হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৩৩

চোখের ডাক্তার প্রফেসর মনজুরে এলাহী শুভ্রর দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললেন, কি খবর আমাদের শুভ্র বাবুর

মনজুরে এলাহী শুভ্রচোখ ওর এগারাে বছর বয়স থেকে দেখে আসছেনতখনাে তিনি শুভ্র বাবু ডাকতেন এখনাে ডাকেন

মেঘের ছায়া   

শুভ্র বলল, চাচা, আমি ভাল আছিতােমার চোখ কেমন আছে?বুঝতে পারছি নামনে হয় ভালই আছেকোন রকম সমস্যা হয়

হঠাৎ আলাে বেড়ে যায় বা কমে যায়, এমন কি হয় ? হ্যা হয়। 

আচ্ছা বস দেখি এই চেয়ারেরিলাক্সড হয়ে বসচশমা খুলে ফেলআমি এখন তােমার চোখে নানান রঙের আলাে ফেলবতুমি রঙগুলি বলার চেষ্টা করবে। 

আচ্ছা। 

কোন আলাে ফেললে যদি এমন হয় যে চিনচিনে ব্যথা বােধ করছ বা অস্বস্তি বােধ করছ, তাও বলবে” 

জি আচ্ছা। 

আলাে ফেলার পর্ব অনেকক্ষণ চললডাক্তার সাহেব বললেন, শুভ্র, এখন আমি তোমার দুচোখে দুফোটা অষুধ দেবএট্রোপিন ড্রপএটা একধরনের এলকালয়েডএই অষুধ তােমার চোখের মণি ডাইলেট করে দেবে। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৩৩

শুভ্র বলল, আপনার যা ইচ্ছা করুন ডাক্তার চাচাআমাকে কিছু বলার দরকার নেইশুধু পরীক্ষা শেষ হবার পর বলবেন আমি অন্ধ হয়ে যাচ্ছি কি যাচ্ছি না। 

বােকার মত কথা বলাে না, শুভ্রঅন্ধ হবে কেন?” 

আমার চোখ দ্রুত খারাপ হচ্ছে, ডাক্তার চাচাএই জন্যেই প্রশ্ন করছিযদি সত্যি অন্ধ হয়ে যাই আগের থেকে জানতে চাইআগে থেকে জানা থাকলে আমার সুবিধা। 

কি সুবিধা ?সেই ভাবে ব্যবস্থা করব। 

মনজুরে এলাহী সাহেব বললেন তােমার চোখ দ্রুত খারাপ হচ্ছে এটা সত্যিরেটিনা থেকে যেসব অপটিক নার্ভ ব্রেইনে সিগনাল নিয়ে যাচ্ছে তারা দুর্বল হয়ে পড়েছেতবে প্রসেসটা থামানাে হয়েছে। এর আগে তােমার চোখ যতটা খারাপ ছিল এখনাে ততটাই আছেতার চেয়ে খারাপ হয় নিএটা খুবই আশার কথাডিজেনারেশন প্রসেসকে থামানাে গেছে। 

থ্যাংক ইউ, চাচা। 

তুমি সব সময় আনন্দের ভেতর থাকতে চেষ্টা করবেমনে আনন্দ থাকলে শরীর ভাল থাকেশরীরের প্রাণবিন্দু হল মনআমরা ডাক্তাররা বলি মস্তিষ্ককিন্তু আমরা নিশ্চিত না। 

ইয়াজউদ্দিন সাহেব ছেলেকে নিয়ে ফিরছেনদুজনে বসেছেন পেছনের সীটেইয়াজউদ্দিন সাহেব এক হাতে শুভ্রের হাত ধরে আছেনসাধারণত তিনি এমন করেন নাকিছু দূরত্ব ছেলের সঙ্গে তাঁর থাকেআজ কোন দূরত্ব অনুভব করছেন। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৩৩

জিদিন রিয়ার পার্টি তােমার কেমন লাগল?ভাল লেগেছেপার্টি তাে তােমার সচরাচর ভাল লাগে নাপার্টি ভাল লাগল কেন?মূল হৈচৈএর সঙ্গে ছিলাম নাআলাদা ছিলামনীতুর সঙ্গে কথা হয়েছেহঁ্যা, হয়েছেমেয়েটিকে কি তােমার পছন্দ হয়েছে?হঁ্যা, হয়েছেমেয়েটির কোন দিক তােমার সবচেভাল লেগেছে

বুদ্ধিদারুণ বুদ্ধি। 

আমার নিজেরাে মেয়েটিকে দারুণ পছন্দতবে বুদ্ধির জন্যে নয়আমার কাছে নীতুর বুদ্ধি এমন কিছু বেশি মনে হয় নিআমার যা ভাল লেগেছে তা হল মেয়েটি আশেপাশের মানুষকে বুঝতে চেষ্টা করেবেশির ভাগ মানুষই যা করে নাঅথচ আশেপাশের মানুষকে বােঝার চেষ্টা খুব জরুরি। 

সবার জন্যেই কি জরুরি

সবার জন্যে জরুরি নয় অবশ্যকারাে কারাে জন্যে জরুরিতােমার জন্যে খুব জরুরিযে তােমার স্ত্রী হবে তার জন্যে আরো জরুরিকারণ বিশাল কর্মকাণ্ড তােমাকে এবং তোমার স্ত্রীকে পরিচালনা করতে হবেআমার অবসর নেবার সময় হয়ে এসেছেআমার শরীর ভাল নাআমি বিশ্রাম নেবতবে বিশ্রাম নেবার আগে দেখে যেতে চাই সব গুছিয়ে ফেলেছি

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৩৪

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *