হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৫

শুভ্র জবাব দিল নাহাসলইয়াজউদ্দিন সাহেব আগ্রহ নিয়ে ছেলের হাসি দেখলেনশুভ্রহাসি সুন্দরদেখতে ভাল লাগেসব শিশুর হাসি সুন্দরবয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাসির সৌন্দর্য নষ্ট হতে থাকেশুভহয়নি

মেঘের ছায়া হুমায়ূন আহমেদ  

রেহানা চা নিয়ে এসেছেচা আনতে তাঁর দেরি হবার কারণ বােঝা যাচ্ছে শুধু চা আসে নিআয়ােজন দেখে মনে হচ্ছে সকালের ব্রেকফাস্ট চলে এসেছেশুভ্র ওঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, আমি একটু আগে চা খেয়েছিআমি কিছু খাব নাতােমরা খাও। 

ইয়াজউদ্দিন বললেন, তুমি বস শুভ্রতােমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছেশুভ্র বসলরেহানা বললেন, আমি কি বসব, না চলে যাব ? বস, তুমিও বসইয়াজউদ্দিন চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে বললেন, কি বই পড়ছ? শুভ্র বলল The End of Civilization. ইন্টারেস্টিং বই ?না বাবাকঠিন বইনানান থিওরিপড়তে ভাল লাগে না। 

পড়তে ভাল লাগে না তাহলে পড়ছ কেন

যা আমার ভাল লাগে না তাও করে দেখতে ইচ্ছে করে। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৫

ইয়াজউদ্দিন সাহেব কথা খুঁজে পাচ্ছেন নাআবহাওয়াটা চট করে অন্য রকম হয়ে গেছেএখন মনে হচ্ছে তিনি কোন একটা মিটিংবসেছেনকোম্পানীর জরুরি বিষয় নিয়ে আলাপ করছেন শুভ্রের সঙ্গেরেহানা তাঁর পিএ, সে নেটি নিচ্ছেএক্ষুণি পিপ করে ইন্টারকম বেজে ওঠবেরেহানা বলবে, স্যার, আপনার জরুরি কলআপনি কথা বলবেন? লাইন দেব

বাস্তবে তা হল নারেহানা খুশিখুশি গলায় বললেন, তুমি শুভ্রকে জিজ্ঞেস কর তাে বিয়ে করতে চায় কিনা। শুভ্র হাসিমুখে মাদিকে তাকিয়ে আছেযেন মাছেলেমানুষিতে মজা পাচ্ছে। 

ইয়াজউদ্দিন সাহেব বললেন, তােমার মা তোমার বিয়ে নিয়ে খুব একসাইটেড বােধ করছেতুমি কি বিয়ে করতে চাও

শুভ্র বাবার চোখের উপর থেকে চোখ সরিয়ে মার দিকে তাকালবেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পরিষ্কার গলায় বলল, হ্যাঁ চাই। 

ইয়াজউদ্দিন সাহেব নড়েচড়ে বসলেনতীক্ষ্ণ গলায় বললেন, কোন ছেলেকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় সে বিয়ে করতে চায় কিনা তখন সে কিন্তু কখনাে সরাসরি বলে না চাইতুমি এত সরাসরি বললে কেন শুভ্রশুভ্র হাসতে হাসতে বলল, আমি মাকে খুশি করবার জন্যে বললামমা মনে প্রাণে এইটিই আমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছিল। 

তুমি কি বলতে চাচ্ছ তােমার মা চান বলেই তুমি হ্যাঁ বললে? তােমার নিজের ইচ্ছা নেই?” 

মেঘের ছায়া খন্ড-৫

আমার নিজের ইচ্ছাও নেই, অনিচ্ছাও নেইতােমার বন্ধুদের মধ্যে কেউ কি বিয়ে করেছে ?এখনাে করেনি তবে জাহেদ সম্ভবত করবেজাহেদ কে ? আমার বন্ধুআমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুআমি দেখেছি তাকে? নাআমার বন্ধুরা কখনাে আমার কাছে আসে নাআমি তাদের কাছে যাইকি করে ? এখনো কিছু করে নাপ্রাইভেট টিওশনি করে

তােমার কি মনে হয় না জাহেদ খুব দায়িত্বজ্ঞানহীনের মত কাজ করছে?এব উপায় নেই, বাবা। ইয়াজউদ্দিন সাহেব একবার ভাবলেন জিজ্ঞেস করেন, উপায় নেই কেন? শেষে নিজেকে সামলে নিলেনবাড়তি কৌতুহল দেখানাের প্রয়ােজন তিনি বােধ করছেন নাকিন্তু তিনি প্রয়ােজন বােধ না করলেও শুভ্র করছেসে খুব আগ্রহ নিয়েবলল, জাহেদ আসলে দারুণ সমস্যায় পড়েছে

যাকে বিয়ে করবে তার নাম কেয়াবড় বােনের বাসায় থাকেবড় বােন এবং দুলাভাই দুজনই বেচারীকে নানাভাবে যন্ত্রণা দিচ্ছেদু’বার প্রায় বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলএকবার কেয়া রাত আটটার সময় বাড়ি ফিরেছেতারা দরজা খুলে নাদরজা বন্ধবেচারী রাত এগারোটা পর্যন্ত বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁদল

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৬

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *