চোখের ডাক্তার প্রফেসর মনজুরে এলাহী শুভ্রর দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললেন, কি খবর আমাদের শুভ্র বাবুর ?
মনজুরে এলাহী শুভ্র’র চোখ ওর এগারাে বছর বয়স থেকে দেখে আসছেন। তখনাে তিনি শুভ্র বাবু ডাকতেন – এখনাে ডাকেন।
শুভ্র বলল, চাচা, আমি ভাল আছি। ‘তােমার চোখ কেমন আছে?” ‘বুঝতে পারছি না। মনে হয় ভালই আছে। ‘কোন রকম সমস্যা হয় ?
‘হঠাৎ আলাে বেড়ে যায় বা কমে যায়, এমন কি হয় ? ‘হ্যা হয়।
‘আচ্ছা বস দেখি এই চেয়ারে। রিলাক্সড হয়ে বস। চশমা খুলে ফেল। আমি এখন তােমার চোখে নানান রঙের আলাে ফেলব। তুমি রঙগুলি বলার চেষ্টা করবে।
‘আচ্ছা।
‘কোন আলাে ফেললে যদি এমন হয় যে চিনচিনে ব্যথা বােধ করছ বা অস্বস্তি বােধ করছ, তাও বলবে।”
‘জি আচ্ছা।
আলাে ফেলার পর্ব অনেকক্ষণ চলল। ডাক্তার সাহেব বললেন, শুভ্র, এখন আমি তোমার দু‘চোখে দু‘ফোটা অষুধ দেব। এট্রোপিন ড্রপ। এটা একধরনের এলকালয়েড। এই অষুধ তােমার চোখের মণি ডাইলেট করে দেবে।
মেঘের ছায়া খন্ড-৩৩
শুভ্র বলল, আপনার যা ইচ্ছা করুন ডাক্তার চাচা। আমাকে কিছু বলার দরকার নেই। শুধু পরীক্ষা শেষ হবার পর বলবেন – আমি অন্ধ হয়ে যাচ্ছি কি যাচ্ছি না।
‘বােকার মত কথা বলাে না, শুভ্র। অন্ধ হবে কেন?”
‘আমার চোখ দ্রুত খারাপ হচ্ছে, ডাক্তার চাচা। এই জন্যেই প্রশ্ন করছি। যদি সত্যি অন্ধ হয়ে যাই – আগের থেকে জানতে চাই। আগে থেকে জানা থাকলে আমার সুবিধা।
কি সুবিধা ?” ‘সেই ভাবে ব্যবস্থা করব।
মনজুরে এলাহী সাহেব বললেন – তােমার চোখ দ্রুত খারাপ হচ্ছে এটা সত্যি। রেটিনা থেকে যেসব অপটিক নার্ভ ব্রেইনে সিগনাল নিয়ে যাচ্ছে তারা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে প্রসেসটা থামানাে হয়েছে। এর আগে তােমার চোখ যতটা খারাপ ছিল এখনাে ততটাই আছে। তার চেয়ে খারাপ হয় নি। এটা খুবই আশার কথা। ডিজেনারেশন প্রসেসকে থামানাে গেছে।
“থ্যাংক ইউ, চাচা।।
‘তুমি সব সময় আনন্দের ভেতর থাকতে চেষ্টা করবে। মনে আনন্দ থাকলে শরীর ভাল থাকে। শরীরের প্রাণবিন্দু হল মন। আমরা ডাক্তাররা বলি মস্তিষ্ক। কিন্তু আমরা নিশ্চিত না।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব ছেলেকে নিয়ে ফিরছেন। দুজনে বসেছেন পেছনের সীটে। ইয়াজউদ্দিন সাহেব এক হাতে শুভ্রের হাত ধরে আছেন। সাধারণত তিনি এমন করেন না। কিছু দূরত্ব ছেলের সঙ্গে তাঁর থাকে। আজ কোন দূরত্ব অনুভব করছেন।
মেঘের ছায়া খন্ড-৩৩
‘জি। ‘ঐ দিন রিয়ার পার্টি তােমার কেমন লাগল?” ‘ভাল লেগেছে। ‘পার্টি তাে তােমার সচরাচর ভাল লাগে না। ঐ পার্টি ভাল লাগল কেন?” ‘মূল হৈচৈ–এর সঙ্গে ছিলাম না। আলাদা ছিলাম। ‘নীতুর সঙ্গে কথা হয়েছে। ‘হঁ্যা, হয়েছে। ‘মেয়েটিকে কি তােমার পছন্দ হয়েছে?” ‘হঁ্যা, হয়েছে। ‘ঐ মেয়েটির কোন দিক তােমার সবচে’ ভাল লেগেছে?
‘বুদ্ধি। দারুণ বুদ্ধি।
‘আমার নিজেরাে মেয়েটিকে দারুণ পছন্দ। তবে বুদ্ধির জন্যে নয়। আমার কাছে নীতুর বুদ্ধি এমন কিছু বেশি মনে হয় নি। আমার যা ভাল লেগেছে তা হল – মেয়েটি আশেপাশের মানুষকে বুঝতে চেষ্টা করে। বেশির ভাগ মানুষই যা করে না। অথচ আশেপাশের মানুষকে বােঝার চেষ্টা খুব জরুরি।
‘সবার জন্যেই কি জরুরি?
‘সবার জন্যে জরুরি নয় অবশ্য। কারাে কারাে জন্যে জরুরি। তােমার জন্যে খুব জরুরি। যে তােমার স্ত্রী হবে তার জন্যে আরো জরুরি। কারণ বিশাল কর্মকাণ্ড তােমাকে এবং তোমার স্ত্রীকে পরিচালনা করতে হবে। আমার অবসর নেবার সময় হয়ে এসেছে। আমার শরীর ভাল না। আমি বিশ্রাম নেব। তবে বিশ্রাম নেবার আগে দেখে যেতে চাই – সব গুছিয়ে ফেলেছি।
Read More