শুভ্র ইতস্তত করে বলল, তাের বিয়েতে আসতে পারিনি। কিছু মনে করিসনি তাে? চশমা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বিয়ের অনুষ্ঠান কেমন হয়েছে?
‘অনুষ্ঠান আবার কি? আমি তিনবার কবুল কবুল বললাম। কেয়া তিনবার বলল। ব্যস। মামলা ডিসমিস। চা খাবি শুভ্র ?”
‘খাব।”
‘বাসায় চা খাওয়ানাের কোন উপায় নেই। মামী সিরিয়াস কান্নাকাটি করছে। চল, মােড়ের দোকানটায় চা খাব।
শুভ্র জাহেদের পেছনে পেছনে যাচ্ছে। বিয়েতে সে উপস্থিত হতে না পারায় জাহেদ যে রাগ করেনি তাতেই শুভ্র আনন্দিত।
জাহেদ !
‘কেয়া কোথায়? কেয়ার সঙ্গে একটু দেখা করব ভেবেছিলাম। ‘ও তার বােনের বাসায়। এখানে এত যন্ত্রণা, এর মধ্যে আর তাকে আনি নি। ‘তাের মামার অসুখটা কি ?
‘এখনাে ঠিক জানি না। মাথা গরম হয়ে গেছে। অফিসের ফাইল টাইল ছিড়ে ফেলেছে। দুঃখ ধান্দার মধ্যে থাকলে যা হয়। বাড়ি ভাড়া দেয়া হয়নি ছমাসের। প্রভিডেন্ট ফান্ডে এক পয়সা নেই। লােন নিয়ে নিয়ে সব শেষ। এক লােকের কাছ থেকে মামা দশ হাজার টাকা ধার করেছিলেন। সেই লােক দু–তিন দিন পর পর। বাসায় এসে বসে থাকে। তাকে দেখলেই মামার চেহারা অন্যরকম হয়ে যায়। সব মিলিয়ে ভয়াবহ অবস্থা। তুই বুঝবি না। আয়, চা খাব।
মেঘের ছায়া খন্ড-২০
‘কেয়া তার বােনের বাসায় ক’দিন থাকবে? ‘থাকবে কিছুদিন। এদিকের ঝামেলা না সামলে তাে আনতেও পারছি না।” ‘কেয়ার বােনের বাসার ঠিকানাটা আমাকে দিবি? “কেন?”
‘তােদের বিয়েতে আমি একটা উপহার দেব। সামান্য উপহার । তবে কেয়ার খুব পছন্দ হবে। কাজেই তাকে দিতে চাই।‘
‘উপহারটা কি? ‘তােকে বলব না। তুই আমাকে একটা কাগজে ঠিকানাটা লিখে দে। ‘এখন যাবি?”
‘না, এখন যাবে না। এখন যাব মাহিন সাহেবের কাছে। সাবেরের বাবা মাহিন সাহেব। আমি প্রায়ই উনার কাছে যাই।
জাহেদ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল, জানি। তুই মােটামুটি একটা স্ট্রেঞ্জ চরিত্র। আরেক কাপ চা খাবি, শুভ্র? চা–টা ভাল হয়েছে। খা আরেক কাপ। বলব দিতে?
‘বল।”
‘তাের মাইক্রোবাসের ড্রাইভারকে ঐদিন কোন বখশিশ টখশিশ দেইনি। দেয়া উচিত ছিল। বেচারা নিশ্চয়ই এক্সপেক্ট করেছে। টাকাই নেই, বখশিশ কি দেব ! খেতে বললাম। খেল না। বড়লােকের ড্রাইভার গরীবের বাড়িতে বােধহয় খায়ও না। বেশি জোরাজুরি করতেও সাহস হল না।
শুভ্র কিছু বলল না। সে নিঃশব্দে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। সে জাহেদের জন্যে দু‘হাজার টাকা নিয়ে এসেছে। কিভাবে তাকে দেবে বুঝতে পারছে না। তার লজ্জা লজ্জা লাগছে। জাহেদ আবার যদি কিছু মনে করে! শুভ্র শেষ পর্যন্ত টাকা না দিয়েই চলে এল। জাহেদ তাকে এগিয়ে দিতে গাড়ি পর্যন্ত এল এবং এক সময় বলল, তুই যে কত ভাল একটা ছেলে তাকি জানিস?
মেঘের ছায়া খন্ড-২০
এ বাড়ির কলিংবেলটা নষ্ট। টিপলে কোন শব্দ হয় না। মাঝে মাঝে শক করে। শুভ্র কলিংবেল টিপেই বড় রকমের ঝাঁকুনি খেল। কলিংবেলে কোন শব্দ হল না, কিন্তু ভেতর থেকে মাহিন সাহেবের গলা শােনা গেল। তিনি উল্লসিত স্বরে বললেন, শুভ্র এসেছে। দরজা খুলে দে।
নীতু বাবাকে সকালের নাশতা খাইয়ে দিচ্ছে। পাতলা খিচুড়ি। চামুচে করে মুখে তুলে দিতে হচ্ছে। মাহিন সাহেব দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসেছেন। ন‘টা বেজে গেছে। বাবাকে নাশতা খাইয়ে নীতু অফিসে যাবে। এইসময় বাসে উঠাই এক সমস্যা। আজো হয়ত অফিসে দেরি হবে। বাবা দ্রুত নাশতা খাচ্ছেন না। এক এক চামুচ মুখে নিয়ে অনেক দেরি করছেন। খিচুড়ি খাওয়ানাে হলে চা খাওয়াতে হবে। চা খেতে কতক্ষণ লাগবে কে জানে। তাড়াহুড়া করা যাবে না। তাড়াহুড়া করলেই বাবা বলবেন। – তাের দেরি হয়ে যাচ্ছে রে নীতু। তুই চলে যা। চা আজ আর খাব না।
মাহিন সাহেব বললেন, শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে, দরজা খুলে দে। ‘শুভ্র তুমি বুঝলে কি করে?
‘আমার স্মেলিং সে খুব ডেভেলপ করেছে। আমি ওর গায়ের গন্ধ পাচ্ছি। চোখ যত নষ্ট হচ্ছে ঘ্রাণশক্তি তত বাড়ছে।
‘তােমার চোখ মােটেই নষ্ট হচ্ছে না। সব সময় আজেবাজে চিন্তা করবে না। নাও, হা কর।
‘দরজা খুলে দিয়ে আয়। “কেউ আসেনি, বাবা। এলে দরজার কড়া নাড়ত।
মেঘের ছায়া খন্ড-২০
দরজার কড়া নড়ল। নীতু বিরক্তমুখে খিচুড়ির বাটি নামিয়ে দরজা খুলতে গেল। মাহিন সাহেব বললেন, আমার নাশতা খাওয়া হয়ে গেছে। তুই অফিসে চলে যা। চা আজ আর খাব না। আমার চা–টা বরং শুভ্রকে দে।
নীতু দরজা খুলল। শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে। নীতু শুকনাে গলায় বলল, এসাে শুভ্র। আজ তুমি কতক্ষণ থাকবে?
‘কেন বলুন তাে?
‘বেশিক্ষণ না থাকাই ভাল। বাবার শরীর ভাল না। তুমি যতক্ষণ থাকবে বাবা কথা বলতে থাকবেন। উনার দু‘রাত ঘুম হয়নি। ঘুম দরকার। ‘আমি বেশিক্ষণ থাকব না। ‘কিছু মনে করলে না তাে?
“তােমার সঙ্গে আমার কিছু কথাও আছে। তুমি কি আমার অফিসে একবার আসতে পারবে?
Read More