হুমায়ূন আহমেদের লেখা লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৪

জি। 

ফার্স্ট সেকেন্ড হওয়া ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বাবামা’র ছবিও ছাপা হয়। এতে বাবা-মা’দের মনে আনন্দ হয়। তাদের আনন্দেরও তাে প্রয়ােজন আছে। আছে ?

লিলুয়া বাতাসজি। 

তােমার বাবার বিষয়ে উড়াউড়া কিছু খবর শুনি। সেটা সত্যি ? | জি সত্যি। 

ভেরি স্যাড। পিতামাতা হলাে সন্তানের আদর্শ। সেই পিতামাতা যদি এরকম করে তাহলে সন্তান আর কী করবে? যাই হােক, মন খারাপ করবে না। পিতামাতা যা ইচ্ছা করুক, তুমি তােমার কাজ করে যাবে। তােমার কাজ পিতামাতাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করা। ঠিক বলেছি না ? 

জি। আইসক্রিম খাবে ? একটা আইসক্রিম আনিয়ে দেই ? জি-না। 

আচ্ছা যাও । ফি আমানিল্লাহ। তােমার জহির ভাইয়ের সঙ্গে বিশেষ প্রয়ােজন থাকলে পরে আরেকবার এসাে। 

জি আচ্ছা। 

আমার নামে কখনাে কোনাে চিঠি আসে না। কে আমাকে চিঠি লিখবে ? যারা লেখার তারা তাে আশেপাশেই আছে। তারপরেও আশ্চর্য, পােস্টাপিসের পিওন এসেছে আমার খোজে। সে একটা রেজিস্ট্রি চিঠি নিয়ে এসেছে। রেজিস্ট্রি উইথ অ্যাকনলেজমেন্ট । দস্তখত করে চিঠি নিতে হবে। রেজিস্ট্রি করা চিঠি আমাকে কে লিখবে ? খামের লেখাও অপরিচিত । খাম খুলে দেখি বাবার দীর্ঘ চিঠি। 

হুমায়ূন আহমেদের লেখা লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৪

My dear Sun, 

তােমাকে Son না বলিয়া Sun বলিলাম । এই Sun এর অর্থ সূর্য, দিবাকর। তুমি আমার নিকট দিবাকর।। 

বাবা, তুমি কেমন আছ ? দীর্ঘদিন তােমার সঙ্গে সাক্ষাৎ হইতেছে না। বিগত পাঁচ তারিখে তােমাদের বাসার সম্মুখ দিয়া বেশ কয়েকবার হাঁটাহাঁটি করিয়াছি। পরিকল্পনা ছিল তােমার সঙ্গে সাক্ষাৎ হইলে তােমাকে নিয়া একসঙ্গে কিছুক্ষণ বসিতাম। দুর্ভাগ্য তােমার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় নাই। পরে ঠিক করিলাম নীলার মােবাইল নাম্বারে টেলিফোন করিয়া সংবাদ নেই। তাহার টেলিফোন নাম্বার হারাইয়া ফেলিয়াছি বলিয়া ইহাও সম্ভব হয় নাই। 

বাসার সংবাদ কী ? তােমার মাতা আমার বিরুদ্ধে মামলা করিয়াছে। এই সংবাদ নিশ্চয়ই পাইয়াছ। মামলার ফলাফল তােমার মাতার জন্য শুভ হইবে না। কিন্তু ইহা তাহাকে কে বুঝাইবে ? মিলমিশ করিয়া থাকাতে যে আনন্দ সেই আনন্দ অন্য কোথাও নাই। তােমার মাতার সহিত একান্তে বসিয়া কিছু কথা বলিতে পারিলে সমস্যার সুরাহা হইবার সম্ভাবনা আছে। কীভাবে একান্তে বসা যায় তা নিয়া আমি ভাবিতেছি। মাথায় তেমন কোনাে পরিকল্পনা আসিতেছে না। 

হুমায়ূন আহমেদের লেখা লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৪

মালতীর ইচ্ছা সে একদিন তাহার শিশু সন্তানকে কোলে নিয়া তােমার মাতার কাছে যাইবে । এবং তােমার মাতার পা জড়াইয়া ধরিয়া বসিয়া থাকিবে। এই বুদ্ধিও খারাপ না। স্ত্রীলােকের মাথায় মাঝে মধ্যে ভালাে বুদ্ধি খেলা করে। স্ত্রীলােকেরা পা ধরাধরির বিষয়টাও পছন্দ করে।

মালতী যদি এক পা জড়াইয়া ধরে এবং যূথী যদি অন্য পা জড়াইয়া ধরে, (যূথীকে শিখাইয়া পড়াইয়া নিলে সে এই কাজ অবশ্যই করিবে) তাহা হইলে তােমার মাতার হৃদয় নরম হইবার সম্ভাবনা আছে। তােমার কী ধারণা ? সাক্ষাতে আমরা এইসব নিয়া আলাপ করিব। বাবা, তুমি একবার আস। 

আগামী ১৭ তারিখ সন্ধ্যায় যূথীর চতুর্থ জন্মবার্ষিকী  উদ্যাপন করা হইবে। ইহা তাহার মায়ের ইচ্ছা। তােমার পক্ষে কি এই দিন আসা সম্ভব ? উৎসব তেমন কিছু না। উন্নত মানের খাদ্য কেক মিষ্টি ইত্যাদি। আমার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালাে না। বড় কিছু করা সম্ভব না।

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৫

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *