সালাদ খান নি। পেপের টুকরার দুখণ্ড মুখে দিয়েছেন। চায়ের মগ সামনে আছে। ঠাণ্ডা হচ্ছে, তিনি চুমুক দিচ্ছেন না। পর পর তিনটি সিগারেট খাওয়া হয়ে গেছে। তিনি প্রচণ্ড টেনশান অনুভব করছেন, যদিও আচার আচরণে তা প্রকাশ পাচ্ছে না। তাঁর সামনে এ সপ্তাহের নিউজ উইক। তিনি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর উপর একটি প্রবন্ধ পড়ছেন। মন দিয়েই পড়ছেন।
তাঁর টেনশানের কারণ হচ্ছে – তিনি খবর পেয়েছেন আজ তাকে অফিস থেকে বের হতে দেয়া হবে না। অফিস ছুটি হবার পর কর্মচারীরা তাকে ঘেরাও করবে। দরজা আটকে তালা দিয়ে দেবে। তার টঙ্গী সিরামিক কারখানার কর্মচারীরাও এসে যােগ দেবে। তাদের ন’দফা দাবীর সব কটি তাকে মেটাতে হবে। আজ ভয়ংকর কিছু ঘটবে – এ ব্যাপারে কর্মচারীরা মােটামুটি নিশ্চিত। তবে তারা নিশ্চিত যে ইয়াজউদ্দিন সাহেব এখন পর্যন্ত কিছুই জানেন না।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব কর্মচারী সমিতির সব খবরই রাখেন। নেতাদের গােপন বৈঠকের খবরও তিনি জানেন। আজকের ঘেরাওয়ের ব্যাপারে তিনি কি করবেন এখনাে ঠিক করেন নি। ব্যস্ত হবার কিছু নেই। হাতে সময় আছে। এরা প্রথম যা করবে তা হল – টেলিফোনের লাইন কেটে দেবে যাতে তিনি প্রয়ােজনের সময় টেলিফোনে পুলিশের সাহায্য না চাইতে পারেন। পুলিশকে আগেভাগে জানিয়ে রাখা যায়, তবে তা করা ঠিক হবে না। পুলিশের কাছ থেকেই ওরা জেনে যাবে। এমন ব্যবস্থা করে রাখতে হবে যাতে পুলিশ ঠিক চারটার সময় খবর, পায়।।
মেঘের ছায়া খন্ড-২৪
ইয়াজউদ্দিন সাহেব মুনিরুল হককে ডেকে পাঠালেন। মনিরুল হক কর্মচারী সমিতির সংস্কৃতি সম্পাদক। আজকের ঘেরাও আন্দোলনের সেই হচ্ছে প্রধান ব্যক্তি। প্রতিটি কাজ সে করছে আড়ালে থেকে। ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে – ঘেরাও মেঘের ছায়া–৪
এর এক পর্যায়ে সে রেকর্ড রুমে আগুন লাগিয়ে দেবার একটা পরিকল্পনা করেছে। এটি কেন করছে তিনি জানেন না।
মনিরুল হক এসে বিনীত ভঙ্গিতে দাঁড়াল। ত্রিশ–বত্রিশ বছর বয়েসী ছেলে। এর মধ্যেই চুল পেকে গেছে। আজ বােধহয় সে ক্রমগাত পান খেয়ে যাচ্ছে – সবকটা দাঁত লাল। এখনাে মুখে পান আছে। এই গরমেও সে একটা হালকা গােলাপী রঙের স্যুয়েটার পরে আছে।
‘স্যার আমাকে ডেকেছেন ?” ডেকেছি। তােমার খবর কি মনিরুল ইসলাম ?” ‘জি স্যার, আপনার দোয়া।
‘মুখভর্তি পান নিয়ে আর কখনাে আমার ঘরে ঢুকবে না। পান ফেলে মুখ ধুয়ে তারপর আস।
মনিরুল ইসলাম হকচকিয়ে গেল। ঘর ছেড়ে গেল। ঠিক তখন শুভ্র পর্দার ফাঁক দিয়ে গলা বের করে বলল, বাবা আসব? ইয়াজউদ্দিন সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন,
তুমি কোত্থেকে?
মেঘের ছায়া খন্ড-২৪
শুভ্র হাসল। ‘এসাে, ভেতরে এসাে। ‘তুমি কি খুব ব্যস্ত, বাবা? তােমাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। ‘আমি কিছুটা ব্যস্ত, তবে চিন্তিত না। তুমি বস শুভ্র।
শুভ্র বসল। ইয়াজুউদ্দিন সাহেব তার পিএ–কে ডেকে বলে দিলেন কেউ যেন এখন না আসে। মনিরুল ইসলামকে এক ঘণ্টা পরে আসতে বললেন।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব পঞ্চম সিগারেটটা ধরাতে ধরাতে বললেন, শুভ্র, তােমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি আজ সারাদিন কিছু খাওনি। তুমি পথে পথে ঘুরছ এবং তােমার মাথা ধরেছে।
‘তােমার তিনটি ধারণাই সত্যি বাবা। ‘তুমি কি কিছু খাবে?” ‘না। ‘কিছু বলার জন্যে এসেছ নিশ্চয়। বল। শুভ্র হাসিমুখে বলল, বাবা, তুমি তাে জান আমার এক বন্ধু বিয়ে করেছে।
‘জানি। তােমার সেই বন্ধুর নাম জাহেদ। সে একজন প্রফেশন্যাল প্রাইভেট টিউটর, তার স্ত্রীর নাম কেয়া। বিয়েতে তােমার বরযাত্রী হবার কথা ছিল। চশমা হারিয়ে ফেলার কারণে তুমি যেতে পারনি। এখন বল, কি বলবে –
Read More