কোন ফল পাখিরা আনন্দ করে খায় ?
মাকাল ফল। বড়ই সৌন্দর্য ফল, কিন্তু মানুষের জন্য বিষ। ছােটভাই, শুকনা আলাপ শুইন্যা লাভ নাই। লটকন খান। আপনার উছিলায় আমিও দুইটা খাব। আমার সাথে লবণ আছে। তিনটা লটকনের দানা মুখে দিবেন আর এক চিমটি লবণ । দেখেন স্বাদ কারে বলে ।
আমরা লটকন খাওয়া শুরু করলাম। আমাদের খাওয়া দেখে মুগ্ধ হয়েই হয়তাে অতি দ্রুত ডালার সব লটকন বিক্রি হয়ে গেল। রমজান মিয়া ডালা গােছাতে গােছাতে বলল, ছােটভাই, দুপুরে তাে আপনে খানা খান নাই। চলেন আমার সাথে, খানা খাব।
আমি বললাম, খানা যে খাই নি বুঝলেন কীভাবে ? ইশারায় ?
জি ইশারায় । ইশারা একটা মারাত্মক জিনিস, বুঝলেন ছােটভাই! ইশারা বুঝতে পারলে কথা বলার প্রয়ােজন হয় না । আফসােস, আমরা বেতালা কথাই বলি— ইশারা বুঝি না। বুঝার চেষ্টাও নেই না।।
রমজান মিয়া থাকে আগারগাঁওয়ের এক বস্তিতে। এক কামরার টিনের ঘর ।। বারান্দা আছে। বারান্দায় রান্নার ব্যবস্থা। সেখানে দড়ির একটা চারপাই পাতা আছে। চারপাইয়ের একটা পা সাইকেলের চেইন দিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে বাঁধা। চারপাই যাতে চুরি না হয় সেই ব্যবস্থা ।
আমি বললাম, আপনি একা থাকেন? ঢাকায় একলাই থাকি। পরিবার দেশে থাকে।
রমজান মিয়া অতি দ্রুত রান্না করে ফেলল। ভাত, শুকনামরিচের সঙ্গে রসুন পুড়িয়ে একটা ভর্তা আর ডাল।।
আমি আগ্রহ করে খাচ্ছি। রমজান মিয়াও আগ্রহ করে খাচ্ছে । ছােটভাই, খাইয়া মজা পাইতেছেন ? অতি সুখাদ্য।
ইশারায় বুঝেছি। আপনে মজা পাইছেন । পেটে ক্ষুধা ছিল এইজন্য মজা পাইতেছেন। পেটের ক্ষুধা আল্লাহপাকের আরেক কুদরত। পেটে ক্ষুধা না থাকলে বেহেশতি খানাতেও কোনাে মজা নাই ছােটভাই, আপনে অনেক লােক দেখবেন— খাবার ঘরে খানাখাদ্য বেশুমার, কিন্তু তারার পেটে ক্ষুধা নাই বইল্যা খাইতে পারে না । আহা কী কষ্ট!
লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৮
রমজান মিয়া চারপাইয়ে পাটি পেতে দিয়েছে। তার ঘরের সঙ্গে রেন্টিগাছের ছায়া এসে পড়েছে চারপাইয়ে। আমি মাথার নিচে বালিশ দিয়ে শুয়ে আছি। আমার চোখ ভারী হয়ে আসছে। রমজান মিয়ার মতাে আমিও ইশারায় বুঝতে পারছি, আজ আমার ফাটাফাটি ঘুম হবে । ঘুম ভাঙবে যখন গায়ে বৃষ্টি ফোটা পড়বে তখন। আকাশে মেঘের ছিটেফোঁটা নাই । তারপরেও বৃষ্টির কথাটা কেন মনে হলাে কে জানে!
ঘুমের মধ্যে নীলা ফুপুকে স্বপ্নে দেখলাম। ফুপু শুটিং করছেন। মুকুল ভাই ডিরেক্টর। নায়ক ফুপুকে বলবে, আমি এখন আর তােমাকে ভালােবাসি না। তুমি বনের পংখি, তুমি বনে ফিরে যাও। নায়কের কথা শুনেই ফুপু কাঁদতে শুরু করবেন। ফুপু এই অংশটা করতে পারছেন না।
নায়কের কথা শেষ হওয়া মাত্র ফুপু হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছেন। তিনবার এরকম হবার পর পরিচালক মুকুল ভাই রাগে কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে এলেন। ফুপু বললেন, মুকুল ভাই, আমার কোনাে দোষ নেই। হিরাের ডায়ালগ শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে পেছন থেকে কাতুকুতু দিচ্ছে, এই জন্যে আমি হেসে ফেলছি। সরি।
মুকুল ভাই বললেন, কোন বদমাশটা তােমাকে কাতুকুতু দিচ্ছে ?
বাবলু কাতুকুতু দিচ্ছে। ওকে কিছু বলবেন না প্লিজ । ও আমার ছােটভাই। বাচ্চা মানুষ। (স্বপ্নে সম্পর্ক খানিক উলটপালট হয়েছে। আমি রমজান মিয়ার ছােটভাই । ফুপুর না।)।
লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৮
মুকুল ভাই বললেন, ঐ ছােকরাকে আমার কাছে ধরে নিয়ে এসাে । টিপে আমি তার রস বের করে দেব।
ফুপু বললেন, ওকে শাস্তি দিলে আমি কিন্তু শট দেব না। আমার এক কথা ।
মুকুল ভাই ফুপুর কথা শুনলেন না। তিনি আমার হাত ধরে বললেন, একে তাে আমি চিনি। এই বদছেলে আমার কাছ থেকে পাঁচশ’ টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল । তােমরা এই বদটার মাথায় পানি ঢালতে থাক। আমি না বলা পর্যন্ত থামবে না ।
কয়েকজন মিলে আমার মাথায় পানি ঢালছে। বরফশীতল পানি। আমি ঠাণ্ডায় কাঁপছি । এই পর্যায়ে আমার ঘুম ভেঙে গেল। জেগে দেখি প্রবল বর্ষণ হচ্ছে । আমার সমস্ত শরীর ভেজা। ঘরের ভেতর থেকে হাসি হাসি মুখে রমজান মিয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সে মনে হয় খুব মজা পাচ্ছে ।
Read More