‘উনার এক ভাগ্নি আছে। ডাক নাম শাপলা – মেয়েটা খুব সুন্দর, টিভিতে গান গায়। বি গ্রেডের শিল্পী। নাটকও করে। ও লেভেল পাস করে ইউনিভার্সিটিতে ঢুকেছে। পালিটিক্যাল সায়েন্সে পড়ে। থার্ড ইয়ার। গায়ের রঙ শুভ্রের মত না হলেও ফর্সা। তুমি কি মেয়েটাকে দেখবে?
‘আমি দেখব কেন?” | ‘তােমার পছন্দ হলে শুভ্রের জন্যে আমি মেয়ের মামা জাভেদ সাহেবের কাছে প্রস্তাব দিতাম।
‘বিয়ে করবে শুভ্র। আমার পছন্দের ব্যাপার আসছে কেন?”
‘শুভ্রের কোন পছন্দ–অপছন্দ নেই, মতামত নেই। ওকে বিয়ের কথা বললেই হাসে।‘ | ইয়াজউদ্দিন জড়ানাে গলায় বললেন, এখন ঘুমাও। ভােরবেলা কথা বলব। ইয়াজউদ্দিন পাশ ফিরে শুলেন। কোনভাবে শুয়েই তিনি আরাম পাচ্ছেন না। বারান্দায় চটির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। শুভ্র হাঁটছে। বারান্দার এ মাথা থেকে ও মাথায় যাচ্ছে।
‘রেহানা।
‘শুভ্র কি বারান্দায় হাঁটাহাটি করছে? “কই, না তাে! ‘মনে হচ্ছে চটির শব্দ শুনলাম। ‘ভুল শুনেছ। শুভ্র চটি পরে না।
“ও আচ্ছা।
ইয়াজউদ্দিন চিৎ হয়ে শুলেন। তাঁর মস্তিষ্ক নিশ্চয়ই উত্তেজিত। উত্তেজিত মস্তিষ্কে চটির শব্দ শুনছেন। তাঁর শরীর তাহলে ভালই খারাপ হয়েছে। এমন কি হতে পারে যে তিনি ঘুমের মধ্যে মারা যাবেন ! ঘুমিয়ে মৃত্যুর ব্যাপারটা প্রায় কখনাে হয় না বললেই হয় – প্রকৃতি মানুষকে জাগ্রত অবস্থায় পৃথিবীতে নিয়ে আসে, নিয়েও যায় জাগ্রত অবস্থায়। তাঁর বেলায় নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম ঘটবে না। তবু ভয় লাগছে।
মেঘের ছায়া খন্ড-৪
‘রেহানা ! ‘কি। ‘পানি খাব।‘
রেহানা উঠলেন। পানির জন্যে একতলায় যেতে হল। দোতলায় ছােট একটা ফ্রীজ আছে। সেখানে পানির বােতল রাখা হয়নি। ইয়াজউদ্দিন বরফ–শীতল পানি ছাড়া খেতে পারেন না। রেহানা পানির বােতল এবং গ্লাস নিয়ে দোতলায় উঠে এসে দেখেন, ইয়াজউদ্দিন খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আছেন। তার মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে। শােবার সময় পাতলা পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে শুয়েছিলেন। পাঞ্জাবী খুলে ফেলেছেন। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
তিনি এক চুমুকে পানির গ্লাস খালি করলেন। ঘড়ি দেখলেন, তিনটা বাজতে চলল, রাত শেষ হবার খুব বেশি দেরি নেই।
‘শুভ্র কি জেগে আছে? ‘মনে হয়। ঘরে বাতি জ্বলছে। ‘ওকে একটু ডাক তাে। ‘এখানে আসতে বলব? ‘না। বারান্দায় এসে বসতে বল। ‘তুমি ঘুমুবে না ? ‘আজ আর ঘুমুব না। ঘুম আসছে না। ‘চা খাবে? চা করে দেব? ‘দাও।”
রেহানা চা আনতে গেলেন। ইয়াজউদ্দিন বারান্দায় এসে বসলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুভ্রও এসে বাবার পাশে বসল। শুভ্রর হাতে একটা বই। অন্ধকারে বইয়ের নাম পড়া যাচ্ছে না। বেশ মােটা বই।
মেঘের ছায়া খন্ড-৪
শুভ্র বলল, জেগে আছ কেন, বাবা? এই সময় তাে তােমার জেগে থাকার কথা সমস্যাটা কি?
শরীর ভাল লাগছে না। ঘুমুতে চেষ্টা করছি, ঘুম আসছে না। “তােমাকে খুব চিন্তিত লাগছে। তুমি কি কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত?
‘না।
‘আজ পত্রিকায় দেখলাম, তােমার কটন মিলে গণ্ডগােল হয়েছে। মিলের ম্যানেজারের পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। তুমি কি এ ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত?”
‘আমি যখন ঘরে আসি তখন আমার বাইরের কর্মজগৎ ঘরে নিয়ে আসি না। মিলের ব্যাপারটা নিয়ে আমি চিন্তিত ঠিকই, কিন্তু আজকের শরীর খারাপের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। তুমি জেগে আছ কেন বল।
‘আমি তাে প্রায়ই রাত জাগি। ‘এমনভাবে কথাগুলি বললে যেন রাত জাগা খুব মজার ব্যাপার।
শুভ্র হালকা গলায় বলল, আমার কাছে ভালই লাগে। ‘রাত জেগে তুমি কি কর?”
‘কিছুই করি না। মাঝে মধ্যে পড়াশোনা করি। তবে বেশির ভাগ সময় চুপচাপ বসে থাকি। ভাবি।
কি ভাব?
Read More