হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১৭

মতি

মতি বিস্মিত হয়ে তাকাচ্ছেপ্রশ্নটা অর্থহীনইয়াজউদ্দিন সাহেবের হাতে ঘড়ি আছে, দেয়ালে ঘড়িবাড়ির এমন কোন ঘর নেই যেখানে দেয়ালে ঘড়ি টিক টিক করছে না

মেঘের ছায়া  

স্যার, এগারােটা বাজেআচ্ছা যাও। 

শুভ্র বলল, বাবা, তােমার কি শরীর খারাপ লাগছে? তুমি ঘামছ। 

শরীর খারাপ লাগছে নাগরম লাগছেতুমি কি আমার সঙ্গে খানিকক্ষণ বারান্দায় বসবে?” 

অবশ্যই বসব। 

অনেকদিন তােমার সঙ্গে কথা হয় নাআমি নিজে ব্যস্ত থাকি, তুমিও সম্ভবত ব্যস্ত থাক। 

আমি তাে ব্যস্ত থাকি নাআমার আসলে কিছুই করার নেইআমি শুনেছি সারাদিন তুমি বাসায় থাক নাকি কর?রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি, বাবাকেন?” 

কারণ নেই কোনএম্নি। 

কলাবাগানের এক বাসায় তুমি যাওপ্রায়ই যাওকার বাসা ?” 

শুভ্র সহজ গলায় বলল, তুমি কি করে জানলে বাবা ? ইয়াজউদ্দিন খানিকটাঅস্বস্তির সঙ্গে বললেন, আমাকে খোঁজখবর রাখতে হয়তুমি পৃথিবী সম্পর্কে অনভিজ্ঞ যে কোন সময় ঝামেলায় পড়তে পারবাবা হিসেবে এইটুকু সাবধানতা নেয়া অন্যায় নয় নিশ্চয়ই। 

ন্যায়অন্যায়ের কথা বলছি নাআমার মজা লাগছে তাই জিজ্ঞেস করছি

মেঘের ছায়া খন্ড-১৭

তুমি কোথায় যাও না যাও সে সম্পর্কে একটা রিপাের্ট দেবার জন্যে আমি একজনকে বলেছিলামসে রিপাের্ট দিয়েছেপড়তে চাও

কলাবাগানে তুমি যে বাসায় যাও সেটা কার বাসা? রিপাের্টে কি লেখা নেই ? লেখা আছে তবু তােমার মুখ থেকে শুনতে চাই। 

সাবেরের বাসাসাবের কলেজে আমার সঙ্গে পড়তােআই পাশ করার পর মারা যায়আমি বাসায় যাই সাবেরের বাবার সঙ্গে গল্প করার জন্যেউনার নাম মাহিনউনার সঙ্গে কথা বলতে আমার ভাল লাগে। 

ভদ্রলােক কি করেন? স্কুল মাস্টার ছিলেনএখন অবসর নিয়েছেনঘরেই থাকেন। 

শুভ্র, তুমি খােলাখুলি সবকিছু আমাকে বলছ নাভদ্রলােক প্যারালিসিস হয়ে দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে আছেনএই খবর আমার কাছে আছে। 

এই তথ্যটা অপ্রয়ােজনীয় বাবা। 

মেঘের ছায়া খন্ড-১৭

কোন তথ্যই অপ্রয়ােজনীয় নয়বাসায় মাহিন সাহেব ছাড়া আর কে থাকে?” 

তােমার রিপাের্টে কি লেখা নেই?হ্যাঁ আছেতারপরও তােমার মুখ থেকে শুনতে চাই” 

শুভ্র বলল, তুমি বলছিলে বারান্দায় বসবেচল বারান্দায় বসিইয়াজউদ্দিন সাহেব উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, মাহিন সাহেবের মেয়েটির প্রতি কি তােমার কোন দুর্বলতা আছে? এই ব্যাপারটা আমি তােমার কাছে থেকে খােলাখুলি জানতে চাই ‘আমি মাহিন সাহেবের সঙ্গে গল্প করার জন্যেই যাইনীতু আপার সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয় না বললেই চলে। 

তুমি মেয়েটিকে আপা ডাক?” 

উনি সাবেরের তিন বছরের বড়তারা দুজন বারান্দায় এসে বসলশুভ্র বলল, তুমি কি আর কিছু বলবে, বাবা

হ্যা, বলবতুমি বছর খানিকের জন্যে দেশের বাইরে থেকে ঘুরে আসতােমাকে এক বছরের ছুটি দেয়া হলফিরে এসে আমার সব দায়দায়িত্ব তুমি নেবেএকা একা ঘুরে বেড়ানাের মত অবস্থা তােমার নাআমার ধারণা, তুমি একা একা চিটাগাং থেকে ঢাকাও যেতে পারবে নাকাজেই তােমাকে একজন সফর সঙ্গি দেবার ব্যবস্থা করববিয়ে করে বৌ নিয়ে যাবে। 

মেয়েও কি তুমি ঠিক করে রেখেছ ?” 

না, এখনাে ফাইন্যাল করিনিতবে দুএকজন যে নেই তাও নাআমি আগেও বলেছি, এখনাে বলছি তােমার নিজের কোন পছন্দের মেয়ে থাকলে বলতে পারতােমার মতামত গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করা হবেরাত অনেক হয়েছেযাও, শুয়ে পড়আমার নিজেরাে ঘুম পাচ্ছে| ইয়াজউদ্দিন সাহেব উঠে পড়লেনতিনি অবশ্যি সরাসরি তাঁর শােবার ঘরে ঢুকলেন নাশােবার ঘরের লাগােয়া স্টাডি রুমে ঢুকলেননিয়মের ব্যতিক্রম হওয়ায় ঘুম চলেগেছে

মেঘের ছায়া খন্ড-১৭

সময়মত ঘুমুতে না গেলে তাঁর বড় ধরনের সমস্যা হয়ঘুমঘুম ভাব থাকেকিন্তু ঘুম আসে নাঘুমঘুম ভাব নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকার কোন মানে হয় তিনি শুভ্রর উপর তৈরি করা রিপাের্ট নিয়ে বসলেনযাকে রিপাের্ট তৈরি করতে দিয়েছিলেন তাকে মনে মনে কয়েকবার গাধা বলে গালি দিলেনতাঁর মনে হল রিপাের্টের কিছু কিছু জায়গা বানানােরিপাের্টের শুরুতেই লেখা শুভ্র সাহেব বাড়ি থেকে বের হয়েই এক প্যাকেট সিগারেট কিনলেন। 

শুভ্র তা করবে নাসে সিগারেট খায় নাঅবশ্যি হতে পারে যে অন্য কারাে জন্যে কিনেছেমাহিন নামের ভদ্রলােকের জন্যে

রেহানা স্টাডি রুমে ঢুকলেনঅবাক হয়ে বললেন, এত রাতে এখানে বসে আছ কেন? ঘুমুবে না

এসে শুয়ে পড়িআমার নিজের শরীরও ভাল নাজ্বর এসেছে বলে মনে হয়। 

ইয়াজউদ্দিন সাহেব উঠে দাঁড়ালেনক্লান্ত গলায় বললেন, আচ্ছা, শুভ্র কি 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১৮

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *