হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৩৪

শুভ্র বলল, বাবা, তুমি কি চাও যে আমি নীতু মেয়েটিকে বিয়ে করি?

মেঘের ছায়া

হ্যা, আমি চাইতােমার পছন্দের কেউ যদি থাকতাে আমি বলতাম নাতােমার পছন্দের কেউ নেইতােমাকে ব্যাপারে অনেক বার জিজ্ঞেস করা হয়েছেতুমি প্রতিবারই না বলেছ‘ 

শুভ্র বলল, আমি ভুল বলেছি, বাবাআমার পছন্দের একজন আছেইয়াজউদ্দিন সাহেব হতভম্ভ হয়ে বললেন, তার নাম জানতে পারি ? ‘া পারনীতু আপাসাবেরের বােনশুভ্র, তুমি আমার সঙ্গে কোন হেঁয়ালি করছ না তােনা, হেঁয়ালী করছি নামেয়েটিকে তুমি আপা ডাক

আমি যতদূর জানি মেয়েটির আগে একবার বিয়ে হয়েছিলসে বিয়ে টিকে নি। 

তুমিই ঠিকই জান, বাবাতােমার ইনফরমেশন কখনাে ভুল হয় না। 

মেয়েটির আরেকটি ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিকঠাক হয়ে আছে এও বােধহয় সত্য। 

হ্যাতুমি কি তােমার অবেগের কথা মেয়েটিকে বলেছ?না, এখনাে বলিনিতবে বলবমেয়েটি বয়সে তােমার চেয়ে বড় ?” 

মেঘের ছায়া খন্ড-৩৪

জ্বি বাবা, বড়বছর চারেকের বড়সেটা কি কোন বড় সমস্যা? চল্লিশ বছরের পুরুষ তাে কুড়ি বছরের মেয়ে বিয়ে করছে। 

শুভ্র, আমি তােমার সঙ্গে কোন তর্কে যেতে চাচ্ছি নাতর্ক করার এটা কোন উপযুক্ত সময় নয়তা ছাড়া তুমি এখন যে ভঙ্গিতে আমার সঙ্গে কথা বলছ তাতে মনে হচ্ছে তুমি তর্ক শুনতে প্রস্তুত নওএকটা সময় আসে যখন সব যুক্তি অর্থহীন মনে হয়। 

আমি তােমার যুক্তি খুব মন দিয়ে শুনি বাবাএখনাে শুনব। 

এখন আমার নিজের মনও বিক্ষিপ্তঅফিসে যাবমনিরুল ইসলাম নামের আমার একজন কর্মচারীর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবমনিরুল ইসলামকে নাকি দিন থেকে পাওয়া যাচ্ছে নাযাই হােক, আমি অফিসে নেমে যাবতুমি গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে যাওবাই দ্যা ওয়ে, তােমার মাসঙ্গে ব্যাপারে কোন কথা বােধহয় এই মুহূর্তে না বলাই ভালতার শরীর ভাল নাসামান্য উত্তেজনা সহ্য করার ক্ষমতাও তার নেই। 

আমি কি নীতু আপার সঙ্গে কথা বলতে পারি? দেখা করতে পারি তাঁর সঙ্গে? এখন নয়। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৩৪

ইয়াজউদ্দিন সাহেব অফিসে নেমে গেলেনঠিক বারােটায় মনিরুল ইসলামের স্ত্রীকে ডেকে পাঠালেনসহজ গলায় বললেন, আপনার সমস্যা বলুনকেঁদে কেঁদে বললে আমি কিছুই বুঝব নাশান্ত হােনশান্ত হয়ে বলুন। 

ভদ্রমহিলার বক্তব্য ইয়াজউদ্দিন সাহেব পুরােটা শুনলেনগভীর মনযােগের সঙ্গে শুনলেনতারপর বললেন, আপনার জন্যে আমার খুবই খারাপ লাগছেআপনি অস্থির হয়ে পড়েছেন দেখতে পাচ্ছিঅস্থির হওয়াটাই স্বাভাবিকযে কেউ অস্থির হবেবড় বড় কারখানায় অনেক ধরনের রাজনীতি চলে

ইউনিয়ন ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে জটিলতা থাকেসেটা ধ্বংসাত্বক পর্যায়ে চলে যায়আমি পুলিশকে বলে দিচ্ছি যেন তারা একটা খোঁজ বের করার চেষ্টা করেআপনি এখানকার ইউনিয়ন কর্মকর্তা যারা আছে তাদের সঙ্গে কথা বলুনএরা অনেক কিছু জানেজেনেও চুপ করে থাকেমনে হচ্ছে আপনার কিছু আর্থিক সহায়তাও দরকারআমি ক্যাশিয়ারকে বলে দিচ্ছিসে আপনাকে কিছু টাকা দেবেমনিরুল ইসলামের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৩৪

ইয়াজউদ্দিন সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেনকারখানার সমস্যা সামলানােহয়েছেখুব চমৎকারভাবেই সামলানাে হয়েছেআগামী দুবছর আর কোন সমস্যা হবে না। 

শুভ শুয়েছিলমাঝে মাঝে কিছুই ভাল লাগে নাশুয়ে থাকতে ইচ্ছা করেআজ মনে হয় সে রকম একটা দিনআকাশে মেঘলাবিছানা থেকে আকাশের মেঘ দেখা যায়এই মেঘ সে আর কতদিন দেখতে পারবে? শুভ্র ছােট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললরেহানা ঘরে ঢুকে বললেন, একটা মেয়ে তােকে টেলিফোন করেছেবলেছে নীতু আপাটেলিফোন ধরবি ?

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৩৫ 

 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *