হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-২০

শুভ্র ইতস্তত করে বলল, তাের বিয়েতে আসতে পারিনিকিছু মনে করিসনি তাে? চশমা খুঁজে পাচ্ছিলাম নাবিয়ের অনুষ্ঠান কেমন হয়েছে

অনুষ্ঠান আবার কি? আমি তিনবার কবুল কবুল বললামকেয়া তিনবার বললব্যসমামলা ডিসমিসচা খাবি শুভ্র ?” 

খাব।”

মেঘের ছায়া   

বাসায় চা খাওয়ানাের কোন উপায় নেইমামী সিরিয়াস কান্নাকাটি করছেচল, মােড়ের দোকানটায় চা খাব। 

শুভ্র জাহেদের পেছনে পেছনে যাচ্ছেবিয়েতে সে উপস্থিত হতে না পারায় জাহেদ যে রাগ করেনি তাতেই শুভ্র আনন্দিত। 

জাহেদ

কেয়া কোথায়? কেয়ার সঙ্গে একটু দেখা করব ভেবেছিলামতার বােনের বাসায়এখানে এত যন্ত্রণা, এর মধ্যে আর তাকে আনি নিতাের মামার অসুখটা কি

এখনাে ঠিক জানি নামাথা গরম হয়ে গেছেঅফিসের ফাইল টাইল ছিড়ে ফেলেছেদুঃখ ধান্দার মধ্যে থাকলে যা হয়বাড়ি ভাড়া দেয়া হয়নি ছমাসেরপ্রভিডেন্ট ফান্ডে এক পয়সা নেইলােন নিয়ে নিয়ে সব শেষএক লােকের কাছ থেকে মামা দশ হাজার টাকা ধার করেছিলেনসেই লােক দুতিন দিন পর পরবাসায় এসে বসে থাকেতাকে দেখলেই মামার চেহারা অন্যরকম হয়ে যায়সব মিলিয়ে ভয়াবহ অবস্থাতুই বুঝবি নাআয়, চা খাব। 

মেঘের ছায়া খন্ড-২০

কেয়া তার বােনের বাসায় দিন থাকবে? থাকবে কিছুদিনএদিকের ঝামেলা না সামলে তাে আনতেও পারছি নাকেয়ার বােনের বাসার ঠিকানাটা আমাকে দিবি? কেন?” 

তােদের বিয়েতে আমি একটা উপহার দেবসামান্য উপহার তবে কেয়ার খুব পছন্দ হবেকাজেই তাকে দিতে চাই‘ 

উপহারটা কি? তােকে বলব নাতুই আমাকে একটা কাগজে ঠিকানাটা লিখে দেএখন যাবি?” 

না, এখন যাবে নাএখন যাব মাহিন সাহেবের কাছেসাবেরের বাবা মাহিন সাহেবআমি প্রায়ই উনার কাছে যাই। 

জাহেদ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল, জানিতুই মােটামুটি একটা স্ট্রেঞ্জ চরিত্রআরেক কাপ চা খাবি, শুভ্র? চাটা ভাল হয়েছেখা আরেক কাপবলব দিতে

বল” 

তাের মাইক্রোবাসের ড্রাইভারকে ঐদিন কোন বখশিশ টখশিশ দেইনিদেয়া উচিত ছিলবেচারা নিশ্চয়ই এক্সপেক্ট করেছেটাকাই নেই, বখশিশ কি দেব ! খেতে বললামখেল নাবড়লােকের ড্রাইভার গরীবের বাড়িতে বােধহয় খায়ও নাবেশি জোরাজুরি করতেও সাহস হল না। 

শুভ্র কিছু বলল নাসে নিঃশব্দে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেসে জাহেদের জন্যে দু‘হাজার টাকা নিয়ে এসেছে। কিভাবে তাকে দেবে বুঝতে পারছে নাতার লজ্জা লজ্জা লাগছেজাহেদ আবার যদি কিছু মনে করে! শুভ্র শেষ পর্যন্ত টাকা না দিয়েই চলে এলজাহেদ তাকে এগিয়ে দিতে গাড়ি পর্যন্ত এল এবং এক সময় বলল, তুই যে কত ভাল একটা ছেলে তাকি জানিস

মেঘের ছায়া খন্ড-২০

এ বাড়ির কলিংবেলটা নষ্টটিপলে কোন শব্দ হয় নামাঝে মাঝে শক করেশুভ্র কলিংবেল টিপেই বড় রকমের ঝাঁকুনি খেলকলিংবেলে কোন শব্দ হল না, কিন্তু ভেতর থেকে মাহিন সাহেবের গলা শােনা গেলতিনি উল্লসিত স্বরে বললেন, শুভ্র এসেছেদরজা খুলে দে। 

নীতু বাবাকে সকালের নাশতা খাইয়ে দিচ্ছেপাতলা খিচুড়িচামুচে করে মুখে তুলে দিতে হচ্ছেমাহিন সাহেব দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসেছেনটা বেজে গেছে। বাবাকে নাশতা খাইয়ে নীতু অফিসে যাবেএইসময় বাসে উঠাই এক সমস্যাআজো হয়ত অফিসে দেরি হবেবাবা দ্রুত নাশতা খাচ্ছেন নাএক এক চামুচ মুখে নিয়ে অনেক দেরি করছেনখিচুড়ি খাওয়ানাে হলে চা খাওয়াতে হবেচা খেতে কতক্ষণ লাগবে কে জানেতাড়াহুড়া করা যাবে নাতাড়াহুড়া করলেই বাবা বলবেনতাের দেরি হয়ে যাচ্ছে রে নীতুতুই চলে যাচা আজ আর খাব না। 

মাহিন সাহেব বললেন, শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে, দরজা খুলে দেশুভ্র তুমি বুঝলে কি করে

আমার স্মেলিং সে খুব ডেভেলপ করেছেআমি ওর গায়ের গন্ধ পাচ্ছিচোখ যত নষ্ট হচ্ছে ঘ্রাণশক্তি তত বাড়ছে। 

তােমার চোখ মােটেই নষ্ট হচ্ছে নাসব সময় আজেবাজে চিন্তা করবে নানাও, হা কর। 

দরজা খুলে দিয়ে আয়কেউ আসেনি, বাবাএলে দরজার কড়া নাড়ত। 

মেঘের ছায়া খন্ড-২০

দরজার কড়া নড়লনীতু বিরক্তমুখে খিচুড়ির বাটি নামিয়ে দরজা খুলতে গেলমাহিন সাহেব বললেন, আমার নাশতা খাওয়া হয়ে গেছেতুই অফিসে চলে যাচা আজ আর খাব নাআমার চাটা বরং শুভ্রকে দে। 

নীতু দরজা খুললশুভ্র দাঁড়িয়ে আছেনীতু শুকনাে গলায় বলল, এসাে শুভ্রআজ তুমি কতক্ষণ থাকবে

কেন বলুন তাে

বেশিক্ষণ না থাকাই ভালবাবার শরীর ভাল নাতুমি যতক্ষণ থাকবে বাবা কথা বলতে থাকবেনউনার দু‘রাত ঘুম হয়নিঘুম দরকার। আমি বেশিক্ষণ থাকব নাকিছু মনে করলে না তাে

তােমার সঙ্গে আমার কিছু কথাও আছেতুমি কি আমার অফিসে একবার আসতে পারবে

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-২১

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *