হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৩১

ফুপিয়ে ফুপিয়ে কে যেন কঁদছে। 

মাহিন সাহেব কান্নার শব্দ শুনছেনসব শব্দ তাঁর চেনাএই কান্নার শব্দ অপরিচিতঅবশ্যি তিনি জানেন কে কঁদছেবাসায় তিনি ছাড়া আর একজন মানুষই বাস করে নীতুনীতুই কাঁদছেনীতু ছাড়া আর কে হবে? কিন্তু এরকমভাবে কাদছে কেন? মাহিন সাহেব ডাকলেন, নীতু! নীতু !

মেঘের ছায়া  

নীতু দরজা ধরে দাঁড়ালমাহিন সাহেব বললেন, কি করছিলি? রুটি বানাচ্ছিলামতুমি রুটি খাবে রাতেকাঁদছিলি নাকি?” 

‘না, কাদছিলাম নাকথায় কথায় আমি কাঁদি নাতাছাড়া কাদার মত কিছু হয়নি। 

আমি ভুল শুনলাম

হ্যা, তুমি ভুল শুনেছঅনেক দিন থেকেই তুমি ভুল চিন্তা করছিলেএখন তুমি ভুল শােনাও শুরু করেছ। 

আয় আমার কাছেবােসআমার রুটি বানাতে হবে, বাবা। 

রুটি পরে বানালেও হবেনা বানালেও অসুবিধা নেইরাতে আমি কিছু খাব নাতুই আমার কাছে এসে বােস। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৩১

নীতু বাবার কাছে বসলমাহিন সাহেব বললেন, মাঝে মাঝে আমার ইচ্ছা করে তাের মাথায় হাত রেখে আদর করিইচ্ছা করলেও পারি নামহাশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা আমার সেই অধিকার হরণ করেছেন। 

নীতু বলল, তুমি কি কোন দীর্ঘ বক্তৃতা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছ, বাবা? দীর্ঘ বক্তৃতা শােনার ইচ্ছা আমার নেইছােটবেলা থেকে তােমার দীর্ঘ বক্তৃতা এত শুনেছি যে বক্তৃতা ব্যাপারটা থেকে আমার মন উঠে গেছে। 

তাও আমি জানিবক্তৃতা দেয়া আমি বন্ধ করে দিয়েছিএখন আমি আমার সব কথা শুভ্রজন্যে জমা করে রাখিসে এলে তাকে বলি। 

ভালকথা শােনাবার একজন কেউ আছেতাের নেই

না, আমার নেইআমার কথা শােনাবার কেউ নেই। 

মাহিন সাহেব গলার স্বর তীক্ষ্ণ করে বললেন, যে ছেলেটিকে তুই বিয়ে করতে যাচ্ছিস সে তাের কথা শুনে না

তাকে কিছু বলতে ইচ্ছা করে নাসবাইকে সবকিছু বলা যায় নাআমি এখন যাই তােমার খাবার রেডি করি। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৩১

‘কিছু রেডি করতে হবে নাআমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিছু খাব নাসিদ্ধান্ত কখন নিলে? ‘গতকাল নিয়েছিআজ তা কার্যকর করতে যাচ্ছিতার মানে এই দাঁড়াচ্ছে যে তুমি খাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছ?হঁ্যাকেন?” 

আমার পক্ষে একা একা বাস করা সম্ভব নাআমি একজন পরজীবীরাস্তায় ভিক্ষা করে জীবনযাপন করব তাও সম্ভব নাঅবাস্তব পরিকল্পনা। 

না খেয়ে থাকার পরিকল্পনা বাস্তব ? এটি অবাস্তব, তবে আমি কোন বিকল্প পাচ্ছি না।” 

না খেয়ে না খেয়ে তুমি মারা যাবে এটিই কি তােমার পরিকল্পনা?হ্যাতবে মৌলিক পরিকল্পনা নাআমার আগেও একজন তা করে গেছেনতার নাম লিয়াওসিন চৈনিক কবিতিনি অবশ্যি করে গেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণেতিনি মৃত্যু কি, মৃত্যু কিভাবে মানুষকে গ্রাস করে তা জানার জন্য উপবাস শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগুতে থাকেনতুই কি শুনতে চাস তাঁর অভিজ্ঞতার কথা

তাের শুনতে ভাল লাগবেমৃত্যুর কাছাকাছি পোছে যাবার সময় তিনি বেশকিছু ত্রিপদী কাব্য রচনা করেনতার আক্ষরিক অনুবাদ ইংরেজিতে করা হয়েছেইংরেজি থেকে আমি কিছু কিছু বাংলা করেছিলামশুনবি?” 

না, শুনব নাআচ্ছা একটা শােন – 

দিন হল রাত্রি, এবং রাত্রি হল দিন মাথার ভেতর উঠল বেজে এক সহস্র বীণ” 

মেঘের ছায়া খন্ড-৩১

নীতু উঠে চলে গেলমাহিন সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেনতিনি তার পরিকল্পনায় মােটামুটি স্থির খাওয়া বন্ধএই ভাবেই তিনি এখন মৃত্যুর দিকে এগুবেনসবাইকে মুক্তি দিয়ে যাবেনকাউকে আনন্দ দেবার ক্ষমতা এখন তাঁর নেইকিন্তু মুক্তি দেবার ক্ষমতা তার অবশ্যই আছেআবারাে কান্নার শব্দ শুনছেনরান্নাঘর থেকে কান্নার শব্দ আসছেনীতুই কাঁদছে। 

নীতু! নীতু! নীতু ঘরে ঢুকল নারান্নাঘর থেকেই বলল, কি ? ‘তুই কি শুভ্রকে একটু খবর দিতে পারবি? ওর সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছেখুব জরুরি। 

খবর দেবআজ খবর দিবি?হ্যা, আজই দেবতাের মাকে খবর দিতে পারবি? তাের মাসঙ্গেও আমার কথা বলা দরকার। 

মাকে খবর দেয়া যাবে নামা ঢাকায় নেইরাজশাহী গিয়েছেনছােট খালার মেয়ের বিয়ে

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৩২

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *