হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১৬

কাপড় এবং চটি জুতা পায়ে দোতলায় উঠেনদোতলায় না উঠা পর্যন্ত সচরাচর কথা বলেন নাতাঁর সব কিছুই ঘড়ি ধরাডিনার খেতে বসেন টা ত্রিশেঘুমুতে যান সাড়ে দশটায়। 

মেঘের ছায়া

আজ নিয়মে কিছু উলটপালট হয়েছেইয়াজউদ্দিন সাহেব ডাইনিং রুমে যখন ঢুকলেন তখন দশটা কুড়ি বাজেশুভ্র একা বসে আছেটেবিলে খাবার দেয়া হয়েছেমতি মিয়া একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। 

ইয়াজউদ্দিন সাহেব বললেন, তােমার মা কোথায় শুভ্র ? মা শুয়ে আছে, বাবাতার মাথা ধরেছেরাতে কিছু খাবেন নাতােমার না আজ বন্ধুর বিয়েতে যাবার কথা ছিল যাওনি

যাওনি কেন?” 

শুভ্র বাবার দিকে তাকিয়ে হাসলইয়াজউদ্দিন সাহেব এই হাসির অর্থ জানেনএই হাসির অর্থ হচ্ছে শুভ্র প্রসঙ্গে আর কিছু বলতে চায় না। 

ইয়াজউদ্দিন সাহেব এক চামচ ভাত নিলেনতিনচার রকমের তরকারি আছেকোনটিই তাঁর মনে ধরছে নাতিনি ডালের বাটির দিকে হাত বাড়ালেনডাইনিং রুমে শুধু তিনি এবং শুভ্রমতি মিয়া চলে গেছেবাড়ির নিয়ম হচ্ছে সব খাবারদাবার টেবিলে সাজিয়ে কাজের লােকরা দূরে সরে যাবেএই নিয়ম ইয়াজউদ্দিন সাহেবের করাতিনি তাঁর জরুরি কথাবর্তা যা বলার তা খাবার টেবিলেই বলেনতিনি চান না বাইরের কেউ এসব কথাবার্তা শুনুক। 

মেঘের ছায়া খন্ড-১৬

জি। 

তােমাদের রেজাল্ট কবে হবে তুমি কিছু জান?খুব শিগগিরই হবার কথাএখন কি করবে কিছু ভেবেছ?নাদেশের বাইরে গিয়ে যদি পড়াশােনা করতে চাও, করতে পারআমার বাইরে কোথাও যেতে ইচ্ছা করে না। 

শুভ্র আবারাে হাসলইয়াজউদ্দিন সাহেব বললেন, পড়াশােনা করার জন্য যেতে না চাও, বেড়াবার জন্যে যাওএরপর আর সময় পাবে না। 

সময় পাব না কেন?” 

আমি অবসর নেব বলে ভাবছিএক জীবনে প্রচুর পরিশ্রম করেছিএখন আর আগের মত পরিশ্রম করতে পারি নাপরিশ্রম করতে ভালও লাগে নাএক জীবনে সঞ্চয় যা করেছি তা আমার কাছে যথেষ্ট বলেই মনে হয়তােমাকে এই সঞ্চয় আমি বাড়াতে বলছি নাতুমি যা আছে তা শুধু ঠিক রাখবে। 

শুভ্র সহজভাবে বলল, তােমার কত টাকা আছে, বাবা? চট করে বলতে পারব নাতবে আমাকে দেখে বা আমার জীবনযাপন পদ্ধতি 

দেখে আমার অর্থবিত্ত সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব নাআমি খুব লাে প্রােফাইল মেইনটেইন করি। 

তুমি বলতে চাচ্ছ তােমার প্রচুর টাকা

টাকা তােমার কাছে কখনাে ঝামেলা বলে মনে হয় নি?টাকা ঝামেলা মনে হবে কেন? টাকার অভাবই ঝামেলা বলে মনে হয়েছে” 

শুভ্র কিছু বলতে গিয়েও বলল নাথেমে গেলইয়াজউদ্দিন সাহেব শান্ত স্বরে বললেন, তুমি কি কিছু বলতে চাচ্ছ

বলতে চাইলে বলতে পারআমি তােমার সঙ্গে ফ্রি ডিসকাশন করতে চাইদেখ শুভ্র, আমি কঠোর পরিশ্রম করে টাকা করেছিআমি মদ খাই নাজুয়া খেলি  রিলাক্স করার জন্যে বিদেশের নাইট ক্লাবে যাই নাকঠিন নিয়মশৃঙ্খলায় জীবনযাপন করেছি কেন করেছি বলে তােমার ধারণা

মেঘের ছায়া খন্ড-১৬

কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে করনিতােমার স্বভাবই হচ্ছে এরকমএকেক মানুষ একেক রকম। 

ইয়াজউদ্দিন সাহেব বেশ কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেনপ্রসঙ্গ পরিবর্তন করলেনহালকা গলায় বললেন, তােমার মা তােমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছেনঐদিন কি এক মেয়ের কথা বললেনবিয়ের ব্যাপারে তুমি কি কিছু ভাবছ

না, কিছু ভাবছি নাতােমার পছন্দের কেউ কি আছে? থাকলে বলতে পার। 

শুভ্র হাসলইয়াজউদ্দিন সাহেব টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেনমতি মিয়া অপেক্ষা করছিল টি কোজি ঢাকা চায়ের পট নিয়ে ঢুকলইয়াজউদ্দিন সাহেব ডিনারেপর পর হালকা লিকারে এক কাপ চা খানশুভ্র বাবার পেছনে দাঁড়িয়ে আছেবাবার হাত ধােয়া হলে সে হাত ধুবেশুভ্র বলল, তােমাকে একটা কথা বলা বােধহয় দরকার, বাবা, আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চাইআমার টাকাপয়সার দরকার নেই। 

আমি তােমার কথা বুঝতে পারছি নাতুমি কি বাড়িতে অস্বাভাবিক জীবনযাপন করছ ?” 

শুভ্র চুপ করে রইলইয়াজউদ্দিন তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, তােমার কি ভবিষ্যৎ কোন পরিকল্পনা আছে? 

হ্যাঁ আছেআমি কি জানতে পারি ?” 

মেঘের ছায়া খন্ড-১৬

অন্য আরেকদিন বলব, বাবাআজ বলতে সমস্যা কি ?

আজ তুমি আমার কথা মন দিয়ে শুনবে নাযে কোন কারণেই হােক আজ তুমি উত্তেজিত। 

সো চা খাই। 

দুজন নিঃশব্দে চায়ের পেয়ালা হাতে বসলইয়াজউদ্দিন সাহেব কোন একটা মজার কথা বলতে চাচ্ছেনহালকা কোন রসিকতাএনেকডােটসচায়র টেবিলে এই কাজটা তিনি প্রায়ই করেনআশ্চর্য! কোন রসিকতা মনে পড়ছে নাতিনি আসলেই উত্তেজিত। 

মতি! মতি মিয়া

মতি এসে দাঁড়ালমতিকে কি জন্যে ডেকেছেন ইয়াজউদ্দিন সাহেব মনে করতে পারলেন না। 

কটা বাজে

 

Read More.

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১৭

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *