হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-২২

অনেক দিনের ব্যাপার চাচা। 

হঁ্যা, অনেক দিনের ব্যাপার। ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিকমানুষ বিস্মৃতিপরায়ণভুলে যাবার মধ্যেও সে আনন্দ পায়কিন্তু তুমি তাে ভুল নি শুভ্রতুমি তো ঠিকই উপস্থিত হয়েছহও নি? আজ কত তারিখ শুভ্র এগারােই সেপ্টেম্বর না?”

মেঘের ছায়া 

শুভ্র খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে নরম গলায় বলল, আমার খুব ভাল বন্ধু ছিলওর কথা আমার প্রায়ই মনে হয়। 

ছিল তােমার বন্ধুকিন্তু সে ছিল পরিবারের একজনএরা কেন তাকে ভুলে যাবে

ভূলবে কেনকেউ ভুলেনিসান্তনা দেয়া কথা আমার ভাল লাগে নাতুমি সান্ত্বনার কথা আমাকে বলবে আমার এই ছেলেটির কথা কারাে মনে নেইমনে থাকলে এরা বুঝত কেন এই স্টোররুমে আমি থাকিএদের ধারণা, আমি এখানে থাকি সবাইকে যন্ত্রণা দেয়ার জন্যেকেউ বুঝতে চেষ্টা করে না এটা আমার ছেলের ঘর

মেঘের ছায়া খন্ড-২২

সে এখানে থাকতােফ্যান নেই, আলােবাতাস নেই ছােট্ট একটা ঘরে শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখতেতুমি মাঝে মাঝে আমার কাছে আস আমার এত ভাল লাগে ! আমি আমার ছেলের ছায়া তােমার মধ্যে দেখিছেলেটা মরার সময় তুমি ছিলে নাওর যন্ত্রণা যখন খুব তীব্র হত তখন সে আমাকে বলতাে, বাবা, শুভ্র যদি আসে ওকে ঘরে ঢুকতে দিও মানুষের কষ্ট সহ্য করতে পারে নাআমাকে দেখে কষ্ট পাবে| মাহিন সাহেবের চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলশুভ্র অন্যদিকে তাকিয়ে রইলমাহিন সাহেব বললেন, আজ তুমি যাওদরজায় তালা দিয়ে যাও। 

আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে দেব? দাওশুভ্র আরেকটি সিগারেট ধরিয়ে মাহিন সাহেবের ঠোটে খুঁজে দিলচাচা যাই? আচ্ছা যাওমে গড বি অলওয়েজ উইথ ইউ। 

নীতু মাথা নিচু করে টাইপ করে যাচ্ছেসেকশনাল ইনচার্জ পরিমল বাবু একগাদা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলেছেন, লাঞ্চের আগে শেষ করতে পারবেন না ? নীতু হতাশ চোখে কাগজগুলির দিকে তাকিয়েছেলাঞ্চের আগে শেষ করার প্রশ্নই ওঠে নামুখের উপর না বলাও সম্ভব না| একটু স্পীডে টাইপ করে যানমন লাগিয়ে স্পীডে করলে লাঞ্চের আগেইপারবেনতিনটা করে কপি করবেন। 

মেঘের ছায়া খন্ড-২২

নীতু কথা বলে সময় নষ্ট করল নাটাইপ শুরু করলতার স্পীড ভালকিন্তু আজ স্পীড উঠছে নাশুভ্র চলে আসতে পারেআজ না এলে ভাল হতযদি আসে সে কি করবে ! চলে যেতে বলবে? অন্য একদিন আসতে বলবে? শুভ্রের সঙ্গে কথা বলা দরকার। 

এক ঘণ্টা নীতু সমান তালে টাইপ করে গেলমুহূর্তের জন্যেও থামল না। 

এখনাে একগাদা কাগজ সামনেপাচজন টাইপিস্ট আছেকাগজগুলি সবার মধ্যে ভাগ করে দেয়া যেত ,.

নীতু আপা!কেয়া মুখ তুলে তাকালছােট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তুমি এসেছ

চল, ক্যানটিনে গিয়ে বসি। 

নীতু উঠে দাঁড়ালপাশের টেবিলের ইদরিস সাহেবকে বলে গেল সে ক্যান্টিনে গেছে, কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরবে। 

তালাবন্ধ করে এসেছ শুভ্র?’ 

অসুস্থ একজন মানুষকে তালাবন্ধ করে রেখে আসতে হচ্ছেচিন্তা করতেই খারাপ লাগেব্যবস্থাটা অবশ্যি সাময়িক। 

ক্যান্টিন ফাঁকানীতু কোণার দিকের একটা চেয়ারে বসলনােংরা ক্যান্টিনমনে হচ্ছে তিনচারদিন ধরে মেঝে ঝাঁট দেয়া হচ্ছে নাটেবিলে টেবিলে চায়ের কাপমাছি উড়ছে। 

কিছু খাবে শুভ্র ?জ্বি না। 

এরা খুব ভাল সিঙ্গারা বানায়আমি লাঞ্চে দুটা সিঙ্গারা আর এক কাপ চা খাইখেয়ে দেখাে না। 

আচ্ছা বলুন, সিঙ্গারা দিতে বলুন। 

নীতু উঠে গিয়ে সিঙ্গারা নিয়ে এলশুধু সিঙ্গারা নয়, এক বােতল পেপসিআছে। 

শুভ্র, পেপসি খাও তাে তুমি?জি খাইখুব ঠাণ্ডা হবে না

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-২৩

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *