ছ‘বছরে কি দেখলে ?”
মনিরুল ঢোঁক গিলল। সে স্পষ্টতই ভয় পেয়েছে। ইয়াজুদ্দিন সাহেব বললেন, শােন মনিরুল, আমি যখন যাত্রা শুরু করেছিলাম তখন আমার সঙ্গে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বােটানীর একটি এম.এসসি. ডিগ্রী এবং তিনশ’ টাকা। আজ আমার সম্পদের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা।
আমার লেগেছে ত্রিশ বছর। ত্রিশ বছরে এই অবস্থায় আসতে যে জিনিস লাগে তার নাম মস্তিষ্ক। শাদা রঙের থিকথিকে একটা বস্তু। ঠিক শাদাও না, অফ হােয়াইট। আমার মাথায় যে এই বস্তু প্রচুর পরিমাণে আছে তা কি তুমি জান, মনিরুল ইসলাম?
‘জানি স্যার।
‘আজ তােমাদের কি পরিকল্পনা, কখন কি করবে আমি যে তার সবই জানি তা কি তুমি জান?”
মনিরুল চোখ নামিয়ে নিল। ঠোক গিলল। ‘আন্দোলন করার অধিকার অবশ্যই তােমাদের আছে। ঘেরাও করার অধিকারও হয়ত আছে। কিন্তু আগুন লাগিয়ে দেবার ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।
‘আমি কিছু জানি না, স্যার।
মেঘের ছায়া খন্ড-২৬
তুমি হয়ত জান না। কিন্তু আমি জানি। আমি খুব ভাল করে জানি। এ জাতীয় পরিস্থিতি কি করে সামাল দিতে হয় তাও জানি। আমাকে এইসব ঠেকে শিখতে হয়েছে। তুমি বাসাবােতে থাক না?
‘জি স্যার।। ‘৩১ বাই এক, দক্ষিণ বাসাবাে, দোতলা। ‘জ্বি স্যার। ‘দেখলে তােমাদের খোঁজ–খবর কত ভাল রাখি। ‘আপনি আমাকে কেন এইসব বলছেন, আমি স্যার কিছুই জানি না। ‘আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি যাও।। ‘স্যার, আমি সাতে–পাঁচে থাকি না। ওরা মিটিং করল – আমি বললাম …‘ ‘মনিরুল ইসলাম, তুমি এখন যাও।
ইয়াজউদ্দিন ঘড়ি দেখলেন। তিনটা কুড়ি বাজে। অপেক্ষা করতে হবে। ঠিক চারটায় ঘেরাও হবার আগে আগে পুলিশের সাহায্য চাইতে হবে। কোন করাণে তিনি যদি টেলিফোন করতে না পারেন তাহলে অন্য কেউ যেন কাজটা করে দেয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
এরা কি এখানে বােম–টোমা ফাটাবে? বােমা ব্যাপারটা সহজলভ্য হয়ে গেছে। নির্দোষ জর্দার কৌটায় ভরে ঘুরে বেড়ানাে যায়। চারদিকে আতংক ছড়িয়ে দেবার জন্যে জর্দার কৌটাগুলির তুলনা হয় না। সময় কাটানাের জন্যে ইয়াজউদ্দিন সাহেব শুভ্রের ফাইল ড্রয়ার থেকে বের করলেন। কাজটা তিনি নজুবুল্লাহকে দিয়েছিলেন। সাতদিনের রিপাের্ট দেবার কথা ছিল। | প্রতিদিন একহাজার টাকা হিসেবে সাতদিনের জন্যে সাতহাজার। লােকটা। আনাড়ি ধরনের কাজ করেছে। মাঝে মাঝে অতি চালাকি করতে গিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে চলে গেছে। এটা করেছে ফাইল মােটা করার জন্যে। ইয়াজউদ্দিন চোখ বুলাতে লাগলেন।
মেঘের ছায়া খন্ড-২৬
সােমবার ১৩ই নভেম্বর ১৯৯২। শুভ্র সাহেব বাড়ি থেকে বের হলেন দশটা একুশ মিনিটে। গেটের কাছে এসে দারােয়ানের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেন। আবার বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলেন। তিনি বাড়ির বাইরের বারান্দায় কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে নিজের ঘরে ঢুকে গেলেন। আবার বের হলেন এগারােটা বাজার দু‘মিনিট আগে।
তার পরনে ছিল কালাে প্যান্ট, শাদা শার্ট। পায়ে স্যান্ডেল।” পড়তে পড়তে ইয়াজউদ্দিনের ভ্রু কুঞ্চিত হল। শুভ্র কি পরে ঘর থেকে বের হয়েছে তার এত বিতং করে লিখতে তাকে কে বলেছে?
শুভ্র সাহেব রিকশা নিলেন রাস্তার মােড়ে এসে। রিকশার নম্বর – ঢাকা মিউনিসিপ্যালটি ৭১১। তিনি রিকশার হুড ফেলে দিলেন। সােহরাওয়ার্দি উদ্যানের কাছে এসে ৰিকশা ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে – অন্য একটা রিকশা নিলেন। এই রিকশার নম্বর – ঢাকা মিউনিসিপ্যালটি ২০০৩। এইবার তিনি রিকশার হুড ফেললেন না। তবে রিকশা হাইকোর্টের কাছাকাছি যাবার পর তিনি রিকশার হুড ফেলে
দিলেন। ইয়াজউদ্দিন সাহেব ঘড়ি দেখলেন। পুলিশকে টেলিফোন করার সময় হয়ে গেছে।
Read More