মতি?
মতি বিস্মিত হয়ে তাকাচ্ছে। প্রশ্নটা অর্থহীন। ইয়াজউদ্দিন সাহেবের হাতে ঘড়ি আছে, দেয়ালে ঘড়ি। এ বাড়ির এমন কোন ঘর নেই যেখানে দেয়ালে ঘড়ি টিক টিক করছে না।
“স্যার, এগারােটা বাজে। ‘আচ্ছা যাও।
শুভ্র বলল, বাবা, তােমার কি শরীর খারাপ লাগছে? তুমি ঘামছ।
‘শরীর খারাপ লাগছে না। গরম লাগছে। তুমি কি আমার সঙ্গে খানিকক্ষণ বারান্দায় বসবে?”
‘অবশ্যই বসব।
‘অনেকদিন তােমার সঙ্গে কথা হয় না। আমি নিজে ব্যস্ত থাকি, তুমিও সম্ভবত ব্যস্ত থাক।
‘আমি তাে ব্যস্ত থাকি না। আমার আসলে কিছুই করার নেই। ‘আমি শুনেছি সারাদিন তুমি বাসায় থাক না। কি কর?” ‘রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি, বাবা।। ‘কেন?”
কারণ নেই কোন। এম্নি।
‘কলাবাগানের এক বাসায় তুমি যাও। প্রায়ই যাও। কার বাসা ?”
শুভ্র সহজ গলায় বলল, তুমি কি করে জানলে বাবা ? ইয়াজউদ্দিন খানিকটা। অস্বস্তির সঙ্গে বললেন, আমাকে খোঁজ–খবর রাখতে হয়। তুমি পৃথিবী সম্পর্কে অনভিজ্ঞ । যে কোন সময় ঝামেলায় পড়তে পার। বাবা হিসেবে এইটুকু সাবধানতা নেয়া অন্যায় নয় নিশ্চয়ই।
‘ন্যায়–অন্যায়ের কথা বলছি না। আমার মজা লাগছে তাই জিজ্ঞেস করছি।
মেঘের ছায়া খন্ড-১৭
‘তুমি কোথায় যাও না যাও সে সম্পর্কে একটা রিপাের্ট দেবার জন্যে আমি একজনকে বলেছিলাম। সে রিপাের্ট দিয়েছে। পড়তে চাও?
‘কলাবাগানে তুমি যে বাসায় যাও সেটা কার বাসা? ‘রিপাের্টে কি লেখা নেই ? “লেখা আছে তবু তােমার মুখ থেকে শুনতে চাই।
‘সাবেরের বাসা। সাবের কলেজে আমার সঙ্গে পড়তাে। আই এ পাশ করার পর মারা যায়। আমি ঐ বাসায় যাই সাবেরের বাবার সঙ্গে গল্প করার জন্যে। উনার নাম মাহিন। উনার সঙ্গে কথা বলতে আমার ভাল লাগে।
‘ভদ্রলােক কি করেন? ‘স্কুল মাস্টার ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। ঘরেই থাকেন।
‘শুভ্র, তুমি খােলাখুলি সবকিছু আমাকে বলছ না। ভদ্রলােক প্যারালিসিস হয়ে দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে আছেন। এই খবর আমার কাছে আছে।
‘এই তথ্যটা অপ্রয়ােজনীয় বাবা।
মেঘের ছায়া খন্ড-১৭
‘কোন তথ্যই অপ্রয়ােজনীয় নয়। ঐ বাসায় মাহিন সাহেব ছাড়া আর কে থাকে?”
“তােমার রিপাের্টে কি লেখা নেই?” ‘হ্যাঁ আছে। তারপরও তােমার মুখ থেকে শুনতে চাই।”
শুভ্র বলল, তুমি বলছিলে বারান্দায় বসবে। চল বারান্দায় বসি। ইয়াজউদ্দিন সাহেব উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, মাহিন সাহেবের মেয়েটির প্রতি কি তােমার কোন দুর্বলতা আছে? এই ব্যাপারটা আমি তােমার কাছে থেকে খােলাখুলি জানতে চাই। ‘আমি মাহিন সাহেবের সঙ্গে গল্প করার জন্যেই যাই। নীতু আপার সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয় না বললেই চলে।
‘তুমি মেয়েটিকে আপা ডাক?”
উনি সাবেরের তিন বছরের বড়। তারা দু‘জন বারান্দায় এসে বসল। শুভ্র বলল, তুমি কি আর কিছু বলবে, বাবা?
‘হ্যা, বলব। তুমি বছর খানিকের জন্যে দেশের বাইরে থেকে ঘুরে আস। তােমাকে এক বছরের ছুটি দেয়া হল। ফিরে এসে আমার সব দায়দায়িত্ব তুমি নেবে। একা একা ঘুরে বেড়ানাের মত অবস্থা তােমার না। আমার ধারণা, তুমি একা একা চিটাগাং থেকে ঢাকাও যেতে পারবে না। কাজেই তােমাকে একজন সফর সঙ্গি দেবার ব্যবস্থা করব। বিয়ে করে বৌ নিয়ে যাবে।
‘মেয়েও কি তুমি ঠিক করে রেখেছ ?”
‘না, এখনাে ফাইন্যাল করিনি। তবে দু–একজন যে নেই তাও না। আমি আগেও বলেছি, এখনাে বলছি – তােমার নিজের কোন পছন্দের মেয়ে থাকলে বলতে পার। তােমার মতামত গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করা হবে। রাত অনেক হয়েছে। যাও, শুয়ে পড়। আমার নিজেরাে ঘুম পাচ্ছে। | ইয়াজউদ্দিন সাহেব উঠে পড়লেন। তিনি অবশ্যি সরাসরি তাঁর শােবার ঘরে ঢুকলেন না। শােবার ঘরের লাগােয়া স্টাডি রুমে ঢুকলেন। নিয়মের ব্যতিক্রম হওয়ায় ঘুম চলেগেছে।
মেঘের ছায়া খন্ড-১৭
সময়মত ঘুমুতে না গেলে তাঁর বড় ধরনের সমস্যা হয়। ঘুম–ঘুম ভাব থাকে। কিন্তু ঘুম আসে না। ঘুম–ঘুম ভাব নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকার কোন মানে হয় । তিনি শুভ্রর উপর তৈরি করা রিপাের্ট নিয়ে বসলেন। যাকে রিপাের্ট তৈরি করতে দিয়েছিলেন তাকে মনে মনে কয়েকবার ‘গাধা বলে গালি দিলেন। তাঁর মনে হল রিপাের্টের কিছু কিছু জায়গা বানানাে। রিপাের্টের শুরুতেই লেখা – শুভ্র সাহেব বাড়ি থেকে বের হয়েই এক প্যাকেট সিগারেট কিনলেন।
শুভ্র তা করবে না। সে সিগারেট খায় না। অবশ্যি হতে পারে যে অন্য কারাে জন্যে কিনেছে। মাহিন নামের ঐ ভদ্রলােকের জন্যে?
রেহানা স্টাডি রুমে ঢুকলেন। অবাক হয়ে বললেন, এত রাতে এখানে বসে আছ কেন? ঘুমুবে না?
‘এসে শুয়ে পড়ি। আমার নিজের শরীরও ভাল না। জ্বর এসেছে বলে মনে হয়।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। ক্লান্ত গলায় বললেন, আচ্ছা, শুভ্র কি
Read More