হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৮

কেয়ার নানি মৃত্যুশয্যায়তিনি নাতনীর বিয়ে দেখে যেতে চাচ্ছেন আর কেয়ার আপাদুলাভাইও কেয়াকে আর পুষতে পারবেন না বলে ঘােষণা দিয়েছেন। 

ওরা কি দেখে তােমার কাছে বিয়ে দিচ্ছে তােমার আছে কি?

মেঘের ছায়া  

জাহেদ কিছু বলল নামনােয়ারা বললেন বউ নিয়ে কোথায় উঠবে ? জাহেদ বলল, এখনাে কিছু ঠিক করিনিতােমার কি কোথাও ওঠার জায়গা আছে ? জি নাবিয়ের খরচপাতির টাকাপয়সা আছে?” 

জাহেদ মাথা চুলকে বলল, জ্বি নামিজান সাহেব ঠিক আগের ভঙ্গিতে বললেন,

জাহেদের এই মুহুর্তে কিছুই নেইপােস্টাফিসে পাসবই খুলেছিলটিউশনিরটাকার কিছু কিছু সেখানে রাখতপাসবইয়ে সাতশতেত্রিশ টাকা আছেমাগলার একটা হার আছে দেড় ভরীরওটা বিক্রি করলে বিয়ের খুচরা খরচ সামলেফেলা যায়বিয়ের খরচ বলতে বিয়ের শাড়ি, হলুদের শাড়িকিছু সেন্টফেস্টকিন্তু মা বিশেষ করে বলে দিয়েছেন হারটা যেন জাহেদের বিয়ের সময় তার বৌকে দেয়া হয়এইসব সেন্টিমেন্ট নিয়ে ভাবলে এখন চলে নাসেন্টিমেন্টের দিন শেষ

আজকের দিন হল রিয়েলিটির দিনহার বর্তমানে তার বড় বােন নীলিমার কাছে আছেসেই হার পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে জাহেদের ঘাের সন্দেহ দেখা দিয়েছেদিন সাতেক আগে আনতে গিয়েছিলনীলিমা বলল, হার পালিশ করতে দেয়া হয়েছেগতকাল জাহেদ আবার গেলনীলিমা বলল, রশিদটা পাওয়া যাচ্ছে নাবলেই এক ধরনের ঝগড়া শুরু করলঝগড়ার বিষয় হল তার বিয়ের সময় মা কিছুই দেন নিহাতের দুটা বালা দিয়েছেতার মধ্যে সােনা নামমাত্রজাহেদ বলল, এসব আমাকে বলে লাভ কি? আমি এর কি করব

মেঘের ছায়া খন্ড-৮

নীলিমা বলল, হাতের বালা জোড়া মার ব্যবহারী জিনিস হলেও একটা কথা ছিলআমি কিছুই বলতাম নাস্মৃতিচিহ্ন হিসাবে রেখে দিতামদোকানের জিনিসকোন এক কায়দা করে নীলিমা গলার হারটা রেখে দিলে জাহেদ বিরাট বিপদে পড়বেএতটা নিচে আপা নামবে জাহেদ বিশ্বাস করে নাকিন্তু অবিশ্বাস্য জিনিস সংসারে ঘটছেতাছাড়া অভাবী সংসারে ক্ষুদ্রতা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার

জাহেদ বিয়ে করছেকেউ কোন রকম আগ্রহ দেখাচ্ছে নানীলিমা একবারও জিজ্ঞেস করেনি, বৌ নিয়ে কোথায় উঠবি? সম্ভবত ভয়েই জিজ্ঞেস করেনি, যদি জাহেদ বলে বসে কয়েকটা দিন তােমার এখানে থাকবসে হয়ত ভেবেছে, একবার বৌ নিয়ে উঠলে আর তাকে তাড়ানাে যাবে নাএরকম ভাবা অবশ্যি অন্যায়ও নাভাবাটাই স্বাভাবিক। 

জাহেদের ভরসা এখন তার বন্ধু বান্ধবরাসে মুখচোরা স্বভাবেরকাউকেএখনো কিছু বলে নিবলতে লজ্জা করছেশুভ্রকে গাড়ির কথা বলেছেগাড়ি পাওয়া যাবেশুভ্রকাছে কেউ কিছু চেয়ে পায়নি, তা কখনাে হয় নিগাড়ির ব্যবস্থা হবেতবে শুভ্রকানে খবরটা পৌঁছলে হয়টেলিফোনে শুভ্রকে কখনো পাওয়া যায় নাসে টেলিফোন ধরে না। যে ধরে সে অবধারিতভাবে বলে, শুভ্র বাসায় নেই, কিংবা সে এখন ঘুমুচ্ছে

মেঘের ছায়া খন্ড-৮

জাহেদ ঠিক করল, আজ রাত নটাদশটার দিকে একবার টেলিফোনে চেষ্টা করবেপাওয়া যাবে নাতবু একবার চেষ্টা করে দেখাপাওয়া যেতেও তাে পারেনীলিমাদের বাসার কাছেই বড় একটা মিষ্টির দোকানদোকান নতুন চালু হয়েছে বলেই সেখান থেকে টেলিফোন করতে দেয়তবে দোকানে ঢুকে এমন ভাব করতে হয় যে প্রচুর মিষ্টি কেনা হবেকেনার আগে একটু বাড়িতে টেলিফোন করে জেনে নেয়া। 

জাহেদের দুলাভাই মােবাশ্বের আলি, জাহেদকে দেখেই মুখ অন্ধকার করে ফেললেনসব সময়ই করেনআজ একটু বেশি করলেনশুকনাে গলায় বললেন, তােমার আপা তাে নেইনারায়নগঞ্জ গেছেআজ আসবে না 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৯

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *