হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-২৯

চুল উড়ছে। 

শুভ্র সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমালােরেহানা কয়েকবার খোজ নিয়ে গেলেনএতক্ষণ তাে শুভ্র ঘুমায় নাজ্বরটর হয়নি তাে? তিনি একবার কপালে হাত দিলেনগা গরম লাগছেসারাদিন রােদে রােদে ঘুরলে জ্বর তাে আসবেইসন্ধ্যায় রেহানা শুভ্রকে ডেকে তুললেনসন্ধ্যাবেলা ঘুমুতে নেইসন্ধ্যায় ঘুমুলে আয়ু কমে যায়

মেঘের ছায়া 

শুভ্র, তাের কি শরীর খারাপ লাগছে, বাবা? নাগা গরমআমার গা ঠিকই আছে মা, তােমার হাত ঠাণ্ডামুখ ধুয়ে আয়চা দিয়েছিআমি আরাে খানিকক্ষণ ঘুমুব, মাকি পাগলের মত কথা বলছিস? তাের রিয়া খালার বাড়ি যাবি না? আমার যেতে ইচ্ছা করছে না, মা। 

কথা বাড়াবি নাউঠে আয়রিয়া গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেউঠ তাে বাবাএই নে তোর চশমা। 

শুভ্র উঠে বসলহাত বাড়িয়ে চশমা নিলরেহানা বললেন, তাের সব কাপড় ইস্ত্রি করে রাখা আছে। পায়জামা পাঞ্জাবীরিয়া বলেছে তােকে যেন পায়জামা পাঞ্জাবী পরানাে হয়। 

মা, আজ না গিয়ে অন্য একদিন যাবখানিকক্ষণ থেকে চলে আসবিরিয়ার নাকি তাের সঙ্গে কি কথা আছেপার্টিফার্টি না তাে মা?” 

মেঘের ছায়া খন্ড-২৯

উহু, পার্টি নাপার্টি হলে রিয়া বলতােহাত ধর শুভ্রআমার হাত ধরে বিছানা থেকে নাম। 

শুভ্র মাহাত ধরে বিছানা থেকে নামল। 

রিয়াদের বাড়ির ড্রয়িংরুমে ঢুকে শুভ্রের চোখ ধাধিয়ে গেলএত আলাে চারদিকে ঝলমল করছে ! শুধু যে আলাে তাই না, খুব হৈচৈও হচ্ছেড্রয়িংরুমটা 

অনেক বড়, তারপরেও মনে হচ্ছে লােকজন গিজ গিজ করছেউঁচু ভলমে সিডি বাজছেযতক্ষণ জেগে থাকে ততক্ষণই সিডি প্লেয়ার বাজতে থাকে। 

শুভ্রকে ঢুকতে দেখে রিয়া ছুটে এলরিয়ার হাতে কাচের মাছ আকৃতির প্লেটপ্লেটভর্তি টুথপিকের মাথায় বসানাে বিচিত্র কোন খাবারপার্টি হলেই রিয়া কোন একটি বিচিত্র খাবার নিজে তৈরি করেআজকের এই খাবারটি তার তৈরিঅতিথিরা কেউ এই খাবারে তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছে নাঅতিরিক্ত লবণের জন্যে মুখে দেয়া যাচ্ছে না। 

রিয়া বলল, আয় শুভ্রশুভ্র আতংকিত গলায় বলল, পার্টি না কি

আরে নাপাটি কোথায় দেখলিকয়েকজনকে শুধু খেতে বলেছিহা কর দেখি, মুখে একটা খাবার দিয়ে দিসল্টেড ড্রাই বীফমেক্সিকান খাবারহান্টার বীফকে লবণে জেরে বানাতে হয়। 

ছােট খালা, তুমি আমার কাছে দাওনিজে খাচ্ছি, খাইয়ে দিতে হবে না। 

মুখে তুলে দিলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে নাদেখি হা করআর শােন, সবার সামনে আমাকে খালা ডাকবি নাআমি অনেক দূরের খালা লতায়পাতায় খালাতাের চেমাত্র দুবছরের বড়। 

কি ডাকব?নাম ধরে ডাকবিমিষ্টি করে বলবি রিয়াকই হা কর। 

শুভ্র হা করলসবাই তাকাচ্ছে তার দিকেখুব অস্বস্তি লাগছেকে যেন একটা কি রসিকতা করলসবাই হাে হাে করে হেসে উঠলরিয়া বলল, আমাকে কেমন লাগছে

মেঘের ছায়া খন্ড-২৯

ভালঠিকমত তাকিয়ে তারপর বল ভালচশমার ভেতর দিয়ে ভাল করে দেখ। 

খালা, আমি এই ঘরে বেশিক্ষণ বসতে পারব নাআমার দম বন্ধ হয়ে আসছে‘ 

ঘরে তােকে বেশিক্ষণ বসতে হবে নাতােকে অন্যঘরে নিয়ে যাচ্ছি একটি মেয়ের সঙ্গে তােকে পরিচয় করিয়ে দেবওর সঙ্গে কথাটথা বলে দেখ মনে ধরে কিনাএক বছরের জন্যে তােকে নাকি বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেমেয়েটাকে যদি মনে ধরে ওকে নিয়ে যাতার আগে আয় তােকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দি। 

রিয়া শুভ্রের হাত ধরে ঘরের মাঝখানে নিয়ে এলরিয়া উঁচু গলায় বলল

এটেনশান প্লীজআমি এই পৃথিবীর সবচেরূপবান ছেলেটির সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিএই ছেলে আমাকে খালা ডাকে যদিও আমি তার খালা নইএই ছেলে তার জীবনে কোন পরীক্ষায় প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নিকোন পরীক্ষায় সেকেন্ড হলে কেমন লাগে সে অভিজ্ঞতা এই ছেলের নেইএর নাম  রিয়ার কথা শেষ হবার আগেই মােটামত এক ভদ্রলােক বললেন, শুভ্র ভাই, এদিকে আসুন, আপনার পায়ের ধূলা দিয়ে যানআমরা কপালে মাখি। 

মেঘের ছায়া খন্ড-২৯

সবাই আবারাে হাে হাে করে হেসে উঠলরিয়া বলল, ফরিদ সাহেব, শুভ্রকে নিয়ে হাসিতামাশা করবেন নাখুবই সেনসিটিভছােটবেলায় কেউ ওকে কিছু বললে দৌড়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে কাঁদতএখনাে হয়ত এরকম করেশুভ্র, তুই কি এখনাে কাঁদিস

শুভ্র বলল, এখন কাঁদি না এখন হাসিশুভ্র, তাহলে হাসতে হাসতে পাশের ঘরে চলে যাঘরে তাের জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছেডিনার রাত দশটার আগে দেয়া হবে নাঘরে কোন রান্না হয়নি খাবার বাইরে থেকে আসবে। 

ফরিদ আনন্দের নিঃশ্বাস ফেলে বলল, বাঁচলামআমরা হান্টার বীফ খেয়ে আতংকের মধ্যে ছিলাম। 

সবাই আবারাে হাসলরিয়ার মুখ হাহািসিপার্টি জমে গেছে

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৩০

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *