চুল উড়ছে।
শুভ্র সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমালাে। রেহানা কয়েকবার খোজ নিয়ে গেলেন। এতক্ষণ তাে শুভ্র ঘুমায় না। জ্বর–টর হয়নি তাে? তিনি একবার কপালে হাত দিলেন। গা গরম লাগছে। সারাদিন রােদে রােদে ঘুরলে জ্বর তাে আসবেই। সন্ধ্যায় রেহানা শুভ্রকে ডেকে তুললেন। সন্ধ্যাবেলা ঘুমুতে নেই। সন্ধ্যায় ঘুমুলে আয়ু কমে যায়।
‘শুভ্র, তাের কি শরীর খারাপ লাগছে, বাবা? ‘না। ‘গা গরম। ‘আমার গা ঠিকই আছে মা, তােমার হাত ঠাণ্ডা। ‘মুখ ধুয়ে আয়। চা দিয়েছি। ‘আমি আরাে খানিকক্ষণ ঘুমুব, মা। “কি পাগলের মত কথা বলছিস? তাের রিয়া খালার বাড়ি যাবি না? ‘আমার যেতে ইচ্ছা করছে না, মা।
‘কথা বাড়াবি না। উঠে আয়। রিয়া গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। উঠ তাে বাবা। এই নে তোর চশমা।
শুভ্র উঠে বসল। হাত বাড়িয়ে চশমা নিল। রেহানা বললেন, তাের সব কাপড় ইস্ত্রি করে রাখা আছে। পায়জামা পাঞ্জাবী। রিয়া বলেছে তােকে যেন পায়জামা পাঞ্জাবী পরানাে হয়।
‘মা, আজ না গিয়ে অন্য একদিন যাব। ‘খানিকক্ষণ থেকে চলে আসবি। রিয়ার নাকি তাের সঙ্গে কি কথা আছে। ‘পার্টি–ফার্টি না তাে মা?”
মেঘের ছায়া খন্ড-২৯
‘উহু, পার্টি না। পার্টি হলে রিয়া বলতাে। হাত ধর শুভ্র। আমার হাত ধরে বিছানা থেকে নাম।
শুভ্র মা‘র হাত ধরে বিছানা থেকে নামল।
রিয়াদের বাড়ির ড্রয়িংরুমে ঢুকে শুভ্রের চোখ ধাধিয়ে গেল। এত আলাে চারদিকে ঝলমল করছে ! শুধু যে আলাে তাই না, খুব হৈচৈও হচ্ছে। ড্রয়িংরুমটা
অনেক বড়, তারপরেও মনে হচ্ছে লােকজন গিজ গিজ করছে। উঁচু ভলমে সিডি বাজছে। যতক্ষণ জেগে থাকে ততক্ষণই সিডি প্লেয়ার বাজতে থাকে।
শুভ্রকে ঢুকতে দেখে রিয়া ছুটে এল। রিয়ার হাতে কাচের মাছ আকৃতির প্লেট। প্লেটভর্তি টুথপিকের মাথায় বসানাে বিচিত্র কোন খাবার। পার্টি হলেই রিয়া কোন একটি বিচিত্র খাবার নিজে তৈরি করে। আজকের এই খাবারটি তার তৈরি। অতিথিরা কেউ এই খাবারে তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছে না। অতিরিক্ত লবণের জন্যে মুখে দেয়া যাচ্ছে না।
রিয়া বলল, আয় শুভ্র। শুভ্র আতংকিত গলায় বলল, পার্টি না কি?
‘আরে না। পাটি কোথায় দেখলি। কয়েকজনকে শুধু খেতে বলেছি। হা কর দেখি, মুখে একটা খাবার দিয়ে দি। সল্টেড ড্রাই বীফ। মেক্সিকান খাবার। হান্টার বীফকে লবণে জেরে বানাতে হয়।
‘ছােট খালা, তুমি আমার কাছে দাও। নিজে খাচ্ছি, খাইয়ে দিতে হবে না।
‘মুখে তুলে দিলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। দেখি হা কর। আর শােন, সবার সামনে আমাকে খালা ডাকবি না। আমি অনেক দূরের খালা – লতায়–পাতায় খালা। তাের চে’ মাত্র দু‘বছরের বড়।
কি ডাকব?” ‘নাম ধরে ডাকবি। মিষ্টি করে বলবি – রিয়া। কই হা কর।
শুভ্র হা করল। সবাই তাকাচ্ছে তার দিকে। খুব অস্বস্তি লাগছে। কে যেন একটা কি রসিকতা করল। সবাই হাে হাে করে হেসে উঠল। রিয়া বলল, আমাকে কেমন লাগছে?
মেঘের ছায়া খন্ড-২৯
‘ভাল। ‘ঠিকমত তাকিয়ে তারপর বল – ভাল। চশমার ভেতর দিয়ে ভাল করে দেখ।
‘খালা, আমি এই ঘরে বেশিক্ষণ বসতে পারব না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।‘
এ ঘরে তােকে বেশিক্ষণ বসতে হবে না। তােকে অন্যঘরে নিয়ে যাচ্ছি – একটি মেয়ের সঙ্গে তােকে পরিচয় করিয়ে দেব। ওর সঙ্গে কথাটথা বলে দেখ মনে ধরে কি–না। এক বছরের জন্যে তােকে নাকি বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটাকে যদি মনে ধরে ওকে নিয়ে যা। তার আগে আয় তােকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দি।
রিয়া শুভ্রের হাত ধরে ঘরের মাঝখানে নিয়ে এল। রিয়া উঁচু গলায় বলল,
এটেনশান প্লীজ। আমি এই পৃথিবীর সবচে’ রূপবান ছেলেটির সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। এই ছেলে আমাকে খালা ডাকে – যদিও আমি তার খালা নই। এই ছেলে তার জীবনে কোন পরীক্ষায় প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি। কোন পরীক্ষায় সেকেন্ড হলে কেমন লাগে সে অভিজ্ঞতা এই ছেলের নেই। এর নাম রিয়ার কথা শেষ হবার আগেই মােটামত এক ভদ্রলােক বললেন, শুভ্র ভাই, এদিকে আসুন, আপনার পায়ের ধূলা দিয়ে যান। আমরা কপালে মাখি।
মেঘের ছায়া খন্ড-২৯
সবাই আবারাে হাে হাে করে হেসে উঠল। রিয়া বলল, ফরিদ সাহেব, শুভ্রকে নিয়ে হাসি–তামাশা করবেন না। ও খুবই সেনসিটিভ। ছােটবেলায় কেউ ওকে কিছু বললে দৌড়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে কাঁদত। এখনাে হয়ত এরকম করে। শুভ্র, তুই কি এখনাে কাঁদিস?
শুভ্র বলল, এখন কাঁদি না – এখন হাসি। ‘শুভ্র, তাহলে হাসতে হাসতে পাশের ঘরে চলে যা। ঐ ঘরে তাের জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছে। ডিনার রাত দশটার আগে দেয়া হবে না। ঘরে কোন রান্না হয়নি – – খাবার বাইরে থেকে আসবে।
ফরিদ আনন্দের নিঃশ্বাস ফেলে বলল, বাঁচলাম। আমরা হান্টার বীফ খেয়ে আতংকের মধ্যে ছিলাম।
সবাই আবারাে হাসল। রিয়ার মুখ হাহািসি। পার্টি জমে গেছে।
Read More