আধঘণ্টা পর বিছানায় যেতে হয়। তিনি আধঘণ্টা পার করার জন্যে অপেক্ষা। করছেন। তার ঘুম এসে গেছে। চোখের পাতা ভারী হয়ে এসেছে। কয়েকবার হাই উঠেছে।
তিনি দেখলেন রেহানা ট্রেতে করে চা নিয়ে শুভ্রের ঘরে ঢুকছে। ইয়াজউদ্দিন সাহেবের ভ্রু কুঞ্চিত হল। দুপুর রাতে সে ছেলেকে চা বানিয়ে খাওয়াচ্ছে কেন? অন্ধ ভালবাসার ফল কখনাে মঙ্গলময় হয় না। এই ব্যপারটা রেহানা কি জানে না? তিনি নানানভাবে নানান ভঙ্গিতে রেহানাকে এটা বােঝানাের চেষ্টা করেছেন।
রেহানা কিছুই বুঝেনি। তাঁর নিজের শরীর ভাল যাচ্ছে না। যে কোন সময় ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যেতে পারে। তখন হাল ধরতে হবে শুভ্রকে। শুভ্রর সেই মানসিক প্রস্তুতি নেই। সে এখনাে শিশু। রেহানা কি সেই শিশুকেই নানানভাবে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছে না?
রেহানা এসে স্বামীর সামনে দাঁড়ালেন, কৈফিয়ত দেবার ভঙ্গিতে বললেন, শুভ্র চা খেতে চাচ্ছিল, কি একটা বই না–কি পড়ে শেষ করবে।
ইয়াজউদ্দিন ঠাণ্ডা গলায় বললেন, চল, ঘুমুতে যাই। ‘তােমার শরীর কি এখন ভাল লাগছে?
‘কাল সকালে একজন ডাক্তার দেখিও।‘ ‘দেখাব।
তাঁরা শােবার ঘরে ঢুকলেন। রেহানা বলল, ফ্যান থাকবে, না বন্ধ করে দেব? জানালা দিয়ে হাওয়া আসছে। ফ্যান বন্ধ করে দি?
‘দাও।
মেঘের ছায়া খন্ড-৩
তারা ঘমুতে গেলেন। ইয়াজউদ্দিন পায়ের উপর পাতলা চাদর টেনে দিলেন। তিনি নিজে এখন খানিকটা বিষন্ন বােধ করছেন। তাঁর শরীর খারাপ করেছিল। বেশ ভালই খারাপ করেছিল। কে জানে হয়ত ছােটখাট একটা স্ট্রোক হয়েছে। তিনি নিজে সে ধাক্কা সামাল দেবার চেষ্টা করেছেন। রেহানাকে বুঝতে দেননি।
তিনি কাউকে বিচলিত করতে চান না। তবু খানিকটা বিচলিত রেহানা হতে পারত। সে তার ছেলেকে বলতে পারত – তাের বাবার শরীরটা ভাল না। বারান্দায় বসে আছে। তুই যা, বাবার সঙ্গে কথা বলে আয়। রেহানা কিছুই বলেনি। বললে শুভ্র বারান্দায় এসে বসত। উদ্বেগ নিয়ে প্রশ্ন করত, বাবা, তােমার কি হয়েছে?
ছেলের সঙ্গে কথা বলতে পারলে তার ভাল লাগতাে। রেহানা তাঁকে সে সুযােগ দেয়নি। ইয়াজউদ্দিন সাহেবের ধারণা, রেহানা তাঁকে ভালমত লক্ষ্য করে না। তাঁর আচার–আচরণ নিয়ে ভাবেও না। যদি ভাবত তাহলে লক্ষ্য করতাে – দ্বিতীয়বার বারান্দায় এসে তিনি মাঝখানের চেয়ারে বসেছেন। কেন বসেছেন? দুপাশে দু‘টি চেয়ার খালি রেখে তিনি কেন বসলেন? উত্তর কি খুব সহজ নয়? তিনি চাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী এবং পুত্র তার দুপাশে বসুক।
মেঘের ছায়া খন্ড-৩
‘রেহানা।
‘শুভ্রর বয়স কত হল ?” ‘সাতাইশ বছর তিন মাস।”
ইয়াজউদ্দিন নিঃশব্দে হাসলেন। ছেলের বয়স বছর এবং মাস হিসেবে রেহানা। জানে। সে কি তার স্বামীর বয়স জানে? তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় – আমার বয়স কত রেহানা? সে কি বলতে পারবে?
রেহানা বললেন, ওর এখন একটা বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হয়? ‘ও কি বিয়ের কথা কিছু বলছে ?
‘না, বলছে না। ওকে বলতে হবে কেন? বিয়ের বয়স তাে হয়েছে। সাতাশ বছর তাে কম না...‘
‘অনেকের জন্যে খুবই কম। সাতাশ বছরেও অনেকে সাত বছর বয়েসী শিশুর মত থাকে।
‘শুভ্রকে নিশ্চয়ই তুমি শিশু ভাব না?”,
ইয়াজউদ্দিন জবাব দিলেন না। বুকের চাপ ব্যথাটা আবার ফিরে এসেছে। একইসঙ্গে চোখ জড়িয়ে আসছে ঘুমে। ফ্যান বন্ধ করে দেয়া ঠিক হয়নি। গরম লাগছে। ভ্যাপসা ধরনের গরম।
রেহানা উৎসুক গলায় বললেন, ঘুমিয়ে পড়েছ? ‘না।
“তােমার কি জাভেদ সাহেবের কথা মনে আছে? পুলিশের এ আই জি ছিলেন – – বিয়ে করেছেন বরিশালে। মনে আছে?”
‘আছে।
Read More