হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৬

ইয়াজউদ্দিন সাহেব বললেন, কেয়ার সঙ্গেও কি তােমার পরিচয় আছে

হ্যাঁ, পরিচয় আছেখুব ভাল মেয়েগম্ভীর হয়ে থাকে, কিন্তু মাঝে মাঝে এমন হাসির কথা বলে !

মেঘের ছায়া  

প্রাইভেট টিউশনি সম্বল করে একটা ছেলে বিয়ে করে ফেলতে চাচ্ছে তােমার কাছে কি হাস্যকর মনে হচ্ছে না?” 

জহিরের কোন উপায় নেই, বাবাওকে প্রাইভেট টিউশনি করে খেতে হবেপ্রাইভেট টিউশনি করে খেতে হবে কেন?” 

বি.. পরীক্ষায় থার্ড ডিভিশন পেয়েছে ওর পরিচিত বড় আত্মীয়স্বজনও নেইওর ধারণা, কখনাে কোন চাকুরি পাবে না। 

ইয়াজউদ্দিন সাহেব গােপনে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন, তার ছেলে কাদের সঙ্গে মিশছে? এরাই কি তার বন্ধুবান্ধব? রেহানা একটু ঝুঁকে এসে আগ্রহ নিয়েবললেন, শুভ্র, তুই কি জাভেদ সাহেবের ভাগ্নির সঙ্গে কথা বলে দেখবি? মেয়েটার নাম শাপলাটিভিতে নাটক করেখুব সুন্দর| শুভ্র হাসতে হাসতে বলল, তােমার মাথায় শুধু একটা জিনিসই ঘুরছেশোেন মা, তুমি যদি চাও নিশ্চয়ই আলাপ করে দেখব। 

ওকে সঙ্গে করে কোন একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে এলিগল্পটল্প করলিওর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেই ওকে তাের পছন্দ হবেকথা বলবি?” 

কেন বলব না মা?” 

মেঘের ছায়া খন্ড-৬

ইয়াজউদ্দিন সাহেবের রেহানার কথাবার্তা পছন্দ হচ্ছে নাতিনি কিছু সিরিয়াস কথাবার্তা বলতে চাচ্ছিলেনরেহানার উপস্থিতিতে তা সম্ভব হবে নাতিনি বললেন, ঘুম পাচ্ছে, চল ঘুমুতে যাওয়া যাকতিনি উঠে দাঁড়ালেনরেহানা উঠলেন নাছেলের পাশে বসে রইলেনআগ্রহ উত্তেজনায় তার চোখ চক চক করছে। 

শুভ্রদের বাড়ির নাম কান্তা ভিলা। 

গেটের কাছে পেতলের নামফলকরােজ একবার ব্রাসাে ঘসে এই নাম ঝকঝকে করা হয়গুলশান এলাকার আধুনিক বাড়িঘরগুলির সঙ্গে এর মিল নেই পুরানাে ধরনের বাড়িজেলখানা জেলখানা ভাব আছেউঁচু দেয়ালদেয়ালের উপরে কাঁটাতারের বেড়াবাড়ির গেটটাও নিরেট লােহারবাইরে থেকে গেটের ভেতর দিয়ে কিছু দেখার উপায় নেইগেটের কাছে কলিংবেল আছেঅনেকক্ষণ বেল বাজালে তবেই দারােয়ান দরজা খুলে বিরক্ত মুখে জিজ্ঞেস করে, কে?

কারণ বাড়িতে যারা আসে তারা গেটের কলিংবেল বাজায় নাগাড়ির হর্ন বাজায়বাড়িতে যেসব গাড়ি আসে তার প্রতিটির হর্ন দারােয়ান চেনেহর্ন শুনে বুঝতে পারে কে এসেছেগাড়ির হর্ন শুনলে সে ছুটে গিয়ে দরজা খুলেগেটের কলিংবেল বাজায় খবরের কাগজের হকার, ধােপা, ইলেকট্রিক মিস্ত্রী, মাঝে মাঝে অসীম সাহসী কিছু ভিখিরীএদের বেল শুনে ছুটে গিয়ে গেট খােলার কোন প্রয়ােজন নেইধীরে সুস্থে গেলেই হয়। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৬

অনেকক্ষণ ধরেই বেল বাজছেদারোয়ান গােমেজ গেট খুলছে নাসে মোড়ায় বসে খবরের কাগজ পড়ছেবেল বাজছে, বাজুকভিখিরী হলে বেল বজিয়ে ক্লান্ত হয়ে চলে যাবেভিখিরী না হলে ক্লান্ত হবে নাবাজাতেই থাকবেএক সময় গেট খুললেই হলতাড়া কিছু নেই। 

গােমেজ হাত থেকে খবরের কাগজ নামিয়ে রাখলবিরক্ত মুখে উঠে গিয়ে দরজা খুললগেটের বাইরে জাহেদ দাঁড়িয়ে আছেগােমেজ জাহেদকে চেনে শুভ্রবন্ধুএর আগেও কয়েকবার এসেছে, তবে কখনাে গেটের ভেতরে ঢুকেনি। 

জাহেদ বলল, শুভ্র আছে? গােমেজ হাই তুলতে তুলতে বলল, না। 

এটা পরিষ্কার মিথ্যা কথাশুভ্র ঘরেই আছেগােমেজ কেন নাবলল সে নিজেও জানে নাতাকে কেউ মিথ্য বলতে বলেনিজাহেদ বলল, ওর সঙ্গে খুব দরকার ছিলকোথায় গেছে জানেন

না” 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৭

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *