হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-২৬

বছরে কি দেখলে ?” 

মনিরুল ঢোঁক গিললসে স্পষ্টতই ভয় পেয়েছেইয়াজুদ্দিন সাহেব বললেন, শােন মনিরুল, আমি যখন যাত্রা শুরু করেছিলাম তখন আমার সঙ্গে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বােটানীর একটি এম.এসসি. ডিগ্রী এবং তিনশটাকাআজ আমার সম্পদের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা

আমার লেগেছে ত্রিশ বছরত্রিশ বছরে এই অবস্থায় আসতে যে জিনিস লাগে তার নাম মস্তিষ্কশাদা রঙের থিকথিকে একটা বস্তুঠিক শাদাও না, অফ হােয়াইটআমার মাথায় যে এই বস্তু প্রচুর পরিমাণে আছে তা কি তুমি জান, মনিরুল ইসলাম?

মেঘের ছায়া 

জানি স্যার। 

আজ তােমাদের কি পরিকল্পনা, কখন কি করবে আমি যে তার সবই জানি তা কি তুমি জান?” 

মনিরুল চোখ নামিয়ে নিলঠোক গিললআন্দোলন করার অধিকার অবশ্যই তােমাদের আছেঘেরাও করার অধিকারও হয়ত আছেকিন্তু আগুন লাগিয়ে দেবার ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।

আমি কিছু জানি না, স্যার। 

মেঘের ছায়া খন্ড-২৬

তুমি হয়ত জান নাকিন্তু আমি জানিআমি খুব ভাল করে জানিজাতীয় পরিস্থিতি কি করে সামাল দিতে হয় তাও জানিআমাকে এইসব ঠেকে শিখতে হয়েছেতুমি বাসাবােতে থাক না

জি স্যার৩১ বাই এক, দক্ষিণ বাসাবাে, দোতলাজ্বি স্যারদেখলে তােমাদের খোঁজখবর কত ভাল রাখিআপনি আমাকে কেন এইসব বলছেন, আমি স্যার কিছুই জানি নাআচ্ছা ঠিক আছে, তুমি যাওস্যার, আমি সাতেপাঁচে থাকি নাওরা মিটিং করল আমি বললাম মনিরুল ইসলাম, তুমি এখন যাও। 

ইয়াজউদ্দিন ঘড়ি দেখলেনতিনটা কুড়ি বাজেঅপেক্ষা করতে হবেঠিক চারটায় ঘেরাও হবার আগে আগে পুলিশের সাহায্য চাইতে হবেকোন করাণে তিনি যদি টেলিফোন করতে না পারেন তাহলে অন্য কেউ যেন কাজটা করে দেয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। 

এরা কি এখানে বােমটোমা ফাটাবে? বােমা ব্যাপারটা সহজলভ্য হয়ে গেছেনির্দোষ জর্দার কৌটায় ভরে ঘুরে বেড়ানাে যায়চারদিকে আতংক ছড়িয়ে দেবার জন্যে জর্দার কৌটাগুলির তুলনা হয় নাসময় কাটানাের জন্যে ইয়াজউদ্দিন সাহেব শুভ্রের ফাইল ড্রয়ার থেকে বের করলেনকাজটা তিনি নজুবুল্লাহকে দিয়েছিলেনসাতদিনের রিপাের্ট দেবার কথা ছিল| প্রতিদিন একহাজার টাকা হিসেবে সাতদিনের জন্যে সাতহাজারলােকটাআনাড়ি ধরনের কাজ করেছেমাঝে মাঝে অতি চালাকি করতে গিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে চলে গেছেএটা করেছে ফাইল মােটা করার জন্যেইয়াজউদ্দিন চোখ বুলাতে লাগলেন। 

মেঘের ছায়া খন্ড-২৬

সােমবার ১৩ই নভেম্বর ১৯৯২শুভ্র সাহেব বাড়ি থেকে বের হলেন দশটা একুশ মিনিটেগেটের কাছে এসে দারােয়ানের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেনআবার বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলেনতিনি বাড়ির বাইরের বারান্দায় কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে নিজের ঘরে ঢুকে গেলেনআবার বের হলেন এগারােটা বাজার দুমিনিট আগে। 

তার পরনে ছিল কালাে প্যান্ট, শাদা শার্টপায়ে স্যান্ডেলপড়তে পড়তে ইয়াজউদ্দিনের ভ্রু কুঞ্চিত হলশুভ্র কি পরে ঘর থেকে বের হয়েছে তার এত বিতং করে লিখতে তাকে কে বলেছে

শুভ্র সাহেব রিকশা নিলেন রাস্তার মােড়ে এসেরিকশার নম্বর ঢাকা মিউনিসিপ্যালটি ৭১১তিনি রিকশার হুড ফেলে দিলেনসােহরাওয়ার্দি উদ্যানের কাছে এসে ৰিকশা ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে অন্য একটা রিকশা নিলেনএই রিকশার নম্বর ঢাকা মিউনিসিপ্যালটি ২০০৩এইবার তিনি রিকশার হুড ফেললেন নাতবে রিকশা হাইকোর্টেকাছাকাছি যাবার পর তিনি রিকশার হুড ফেলে 

দিলেনইয়াজউদ্দিন সাহেব ঘড়ি দেখলেনপুলিশকে টেলিফোন করার সময় হয়ে গেছে

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-২৭ 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *