হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১৪

ভূত নামানাে হবে মানে কি? | সুইডেন থেকে জামানের এক বন্ধু এসেছেনাকি ভূত আনার ব্যাপারে এক্সপার্টখুব ভাল মিডিয়ামতা তুমি হঠাৎ টেলিফোন করেছ কেন?

মেঘের ছায়া  

এম্নি তুমি কখনাে টেলিফোন কর নাকারণটা দয়া করে বলে ফেলশুভ্রজন্যে খারাপ লাগছে” 

কেন! ওর কি হয়েছে?ওর মন খারাপ, বন্ধুর বিয়েতে যাবার কথা ছিলযেতে পারেনিচশমা হারিয়ে ফেলেছে। 

চশমা হারানো তাে ওর নতুন ঘটনা নাসব সময় হারাচ্ছেগতবছর পিকনিকে গিয়ে চশমা হারিয়ে ফেললআমরা কত হৈচৈ করছি আর সে উবু হয়ে খুঁজেছে চশমাবুবু, তুমি এক কাজ কর দুতিন হাজার চশমা কিনে রঙিন সুতা দিয়ে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ঝুলিয়ে রাখা। 

রেহানা হাসলেনরিয়া বলল, হাসি না, আমি সত্যি সত্যি বলছিশুভ্র এখন কি করছে চশমার শােকে দরজা বন্ধ করে কাঁদছে

ছাদে হাঁটছে। 

আমাকে টেলিফোন করার উদ্দেশ্য কি এই যে আমি এসে ওকে নিয়ে মন ভাল করে ফেরত দেব

না থাক, তাের প্রােগ্রাম আছে। 

প্রােগ্রাম কিছু নাভূতের সঙ্গে এ্যাপয়েন্টমেন্টমানুষের এ্যাপয়েন্টমেন্ট যেমন বাতিল করা যায়, ভূতেরটাও যায়আমি এসে ওকে নিয়ে যাচ্ছিআর শােন, তুমি কি শুভ্রের বিয়েটিয়ে দেবার কথা ভাবছ?’ 

মেঘের ছায়া খন্ড-১৪

মাত্র তাে পাশ করলওর বয়স এখন কত যাচ্ছে চব্বিশ না ?সাতাশ। 

কি সর্বনাশ! বিয়ের বয়স তাে চলে যাচ্ছেআর দেরি করা ঠিক হবে নাআমার চেনা একটি মেয়ে আছেআমার মতই রূপবতীবিহারী মেয়েবিহারী হলেও বােঝার উপায় নেইবাঙালি কালচার ধরে ফেলেছে। রবীন্দ্র সংগীত গায়জীবনানন্দের কবিতা পড়ে। 

বাঙ্গালী মেয়ের কি দেশে অভাব?’ 

রূপবতী মেয়ের অভাব তাে আছেইতুমি আমার মত আরেকজন খুঁজে বের কর আমি তােমাকে এক হাজার টাকা দেবশুভ্রকে তাে আর যারতার সঙ্গে বিয়ে দেয়া যাবে নাতার পাশে রাজকন্যা লাগবেযাই হােক, বুবু, তুমি শুভ্রকে তৈরি হতে বলআমি আসছিবিহারী মেয়েটির একটা ছবি আমার কাছে আছেআসার সময় কি নিয়ে আসব?” 

তুই নিজে আয়ছবিটবি কিছু আনতে হবে না। 

শুভ্র তাদের ছাদের ঠিক মাঝখানে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছেতার মুখ আকাশের দিকেতবে চোখ বন্ধচোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার কি মানে রেহানা বুঝলেন নাতিনি ডাকলেন, এই শুভ্র ! শুভ্র মাদিকে তাকাল। রেহানা আনন্দিত গলায় বললেন, এই নে চশমাপাওয়া গেছেবারান্দায় যে ফুলের বড় টবটা আছে টবের পেছনে পড়ে ছিলশুভ্র মাহাত থেকে চশমা নিতে নিতে মৃদু স্বরে বলল, থ্যাংকস মারেহানা বললেন, আমি তাে ভেবেই পাচ্ছি না চশমা খানে কিভাবে গেল। 

পাওয়া গেছে এটাই বড় কথা। 

মেঘের ছায়া খন্ড-১৪

মাঝখান থেকে তাের যাত্রা নষ্টআর ঘণ্টা খানিক আগে পাওয়া গেলে কি ক্ষতি হত ! তাের মন নিশ্চয়ই খারাপ। 

না মামন ঠিক করে ফেলেছিকিভাবে ঠিক করলি?আমার মন ঠিক করার কিছু নিজস্ব টেকনিক আছেআমাকে শিখিয়ে দেআমারাে তাে প্রায়ই মন খারাপ থাকে। 

আমার টেকনিক কাউকে শেখানাে যাবে নাউদ্ভট সব টেকনিকশুনলে তুমি ভাববে আমার মাথা খারাপ। 

তাের মাথা খানিকটা খারাপ তাে বটেইশােন্ শুভ্র, তাের রিয়া খালা আসছেতুই তার সঙ্গে ঘুরে আয়তাের ভাল লাগবে। 

ছাদে ঘুরতেই আমার ভাল লাগছে, মা। 

তুই কাপড়চোপড় পরে সুন্দর করে সেজে বসে আছিস রিয়ার সঙ্গে ঘুরে আয়তাের ভাল লাগবে। 

আমি যাব না, মাআমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। 

দুজন ছাদ থেকে নেমে আসছেরেহানা বললেন, আমার হাত ধরহাত ধরে ধরে নাম। 

হাত ধরতে হবে না, মাএখন চোখে চশমা আছে, সব দেখতে পাচ্ছিচশমা থাকলে বুঝি আর মাহাত ধরা যায় না

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১৫

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *