সিঙ্গারা খেয়ে পেপসিটা খাও। এখানকার পানি ভাল না। ‘কি জন্যে ডেকেছেন, আপা?”
‘বাবা সম্পর্কে তােমার সঙ্গে আলাপ করবার জন্যে। তুমি তাে প্রায়ই বাবার সঙ্গে কথা বল। আজও বললে, কিছু বুঝতে পারছ? কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করেছ?
‘জিনা। কি পরিবর্তনের কথা বলছেন?”
‘বাবার মাথা ঠিক নেই, শুদ্র। বাসায় তালা দিয়ে আসার এও একটা কারণ। আমাদের বাড়িতে এমন কিছু মহামূল্যবান কোহিনুর নেই যে ঘর তালাবন্ধ করে আসতে হবে। বাবার মাথা পুরােপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। ‘উনি কি করেন?
এখনাে কিছু করছেন না। তবে খুব শিগগিরই করবেন। বাবা হুট করে কিছু করেন না। কোন একটা বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন চিন্তা–ভাবনা করেন। তারপর কাজটা করেন। তখন হাজার যুক্তি দিয়েও তাঁকে টলানাে যায় না। এখন তিনি কি ভাবছেন শুনবে? এখন ভাবছেন তিনি আমাদের ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূতের মত চেপে আছেন। তিনি আমাদের মুক্তি দিতে চান। তােমাকেও নিশ্চয়ই বলেছেন।
‘হ্যা, বলেছেন।
‘মা’র সঙ্গে এই নিয়ে ঝগড়া হল। মা কান্নাকাটি করে বাসা ছেড়ে চলে গেছেন। এখন মা ছােটমামার সঙ্গে আছেন। মাকে কি বলেছেন শুনবে?’
মেঘের ছায়া খন্ড-২৩
‘বলুন। | ‘মা’কে বলেছেন – আমি তােমাদের কাছে বিরাট বােঝা। আমার জন্যে নীতুর বিয়ে হচ্ছে না। আমি চাই না আমার জন্যে আমার মেয়ের জীবন নষ্ট হােক। কাজেই আমি ঠিক করেছি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। তুমি আমাকে লােকজন বেশি চলাচল করে এমন একটা রাস্তার পাশে শুইয়ে রেখে এসে। এ শহরে খুব কম করে হলেও পঞ্চাশ হাজার ভিক্ষুক বাস করে। রােড এ্যাকসিডেন্টে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়, অনাহারে ভিক্ষুকের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় না।
আমি এইভাবে আরাে কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারব বলে আমার ধারণা। মা বললেন, তােমাকে মুখে তুলে কে খাইয়ে দেবে? বাবা বললেন, তিনি পার্টনারশীপ ব্যবস্থায় আরেকজন অল্পবয়স্ক শিশু ভিক্ষুক সঙ্গে নেবেন। বাবার রােজগারের অর্ধেক সে পাবে। বিনিময়ে বাবাকে সে খাইয়ে দেবে। বাবার মাথা যে পুরােপুরি খারাপ হয়ে গেছে তুমি কি বুঝতে পারছ? তুমি চিন্তা করতে পার – এই লোক ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেছে!
শুভ্র বলল, এমন কিছু ঘটেছে যার জন্যে চাচা হঠাৎ করে মনে করা শুরু করলেন যে তিনি বাড়তি বোঝা।
‘বাবা তাে বােকা না শুভ্র। বাবা যথেষ্টই চালাক। তাছাড়া শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষদের বুদ্ধি হঠাৎ করে অনেকখানি বেড়ে যায়। বাবা এক ধরনের বােঝা তাে বটেই। তুমি আমার ছােট ভাইয়ের মত। তবু তােমাকে বলি – আমার বিয়ে করার একটা সুযােগ ঘটেছে। কোনদিন ঘটবে আমি ভাবিনি, কিন্তু ঘটেছে। আগে একবার বিয়ে হওয়া মেয়ের আবার বিয়ে ঠিক হওয়া বড় ঘটনা। যার সঙ্গে বিয়ে ঠিকঠাক হয়েছে – তার মা–বাবা আছে। ছােট ভাইবােন আছে। আমি তাে বিয়ের পর মা বাবাকে নিয়ে ঐ বাড়িতে উঠতে পারি না।
মেঘের ছায়া খন্ড-২৩
‘উনি তাে আপনার সমস্যা জানেন। উনি কি বলছেন?”
“সে কিছুই বলছে না। আমি তাকে অপেক্ষা করতে বলছি। কতদিন সে অপেক্ষা করবে? তাছাড়া অপেক্ষা করবেই বা কেন?
শুভ্র পেপসির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলল, আপনি তাকে অপেক্ষা করতে বলছেন কেন? আপনার কি ধারণা অপেক্ষা করলেই সমস্যার সমাধান হবে?
‘তাকে অপেক্ষা করতে বলা ছাড়া আমি আর কি বলতে পারি? ‘আপনার কাছে কি এই সমস্যার কোন সমাধান আছে?”
শুভ্র ইতস্তত করে বলল, আমাকে আপনি কি করতে বলছেন?
নীতু অসহিষ্ণু গলায় বলল, তােমাকেও কিছু করতে বলছি না। তুমি আবার কি করবে ? তােমার জানা থাকা দরকার বলেই জানালাম। তুমি ইচ্ছা করলে পাগলামি চিন্তা–ভাবনা না করার জন্যে বাবাকে বলতে পার।
মেঘের ছায়া খন্ড-২৩
‘জি আচ্ছা, আমি বলব। | ‘শুভ্র, আমি বসতে পারব না। আমার অনেক কাজ আছে। আরেকদিন তােমার সঙ্গে কথা বলব। নীতু উঠে দাঁড়াল। শুভ্র লক্ষ্য করল নীতুকে আসলেই খুব ক্লান্ত লাগছে। মুখে বয়সের দাগ পড়ে গেছে। চোখের নিচটা কালাে হয়ে আছে। | নীতু চলে যাবার পরও শুভ্র খানিকক্ষণ বসে রইল। ক্যান্টিনে লােকজন আসতে শুরু করেছে। এখন বােধহয় লাঞ্চ টাইম। বাসায় ফিরতে ইচ্ছা করছে না।
দুপুরের খাবার ইয়াজউদ্দিন সাহেব অফিসেই খান। খুব হালকা খাবার। এক বাটি স্যুপ। সামান্য সালাদ। এক টুকরা পাকা পেপে কিংবা অর্ধেকটা কলা। খাবার শেষে মগের মত বড় একটা গ্লাসে এক মগ দুধ–চিনিবিহীন চা। চায়ের সঙ্গে দিনের দ্বিতীয় সিগারেটটি খাওয়া হয়। আজ তাঁর লাঞ্চ ঠিকমত খাওয়া হয়নি। দু চামচ স্যুপ মুখে দিয়ে বাটি সরিয়ে রেখেছেন।
Read More