হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-২৭

মিজান সাহেব বেশ স্বাভাবিক আছেনতিনি নাপিতের দোকান থেকে চুল কাটিয়েছেনএকেবারে কদমছাটমাথাটা কালো রঙের কদম ফুলের মতই দেখাচ্ছেচুল কাটার জন্যেই তাকে অন্য রকম দেখাচ্ছেছাড়া তার মধ্যে আর কোন অস্বাভাবিকতা নেইকথাবার্তা, চালচলন খুব স্বাভাবিকহঠাৎ হঠাৎ স্ত্রীরদিকে তাকিয়ে দুএকটা কুৎসিত বাক্য বলে আবার স্বাভাবিক হয়ে যান

মেঘের ছায়া

যেমন, আজ দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় সহজভাবে ভাত খাচ্ছিলেন, হঠাৎ মনােয়ারার দিক তাকিয়ে ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে বললেন, মাগী, তুই তরকারিতে লবণ দেস না কেন? আমার কি লবণ কেনার পয়সাও নাই? মানােয়ারা কেঁদে ফেলতে যাচ্ছিলেন, কাঁদলেন নাকাঁদলে আবার কোন বিপত্তি ঘটেতিনি ছুটে গিয়ে রান্নাঘর থেকে লবণ নিয়ে এলেন

ততক্ষণে মিজান সাহেব স্বাভাবিকতিনি কোমল গলায় বললেন, মনু, তুমি একসঙ্গে খেয়ে ফেল না কেন? একসঙ্গে খেয়ে ফেললে ঝামেলা কমেকাজেরলােক একটা রাখতে হবেকাজের লােক ছাড়া সংসার চালানাে সম্ভব নাতুমি একা কদিক দেখবে? | সৌভাগ্যের সংবাদ বাড়ি বাড়ি দিয়ে আসতে হয়দুর্ভাগ্যের সংবাদ দিতে হয়। 

মেঘের ছায়া খন্ড-২৭

সবাই জেনে যায়ঢাকায় মিজান সাহেবের সব আত্মীয়স্বজনই খবর পেয়ে গেছেনতাঁরা দেখতে আসছেনপাগল দেখা এবং পাগলের সঙ্গে কথাবার্তা বলার এক আলাদা মজামিজান সাহেব সবাইকেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করলেনকোন রকম পাগলামি দেখালেন নাসহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বললেন, হাসলেন

জাহেদ সন্ধ্যবেলা মামাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলডাক্তার মিজান সাহেবের অফিসের এক কলিগের ভায়রা ভাইসেই কলিগই ব্যবস্থা করে দিয়েছেমস্তিষ্ক বিকৃতির জন্যে খুব ভাল ডাক্তারঅর্ধেক ফিতে তিনি রােগী দেখে দেবেনঅর্ধেক ফিতে যে সব রােগী দেখা হয় তাদের পেছনে ডাক্তাররা অর্ধেকেরও কম সময় ব্যয় করেন

উপসর্গ শােনার আগেই ব্যবস্থাপত্র লেখা হয়ে যায়তবে এই ডাক্তার অনেক সময় ব্যয় করলেননানান ধরনের প্রশ্ন ঐশ্ন করে বললেন, আমি তাে কিছু পাচ্ছি নাআমার মনে হয় আপনারা অকারণে বেশি দুঃশ্চিন্তা করছেনউনার মূল সমস্যা কি

জাহেদ অস্বস্তির সঙ্গে বলল, হঠাৎ রেগে যানমামীর সঙ্গে কুৎসিত ব্যবহার করেনগালাগালি করেন। 

স্ত্রীর প্রতি মাঝে মাঝে রেগে যাওয়া কি খুব অস্বাভাবিক? আমরা সবাই কখনাে কখনাে রাগি ।

মেঘের ছায়া খন্ড-২৭

জাহেদ বলল, কিন্তু উনার মনে থাকে না যে উনি রেগেছেনতাছাড়া মামা আগে কথা প্রায় বলতেন না, এখন প্রচুর কথা বলেনসারাক্ষণই কথা বলেন। 

উনার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন? জ্বি বলেনরাত জেগে গল্প করেন। 

