হুমায়ূন আহমেদের লেখা লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৫

 সঞ্চিত টাকা পয়সা একত্র করিয়া তােমার মায়ের নামে দুইটি এফডিআর করাইয়া দিয়াছিলাম। একটি এফডিআর চলতি মাসের ১১ তারিখে ম্যাচিউরড হইয়াছে। তােমার মাতা এই এফডিআর হইতে দশ লক্ষ টাকা পাইবেন । এই অর্থের কিছু আমাকে দিলে আমার উপকার হইত। তােমার মাতাকে যে এই বিষয়ে অনুরােধ করিব সেই সুযােগও পাইতেছি না। আল্লাহ পাকের উপর ভরসা। দেখি উনি আমার জন্য কী ব্যবস্থা করিয়া রাখিয়াছেন।

লিলুয়া বাতাস 

বাবা বাবলু, পত্রপাঠ সম্পন্ন হইবা মাত্র ছিড়িয়া কুটিকুটি করিয়া ফেলিবে। এই পত্র তােমার মায়ের হাতে পড়িলে বিপদের সম্ভাবনা। 

দোয়াগাে তােমার হতভাগ্য পিতা তােফাজ্জল হােসেন। 

সতেরাে তারিখ সন্ধ্যায় আমি যূথীর জন্মদিন পালন করতে গেলাম। যূথীর জন্য এক প্যাকেট চকলেট এবং একটা হাতি কিনলাম। যূথী তার পছন্দের একটা হাতির কথা বলছিল, এইটাই সেই হাতি কি-না কে জানে। 

দরজার কড়া নাড়তেই মালতী দরজা খুলে দিলেন। এই মহি{ণে গা-৩ ডাকাটা ঠিক হচ্ছে না। ছােট মা ডাকতে পারলে ভালাে হতাে। তাও পারছি । 

মালতী দরজা খুলে একপাশে সরে গিয়ে নিচু গলায় বললেন, কেমন আছ বাবা ? 

আমার মনে হয় তিনি যে এই বাক্যটি বলবেন তা আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন। বাক্যটা বললেন যন্ত্রের মতাে গলায় বলেই মাথাও নিচু করে ফেললেন। আমি বললাম, ভালাে আছি । 

তুমি যূথীর সঙ্গে গল্প কর। তােমার বাবা ঘুমাচ্ছেন। অসময়ে ঘুমাচ্ছেন কেন ? উনার জ্বর। জ্বর কি বেশি ? 

লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৫

বেশি। পাঁচদিন ধরে জুর। ডাক্তারের কাছে যেতে বলি— যায় না। আমার মনে হয় ডেঙ্গু হয়েছে। শরীর ফুলে ফুলে গেছে। তার মাথায়ও যন্ত্রণা। ডেঙ্গু হলে মাথায় যন্ত্রণা হয়। বাবা, তােমাকে একটু চা করে দেই, চা খাবে ? 

খাব। 

জন্মদিনের কোনাে আয়ােজন করতে পারি নাই। উনি অসুস্থ, বাজার কে করবে! শুধু পুডিং করেছি। কেক আনা হয়েছে। তােমার বাবা ঘুম থেকে উঠলে কেক কাটা হবে। 

জি ঠিক আছে।। 

তিনি রান্নাঘরে ঢুকে গেলেন। আমি বসলাম যূথীর পাশে। জন্মদিন উপলক্ষে যুথীকে নতুন ফ্রক পরানাে হয়েছে। বেণি করে চুল বাঁধা হয়েছে। আগের দিনের মতােই যূথী দুনিয়ার খেলনা নিয়ে বসেছে। আমি বললাম, যূথী, তুমি কি আমাকে চিনেছ ? 

যূথী হা-সূক মাথা নাড়ল। বলাে তাে আমি কে ? বাবলু। হয়েছে। তােমার অনেক বুদ্ধি। আজ আমার জন্মদিন। তুমি জানাে ? জানি । তােমার জন্য গিফট নিয়ে এসেছি। কী গিফট ? 

কেক কাটা হােক। তারপর তােমাকে দেব । আচ্ছা। জিতুর মা চলে গেছে, তুমি জানাে ? চলে গেছে না-কি ? 

মা’র গয়না আর বাবার মানিব্যাগ নিয়ে চলে গেছে। পরশু সকালবেলা গেছে। 

বলাে কী ? হুঁ সত্যি কথা। বাবার মানিব্যাগে কত টাকা ছিল তুমি জানাে ? 

এক হাজার তিনশ’ ছাব্বিশ টাকা। অনেক টাকা ছিল তাে! হুঁ। মা’র কী কী গয়না নিয়েছে তুমি জানাে ? 

লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৫

 তােমাকে বলব ? বলাে। 

দুটা কানের দুল, একটা চেইন, চারটা চুড়ি। মা সারাদিন কেঁদেছে। মার মনে কষ্ট হয়েছে এইজন্য কেঁদেছে। কষ্ট হলে কাঁদতে হয়। 

তুমি কাঁদ ? হুঁ। পেটে ব্যথা হলে কাঁদি। আর যদি খেলনা হারিয়ে যায় তাহলে কাঁদি। 

চারটা মােমবাতি জ্বালিয়ে কেক কাটা হলাে। সেই কেকের এক টুকরা মুখে দিয়ে বাবা বললেন, অসাধারণ কেক । দি বেস্ট। বলেই বমি করে ঘর ভাসিয়ে ফেললেন। 

আমি বললাম, বাবা, তােমার অবস্থা তাে খুবই খারাপ। বাবা হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, হুঁ খারাপ। চোখ টকটকে লাল, ডেঙ্গু হয় নাই তাে ? হতে পারে। হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছ না কেন ? এখন যাবে ? নিয়ে যাব তােমাকে ? 

রুগি নিয়ে গেলেই তাে ভর্তি করায় না। ধরাধরি আছে, টাকা-পয়সা খাওয়া খাওয়ি আছে। হাতে টাকা-পয়সা নাই । জিতুর মা মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়েছে। মালতীর গয়না নিয়েছে । ক্রিমিন্যাল মেয়ে। 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৬

 

 

 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *