বিয়ে দেয়া যাবে না। তার পাশে রাজকন্যা লাগবে। যাই হােক, বুবু, তুমি শুভ্রকে তৈরি হতে বল। আমি আসছি। বিহারী মেয়েটির একটা ছবি আমার কাছে আছে। আসার সময় কি নিয়ে আসব?”
‘তুই নিজে আয়। ছবি–টবি কিছু আনতে হবে না।
শুভ্র তাদের ছাদের ঠিক মাঝখানে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ আকাশের দিকে। তবে চোখ বন্ধ। চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার কি মানে রেহানা বুঝলেন না। তিনি ডাকলেন, এই শুভ্র ! শুভ্র মা’র দিকে তাকাল। রেহানা আনন্দিত গলায় বললেন, এই নে চশমা। পাওয়া গেছে। বারান্দায় যে ফুলের বড় টবটা আছে – ঐ টবের পেছনে পড়ে ছিল। শুভ্র মা‘র হাত থেকে চশমা নিতে নিতে মৃদু স্বরে বলল, থ্যাংকস মা। রেহানা বললেন, আমি তাে ভেবেই পাচ্ছি না – চশমা ঐ খানে কিভাবে গেল।
‘পাওয়া গেছে এটাই বড় কথা।
মেঘের ছায়া খন্ড-১৪
‘মাঝখান থেকে তাের যাত্রা নষ্ট। আর ঘণ্টা খানিক আগে পাওয়া গেলে কি ক্ষতি হত ! তাের মন নিশ্চয়ই খারাপ।
“না মা। মন ঠিক করে ফেলেছি। ‘কিভাবে ঠিক করলি?” ‘আমার মন ঠিক করার কিছু নিজস্ব টেকনিক আছে। ‘আমাকে শিখিয়ে দে। আমারাে তাে প্রায়ই মন খারাপ থাকে।
‘আমার টেকনিক কাউকে শেখানাে যাবে না। উদ্ভট সব টেকনিক। শুনলে তুমি ভাববে আমার মাথা খারাপ।
“তাের মাথা খানিকটা খারাপ তাে বটেই। শােন্ শুভ্র, তাের রিয়া খালা আসছে। তুই তার সঙ্গে ঘুরে আয়। তাের ভাল লাগবে।
‘ছাদে ঘুরতেই আমার ভাল লাগছে, মা।
‘তুই কাপড়–চোপড় পরে সুন্দর করে সেজে বসে আছিস – রিয়ার সঙ্গে ঘুরে আয়। তাের ভাল লাগবে।
‘আমি যাব না, মা। আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।
দু’জন ছাদ থেকে নেমে আসছে। রেহানা বললেন, আমার হাত ধর। হাত ধরে ধরে নাম।
‘হাত ধরতে হবে না, মা। এখন চোখে চশমা আছে, সব দেখতে পাচ্ছি। ‘চশমা থাকলে বুঝি আর মা‘র হাত ধরা যায় না !
Read More
হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১৫