ইয়াজউদ্দিন সাহেব বললেন, কেয়ার সঙ্গেও কি তােমার পরিচয় আছে ?
‘হ্যাঁ, পরিচয় আছে। খুব ভাল মেয়ে। গম্ভীর হয়ে থাকে, কিন্তু মাঝে মাঝে এমন হাসির কথা বলে !‘
‘প্রাইভেট টিউশনি সম্বল করে একটা ছেলে বিয়ে করে ফেলতে চাচ্ছে – তােমার কাছে কি হাস্যকর মনে হচ্ছে না?”
‘জহিরের কোন উপায় নেই, বাবা। ওকে প্রাইভেট টিউশনি করে খেতে হবে। ‘প্রাইভেট টিউশনি করে খেতে হবে কেন?”
‘ও বি.এ. পরীক্ষায় থার্ড ডিভিশন পেয়েছে – ওর পরিচিত বড় আত্মীয়স্বজনও নেই। ওর ধারণা, ও কখনাে কোন চাকুরি পাবে না।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব গােপনে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন, তার ছেলে কাদের সঙ্গে মিশছে? এরাই কি তার বন্ধুবান্ধব? রেহানা একটু ঝুঁকে এসে আগ্রহ নিয়ে। বললেন, শুভ্র, তুই কি জাভেদ সাহেবের ভাগ্নির সঙ্গে কথা বলে দেখবি? মেয়েটার নাম শাপলা। টিভিতে নাটক করে। খুব সুন্দর। | শুভ্র হাসতে হাসতে বলল, তােমার মাথায় শুধু একটা জিনিসই ঘুরছে। শোেন মা, তুমি যদি চাও নিশ্চয়ই আলাপ করে দেখব।
‘ওকে সঙ্গে করে কোন একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে এলি। গল্প–টল্প করলি। ওর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেই ওকে তাের পছন্দ হবে। কথা বলবি?”
‘কেন বলব না মা?”
মেঘের ছায়া খন্ড-৬
ইয়াজউদ্দিন সাহেবের রেহানার কথাবার্তা পছন্দ হচ্ছে না। তিনি কিছু সিরিয়াস কথাবার্তা বলতে চাচ্ছিলেন। রেহানার উপস্থিতিতে তা সম্ভব হবে না। তিনি বললেন, ঘুম পাচ্ছে, চল ঘুমুতে যাওয়া যাক। তিনি উঠে দাঁড়ালেন। রেহানা উঠলেন না। ছেলের পাশে বসে রইলেন। আগ্রহ ও উত্তেজনায় তার চোখ চক চক করছে।
শুভ্রদের বাড়ির নাম ‘কান্তা ভিলা।
গেটের কাছে পেতলের নামফলক। রােজ একবার ব্রাসাে ঘসে এই নাম ঝকঝকে করা হয়। গুলশান এলাকার আধুনিক বাড়িঘরগুলির সঙ্গে এর মিল নেই – পুরানাে ধরনের বাড়ি। জেলখানা জেলখানা ভাব আছে। উঁচু দেয়াল। দেয়ালের উপরে কাঁটাতারের বেড়া। বাড়ির গেটটাও নিরেট লােহার। বাইরে থেকে গেটের ভেতর দিয়ে কিছু দেখার উপায় নেই। গেটের কাছে কলিংবেল আছে। অনেকক্ষণ বেল বাজালে তবেই দারােয়ান দরজা খুলে বিরক্ত মুখে জিজ্ঞেস করে, কে?
কারণ এ বাড়িতে যারা আসে তারা গেটের কলিংবেল বাজায় না। গাড়ির হর্ন বাজায়। এ বাড়িতে যেসব গাড়ি আসে তার প্রতিটির হর্ন দারােয়ান চেনে। হর্ন শুনে বুঝতে পারে কে এসেছে। গাড়ির হর্ন শুনলে সে ছুটে গিয়ে দরজা খুলে। গেটের কলিংবেল বাজায় খবরের কাগজের হকার, ধােপা, ইলেকট্রিক মিস্ত্রী, মাঝে মাঝে অসীম সাহসী কিছু ভিখিরী। এদের বেল শুনে ছুটে গিয়ে গেট খােলার কোন প্রয়ােজন নেই। ধীরে সুস্থে গেলেই হয়।
মেঘের ছায়া খন্ড-৬
অনেকক্ষণ ধরেই বেল বাজছে। দারোয়ান গােমেজ গেট খুলছে না। সে মোড়ায় বসে খবরের কাগজ পড়ছে। বেল বাজছে, বাজুক। ভিখিরী হলে বেল বজিয়ে ক্লান্ত হয়ে চলে যাবে। ভিখিরী না হলে ক্লান্ত হবে না। বাজাতেই থাকবে। এক সময় গেট খুললেই হল। তাড়া কিছু নেই।
গােমেজ হাত থেকে খবরের কাগজ নামিয়ে রাখল। বিরক্ত মুখে উঠে গিয়ে দরজা খুলল। গেটের বাইরে জাহেদ দাঁড়িয়ে আছে। গােমেজ জাহেদকে চেনে – শুভ্র’র বন্ধু। এর আগেও কয়েকবার এসেছে, তবে কখনাে গেটের ভেতরে ঢুকেনি।
জাহেদ বলল, শুভ্র আছে? গােমেজ হাই তুলতে তুলতে বলল, না।
এটা পরিষ্কার মিথ্যা কথা। শুভ্র ঘরেই আছে। গােমেজ কেন ‘না’ বলল সে নিজেও জানে না। তাকে কেউ মিথ্য বলতে বলেনি। জাহেদ বলল, ওর সঙ্গে খুব দরকার ছিল। ও কোথায় গেছে জানেন?
“না।”
Read More