হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৩

আধঘণ্টা পর বিছানায় যেতে হয়তিনি আধঘণ্টা পার করার জন্যে অপেক্ষাকরছেনতার ঘুম এসে গেছেচোখের পাতা ভারী হয়ে এসেছেকয়েকবার হাই উঠেছে

মেঘের ছায়া  

তিনি দেখলেন রেহানা ট্রেতে করে চা নিয়ে শুভ্রের ঘরে ঢুকছেইয়াজউদ্দিন সাহেবের ভ্রু কুঞ্চিত হলদুপুর রাতে সে ছেলেকে চা বানিয়ে খাওয়াচ্ছে কেন? অন্ধ ভালবাসার ফল কখনাে মঙ্গলময় হয় নাএই ব্যপারটা রেহানা কি জানে না? তিনি নানানভাবে নানান ভঙ্গিতে রেহানাকে এটা বােঝানাের চেষ্টা করেছেন

রেহানা কিছুই বুঝেনিতাঁর নিজের শরীর ভাল যাচ্ছে নাযে কোন সময় ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যেতে পারেতখন হাল ধরতে হবে শুভ্রকেশুভ্রর সেই মানসিক প্রস্তুতি নেই। সে এখনাে শিশুরেহানা কি সেই শিশুকেই নানানভাবে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছে না

রেহানা এসে স্বামীর সামনে দাঁড়ালেন, কৈফিয়ত দেবার ভঙ্গিতে বললেন, শুভ্র চা খেতে চাচ্ছিল, কি একটা বই নাকি পড়ে শেষ করবে। 

ইয়াজউদ্দিন ঠাণ্ডা গলায় বললেন, চল, ঘুমুতে যাইতােমার শরীর কি এখন ভাল লাগছে

কাল সকালে একজন ডাক্তার দেখিওদেখাব। 

তাঁরা শােবার ঘরে ঢুকলেন। রেহানা বলল, ফ্যান থাকবে, না বন্ধ করে দেব? জানালা দিয়ে হাওয়া আসছেফ্যান বন্ধ করে দি

দাও। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৩

তারা ঘমুতে গেলেনইয়াজউদ্দিন পায়ের উপর পাতলা চাদর টেনে দিলেনতিনি নিজে এখন খানিকটা বিষন্ন বােধ করছেনতাঁর শরীর খারাপ করেছিলবেশ ভালই খারাপ করেছিলকে জানে হয়ত ছােটখাট একটা স্ট্রোক হয়েছেতিনি নিজে সে ধাক্কা সামাল দেবার চেষ্টা করেছেনরেহানাকে বুঝতে দেননি

তিনি কাউকে বিচলিত করতে চান নাতবু খানিকটা বিচলিত রেহানা হতে পারতসে তার ছেলেকে বলতে পারত তাের বাবার শরীরটা ভাল নাবারান্দায় বসে আছেতুই যা, বাবার সঙ্গে কথা বলে আয়রেহানা কিছুই বলেনিবললে শুভ্র বারান্দায় এসে বসত। উদ্বেগ নিয়ে প্রশ্ন করত, বাবা, তােমার কি হয়েছে

ছেলের সঙ্গে কথা বলতে পারলে তার ভাল লাগতােরেহানা তাঁকে সে সুযােগ দেয়নিইয়াজউদ্দিন সাহেবের ধারণা, রেহানা তাঁকে ভালমত লক্ষ্য করে নাতাঁর আচারআচরণ নিয়ে ভাবেও নাযদি ভাবত তাহলে লক্ষ্য করতাে দ্বিতীয়বার বারান্দায় এসে তিনি মাঝখানের চেয়ারে বসেছেনকেন বসেছেন? দুপাশে দুটি চেয়ার খালি রেখে তিনি কেন বসলেন? উত্তর কি খুব সহজ নয়? তিনি চাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী এবং পুত্র তার দুপাশে বসুক। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৩

রেহানা। 

শুভ্রর বয়স কত হল ?সাতাইশ বছর তিন মাস” 

ইয়াজউদ্দিন নিঃশব্দে হাসলেনছেলের বয়স বছর এবং মাস হিসেবে রেহানাজানেসে কি তার স্বামীর বয়স জানে? তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আমার বয়স কত রেহানা? সে কি বলতে পারবে

রেহানা বললেন, ওর এখন একটা বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হয়? কি বিয়ের কথা কিছু বলছে

না, বলছে নাওকে বলতে হবে কেন? বিয়ের বয়স তাে হয়েছেসাতাশ বছর তাে কম না...‘ 

অনেকের জন্যে খুবই কমসাতাশ বছরেও অনেকে সাত বছর বয়েসী শিশুর মত থাকে

শুভ্রকে নিশ্চয়ই তুমি শিশু ভাব না?

ইয়াজউদ্দিন জবাব দিলেন নাবুকের চাপ ব্যথাটা আবার ফিরে এসেছেএকইসঙ্গে চোখ জড়িয়ে আসছে ঘুমেফ্যান বন্ধ করে দেয়া ঠিক হয়নিগরম লাগছেভ্যাপসা ধরনের গরম। 

রেহানা উৎসুক গলায় বললেন, ঘুমিয়ে পড়েছ? না। 

তােমার কি জাভেদ সাহেবের কথা মনে আছে? পুলিশের আই জি ছিলেন বিয়ে করেছেন বরিশালেমনে আছে?” 

আছে

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৪

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *