হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৯

জাহেদ বলল, আপা গয়নাটা এনে রেখেছে কিনা জানেন দুলাভাই? কোন গয়না?যে মাগলার একটা হারপালিশ করতে দিয়েছিলআচ্ছা হ্যাঁ একটা ঝামেলা হয়ে গেছে, বুঝলে? বিরাট ঝামেলা

মেঘের ছায়া  

জাহেদ হতভম্ব গলায় বলল, কি ঝামেলা

দোকানই উঠে গেছেহিন্দু দোকান ছিল, মনে হয় কাউকে কিছু না জানিয়ে ইন্ডিয়া চলে গেছেইন্ডিয়া যাওয়ার একটা ধুম পড়েছেতবু খোঁজ খবরের চেষ্টা করা হচ্ছে কিছু হবে বলে মনে হয় নাঐটার আশা তুমি ছেড়ে দাও। 

জাহেদ করুণ গলায় বলল, কি বলছেন দুলাভাই

যা সত্য তাই বললামতবে তােমার বৌকে গয়না আমরা একটা দিবএখন পারব নাধীরে সুস্থে দিবতােমার আপা পরশুদিন আসবেতখন এসে খোঁজ নিওসে বিস্তারিত বলবে। 

বিস্তারিত কি বলবে?” 

কোন দোকানে জমা দিয়েছিল, কি হয়েছে শেষ পর্যন্ত এই সব আরকিজানা না জানা অবশ্যি সমান। 

জাহেদ উঠে দাঁড়ালমােবাশ্বের আলি বললেন, চলে যাচ্ছ

আচ্ছা যাও | চা খেতে চাইলে খেতে পারকাজের মেয়েটাকে বললে চা বানিয়ে দেবে। 

না, চা খাব না” 

জাহেদ ঘর থেকে বের হয়ে এলভেবে পেল না, একবার কেয়ার কাছে যাবেকিনাএত সকাল সকাল শুভ্রকে টেলিফোন করা ঠিক হবে নারাত টার পর করতে হবেটা পর্যন্ত কি করবে? বরং কেয়ার সঙ্গে দেখা করে আসা যাক। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৯

কেয়াদের বাসায় যেতে লজ্জা করেঅস্বস্তিও লাগেকেয়ার বড় বােন তাকে সহ্যই করতে পারে নাঅবশ্যি এই মহিলা হয়ত কোন কিছুই সহ্য করতে পারে নাআজ পর্যন্ত জাহেদ তাকে মিষ্টি করে কথা বলতে শুনেনিজাহেদের ইচ্ছা সময় এবং সুযােগ হলে সে ভদ্রমহিলাকে বলবে বকুল আপা, ফুলের নামে আপনার নাম কিন্তু সবার সঙ্গে এমন কঠিন আচরণ করেন কেন? সেই সুযােগ হয়ত কখনােইহবে না। 

 জাহেদ কেয়াদের পাঁচতলার ফ্ল্যাটে উপস্থিত হল রাত টায়অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে পাঁচতলায় উঠতে হয়পাঁচতলা পর্যন্ত ঘন অন্ধকারএই অন্ধকারে সিড়ি ভাঙ্গা খুবই ক্লান্তিকর ব্যাপারসব সময় মনে হয় এই বুঝি সিড়ি শেষ হল, কিন্তু শেষ হয় নাএক সময় মনে হয় সিড়ির ধাপগুলির উচ্চতার হেরফের ঘটছেএক ধরনের টেনশান, সিড়িতে ঠিকমত পা পড়ছে তাে? 

 বেল টিপতেই জলিল সাহেব দরজা খুলে দিয়ে হাসিমুখে বললেন, আরে আসুন, আসুনমনে মনে আমি আপনার জন্যেই অপেক্ষা করছিলামকেয়া ঘরেই আছেবাচ্চাদের পড়াচ্ছেবসুন, ডেকে দিচ্ছি। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৯

জলিল সাহেবর পরনে লুঙ্গি এবং গেঞ্জিতিনি সেইভাবেই ভেতরে ঢুকে গেলেনতিনি পরিবারের কেউ নাএদের একটি কামরা সাবলেট নিয়েছেনমাসে সাতশ করে ঢাকা দেনসাতশটাকা কেয়া দেয়সংসারে খুব কাজে লাগেজলিল সাহেবকে পরিবারের একজন বলেই মনে হয়ব্যাপারটা জাহেদের ভাল লাগে নাএকজন বাইরের লােক কেন এমনভাবে ঘুর ঘুর করবে? কেন সে কেয়াকে বলবে কেয়া, দেখ তাে আমার লুঙ্গি শুকিয়েছে কিনানা শুকালে উল্টে দাও। 

কেয়ার মুখ শুকনাে। 

তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে কোন কিছু নিয়ে খুব চিন্তিতসে ঘরে ঢুকেই বলল, কিছু বলবে

জাহেদ বলল, নাতােমার কি শরীর খারাপ? | কেয়া বলল, শরীর ঠিকই আছেএসাে আমার সঙ্গে ছাদে যাইছাদে গিয়ে কথা বলি। 

কেয়া দরজার দিকে যাচ্ছেপেছনে পেছনে যাচ্ছে জাহেদ

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১০

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *