হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১

রেহানা গ্লাসভর্তি তেতুলের সরবত নিয়ে যাচ্ছিলেন, শুভ্রঘরের কাছে এসে থমকে দাঁড়ালেনচাপা হাসির শব্দ আসছেশুভ্র হাসছেরাত একটা বাজেশুভ্রের ঘরের বাতি নেভানােসে অন্ধকারে হাসছে কেন? মানুষ কখনাে অন্ধকারে হাসে নাকাঁদতে হয় অন্ধকারে, হাসতে হয় আলােয়রেহানা ডাকলেন, শুভ্র !মেঘের ছায়া  

শুভ্র হাসি থামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল, কি মা? কি করছিস?ঘুমুচ্ছিলাম, হঠাৎ ঘুম ভাঙলরাত কত মা?একটা বাজেতাের কি কিছু লাগবে

না শুভ্র আবার হাসছে।শব্দ করে হাসছে রেহানা চিন্তিত মুখে সরবতের গ্লাস নিয়ে শােবার ঘরে ঢুকলেনকেন জানি শুভ্রকে নিয়ে তার চিন্তা লাগছেতাঁর মনে হচ্ছে শুভ্রকোন সমস্যা হয়েছে।  ইয়াজউদ্দিন সাহেব খালি গায়ে ফ্যানের নিচে বসে আছেনকার্তিক মাস, ঠাণ্ডাঠাণ্ডা লাগছেশীত নেমে গেছে

ঘুমুতে হয় গায়ে পাতলা চাদর দিয়েএই সময়ে খালি গায়ে ফ্যানের নিচে বসে থাকার অর্থ হয় নাইয়াজউদ্দিন সাহেব বসে আছেন, কারণ তাঁর গরম লাগছেঅল্পঅল্প ঘাম হচ্ছেবুকে চাপা ব্যথা অনুভব করছেনতাঁর ধারণা, তিনি হার্ট এ্যাটাক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেনঅন্য যেকেউ এই অবস্থায় ঘাবড়ে যেতইয়াজউদ্দিন সাহেব খুব স্বাভাবিক আছেনস্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, গ্লাসে কি

তেতুলের সরবতবিট লবণ, চিনি, তেতুলখাও, ভাল লাগবে। 

ইয়াজউদ্দিন সাহেব কোন তর্কের ভেতর গেলেন নাগ্লাস হাতে নিলেনরেহানার নির্বুদ্ধিতায় মাঝে মাঝে তিনি পীড়িত বােধ করেনআজও করছেনতাঁর কি সমস্যা রেহানা জানে না। রেহানাকে বলা হয় নিঅথচ সে তেতুলের সরবত নিয়ে এসেছে, এবং রেহানার ধারণা হয়েছে এই সরবত খেলে ইয়াজউদ্দিন সাহেবের ভাল লাগবেকে তাকে এই সব চিকিৎসা শিখিয়েছে?

মেঘের ছায়া খন্ড-১

বছর দুই আগে তাঁর একবার তীব্র পেটব্যথা শুরু হলরেহানা এক গ্লাস বরফশীতল পানি নিয়ে এসে উপস্থিত, পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল, পানিটা খাও, ভাল লাগবেতিনি খেয়েছেনআজও তাই করলেন, হাত বাড়িয়ে তেতুলের সরবত নিয়ে দুচুমুক খেয়ে গ্লাস নামিয়ে রাখলেনরেহানা বললেন, ভাল লাগছে না

হ্যা, ভাল লাগছেচিনি কম হয়েছে, আরেকটু চিনি দেব?চিনি ঠিকই আছে‘শরীরটা কি এখন ভাল লাগছে ?হ্যাঁ, ভাল লাগছেফ্যান একটু বাড়িয়ে দাও। 

ইয়াজউদ্দিন সাহেবের শরীর মােটেই ভাল লাগছে নানিঃশ্বাস নিতে একটু কষ্ট হচ্ছেবসে থেকে স্বস্তি পাচ্ছেন নাশুয়ে পড়লে হয়ত ভাল লাগততিনি ঘড়ি দেখলেন, একটা দশ বাজেঘরে আলাে জ্বলছেআলাে চোখে লাগছেমানুষেরঅসুস্থতার প্রথম লক্ষণ হচ্ছে আলাে অসহ্য বােধ হওয়াঅসুস্থতা মানুষকে আলাে থেকে অন্ধকারে নিয়ে যেতে চায়। 

রেহানা বললেন, তুমি কি বারান্দায় এসে বসবে? বারান্দায় হাওয়া আছেহাওয়ায় বসলে তােমার ভাল লাগবে। চল বারান্দায় যাইসরবতটা খাবে না

মেঘের ছায়া খন্ড-১

ইয়াজউদ্দিন স্ত্রীর সাহায্য ছাড়াই উঠে দাঁড়ালেনবারান্দায় গিয়ে বসলেনপুরানো ধরনের এই বাড়ির পেছনে লম্বা টানা ঝুলবারান্দাবারান্দার এক মাথায় তিনটি বেতের চেয়ার ছাড়া কোন আসবাব নেইচেয়ার তিনটি দেয়াল ঘেসে পাশাপাশি সাজানােসাদা রঙ করা, গদি সবুজ

মাঝখানের চেয়ারটা তাঁরদীর্ঘ দশ বছরে তিনি কখনাে মাঝের চেয়ার ছাড়া কোথাও বসেননিআজ বসলেনতিনি সর্ব দক্ষিণের চেয়ারে বসেছেনমাঝেরটা খালিতিনি ভেবেছিলেন, রেহানা এই ব্যাপারটা ধরতে পারবেসে মনে হচ্ছে ধরতে পারেনিরেহানতাঁর পাশের চেয়ারে বসেনিমাঝখানে একটা খালি চেয়ার রেখে তৃতীয় চেয়ারটিতে বসেছে। 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-২

 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *