‘অনেক দিনের ব্যাপার চাচা।
‘হঁ্যা, অনেক দিনের ব্যাপার। ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। মানুষ বিস্মৃতিপরায়ণ। ভুলে যাবার মধ্যেও সে আনন্দ পায়। কিন্তু তুমি তাে ভুল নি শুভ্র। তুমি তো ঠিকই উপস্থিত হয়েছ। হও নি? আজ কত তারিখ শুভ্র – এগারােই সেপ্টেম্বর না?”
শুভ্র খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে নরম গলায় বলল, ও আমার খুব ভাল বন্ধু ছিল। ওর কথা আমার প্রায়ই মনে হয়।
‘ও ছিল তােমার বন্ধু। কিন্তু সে ছিল এ পরিবারের একজন। এরা কেন তাকে ভুলে যাবে !
‘ভূলবে কেন। কেউ ভুলেনি। ‘সান্তনা দেয়া কথা আমার ভাল লাগে না। তুমি সান্ত্বনার কথা আমাকে বলবে । আমার এই ছেলেটির কথা কারাে মনে নেই। মনে থাকলে এরা বুঝত কেন এই স্টোররুমে আমি থাকি। এদের ধারণা, আমি এখানে থাকি সবাইকে যন্ত্রণা দেয়ার জন্যে। কেউ বুঝতে চেষ্টা করে না – এটা আমার ছেলের ঘর।
মেঘের ছায়া খন্ড-২২
সে এখানে থাকতাে। ফ্যান নেই, আলাে–বাতাস নেই ছােট্ট একটা ঘরে শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখতে। তুমি মাঝে মাঝে আমার কাছে আস – আমার এত ভাল লাগে ! আমি আমার ছেলের ছায়া তােমার মধ্যে দেখি। ছেলেটা মরার সময় তুমি ছিলে না। ওর যন্ত্রণা যখন খুব তীব্র হত তখন সে আমাকে বলতাে, বাবা, শুভ্র যদি আসে ওকে ঘরে ঢুকতে দিও । ও মানুষের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। ও আমাকে দেখে কষ্ট পাবে। | মাহিন সাহেবের চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। শুভ্র অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। মাহিন সাহেব বললেন, আজ তুমি যাও। দরজায় তালা দিয়ে যাও।
‘আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে দেব? ‘দাও। শুভ্র আরেকটি সিগারেট ধরিয়ে মাহিন সাহেবের ঠোটে খুঁজে দিল। ‘চাচা যাই? ‘আচ্ছা যাও। মে গড বি অলওয়েজ উইথ ইউ।
নীতু মাথা নিচু করে টাইপ করে যাচ্ছে। সেকশনাল ইনচার্জ পরিমল বাবু একগাদা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলেছেন, লাঞ্চের আগে শেষ করতে পারবেন না ? নীতু হতাশ চোখে কাগজগুলির দিকে তাকিয়েছে। লাঞ্চের আগে শেষ করার প্রশ্নই ওঠে না। মুখের উপর না বলাও সম্ভব না। | ‘একটু স্পীডে টাইপ করে যান। মন লাগিয়ে স্পীডে করলে লাঞ্চের আগেই। পারবেন। তিনটা করে কপি করবেন।
মেঘের ছায়া খন্ড-২২
নীতু কথা বলে সময় নষ্ট করল না। টাইপ শুরু করল। তার স্পীড ভাল। কিন্তু আজ স্পীড উঠছে না। শুভ্র চলে আসতে পারে। আজ না এলে ভাল হত। যদি আসে সে কি করবে ! চলে যেতে বলবে? অন্য একদিন আসতে বলবে? শুভ্রের সঙ্গে কথা বলা দরকার।
এক ঘণ্টা নীতু সমান তালে টাইপ করে গেল। মুহূর্তের জন্যেও থামল না।
এখনাে একগাদা কাগজ সামনে। পাচজন টাইপিস্ট আছে। কাগজগুলি সবার মধ্যে ভাগ করে দেয়া যেত ,..
‘নীতু আপা!’ কেয়া মুখ তুলে তাকাল। ছােট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তুমি এসেছ?
‘চল, ক্যানটিনে গিয়ে বসি।
নীতু উঠে দাঁড়াল। পাশের টেবিলের ইদরিস সাহেবকে বলে গেল সে ক্যান্টিনে গেছে, কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরবে।
‘তালাবন্ধ করে এসেছ শুভ্র?’
‘অসুস্থ একজন মানুষকে তালাবন্ধ করে রেখে আসতে হচ্ছে। চিন্তা করতেই খারাপ লাগে। ব্যবস্থাটা অবশ্যি সাময়িক।
ক্যান্টিন ফাঁকা। নীতু কোণার দিকের একটা চেয়ারে বসল। নােংরা ক্যান্টিন। মনে হচ্ছে তিন–চারদিন ধরে মেঝে ঝাঁট দেয়া হচ্ছে না। টেবিলে টেবিলে চায়ের কাপ। মাছি উড়ছে।
‘কিছু খাবে শুভ্র ?” ‘জ্বি না।
এরা খুব ভাল সিঙ্গারা বানায়। আমি লাঞ্চে দুটা সিঙ্গারা আর এক কাপ চা খাই। খেয়ে দেখাে না।
“আচ্ছা বলুন, সিঙ্গারা দিতে বলুন।
নীতু উঠে গিয়ে সিঙ্গারা নিয়ে এল। শুধু সিঙ্গারা নয়, এক বােতল পেপসিও আছে।
শুভ্র, পেপসি খাও তাে তুমি?” ‘জি খাই। ‘খুব ঠাণ্ডা হবে না।
Read More