এক একবার এমন হয় – পার্টি জমতে চায় না। হৈচৈ হয়, খাওয়া–দাওয়া সবই হয়, তারপরেও পার্টিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় না। পার্টি শেষ হলে খুব ক্লান্ত লাগে। আবার কোন কোন দিন হুট করে পার্টি জমে যায়। কেউ পর্টি ছেড়ে উঠতে চায় না। সামান্যতেই সবাই হেসে গড়াগড়ি করে। রিয়া আজ মনে–প্রাণে চাচ্ছে পার্টি জমে উঠুক।
খুব ভাল করে জমুক। রাত একটা বেজে যাবে। কেউ বুঝতেও পারবে না এত রাত হয়েছে । কেউ আগে আগে চলে যেতে চাইবে না। কেউ বলবে না – ‘সরি, বেশিক্ষণ থাকতে পারব না, আমার জরুরি কাজ আছে। আমাকে বিদায় দিতে হবে। খুব এনজয়। করেছি। রিয়াকেই বলতে হবে – এটেনশান প্লীজ, দয়া করে আপনারা গাত্রোত্থান করুন। রাত একটা বেজে গেছে। তবে যাবার আগে একটি গুড নিউজ শুনে যান। গুড নিউজটি শুভ্র প্রসঙ্গে ....
হ্যা, রিয়া বিদেশী গল্প–উপন্যাসের মত ব্যাপারটা করতে চায়। পার্টিতে এনগেজমেন্ট ডিক্লারেশন করার মত ঘটনা ঘটাতে চায়। ইয়াজউদ্দিন সাহেব রিয়াকে অনুমতি দিয়েছেন। মেয়েটি সম্পর্কে আসল জায়গা থেকে গ্রীন সিগন্যাল পাওয়া গেছে। শুভ্র কি করবে না করবে তা নির্ভর করছে ইয়াজউদ্দিন সাহেবের উপর।
মেঘের ছায়া খন্ড-৩০
শুভ্রের উপর না। তবে ইয়াজউদ্দিন অত্যন্ত বুদ্ধিমান। শুভ্রকে তিনি ব্যাপারটা বুঝতে দেবেন না। শুভ্র জানে না যে তার বাবা মেয়েটির সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছেন। মেয়েটির পরিবার সম্পর্কে খোঁজ–খবর নেয়া হয়েছে। ইয়াজউদ্দিন সাহেবের কথামতই আজকে এই পার্টির আয়ােজন করা হয়েছে। বাইরে থেকে যে খাবার আসার কথা তার ব্যবস্থাও ইয়াজউদ্দিন সাহেবের করা।
রিয়া শুভ্রকে ড্রয়িংরুমের লাগােয়া একটা ঘরে নিয়ে গেল। ছেলেমানুষি খুশিখুশি গলায় বলল, শুভ্র, সােফায় যে তরুণীটি বসে আছে তুই তার সঙ্গে কথাটথা বল। তাকে আনা হয়েছে তােকে কোম্পানী দেয়ার জন্যে। পার্টি তুই সহ্য করতে পারিসনা, আমি জানি – তাের জন্যে এক্সক্লসিভ ব্যবস্থা। আমার মেলা কাজ, আমি যাচ্ছি | এক ফাকে এসে তােদের কফি দিয়ে যাব।
রিয়া ঝড়ের মত বের হয়ে গেল। মেয়েটি সহজ গলায় বলল, বসুন। দাড়িয়ে আছেন কেন। আমার নাম আনুশকা। ডাক নাম নীতু।
শুভ্র অবাক হয়ে বলল, আশ্চর্য! আপনার নাম নীতু!
নীতু বিস্মিত হয়ে বলল, এত অবাক হচ্ছেন কেন? নীতু নামটা কি আপনার কাছে খুব অপরিচিত লাগছে?
‘না, অপরিচিত লাগছে না। আমার এক পরিচিত মেয়ের নাম নীতু। আমি আমার জীবনে এত ভাল মেয়ে দেখিনি।
ভাল মেয়ে বলতে কি বুঝাচ্ছেন? ভাল ছাত্রী ? ‘সবকিছু নিয়েই ভাল। কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের কাছে গেলে মনে পবিত্র ভাব হয় । নীতু আপা তাদের মধ্যে একজন।
মেঘের ছায়া খন্ড-৩০
“উনি আপনার আপা হন ? ‘ছি। আমার বন্ধুর বড় বােন।। ‘আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন। বসুন, বসে বসে আপনার নীতু আপার গল্প
শুভ্র বসল। সে হঠাৎ লক্ষ্য করল আনুশকার সঙ্গে গল্প করতে তার ভাল লাগছে। ভাল লাগার অনেক কারণের মধ্যে একটি হয়ত এই যে মেয়েটি খুব আগ্রহ নিয়ে শুভ্রের গল্প শুনছে।
রিয়া এক ফাঁকে এসে দুজনের হাতে দুশ্লাস কোক ধরিয়ে দিয়ে কানে কানে শুভ্রকে বলল, মেয়েটা দারুণ না? পছন্দ হচ্ছে?
শুভ্র হাসল। রিয়া বলল, ভাল কথা, খুব ভাল এক বােতল শ্যাম্পেন আছে।
বােতলটা নিউ ইয়ার্স ডেতে খােলা হবে ভেবেছিলাম – তাের খালু খুলে ফেলেছে। শুভ্র, তুই কি এক চুমুক খেয়ে দেখবি?
‘আচ্ছা বাবা, যা খেতে হবে না। তুই নীতুর সঙ্গে গল্প কর। গল্প করতে করতে যদি তাের ইচ্ছা করে নীতুর হাত ধরতে – ধরতে পারিস। নীতু কিছুই মনে করবে না। তাই না নীতু?”
নীতু হাসতে হাসতে বলল, আমি কিছু মনে করব না। কিন্তু শুভ্র কখনােই আমার হাত ধরতে চাইবে না।
রিয়া বলল, কে বলেছে চাইবে না? খুব চাইবে। | ‘উঁহু। পুরুষ মানুষ আমি খুব ভাল চিনি। ওরা তাদের নিজেদের যতটা চেনে আমি তারচেয়েও বেশি চিনি। শুভ্র সাহেব নীতু নামের একজনের হাত ঠিকই ধরতে চাচ্ছেন, সেই একজন আমি নই।”
শুভ্র অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকাল। আশ্চর্য! মেয়েটি ঠিক কথাই বলেছে। এই নীতুর দিকে তাকিয়ে সে নীতু আপার কথাই ভাবছিল। কি আশ্চর্য কথা ! তার হাত থেকে ছলকে খানিকটা কোক সাদা পাঞ্জাবীতে পড়ে গেল। নীতু শব্দ করে হেসে উঠল।
Read More