ডাক্তার সাহেব বললেন, আমার ধারণা, এক ধরনের নার্ভাস শকের ভেতর দিয়ে উনি গেছেনস্নায়ুর উপর দিয়ে বড় ধরনের কোন ঝড় বয়ে গেছেঝড়ের কারণে স্নায়ুর তন্ত্রীতে এক ধরনের ধাক্কা লেগেছেসাময়িক বিকল অবস্থা যাচ্ছেএটা কিছুই নাঠিকমত খাওয়াদাওয়া করতে হবেঘুমুতে হবে

সবচেভাল হয় যদি স্থান পরিবর্তন করা যায়আপনি বরং আপনার মামাকে নিয়ে কোথাও যান, ঘুরেটুরে আসুন| কথাবার্তা মিজান সাহেবের সামনেই হচ্ছেতিনি গভীর আগ্রহ নিয়ে শুনছেনডাক্তার সাহেব থামতেই বললেন, এটা মন্দ বুদ্ধি নাজাহেদ, চল গ্রামের বাড়ি থেকে ঘুরে আসিটাটকাটাটকা খেজুরের রস খেয়ে আসিঅনেকদিন খেজুরের রস খাওয়া হয় না। 

ডাক্তার সাহেব বললেন, ভাল বুদ্ধিযান, গ্রাম থেকে ঘুরে আসুন। 

মেঘের ছায়া খন্ড-২৭

জাহেদ তার মামাকে নিয়ে বিমর্ষ মুখে বের হয়ে এলডাক্তার সাহেব লম্বা প্রেসক্রিপশন করেছেননানান ধরনের ভিটামিন, হজমের অষুধ, ঘুমের অষুধতিনশটাকা চলে গেল অষুধেমিজান সাহেব হাই তুলতে তুলতে বললেন, অষুধেকোন কাজ হবে না। আমার দরকার গ্রামের খােলা হাওয়ারাত এগারােটায় বাহাদুরাবাদ এক্সপ্রেস আছেচল বাহাদুরাবাদ এক্সপ্রেসে চলে যাইট্রেনেও অনেকদিন চড়া হয় নাভালই হলআজ লজ্জা ভেঙ্গেই যাবে। 

মামাকে বাসায় রেখে জাহেদ গেল কেয়ার সঙ্গে দেখা করতেপুরাে দুদিন চলে গেছে কেয়ার সঙ্গে দেখা হয়নিগতকাল একবার এসেছিললজ্জায় সিড়ি ভেঙ্গে উঠতে পারেনি। 

জালিল সাহেব দরজা খুলে দিয়ে হাসিমুখে বললেন, আরে দূলামিয়া যে! হা হা। 

হাআসুন, আসুনআপনি আসবেন বুঝতে পারছিলাম। 

মেঘের ছায়া খন্ড-২৭

জাহেদ শুকনো গলায় বলল, কেমন আছেন

আলহামদুলিল্লাহ ( ভাল আছিআপনার ব্যাপারটা কি বলুন দেখি ? বিয়ে করে বৌ ফেলে চলে গেলেননাে পাত্তাব্যাপারটা কি? আমার আটত্রিশ বছরের জীবনে এমন ঘটনা শুনি নি। 

জাহেদ বলল, কেয়া আছে? | আছে, আছে যাবে কোথায়? ঘরেই আছেজ্বর হয়েছে শুনেছিআমি ঠাট্টা করে বলেছি বিরহ জ্বরহা হা হা। 

কেয়াকে একটু খবর দেবেন?: আরে কি মুশকিল! আমি খবর দেব কেন? আপনি হলেন বাড়ির জামাইআপনি সুরসুর করে ভেতরে ঢুকে যানআমি কে? আমি হলাম আউটসাইডার। 

জাহেদকে ভেতরে ঢুকতে হল নাকেয়া বের হয়ে এলতার গায়েরএকশদুইয়ের কাছাকাছিঅসহ্য মাথার যন্ত্রণামনে হচ্ছে মাথা ছিড়ে পড়ে যাবেকিন্তু সে বেশ স্বাভাবিকজাহেদের দিকে তাকিয়ে হাসলনরম গলায় বলল, চল ছাদে যাই

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-২৮

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *