হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৩০

এক একবার এমন হয় পার্টি জমতে চায় নাহৈচৈ হয়, খাওয়াদাওয়া সবই হয়, তারপরেও পার্টিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় না। পার্টি শেষ হলে খুব ক্লান্ত লাগেআবার কোন কোন দিন হুট করে পার্টি জমে যায়কেউ পর্টি ছেড়ে উঠতে চায় নাসামান্যতেই সবাই হেসে গড়াগড়ি করেরিয়া আজ মনেপ্রাণে চাচ্ছে পার্টি জমে উঠুক

মেঘের ছায়া

খুব ভাল করে জমুকরাত একটা বেজে যাবেকেউ বুঝতেও পারবে না এত রাত হয়েছে কেউ আগে আগে চলে যেতে চাইবে নাকেউ বলবে না সরি, বেশিক্ষণ থাকতে পারব না, আমার জরুরি কাজ আছেআমাকে বিদায় দিতে হবেখুব এনজয়করেছিরিয়াকেই বলতে হবে এটেনশান প্লীজ, দয়া করে আপনারা গাত্রোত্থান করুনরাত একটা বেজে গেছেতবে যাবার আগে একটি গুড নিউজ শুনে যানগুড নিউজটি শুভ্র প্রসঙ্গে ...

হ্যা, রিয়া বিদেশী গল্পউপন্যাসের মত ব্যাপারটা করতে চায়পার্টিতে এনগেজমেন্ট ডিক্লারেশন করার মত ঘটনা ঘটাতে চায়ইয়াজউদ্দিন সাহেব রিয়াকে অনুমতি দিয়েছেনমেয়েটি সম্পর্কে আসল জায়গা থেকে গ্রীন সিগন্যাল পাওয়া গেছেশুভ্র কি করবে না করবে তা নির্ভর করছে ইয়াজউদ্দিন সাহেবের উপর

মেঘের ছায়া খন্ড-৩০

শুভ্রের উপর নাতবে ইয়াজউদ্দিন অত্যন্ত বুদ্ধিমানশুভ্রকে তিনি ব্যাপারটা বুঝতে দেবেন নাশুভ্র জানে না যে তার বাবা মেয়েটির সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছেনমেয়েটির পরিবার সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হয়েছেইয়াজউদ্দিন সাহেবের কথামতই আজকে এই পার্টির আয়ােজন করা হয়েছেবাইরে থেকে যে খাবার আসার কথা তার ব্যবস্থাও ইয়াজউদ্দিন সাহেবের করা। 

রিয়া শুভ্রকে ড্রয়িংরুমের লাগােয়া একটা ঘরে নিয়ে গেলছেলেমানুষি খুশিখুশি গলায় বলল, শুভ্র, সােফায় যে তরুণীটি বসে আছে তুই তার সঙ্গে কথাটথা বলতাকে আনা হয়েছে তােকে কোম্পানী দেয়ার জন্যেপার্টি তুই সহ্য করতে পারিসনা, আমি জানি তাের জন্যে এক্সক্লসিভ ব্যবস্থাআমার মেলা কাজ, আমি যাচ্ছি | এক ফাকে এসে তােদের কফি দিয়ে যাব। 

রিয়া ঝড়ের মত বের হয়ে গেলমেয়েটি সহজ গলায় বলল, বসুনদাড়িয়ে আছেন কেনআমার নাম আনুশকাডাক নাম নীতু। 

শুভ্র অবাক হয়ে বলল, আশ্চর্য! আপনার নাম নীতু

নীতু বিস্মিত হয়ে বলল, এত অবাক হচ্ছেন কেন? নীতু নামটা কি আপনার কাছে খুব অপরিচিত লাগছে

না, অপরিচিত লাগছে নাআমার এক পরিচিত মেয়ের নাম নীতুআমি আমার জীবনে এত ভাল মেয়ে দেখিনি। 

ভাল মেয়ে বলতে কি বুঝাচ্ছেন? ভাল ছাত্রী ? সবকিছু নিয়েই ভালকিছু কিছু মানুষ আছে যাদের কাছে গেলে মনে পবিত্র ভাব হয় নীতু আপা তাদের মধ্যে একজন। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৩০

উনি আপনার আপা হন ? ছিআমার বন্ধুর বড় বােনআপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেনবসুন, বসে বসে আপনার নীতু আপার গল্প 

শুভ্র বসলসে হঠাৎ লক্ষ্য করল আনুশকার সঙ্গে গল্প করতে তার ভাল লাগছেভাল লাগার অনেক কারণের মধ্যে একটি হয়ত এই যে মেয়েটি খুব আগ্রহ নিয়ে শুভ্রের গল্প শুনছে। 

রিয়া এক ফাঁকে এসে দুজনের হাতে দুশ্লাস কোক ধরিয়ে দিয়ে কানে কানে শুভ্রকে বলল, মেয়েটা দারুণ না? পছন্দ হচ্ছে

শুভ্র হাসলরিয়া বলল, ভাল কথা, খুব ভাল এক বােতল শ্যাম্পেন আছে। 

বােতলটা নিউ ইয়ার্স ডেতে খােলা হবে ভেবেছিলাম তাের খালু খুলে ফেলেছেশুভ্র, তুই কি এক চুমুক খেয়ে দেখবি

আচ্ছা বাবা, যা খেতে হবে নাতুই নীতুর সঙ্গে গল্প করগল্প করতে করতে যদি তাের ইচ্ছা করে নীতুর হাত ধরতে ধরতে পারিসনীতু কিছুই মনে করবে নাতাই না নীতু?” 

নীতু হাসতে হাসতে বলল, আমি কিছু মনে করব নাকিন্তু শুভ্র কখনােই আমার হাত ধরতে চাইবে না। 

রিয়া বলল, কে বলেছে চাইবে না? খুব চাইবে| উঁহুপুরুষ মানুষ আমি খুব ভাল চিনিওরা তাদের নিজেদের যতটা চেনে আমি তারচেয়েও বেশি চিনিশুভ্র সাহেব নীতু নামের একজনের হাত ঠিকই ধরতে চাচ্ছেন, সেই একজন আমি নই” 

শুভ্র অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকালআশ্চর্য! মেয়েটি ঠিক কথাই বলেছেএই নীতুর দিকে তাকিয়ে সে নীতু আপার কথাই ভাবছিলকি আশ্চর্য কথা ! তার হাত থেকে ছলকে খানিকটা কোক সাদা পাঞ্জাবীতে পড়ে গেলনীতু শব্দ করে হেসে উঠল

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৩১

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *