কেয়ার নানি মৃত্যুশয্যায়। তিনি নাতনীর বিয়ে দেখে যেতে চাচ্ছেন আর কেয়ার আপা–দুলাভাইও কেয়াকে আর পুষতে পারবেন না বলে ঘােষণা দিয়েছেন।
‘ওরা কি দেখে তােমার কাছে বিয়ে দিচ্ছে – তােমার আছে কি?
জাহেদ কিছু বলল না। মনােয়ারা বললেন – বউ নিয়ে কোথায় উঠবে ? জাহেদ বলল, এখনাে কিছু ঠিক করিনি। ‘তােমার কি কোথাও ওঠার জায়গা আছে ? ‘জি না। ‘বিয়ের খরচপাতির টাকা–পয়সা আছে?”
জাহেদ মাথা চুলকে বলল, জ্বি না। মিজান সাহেব ঠিক আগের ভঙ্গিতে বললেন, ও!
জাহেদের এই মুহুর্তে কিছুই নেই। পােস্টাফিসে পাসবই খুলেছিল। টিউশনির। টাকার কিছু কিছু সেখানে রাখত। পাসবইয়ে সাতশ’ তেত্রিশ টাকা আছে। মা’র গলার একটা হার আছে দেড় ভরীর। ওটা বিক্রি করলে বিয়ের খুচরা খরচ সামলে। ফেলা যায়। বিয়ের খরচ বলতে বিয়ের শাড়ি, হলুদের শাড়ি। কিছু সেন্ট–ফেস্ট। কিন্তু মা বিশেষ করে বলে দিয়েছেন হারটা যেন জাহেদের বিয়ের সময় তার বৌকে দেয়া হয়।এইসব সেন্টিমেন্ট নিয়ে ভাবলে এখন চলে না। সেন্টিমেন্টের দিন শেষ।
আজকের দিন হল রিয়েলিটির দিন। হার বর্তমানে তার বড় বােন নীলিমার কাছে আছে। সেই হার পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে জাহেদের ঘাের সন্দেহ দেখা দিয়েছে। দিন সাতেক আগে আনতে গিয়েছিল। নীলিমা বলল, হার পালিশ করতে দেয়া হয়েছে। গতকাল জাহেদ আবার গেল। নীলিমা বলল, রশিদটা পাওয়া যাচ্ছে না। বলেই এক ধরনের ঝগড়া শুরু করল। ঝগড়ার বিষয় হল – তার বিয়ের সময় মা কিছুই দেন নি। হাতের দুটা বালা দিয়েছে। তার মধ্যে সােনা নামমাত্র। জাহেদ বলল, এসব আমাকে বলে লাভ কি? আমি এর কি করব?
মেঘের ছায়া খন্ড-৮
নীলিমা বলল, হাতের বালা জোড়া মার ব্যবহারী জিনিস হলেও একটা কথা ছিল। আমি কিছুই বলতাম না। স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে রেখে দিতাম। দোকানের জিনিস। কোন এক কায়দা করে নীলিমা গলার হারটা রেখে দিলে জাহেদ বিরাট বিপদে পড়বে। এতটা নিচে আপা নামবে জাহেদ বিশ্বাস করে না। কিন্তু অবিশ্বাস্য জিনিস সংসারে ঘটছে। তাছাড়া অভাবী সংসারে ক্ষুদ্রতা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।
জাহেদ বিয়ে করছে। কেউ কোন রকম আগ্রহ দেখাচ্ছে না। নীলিমা একবারও জিজ্ঞেস করেনি, বৌ নিয়ে কোথায় উঠবি? সম্ভবত ভয়েই জিজ্ঞেস করেনি, যদি জাহেদ বলে বসে কয়েকটা দিন তােমার এখানে থাকব। সে হয়ত ভেবেছে, একবার বৌ নিয়ে উঠলে আর তাকে তাড়ানাে যাবে না। এরকম ভাবা অবশ্যি অন্যায়ও না। ভাবাটাই স্বাভাবিক।
জাহেদের ভরসা এখন তার বন্ধু বান্ধবরা। সে মুখচোরা স্বভাবের। কাউকে। এখনো কিছু বলে নি। বলতে লজ্জা করছে। শুভ্রকে গাড়ির কথা বলেছে। গাড়ি পাওয়া যাবে। শুভ্র‘র কাছে কেউ কিছু চেয়ে পায়নি, তা কখনাে হয় নি। গাড়ির ব্যবস্থা হবে। তবে শুভ্র’র কানে খবরটা পৌঁছলে হয়। টেলিফোনে শুভ্রকে কখনো পাওয়া যায় না। সে টেলিফোন ধরে না। যে ধরে সে অবধারিতভাবে বলে, শুভ্র বাসায় নেই, কিংবা সে এখন ঘুমুচ্ছে।
মেঘের ছায়া খন্ড-৮
জাহেদ ঠিক করল, আজ রাত নটা–দশটার দিকে একবার টেলিফোনে চেষ্টা করবে। পাওয়া যাবে না। তবু একবার চেষ্টা করে দেখা। পাওয়া যেতেও তাে পারে। নীলিমাদের বাসার কাছেই বড় একটা মিষ্টির দোকান। দোকান নতুন চালু হয়েছে বলেই সেখান থেকে টেলিফোন করতে দেয়। তবে দোকানে ঢুকে এমন ভাব করতে হয় যে প্রচুর মিষ্টি কেনা হবে। কেনার আগে একটু বাড়িতে টেলিফোন করে জেনে নেয়া।
জাহেদের দুলাভাই মােবাশ্বের আলি, জাহেদকে দেখেই মুখ অন্ধকার করে ফেললেন। সব সময়ই করেন। আজ একটু বেশি করলেন। শুকনাে গলায় বললেন, তােমার আপা তাে নেই। নারায়নগঞ্জ গেছে। আজ আসবে না।
Read More