কাপড় এবং চটি জুতা পায়ে দোতলায় উঠেন। দোতলায় না উঠা পর্যন্ত সচরাচর কথা বলেন না। তাঁর সব কিছুই ঘড়ি ধরা। ডিনার খেতে বসেন ন‘টা ত্রিশে। ঘুমুতে যান সাড়ে দশটায়।
আজ নিয়মে কিছু উলট–পালট হয়েছে। ইয়াজউদ্দিন সাহেব ডাইনিং রুমে যখন ঢুকলেন তখন দশটা কুড়ি বাজে। শুভ্র একা বসে আছে। টেবিলে খাবার দেয়া হয়েছে। মতি মিয়া একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব বললেন, তােমার মা কোথায় শুভ্র ? ‘মা শুয়ে আছে, বাবা। তার মাথা ধরেছে। রাতে কিছু খাবেন না। “তােমার না আজ বন্ধুর বিয়েতে যাবার কথা ছিল — যাওনি?
‘যাওনি কেন?”
শুভ্র বাবার দিকে তাকিয়ে হাসল। ইয়াজউদ্দিন সাহেব এই হাসির অর্থ জানেন। এই হাসির অর্থ হচ্ছে শুভ্র এ প্রসঙ্গে আর কিছু বলতে চায় না।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব এক চামচ ভাত নিলেন। তিন–চার রকমের তরকারি আছে। কোনটিই তাঁর মনে ধরছে না। তিনি ডালের বাটির দিকে হাত বাড়ালেন। ডাইনিং রুমে শুধু তিনি এবং শুভ্র। মতি মিয়া চলে গেছে। এ বাড়ির নিয়ম হচ্ছে সব খাবার–দাবার টেবিলে সাজিয়ে কাজের লােকরা দূরে সরে যাবে। এই নিয়ম ইয়াজউদ্দিন সাহেবের করা। তিনি তাঁর জরুরি কথাবর্তা যা বলার তা খাবার টেবিলেই বলেন। তিনি চান না বাইরের কেউ এসব কথাবার্তা শুনুক।
মেঘের ছায়া খন্ড-১৬
‘জি।
“তােমাদের রেজাল্ট কবে হবে – তুমি কিছু জান?” “খুব শিগগিরই হবার কথা। ‘এখন কি করবে কিছু ভেবেছ?” ‘না। ‘দেশের বাইরে গিয়ে যদি পড়াশােনা করতে চাও, করতে পার। ‘আমার বাইরে কোথাও যেতে ইচ্ছা করে না।
শুভ্র আবারাে হাসল। ইয়াজউদ্দিন সাহেব বললেন, পড়াশােনা করার জন্য যেতে না চাও, বেড়াবার জন্যে যাও। এরপর আর সময় পাবে না।
‘সময় পাব না কেন?”
‘আমি অবসর নেব বলে ভাবছি। এক জীবনে প্রচুর পরিশ্রম করেছি। এখন আর আগের মত পরিশ্রম করতে পারি না। পরিশ্রম করতে ভালও লাগে না। এক জীবনে সঞ্চয় যা করেছি তা আমার কাছে যথেষ্ট বলেই মনে হয়। তােমাকে এই সঞ্চয় আমি বাড়াতে বলছি না। তুমি যা আছে তা শুধু ঠিক রাখবে।
শুভ্র সহজভাবে বলল, তােমার কত টাকা আছে, বাবা? ‘চট করে বলতে পারব না। তবে আমাকে দেখে বা আমার জীবনযাপন পদ্ধতি
দেখে আমার অর্থ–বিত্ত সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব না। আমি খুব লাে প্রােফাইল মেইনটেইন করি।
তুমি বলতে চাচ্ছ তােমার প্রচুর টাকা?
‘টাকা তােমার কাছে কখনাে ঝামেলা বলে মনে হয় নি?” ‘টাকা ঝামেলা মনে হবে কেন? টাকার অভাবই ঝামেলা বলে মনে হয়েছে।”
শুভ্র কিছু বলতে গিয়েও বলল না। থেমে গেল। ইয়াজউদ্দিন সাহেব শান্ত স্বরে বললেন, তুমি কি কিছু বলতে চাচ্ছ?
‘বলতে চাইলে বলতে পার। আমি তােমার সঙ্গে ফ্রি ডিসকাশন করতে চাই। দেখ শুভ্র, আমি কঠোর পরিশ্রম করে টাকা করেছি। আমি মদ খাই না। জুয়া খেলি রিলাক্স করার জন্যে বিদেশের নাইট ক্লাবে যাই না। কঠিন নিয়ম–শৃঙ্খলায় জীবনযাপন করেছি – কেন করেছি বলে তােমার ধারণা?
মেঘের ছায়া খন্ড-১৬
‘কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে করনি। তােমার স্বভাবই হচ্ছে এরকম। একেক মানুষ একেক রকম।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব বেশ কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন। প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলেন। হালকা গলায় বললেন, তােমার মা তােমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন। ঐদিন কি এক মেয়ের কথা বললেন। বিয়ের ব্যাপারে তুমি কি কিছু ভাবছ?
‘না, কিছু ভাবছি না। ‘তােমার পছন্দের কেউ কি আছে? থাকলে বলতে পার।
শুভ্র হাসল। ইয়াজউদ্দিন সাহেব টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। মতি মিয়া অপেক্ষা করছিল – টি কোজি ঢাকা চায়ের পট নিয়ে ঢুকল। ইয়াজউদ্দিন সাহেব ডিনারের পর পর হালকা লিকারে এক কাপ চা খান। শুভ্র বাবার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। বাবার হাত ধােয়া হলে সে হাত ধুবে। শুভ্র বলল, তােমাকে একটা কথা বলা বােধহয় দরকার, বাবা, আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চাই। আমার টাকা। পয়সার দরকার নেই।
‘আমি তােমার কথা বুঝতে পারছি না। তুমি কি এ বাড়িতে অস্বাভাবিক জীবনযাপন করছ ?”
শুভ্র চুপ করে রইল। ইয়াজউদ্দিন তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, তােমার কি ভবিষ্যৎ কোন পরিকল্পনা আছে?
‘হ্যাঁ আছে।” ‘আমি কি জানতে পারি ?”
মেঘের ছায়া খন্ড-১৬
অন্য আরেকদিন বলব, বাবা। ‘আজ বলতে সমস্যা কি ??
‘আজ তুমি আমার কথা মন দিয়ে শুনবে না। যে কোন কারণেই হােক আজ তুমি উত্তেজিত।
এসো চা খাই।
দু’জন নিঃশব্দে চায়ের পেয়ালা হাতে বসল। ইয়াজউদ্দিন সাহেব কোন একটা মজার কথা বলতে চাচ্ছেন। হালকা কোন রসিকতা। এনেকডােটস। চায়র টেবিলে এই কাজটা তিনি প্রায়ই করেন। আশ্চর্য! কোন রসিকতা মনে পড়ছে না। তিনি আসলেই উত্তেজিত।
‘মতি! মতি মিয়া !
মতি এসে দাঁড়াল। মতিকে কি জন্যে ডেকেছেন ইয়াজউদ্দিন সাহেব মনে করতে পারলেন না।
‘কটা বাজে
Read More.