হুমায়ূন আহমেদের লেখা লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৭

তাের কাছে ভাঙুতি আছে? 

আছে । ক্যানের সেভেন আপ আনবি। সঙ্গে স্ট্র আনবি।

লিলুয়া বাতাস

আমি রিকশা থেকে নেমে গলির ভেতর ঢুকে হাঁটা দিলাম। মা থাকুন গরমের মধ্যে রিকশায় বসে। আমাকে ফেলে চলে যেতে পারবে না। ছেলে সেভেন আপ আনতে গিয়ে কোথায় গেল। তার কোনাে বিপদ হলাে কি-না। সবচে’ ভালাে হয় যদি আজ রাত বাসায় না ফিরি। মা তাহলে বুঝবে টেনশন কত প্রকার ও কী কী । মা’র ওপর রাগ লাগছে। তাকে শাস্তি দিতে ইচ্ছা করছে । আমি ছােট্ট মানুষ, আমার শাস্তি দেয়ার ক্ষমতাও ছােট্ট ।

কোনাে রকম উদ্দেশ্য ছাড়া রাস্তায় হাঁটাহাটি করে সময় পার করা কঠিন ব্যাপার। তখন সময় আটকে যায়। নিজেকে ব্যস্ত রাখাও মুশকিল। দেখার অনেক কিছুই আছে, আবার কিছুই নেই। ঢাকার রাস্তার সব দৃশ্যই অনেকবার দেখা। ঝকঝকে প্রকাণ্ড সব নতুন বাস নেমেছে। এসি বাস।

এই বাসের যাত্রীদের দিকে তাকালে মনে হয়, একদল সুখী মানুষ। আরাম করে কোথাও যাচ্ছে। আবার এই যাত্রীরাই যখন ভাঙাচোরা বাসে চড়ে, গরমে ঘামে, খুপড়ি জানালা দিয়ে মুখ বের করে রাখে, তাদেরকে মনে হয় ভয়ানক অসুখী। অতি ব্যস্ত রাস্তায় ঠেলাগাড়ি দেখতে ভালাে লাগে।

সব ঠেলার সঙ্গে ঠেলাওয়ালার অল্প বয়েসী একটা ছেলে থাকে। সে তার বাবার সাহায্যের জন্যে অতি ব্যস্ত। তার ব্যস্ততাও দেখতে ভালাে লাগে । ঢাকার রাস্তায় সবসময় কিছু অতি বৃদ্ধ পাওয়া যায় যাদের একমাত্র কাজ রাস্তা পার হওয়া। রাস্তা খানিকটা পার হয়ে তারা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। ফিরে আসতে চায়, ফিরতে পারে না। হঠাৎ দৌড় দেয়ার মতাে ভঙ্গি করে আবার দাঁড়িয়ে পড়ে। এমন কোনাে বৃদ্ধের দেখা পেলে অনেকটা সময় পার করা যায় ।

লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৭

আজ আমার দিন খারাপ। ঠেলাগাড়ি নেই, বৃদ্ধ নেই। আষাঢ় মাসেও দিন ঝকঝক করছে। বৃষ্টির দেখা নেই। আকাশ ঘন নীল। শান্তির নীল রঙ না, উত্তাপের নীল। আষাঢ় মাসে রােদে হাঁটতে ভালাে লাগে না। আষাঢ় মাসে মাথার ওপর মেঘ নিয়ে হাঁটতে ভালাে লাগে। 

রােদ মাথায় নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম রমজান মিয়ার কাছে। রমজান মিয়া রাস্তার এক কোনায় ছাতা মাথায় বসে আছে। তার ঝুড়িতে আম নেই । সে বসেছে ডালা নিয়ে, ডালা ভর্তি লটকন। ডালার দিকে তাকালে মনে হয় হলুদ ফুল ফুটে আছে। 

রমজান মিয়া আমাকে দেখেই আনন্দিত গলায় বলল, আসেন ছাতির নিচে আসেন। আপনের দেখা যে আইজ পামু এইটা জানি। 

কীভাবে জানেন ? মানুষের ভিতর ইশারা চলাচল করে। ইশারায় জানি। আম পান নাই? 

না। লটকন খান। বাজারের সেরা লটকন। লটকন কেমনে খাইতে হয় জানেন? রইদে বইসা খাইতে হয়। একেক ফল খাওয়ার একেক নিয়ম। কমলা খাইতে হয় ছেমায় বইসা, তেঁতুল খাইতে হয় গাছের নিচে। 

লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৭

তেঁতুল গাছের নিচে বসে খেতে হয় ? অবশ্যই। গাছের ছেমায় বইসা তেঁতুল খাওনের মজাই অন্যরকম। ফল খাওয়ার এইসব নিয়ম আপনি বের করেছেন ? 

জি! ফুল নিয়া বইসা থাকি। কাজ নাই কর্ম নাই। বইসা বইসা চিন্তার মাধ্যমে নানান জিনিস পাই। 

কী পান ? 

আল্লাহপাকের কুদরতের দেখা পাই। ভালাে কইরা চিন্তা করেন ছােট ভাই, গাছের বিষয়ে চিন্তা করেন। কোনাে গাছ দেয় মধুর মতাে মিষ্ট ফল, কোনাে গাছ। দেয় বােম্বাইয়া মরিচের মতাে ঝাল মরিচ। কোনাে গাছ ফল দেয় মানুষের জন্যে, আবার কোনাে গাছ ফল দেয় পাখিদের জন্যে। সেই ফল মানুষ খাইতে পারে তার তিতা লাগে । পাখিরা আনন্দ কইরা খায়। 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৮

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *