শুভ্র বলল, বাবা, তুমি কি চাও যে আমি নীতু মেয়েটিকে বিয়ে করি?
‘হ্যা, আমি চাই। তােমার পছন্দের কেউ যদি থাকতাে আমি বলতাম না। তােমার পছন্দের কেউ নেই। তােমাকে এ ব্যাপারে অনেক বার জিজ্ঞেস করা হয়েছে। তুমি প্রতিবারই না বলেছ।‘
শুভ্র বলল, আমি ভুল বলেছি, বাবা। আমার পছন্দের একজন আছে। ইয়াজউদ্দিন সাহেব হতভম্ভ হয়ে বললেন, তার নাম জানতে পারি ? ‘া পার। নীতু আপা। সাবেরের বােন। ‘শুভ্র, তুমি আমার সঙ্গে কোন হেঁয়ালি করছ না তাে। ‘না, হেঁয়ালী করছি না। ‘মেয়েটিকে তুমি আপা ডাক ?
‘আমি যতদূর জানি মেয়েটির আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। সে বিয়ে টিকে নি।
‘তুমিই ঠিকই জান, বাবা। তােমার ইনফরমেশন কখনাে ভুল হয় না।
‘মেয়েটির আরেকটি ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিকঠাক হয়ে আছে – এও বােধহয় সত্য।
“হ্যা। ‘তুমি কি তােমার অবেগের কথা মেয়েটিকে বলেছ?” ‘না, এখনাে বলিনি। তবে বলব। ‘মেয়েটি বয়সে তােমার চেয়ে বড় ?”
মেঘের ছায়া খন্ড-৩৪
‘জ্বি বাবা, বড়। বছর চারেকের বড়। সেটা কি কোন বড় সমস্যা? চল্লিশ বছরের পুরুষ তাে কুড়ি বছরের মেয়ে বিয়ে করছে।
‘শুভ্র, আমি তােমার সঙ্গে কোন তর্কে যেতে চাচ্ছি না। তর্ক করার এটা কোন উপযুক্ত সময় নয়। তা ছাড়া তুমি এখন যে ভঙ্গিতে আমার সঙ্গে কথা বলছ তাতে মনে হচ্ছে তুমি তর্ক শুনতে প্রস্তুত নও। একটা সময় আসে যখন সব যুক্তি অর্থহীন মনে হয়।
‘আমি তােমার যুক্তি খুব মন দিয়ে শুনি বাবা। এখনাে শুনব।
‘এখন আমার নিজের মনও বিক্ষিপ্ত। অফিসে যাব। মনিরুল ইসলাম নামের আমার একজন কর্মচারীর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। মনিরুল ইসলামকে নাকি ক‘দিন থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। যাই হােক, আমি অফিসে নেমে যাব। তুমি গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে যাও। বাই দ্যা ওয়ে, তােমার মা‘র সঙ্গে এ ব্যাপারে কোন কথা বােধহয় এই মুহূর্তে না বলাই ভাল। তার শরীর ভাল না। সামান্য উত্তেজনা সহ্য করার ক্ষমতাও তার নেই।
‘আমি কি নীতু আপার সঙ্গে কথা বলতে পারি? দেখা করতে পারি তাঁর সঙ্গে? ‘এখন নয়।
মেঘের ছায়া খন্ড-৩৪
ইয়াজউদ্দিন সাহেব অফিসে নেমে গেলেন। ঠিক বারােটায় মনিরুল ইসলামের স্ত্রীকে ডেকে পাঠালেন। সহজ গলায় বললেন, আপনার সমস্যা বলুন। কেঁদে কেঁদে বললে আমি কিছুই বুঝব না। শান্ত হােন। শান্ত হয়ে বলুন।
ভদ্রমহিলার বক্তব্য ইয়াজউদ্দিন সাহেব পুরােটা শুনলেন। গভীর মনযােগের সঙ্গে শুনলেন। তারপর বললেন, আপনার জন্যে আমার খুবই খারাপ লাগছে। আপনি অস্থির হয়ে পড়েছেন দেখতে পাচ্ছি। অস্থির হওয়াটাই স্বাভাবিক। যে কেউ অস্থির হবে। বড় বড় কারখানায় অনেক ধরনের রাজনীতি চলে।
ইউনিয়ন ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে জটিলতা থাকে। সেটা ধ্বংসাত্বক পর্যায়ে চলে যায়। আমি পুলিশকে বলে দিচ্ছি যেন তারা একটা খোঁজ বের করার চেষ্টা করে। আপনি এখানকার ইউনিয়ন কর্মকর্তা যারা আছে তাদের সঙ্গে কথা বলুন। এরা অনেক কিছু জানে। জেনেও চুপ করে থাকে। মনে হচ্ছে আপনার কিছু আর্থিক সহায়তাও দরকার। আমি ক্যাশিয়ারকে বলে দিচ্ছি। সে আপনাকে কিছু টাকা দেবে। মনিরুল ইসলামের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা।
মেঘের ছায়া খন্ড-৩৪
ইয়াজউদ্দিন সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। কারখানার সমস্যা সামলানাে। হয়েছে। খুব চমৎকারভাবেই সামলানাে হয়েছে। আগামী দু‘বছর আর কোন সমস্যা হবে না।
শুভ শুয়েছিল। মাঝে মাঝে কিছুই ভাল লাগে না। শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। আজ মনে হয় সে রকম একটা দিন। আকাশে মেঘলা। বিছানা থেকে আকাশের মেঘ দেখা যায়। এই মেঘ সে আর কতদিন দেখতে পারবে? শুভ্র ছােট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলল। রেহানা ঘরে ঢুকে বললেন, একটা মেয়ে তােকে টেলিফোন করেছে। বলেছে নীতু আপা। টেলিফোন ধরবি ?
Read More
হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৩৫