‘কখন বাসায় ফিরবে সেটা বলতে পারবেন? ‘উহু। * জাহিরের মন খারাপ হয়ে গেল। আজ বাসের স্ট্রাইক। সে কলাবাগান থেকে গুলশান পর্যন্ত এসেছে অনেক যন্ত্রণা করে। কিছু হেঁটে, কিছু শেয়ারের রিকশায়, কিছুটা টেম্পােতে। সুযােগ বুঝে টেম্পাের ভাড়া করে দিয়েছে দুগুণ। তার পকেটে এখন সাতটা টাকা আছে।
এই সাত টাকায় কলাবাগান ফিরে যাওয়াই সমস্যা। তা ছাড়া প্রচণ্ড চায়ের পিপাসা পেয়েছে। এক কাপ চা এবং একটা বিসকিট না খেলেই নয়। পেটের আলসার খুব খারাপ পর্যায়ে আছে। ডাক্তার খালি পেটে চা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। চা–বিসকিট খেতে গেলে তিনটাকা চলে যাবে। থাকবে মাত্র চার ।
জাহেদ দারােয়ানকে বলল, ঘণ্টা দু‘-এক পর এসে খোঁজ নেই, কি বলেন? ‘নিতে পারেন।
দারােয়ান গেট বন্ধ করে ভেতর থেকে তালাবন্ধ করে দিল। এ বাড়ির গেট সব সময় ভেতর থেকে তালাবন্ধ থাকে।
জাহেদ এক কাপ চা, দু‘টা টোস্ট বিসকিট খেল। লােভে পাড়ে একটা কলাও খেয়ে ফেলল। আজ সকালে নাশতা খেতে পারেনি। দারুণ খিদে লেগেছে। অপরিচিত চায়ের দোকানে বসে সময় কাটানােও সমস্যা। কিছুক্ষণ বসে থাকলেই দোকানের মলিক সন্দেহজনক চোখে তাকাতে শুরু করে।
সময় খারাপ, সব কিছুই দেখতে হয় সন্দেহের চোখে। তারচেয়েও বড় সমস্যা জাহেদের কাছে ঘড়ি নেই – দুঘণ্টার কতক্ষণ কাটল বােঝা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর পর একে ওকে ‘কটা বাজে জিজ্ঞেস করতে হচ্ছে। একটা সময় ছিল কটা বাজে জিজ্ঞেস করলে লােকজন খুশি হত। আগ্রহ করে সময় বলত। এখন রেগে যায়। এমনভাবে তাকায় যেন সময় জানতে চাওয়ার পেছনেও কোন মতলব আছে।
মেঘের ছায়া খন্ড-৭
জাহেদ দেড় ঘণ্টার মাথায় আবার বেল টিপল। দারােয়ান নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, আসেন নাই। কিছু বলার থাকলে আমারে বলেন – খবর দিয়া দিব।
জাহেদ বলল, ভায়া মিডিয়া বললে হবে না। সরাসরি বলতে হবে। বরং একটা চিঠি লিখে যাই।
‘লেখেন। ‘কাগজ–কলম দিতে পারবেন?” ‘না।
জাহেদকে আবার সেই চায়ের দোকানে ফিরে যেতে হল। দোকানের মালিকের কাছ থেকে কাগজ কলম নিয়ে সে লিখল —
শুভ্র, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বুধবারে। তুই কি বরযাত্রী যাবার জন্য
আমাকে একটা গাড়ি দিতে পারবি ? – দারােয়ানের কাছে চিঠি জমা দিয়ে সে কলাবাগান রওনা হল হাঁটতে হাঁটতে। হাঁটতে খারাপ লাগছে না, কিন্তু খিদেটা জানান দিচ্ছে। পেটে অল্প–অল্প ব্যথাও। শুরু হয়েছে। ব্যাথাটাকে আমল দেয়া ঠিক হবে না। তাছাড়া তুচ্ছ শারীরিক সমস্যা নিয়ে চিন্তার সময় নেই। মাথার সামনে ভয়াবহ সমস্যা। প্রথম এবং প্রধান সমস্যা হল – কেয়াকে কোথায় এনে তুলবে?
সে নিজে থাকে ছােটমামার বাসায়। ভেতরের বারান্দায় ক্যাম্পখাট পেতে ঘুমায়। বৃষ্টির সময় অবধারিতভাবে। ক্যাম্পখাটের খানিকটা বৃষ্টির পানিতে ভিজে। বউকে নিয়ে ক্যাম্পখাটে ঘুমানাে সম্ভব না। ছােটমামার বাড়িতে দুটা কামরা। একটায় ছােট মামা–মামী থাকেন। অন্যটায় মামার তিন মেয়ে থাকে। বসার ঘর বলে কিছু নেই। থাকলে কোন সমস্যা ছিল না। কয়েকটা দিন সােফায় পার করে দেয়া যেত। কেয়া ঘুমাতে সােফায়, সে মেঝেতে কম্বল বিছিয়ে।
মেঘের ছায়া খন্ড-৭
: জাহেদ তার মামা মিজান সাহেবকে বিয়ের খবর দিয়েছে পরশু। রাতের ভাত খাবার পর। জাহেদ ভয়ে ভয়ে ছিল – খবর শুনে মামা না জানি কি করেন। তেমন কিছুই করেননি। তিনি দীর্ঘসময় জাহেদের দিকে তাকিয়ে থেকে বলেছেন – ‘ও।
তিনি হতভম্ভ হয়ে গেছেন, বলাই বাহুল্য। এই অবস্থায় জাহেদ বিয়ে করতে যাচ্ছে। কেন? বউকে খাওয়াবে কি ? বউ থাকবে কোথায় ? – কিছুই জানতে চান নি। জাহেদের মামী মনােয়ারা বললেন, সত্যি বিয়ে, না ঠাট্টা করছ?
জাহেদ বলল, সত্যি সত্যি বিয়ে করছি, মামী। মেয়ের নাম কেয়া। এ বাড়িতে দু’বার এসেছে। আপনি হয়ত দেখেছেন।
Read More