হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৪

উনার এক ভাগ্নি আছেডাক নাম শাপলা মেয়েটা খুব সুন্দর, টিভিতে গান গায়বি গ্রেডের শিল্পীনাটকও করেলেভেল পাস করে ইউনিভার্সিটিতে ঢুকেছেপালিটিক্যাল সায়েন্সে পড়েথার্ড ইয়ারগায়ের রঙ শুভ্রের মত না হলেও ফর্সাতুমি কি মেয়েটাকে দেখবে?

মেঘের ছায়া  

আমি দেখব কেন?| তােমার পছন্দ হলে শুভ্রের জন্যে আমি মেয়ের মামা জাভেদ সাহেবের কাছে প্রস্তাব দিতাম। 

বিয়ে করবে শুভ্রআমার পছন্দের ব্যাপার আসছে কেন?” 

শুভ্রের কোন পছন্দঅপছন্দ নেই, মতামত নেইওকে বিয়ের কথা বললেই হাসে| ইয়াজউদ্দিন জড়ানাে গলায় বললেন, এখন ঘুমাওভােরবেলা কথা বলবইয়াজউদ্দিন পাশ ফিরে শুলেনকোনভাবে শুয়েই তিনি আরাম পাচ্ছেন নাবারান্দায় চটির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছেশুভ্র হাঁটছেবারান্দার মাথা থেকে মাথায় যাচ্ছে। 

রেহানা। 

শুভ্র কি বারান্দায় হাঁটাহাটি করছে? কই, না তাে! মনে হচ্ছে চটির শব্দ শুনলামভুল শুনেছশুভ্র চটি পরে না। 

আচ্ছা। 

ইয়াজউদ্দিন চিৎ হয়ে শুলেনতাঁর মস্তিষ্ক নিশ্চয়ই উত্তেজিতউত্তেজিত মস্তিষ্কে চটির শব্দ শুনছেনতাঁর শরীর তাহলে ভালই খারাপ হয়েছেএমন কি হতে পারে যে তিনি ঘুমের মধ্যে মারা যাবেন ! ঘুমিয়ে মৃত্যুর ব্যাপারটা প্রায় কখনাে হয় না বললেই হয় প্রকৃতি মানুষকে জাগ্রত অবস্থায় পৃথিবীতে নিয়ে আসে, নিয়েও যায় জাগ্রত অবস্থায়তাঁর বেলায় নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম ঘটবে নাতবু ভয় লাগছে। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৪

রেহানা ! কিপানি খাব‘ 

রেহানা উঠলেনপানির জন্যে একতলায় যেতে হলদোতলায় ছােট একটা ফ্রীজ আছেসেখানে পানির বােতল রাখা হয়নিইয়াজউদ্দিন বরফশীতল পানি ছাড়া খেতে পারেন নারেহানা পানির বােতল এবং গ্লাস নিয়ে দোতলায় উঠে এসে দেখেন, ইয়াজউদ্দিন খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আছেনতার মাথার উপর ফ্যান ঘুরছেশােবার সময় পাতলা পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে শুয়েছিলেনপাঞ্জাবী খুলে ফেলেছেনতার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। 

তিনি এক চুমুকে পানির গ্লাস খালি করলেনঘড়ি দেখলেন, তিনটা বাজতে চলল, রাত শেষ হবার খুব বেশি দেরি নেই। 

শুভ্র কি জেগে আছে? মনে হয়ঘরে বাতি জ্বলছেওকে একটু ডাক তােএখানে আসতে বলব? নাবারান্দায় এসে বসতে বলতুমি ঘুমুবে না ? আজ আর ঘুমুব নাঘুম আসছে নাচা খাবে? চা করে দেব? দাও

রেহানা চা আনতে গেলেনইয়াজউদ্দিন বারান্দায় এসে বসলেনপ্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুভ্রও এসে বাবার পাশে বসলশুভ্রর হাতে একটা বইঅন্ধকারে বইয়ের নাম পড়া যাচ্ছে নাবেশ মােটা বই। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৪

শুভ্র বলল, জেগে আছ কেন, বাবা? এই সময় তাে তােমার জেগে থাকার কথা সমস্যাটা কি

শরীর ভাল লাগছে নাঘুমুতে চেষ্টা করছি, ঘুম আসছে নাতােমাকে খুব চিন্তিত লাগছেতুমি কি কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত

না। 

আজ পত্রিকায় দেখলাম, তােমার কটন মিলে গণ্ডগােল হয়েছেমিলের ম্যানেজারের পায়ের রগ কেটে দিয়েছেতুমি কি ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত?” 

আমি যখন ঘরে আসি তখন আমার বাইরের কর্মজগৎ ঘরে নিয়ে আসি নামিলের ব্যাপারটা নিয়ে আমি চিন্তিত ঠিকই, কিন্তু আজকের শরীর খারাপের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেইতুমি জেগে আছ কেন বল। 

আমি তাে প্রায়ই রাত জাগিএমনভাবে কথাগুলি বললে যেন রাত জাগা খুব মজার ব্যাপার। 

শুভ্র হালকা গলায় বলল, আমার কাছে ভালই লাগে। রাত জেগে তুমি কি কর?” 

কিছুই করি নামাঝে মধ্যে পড়াশোনা করিতবে বেশির ভাগ সময় চুপচাপ বসে থাকিভাবি। 

কি ভাব

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৫

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *