শুভ্র জবাব দিল না। হাসল। ইয়াজউদ্দিন সাহেব আগ্রহ নিয়ে ছেলের হাসি দেখলেন। শুভ্র’র হাসি সুন্দর। দেখতে ভাল লাগে। সব শিশুর হাসি সুন্দর। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাসির সৌন্দর্য নষ্ট হতে থাকে। শুভ’র হয়নি।
রেহানা চা নিয়ে এসেছে। চা আনতে তাঁর দেরি হবার কারণ বােঝা যাচ্ছে – শুধু চা আসে নি। আয়ােজন দেখে মনে হচ্ছে সকালের ব্রেকফাস্ট চলে এসেছে। শুভ্র ওঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, আমি একটু আগে চা খেয়েছি। আমি কিছু খাব না। তােমরা খাও।
ইয়াজউদ্দিন বললেন, তুমি বস শুভ্র। তােমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। শুভ্র বসল। রেহানা বললেন, আমি কি বসব, না চলে যাব ? ‘বস, তুমিও বস। ইয়াজউদ্দিন চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে বললেন, কি বই পড়ছ? শুভ্র বলল – ‘The End of Civilization. ‘ইন্টারেস্টিং বই ?” “না বাবা। কঠিন বই। নানান থিওরি। পড়তে ভাল লাগে না।
পড়তে ভাল লাগে না – তাহলে পড়ছ কেন?
‘যা আমার ভাল লাগে না তাও করে দেখতে ইচ্ছে করে।
মেঘের ছায়া খন্ড-৫
ইয়াজউদ্দিন সাহেব কথা খুঁজে পাচ্ছেন না। আবহাওয়াটা চট করে অন্য রকম হয়ে গেছে। এখন মনে হচ্ছে তিনি কোন একটা মিটিং–এ বসেছেন। কোম্পানীর জরুরি বিষয় নিয়ে আলাপ করছেন শুভ্রের সঙ্গে। রেহানা তাঁর পিএ, সে নেটি নিচ্ছে। এক্ষুণি পিপ করে ইন্টারকম বেজে ওঠবে। রেহানা বলবে, স্যার, আপনার জরুরি কল। আপনি কথা বলবেন? লাইন দেব?
বাস্তবে তা হল না। রেহানা খুশিখুশি গলায় বললেন, তুমি শুভ্রকে জিজ্ঞেস কর তাে ও বিয়ে করতে চায় কিনা। শুভ্র হাসিমুখে মা’র দিকে তাকিয়ে আছে। যেন মা‘র ছেলেমানুষিতে মজা পাচ্ছে।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব বললেন, তােমার মা তোমার বিয়ে নিয়ে খুব একসাইটেড বােধ করছে। তুমি কি বিয়ে করতে চাও?
শুভ্র বাবার চোখের উপর থেকে চোখ সরিয়ে মার দিকে তাকাল। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পরিষ্কার গলায় বলল, হ্যাঁ চাই।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব নড়েচড়ে বসলেন। তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, কোন ছেলেকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় – সে বিয়ে করতে চায় কি–না তখন সে কিন্তু কখনাে সরাসরি বলে না – চাই। তুমি এত সরাসরি বললে কেন শুভ্র? শুভ্র হাসতে হাসতে বলল, আমি মাকে খুশি করবার জন্যে বললাম। মা মনে প্রাণে এইটিই আমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছিল।
‘তুমি কি বলতে চাচ্ছ তােমার মা চান বলেই তুমি হ্যাঁ বললে? তােমার নিজের ইচ্ছা নেই?”
মেঘের ছায়া খন্ড-৫
‘আমার নিজের ইচ্ছাও নেই, অনিচ্ছাও নেই। ‘তােমার বন্ধুদের মধ্যে কেউ কি বিয়ে করেছে ?” ‘এখনাে করেনি তবে জাহেদ সম্ভবত করবে।” ‘জাহেদ কে ? ‘আমার বন্ধু। আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ‘আমি দেখেছি তাকে? ‘না। আমার বন্ধুরা কখনাে আমার কাছে আসে না। আমি তাদের কাছে যাই। ‘ও কি করে ? ‘এখনো কিছু করে না। প্রাইভেট টিওশনি করে।
“তােমার কি মনে হয় না জাহেদ খুব দায়িত্বজ্ঞানহীনের মত কাজ করছে?” ‘এব উপায় নেই, বাবা। ইয়াজউদ্দিন সাহেব একবার ভাবলেন জিজ্ঞেস করেন, উপায় নেই কেন? শেষে নিজেকে সামলে নিলেন। বাড়তি কৌতুহল দেখানাের প্রয়ােজন তিনি বােধ করছেন না। কিন্তু তিনি প্রয়ােজন বােধ না করলেও শুভ্র করছে। সে খুব আগ্রহ নিয়ে। বলল, জাহেদ আসলে দারুণ সমস্যায় পড়েছে।
ও যাকে বিয়ে করবে তার নাম কেয়া। বড় বােনের বাসায় থাকে। বড় বােন এবং দুলাভাই দু‘জনই বেচারীকে নানাভাবে যন্ত্রণা দিচ্ছে। দু’বার প্রায় বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। একবার কেয়া রাত আটটার সময় বাড়ি ফিরেছে। তারা দরজা খুলে না। দরজা বন্ধ। বেচারী রাত এগারোটা পর্যন্ত বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁদল।
Read More